২৬
বলতে পার ক্ষুব্ধ বালক করবে কি এমন কাণ্ড-
ভাংবে কি সে মদের ঘটি যেখান থেকে পায় পণ্ড
আপন হাতে গড়া মূর্তি করবে কি সে নিজে নষ্ট
ঝরলে গোলাব কলি থেকে ভাংবে কি তার ভাণ্ড?
২৭
হঠাৎ করেই কান্না শুনি লতিয়ে ওঠা সে গুলবাগে
অন্তরাত্মা বলেন হেসে গুলবদনি যে ডাকছে বাগে
আমার প্রীয়া দেখছে বুঝি জীবনের সোনার কাঠি
সে কাঠিতে ঢুকব আমি অনল তলার হৃদয় বাগে।
২৮
নবী তোমার প্রেমে আজকে দেখি বেজায় খাদ
তুর্কীরাজা মদ মদ করে বুনছে তাঁর মরণ ফাঁদ
বুলবুলি আজ গোলাপ বাগে গাইছে মিষ্টি গান-
গলা ফাটিয়ে মাগছে লাল মদিরার তিক্ত স্বাদ।
২৯
সকাল বেলা নাচছে দেখো হাজার গোলাপ ফুল
কোথায় গেলে পাবো আমি কালকের সবুজ গুল
মধুর মাসে সকল দিকে দেখবে আজি নতুন সুর
জ্ঞান গরিমা শক্তির পদে দিবে নাকি বিদায় ধুল।
৩০
দেখছ তুমি! গোলাপ বালা ঘাড় দুলিয়ে বলছে হেসে-
দুনিয়াটা দেখো পড়ছে নুয়ে আমার টানে অবশেষে
ত্বরিত গতি ভাংছে আজি সোনার অঙ্গ সেই সাথে
শুকিয়ে যাবে এই বাগিচা হেসে হেসে অবশেষে।
৩১
সবুজ ঘাসে সাজছে দেখো দুনিয়া ভুবন ভর
নদীর বাঁকে উড়ছে যেনো পাখির ছানা ঊষার পর
সাবধান! আস্তে করে পথ পাড়ি দাও এই বেলা
জানো তুমি ঘুমায় সেথা আমার সাথী সাঁঝের পর।
৩২
আমাদের এই আকাশ যেন উল্টে থাকা গামলা খানা
যার আধারে খাচ্ছি খাবি মরছি-বাঁচছি সবার জানা
শোনো আজি আমার কাছে ভাগ্য বাঁধা তাহার কাছে-
তোমার আমার মরা-বাঁচা জানবে সবই ঘানি টানা।
৩৩
স্বর্গ প্রীতি নরক ভীতি যতোই কিছু দেখছ আজ
একটি কথা সত্য হেথা জীবন সদাই করছে সাজ
একটা কথা সত্য হলেও অন্য সকল মিথ্যা ভান-
জন্ম নিলে মরতে হবে ফুটলে ফুল শুক্বে সাজ।
৩৪
চলো প্রিয়া ছল করে আজ ভাগ্যদেবীর সাথ
হজম করবো সকল দুঃখ সকলে এক সাথ
করবো না আর বন্ধ তাই সে জানালার খাত
নতুন করে গড়বো আমার দুনিয়া এক সাথ।
৩৫
আমরা সবাই লাটিম সম ঘুরছি হেথা বিলক্ষণ
আশার আলো হাতে নিয়ে চলছি আজি সারাক্ষণ
ঘুরছে রবি ছড়িয়ে আলো করছে আবার সাজ
জানি আমি তিনি রাজা ভাঙ্গা গড়া করে সারাক্ষণ।
৩৬
তলিয়ে গিয়ে ভেসে উঠে হয়েছ আজ এক অলুক্ষণে
নামটি তোমার হারিয়ে গেলো কীর্তিমানের ফর্দ থনে
নখগুলি যে আজ প্যাঁচ খেয়ে হয়েছে এক মরণ ফাঁস
লেজ নয় তো দাড়ির বোঝা ফাঁস যেনো বিদায় দিনে।
৩৭
ঘুমের ঘোরে শুনতে পেলাম বলছে যেন কেউ-
গোলাপগুলি হতে পারে সকাল বেলার ফেউ
জেগেই দেখি সাড়া দিতে হাঁকছে যেনো কেউ
জন্ম নিলে মরতে হবে অমর তো রবেনা কেউ।
৩৮
যুবক কালে দেখেছি আর শুনেছি আমি সারাক্ষণ
জ্ঞানী গুণী আর বিজ্ঞ জনে বাহাস করে সারাক্ষণ
পায়না কোনো কূল কিনারা খোঁজে দিকবিদিক
আমিও আছি ঘোরের মাঝে করছি পার দিনক্ষণ।
৩৯
তাদের সাথে বুনেছি আমি গুণের চারা এই বাটে-
নিজের হাতে করেছি আমি চারার সেবা সেই মাঠে
দেখো সবাই সোনার ফসল ছড়িয়ে আছে ভোর বেলা
আমার আসা পানির ঠাঁটে যাবো আমি বায়ুর খাটে।
৪০
দুনিয়াটা আবার যদি গড়া যেতো নতুন করে
বন্ধ করা যেতো আবার ভাগ্য-লিখন সবার তরে
ভাগ্যদেবী লিখত তখন নতুন খাতা নতুন ভাবে–
লিখতো মোদের নাম কিংবা কাটত নিজের তরে।
[মূল ইংরেজী অনুবাদক – Edward Fitzgerald
বাংলা অনুবাদক – মোহাম্মদ আতাউর রহমান]
রুবাইয়াৎ – ০২
১
খাজার কাছে আমার আছে একটি মাত্র আর্জি
ছাড়ো আদেশ করো দোয়া যদি বা হয় মর্জি-
আমার চলা সাদামাটা তোমার হাঁটা বাঁকা
লাগাও চশমা ধোঁয়া চোখে মুক্তি দিতে আর্জি।
২
আমার আগুন দেয়না ধোঁয়া মেঘ করে না এ বাটে
আমার পেশায় মজুদ আছে মুনাফা নাই এ ঘাটে
ভাবেন যিনি মদ পিয়াসী জানেন তিনি আমারে
সত্য করে বলতে গেলে পানশালা নাই এ বাটে।
৩
পুরানো সে মদের দোকান আজকে আমার ঠিকানা
বাঁধা আছে সেথায় আমার মন-মন-আত্মা সবখানা
সুখের আশা বিদায় দিয়ে ভয় ভীতিকে বন্দীর রেখে-
যাচ্ছে ভেলা আকাশ পাতাল উজান বেয়ে অজানা।
৪
তোমার কাছে খবর নাই মুক্তি আছে কোন কাননে
তোমার জানা নাই মুক্তা ছাপা কে দেয় কোন বিজনে
পরের মুখে শুনবে এথায় প্রেমের কথা গল্পো ছলে
কল্পো কথা সকল সময় পাবে যে তুমি অন্ধ জনে।
৫
আমি জানি সেথায় আছে দারুণ এক রহস্য বাঁকা
কোনটা ভালো কোনটা মন্দ গল্পো সেটা বন্ধ থাক
আমার বিশ্ব ধোঁয়ায় ভরা খুলতে নারি তাহার ঢাক
কোথায় আমার চন্দ্রকুঠির সে কথাটা গোপন থাক।
৬
কোরান মজিদ করছে নাজিল মস্ত একটা ফরমান
রজব এবং শাবান মাসে নিষেধ আছে মদ্য পান
আল্লা রাছুল বলেন হেঁকে দুটি মাস মোদের দান
সিয়ামেরই রমজান মাসে করবে শুধুই মদ্যপান!
৭
শুক্রবার যে জুমার নামাজ মুসলমানদের তর
ঘটি ভরে পান করো মদ ক্ষণিক যখন অবসর
করবে যদি মদ্য পান এক পেয়ালা অন্য বার
করবে পান দুই পেয়ালা আজ যখন শুক্রবার!
৮
যখন যেথায় দেখবে তুমি গোলাপ বাগের ঝাঁক
জানবে সেথায় বইছে সদাই রক্ত গঙ্গার বাঁক
যেথায় পাবে থোকা থোকা গোলাপ কুঁড়ির তাক
জানবে সেথায় তিল বদনী ডাকায় তাহার নাক
৯
আমার ঘটে দেখছে যে মন্দ সে তো তরল চুনি
মদের ঘটি দেহ যে তাঁর মদ তো আত্মা শুনি
কেলাস মতো পেয়ালা যে হাসছে সফেদ পানি
লুকিয়ে আছে আজ রক্ত ঝরা হৃদয়খানি জানি।