ঈশ্বর বিশ্রাম লইয়াছিলেন মাত্র এক রোজ শনিবার আর বনিআদমকে বিশ্রাম লইতে বলিয়াছেন চিরকালের শনিবার। ঐদিন দুনিয়ার যাবতীয় কাজকর্ম হইতে বিরত থাকার হুকুম দিয়াছেন ঈশ্বর এবং উহা অমান্যকারীর শাস্তি মৃত্যুদণ্ড। ইহুদি জাতি উহা পুরাপুরিই পালন করিতেছেন এবং অন্যান্য সেমিটিক জাতিও কিছুটা পালন করেন, হয়তো একদিন আগে বা পরে। কিন্তু আলোচ্য বিশ্রামবার হাল জামানায় আন্তর্জাতিকভাবে দাঁড়াইয়াছে রবিবারে।
আদি (২; ৭) –“আর সদাপ্রভু ঈশ্বর মৃত্তিকার ধূলিতে আদমকে নির্মাণ করিলেন এবং তাহার নাসিকায় ফুঁ দিয়া প্রাণবায়ু প্রবেশ করাইলেন, তাহাতে মনুষ্য সজীব প্রাণী হইল।”
বাইবেলের (আদিপুস্তকে) সৃষ্টিতত্ত্ব বর্ণনায় বায়ু ও অগ্নি সৃষ্টির কোনো উল্লেখ দেখা যায় না। ঈশ্বর ফুঁ দিয়া আদমের দেহে যে প্রাণ-বায়ু প্রবেশ করাইলেন, উহা বায়ুর ব্যবহার মাত্র, সৃষ্টি নহে। উহাতে মনে হয় যে, হয়তো ঈশ্বর বায়ু ও অগ্নি সৃষ্টি করেন নাই, নচেৎ বাইবেল লেখকের ভুল।
আদি (২; ৮) –“আর সদাপ্রভু ঈশ্বর পূর্বদিকে এদনে, এক উদ্যান প্রস্তুত করিলেন এবং সেই স্থানে আপনার নির্মিত ঐ মনুষ্যকে রাখিলেন।”
অত্র বিবরণে দেখা যায় যে, আদমের বাসস্থান ‘এদন’ পূর্বদিকে অবস্থিত? কিন্তু কোন্ স্থান হইতে পূর্ব, তাহার উল্লেখ নাই।
আদি (২; ২১-২২)– “পরে সদাপ্রভু ঈশ্বর আদমকে ঘোরনিদ্রায় মগ্ন করিলেন, তিনি নিদ্রিত হইলেন, আর তিনি তাঁহার একখানা পঞ্জর লইয়া মাংস দ্বারা সেই স্থান পুরাইলেন। সদাপ্রভু ঈশ্বর আদম হইতে গৃহীত সেই পঞ্জরে এক স্ত্রী নির্মাণ করিলেন ও তাহাকে আদমের নিকটে আনিলেন।”
আদমকে ঘোরনিদ্রায় অভিভূত করিয়া তাহার বক্ষের অস্থি গ্রহণ করা ডাক্তারদের ক্লোরোফরম দ্বারা অপারেশন করারই অনুরূপ। তবে ক্লোরোফরম ব্যতীত সম্মোহন (Hypnotism) শক্তির দ্বারাও মানুষকে গভীর নিদ্রায় অভিভূত করা যায় এবং তদবস্থায় অপারেশন করাও চলে। কিন্তু এইখানে প্রশ্ন থাকিল এই যে, আদমের বক্ষের অস্থি গ্রহণ করা হইল কোনো অস্ত্রের দ্বারা কাটিয়া, ছিঁড়িয়া?
আদমের শরীর গঠন করা হইল ধূলি বা মাটির দ্বারা। কিন্তু অন্যান্য জীবাদিসৃষ্টি কি দিয়া হইল, তাহার কোনো উল্লেখ নাই; বোধ হয় অন্য কিছু। অথচ মানুষ ও পশু-পাখির রক্ত, মাংস, অস্থি-মজ্জা ইত্যাদিতে বিশেষ পার্থক্য লক্ষিত হয় না।
আদম ভিন্ন অন্য কোনো জীব সৃষ্টি করিতেই ঈশ্বরের কোনো উপাদানের দরকার হয় নাই। আদিনারী সৃষ্টির কাজে উপাদান লাগিল কেন এবং উপাদান লাগিলেও মাটি-পাথরাদি নানাবিধ। মশলা থাকিতে আদমের অঙ্গহানি করার আবশ্যক ছিল কি?
বলা যাইতে পারে যে, পুরুষের অঙ্গ হইতে নারীর সৃষ্টি হইয়াছে বলিয়াই নারী ও পুরুষ এর অগাভি সম্পর্ক। কিন্তু দেখা যায় যে, পশু-পাখিদেরও স্ত্রী-পুরুষে প্রেমের বন্ধন যথেষ্ট এবং মানুষের মধ্যেও স্ত্রী ত্যাগ করা (তালাক) অপ্রতুল নহে।
.
# বৌদ্ধ ধর্ম
বৌদ্ধরা বলেন যে, এই পৃথিবীর সৃষ্টিকর্তা কেহ নাই; জগত অনন্তকাল বিদ্যমান আছে এবং থাকিবে। চিরকালই বিশ্বের আকৃতি একরূপ আছে এবং থাকিবে। কর্মানুসারে প্রাণীসমূহ সংসারে ঘুরিয়া বেড়াইতেছে মাত্র।
.
# ইসলাম ধর্ম
মুসলমানদের ধর্মগ্রন্থ পবিত্র কোরানের মতে, নির্দিষ্ট কালে আল্লাহ কর্তৃক পৃথিবী সৃষ্ট হইয়াছে। এবং নির্দিষ্ট সময়ে উহা ধ্বংসপ্রাপ্ত হইবে।
সৃষ্টিতত্ত্ব সম্বন্ধে পবিত্র কোরানের বহুস্থানেই বিক্ষিপ্তভাবে অধিক বর্ণনা পাওয়া যায়। যথা
সুরা সেজদা (১; ৪) –“তিনি আল্লাহ, যিনি নভোমণ্ডল ও ভূমণ্ডল এবং এতদুভয়ের মধ্যে যাহা আছে, তাহা ছয় দিনে সৃষ্টি করিয়াছেন।”
সুরা সেজদা (৭ আয়াত) –“তিনিই মৃত্তিকা হইতে মানবসৃষ্টি আরম্ভ করিয়াছেন।”
সুরা সাফফাত (৬)— “নিশ্চয় আমি পার্থিব আকাশকে নক্ষত্রপুঞ্জের শোভায় শোভিত করিয়াছি।”
সুরা হামিম (৯/১০/১২) — “তোমরা কি তাহার প্রতি অবিশ্বাস করিতেছ –যিনি দুই দিনে এই পৃথিবী সৃষ্টি করিয়াছেন … এবং তিনি তন্মধ্যে উহা হইতে সমুচ্চ পর্বতমালা সৃষ্টি করিয়াছেন এবং চারি দিবসে তন্মধ্যে উহার উৎপাদিকা শক্তি নির্ধারিত করিয়াছেন। … অনন্তর তিনি দুই দিবসের মধ্যে সপ্ত আকাশ সুপ্রতিষ্ঠিত করিয়াছেন।”
সুরা ক্বাফ (৩৮) –“নিশ্চয়ই আমি নভোমণ্ডল ও ভূমণ্ডল এবং এতদুভয়ের অন্তর্গত বিষয়সমূহ ছয় দিবসে সৃষ্টি করিয়াছি।” ইত্যাদি।
মুসলমানদিগের ধর্মগ্রন্থমতে সৃষ্ট প্রাণীর চারিটি স্তর। যথা –ফেরেশতা, জ্বীন, মনুষ্য ও শয়তান।
ফেরেশতা বা স্বর্গীয় দূত –তাহারা অগ্নি (নূর) হইতে উৎপন্ন; তাহারা নির্মল এবং বিভিন্ন আকৃতি ধারণে সমর্থ। তাহাদের পানাহারের প্রয়োজন হয় না এবং তাহাদের (মানুষের মতো) জন্ম-মৃত্যু নাই, তাহাদের সন্তান-সন্ততি জন্মগ্রহণ করে না। জেব্রাইল, মেকাইল, এস্রাফিল ও আজরাইল স্বর্গীয় দূতগণের মধ্যে প্রধান স্থানীয়।
জ্বীন –উহাদের জন্ম-মৃত্যু এবং নারী-পুরুষ ভেদ ও সন্তান-সন্ততিও আছে। উহাদের পাপ পুণ্যের ফলাফলস্বরূপ স্বর্গ বা নরকবাসও নির্ধারিত আছে। উহারা নাকি ধূমশূন্য অগ্নির দ্বারা তৈয়ারী। এবং মরুদেশের বাসিন্দা। উহারা দৈত্য-দানবের ন্যায় অনিষ্টকারী।