২. স্পঞ্জ –দৈর্ঘ্য, প্রস্থ ও উচ্চতায় প্রায় তিন ইঞ্চি একখানা ভালো নরম স্পঞ্জ সংগ্রহ করিয়া রতিক্রিয়ার পূর্বে উহা ঠাণ্ডা জলে, সাবান-জলে, ফিটকিরি ভিজানো জলে অথবা ঝাজবিহীন তৈলে ভিজাইয়া অল্প নিংড়াইয়া স্ত্রীঅঙ্গের মধ্যে দিয়া, অশুলির সাহায্যে ঠাসিয়া জরায়ুমুখে স্থাপন করিয়া লইতে হয়। এই পদ্ধতি রক্ষা করিয়া কার্য করিলে জন্মরোধ হইয়া থাকে। কিন্তু কার্যকালে স্পঞ্জ জরায়ুমুখ হইতে সরিয়া গেলে গর্ভসঞ্চারের সম্ভাবনা থাকে।
৩. কুইনাইন পেসারি –কুইনাইন পেসারি নামক এক প্রকার ক্ষুদ্র ও গোলাকার বটিকা বাজারে পাওয়া যায়। ইহা কুইনাইন, কোকো প্রভৃতির সংযোগে প্রস্তুত হয়। এই পেসারি মিলনের ১০-১৫ মিনিট পূর্বে শ্রীঅঙ্গে প্রবেশ করাইয়া দিলে উহা গলিয়া যায়। অতঃপর মিলনের ফলে গর্ভসঞ্চার হয় না। কেননা, এই ঔষধটির গুণে শুক্রকীটসমূহ মরিয়া যায়। কিন্তু ঔষধ শক্তিশালী না হইলে অথবা কার্যকালের পূর্বে বটিকা না গলিয়া থাকিলে গর্ভসঞ্চারের আশকা থাকে। বাজারে বহুবিধ পেসারি বাহির হইয়াছে।
৪. জেলি, ক্রীম বা পেস্ট –জেলি, ক্রীম বা পেস্ট বাজারে পাওয়া যায়। ইহা শুক্রকীটম্বংসী মাল-মশলায় তৈয়ারী। ইহার যে কোনো একটি রতিক্রিয়ার পূর্বে উভয়ের জননেন্দ্রিয়ে ব্যবহার করিলে উভয়ের অঙ্গ সঞ্চালনেই স্ত্রীঅঙ্গে প্রক্ষিপ্ত হইয়া যায় এবং উহার সংস্পর্শে শুক্রকীটসমূহ মারা যায়। ফলে গর্ভধারণ ব্যাহত হয়।
৫. কনডম— ইহা একমাত্র পুরুষের ব্যবহারোপযোগী পুরুষাঙ্গের এক প্রকার আবরণী বা খাপবিশেষ। কনডম সাধারণত পাতলা রাবার বা প্লাস্টিকের তৈয়ারী। ইহার একদিক খোলা এবং অপরদিক বন্ধ। এই দেশে ইহা ‘ফ্রেঞ্চ ক্যাপ’ বা শুধু ‘ক্যাপ’ নামেই বহুল প্রচলিত।
মৈথুনের পূর্বে পুরুষাঙ্গে মোজার মতো কনডম পরিধান করিতে হয়। ইহাতে কার্যকালে যে বীর্যপাত হয়, তাহা শ্ৰীঅঙ্গে পতিত না হইয়া কনডমের ভিতরেই থাকিয়া যায়। ইহার ফলে গর্ভসঞ্চার হয় না। বর্তমানে বহুবিধ কনডম বাজারে পাওয়া যায়।
৬. পেসারি –ইহা স্ত্রীলোকের ব্যবহারের জন্য রাবার বা প্লাস্টিক নির্মিত আবরণী। ইহা বিভিন্ন আকৃতির হইয়া থাকে। পেসারিগুলির যে কোনও একটি নারীর জরায়ুমুখে পরাইয়া দিলে উহা জরায়ুগ্রীবায় আঁট হইয়া লাগিয়া থাকে। জরায়ুগ্রীবায় পেসারি চাপিয়া জরায়ুমুখ একেবারে আবৃত থাকে। কাজেই পুরুষের বীর্য জরায়ুতে প্রবেশ করিতে পারে না। ফলে গর্ভসঞ্চার হইতে পারে না। অধুনা বহুবিধ পেসারির প্রচলন হইয়াছে।
৭. শুক্ৰবাহী নালী কর্তন— বন্ধ্যাকরণের উত্তম পন্থা অস্ত্রোপচার। পুরুষের বেলায় অণ্ডকোষের সামান্য চিরিয়া শুক্রবাহী নালিকায় দুই প্রান্তে বাধিয়া ও মধ্যভাগ হইতে এক ইঞ্চি পরিমাণ কাটিয়া ঐ স্থানটি পুরাইয়া দেওয়া হয়। ভালোভাবে অস্ত্রোপচার হইলে ইহাতে পুরুষের যৌন আসক্তি বা আনন্দভভাগে কোনোই বাধা হয় না। সাধারণের মতোই সহবাসে তাহার শুক্রশ্মলন হয়, তবে পরিমাণে কম। কিন্তু উহাতে শুক্রকীট থাকে না বলিয়া গর্ভসঞ্চার হয় না। যদিও ইহা স্থায়ী বন্ধ্যাকরণ, তবে অভিজ্ঞ ডাক্তারগণ পুনঃ অস্ত্রোপচার করিয়া শুক্ৰবাহী নালী জোড়া দিয়া বন্ধ্যাত্ব দূর করিতে পারেন।
৮. শুক্রকোষ দূরীকরণ– শুক্রকোষ দূরীকরণ একটি চরম পন্থা। উহাতে দুইটি কোষই বাহির করিয়া ফেলা হয় এবং তজ্জন্য শরীর, মন ও যৌন স্বাস্থ্যের প্রভূত ক্ষতি হইয়া থাকে। পুরুষ দেহে ও মনে মেয়েলি ভাবাপন্ন হইয়া পড়ে। ইহাতে আর কখনও সন্তানোৎপাদন ক্ষমতা ফিরিয়া আসে না।
৯. ফ্যালোপিয়ান নল কর্তন –ইহাতে ফ্যালোপিয়ান নল বা ডিম্ববাহী নালী কাটিয়া বাঁধিয়া দেওয়া হয়। উহাদিগকে একেবারে ফেলিয়াও দেওয়া যায়। ইহাতে ডিম্বাশয় হইতে। ডিম্বকোষ জরায়ুতে আসিতে না পারায় নারী বন্ধ্যাত্বপ্রাপ্ত হয়। সর্বোৎকৃষ্ট পথ হইল, ঐ নল দুইটির ডিম্বাশয়ের দিকের প্রান্ত দুইটিকে তলপেটের প্রাচীরে প্রোথিত করিয়া দেওয়া। শেষোক্ত প্রক্রিয়ায় আবার দরকার হইলে অনেক ক্ষেত্রে সন্তানোৎপাদনের ক্ষমতা ফিরাইয়াও আনা যায়। এইরূপ বন্ধ্যাকরণে স্ত্রীর স্বাভাবিক যৌন আসক্তি ও আনন্দভোগে কোনো গোলযোগ উপস্থিত হয় না। মাসিক স্রাবেও কোনো গোলযোগ ঘটে না।
১০. ডিম্বাশয় দূরীকরণ –নারীর ডিম্বাশয় দুইটি কাটিয়া ফেলিয়া দিয়া উহাকে চিরবন্ধ্যা করা যায় বটে, কিন্তু তাহার পরিণাম খারাপ হইয়া থাকে। ফলে পুরুষের শুক্রকোষ দূরীকরণের মতো নারীর শরীর ও মনের মেয়েলি ভাব কমিয়া যায় ও পুরুষালি ভাব আসিতে পারে।* [*জন্মনিয়ন্ত্রণ, আবুল হাসানাৎ, পূ, ৮৩-১২৫।]
উপরোক্ত পদ্ধতিসমূহ ছাড়া জন্মরোধের আর একটি পদ্ধতি হইল ঔষধ ব্যবহার করা। বর্তমানে এইরূপ কতগুলি ঔষধ আবিষ্কৃত হইয়াছে, যাহা সেবনে রমণীদের ডিম্বাশয়ে ডিম্বকোষ জন্মে না, অথবা জন্মিলে তাহা নষ্ট হইয়া যায়। ফলে স্থায়ী বা অস্থায়ীভাবে সন্তানোৎপত্তি রহিত হয়।
অনভিপ্রেত হইলেও জন্মশাসনের চরম পদ্ধতি হিসাবে গর্ভপাত ঘটাইবার পদ্ধতিটি বহুদিন হইতে প্রকাশ্যে বা অপ্রকাশ্যে প্রায় সব দেশেই প্রচলিত আছে। ইহাতে এইরূপ কোনো ঔষধ গর্ভিনীকে সেবন করানো বা জরায়ুমধ্যে প্রবেশ করাইয়া দেওয়া হয়, যাহার ফলে ভূণ নষ্ট হয় বা সন্তান মারা যায় এবং জরায়ুর উত্তেজনা বা সঙ্কোচনের দরুন গর্ভপাত হয়। কিন্তু এই সমস্ত প্রক্রিয়ায় সব ক্ষেত্রেই বিপদের আশঙ্কা থাকে, এমনকি কোনো কোনো ক্ষেত্রে আশঙ্কা থাকে গর্ভিনীর প্রাণহানিরও।