যীশু খ্রীস্টের আবির্ভাবের সময়ে সখরিয়া (হজরত জাকারিয়া) নামক জনৈক ব্যক্তি ছিলেন ইহুদিদের ধর্মযাজক ও জেরুজালেম মন্দিরের সেবাইত বা পুরোহিত। তিনি ছিলেন নিঃসন্তান, কারণ তাঁহার স্ত্রী ইলীশাবেত ছিলেন বন্ধ্যা। তাই শতাধিক বৎসর বয়সেও সখরিয়ার কোনো সন্তান ছিল না।
শুনা যায় যে, যীশুর মাতা মরিয়মকে তাঁহার পিতা এমরান মরিয়মের তিন বৎসর বয়সের সময়ে জেরুজালেম মন্দিরের সেবাকার্যের জন্য প্রেরণ করেন এবং সেখানে তিনি সখরিয়া কর্তৃক প্রতিপালিত হন।
সখরিয়া তাহার ১২০ বৎসর বয়সের সময়ে স্বর্গীয় দূতের মারফতে পুত্রবর প্রাপ্ত হন ও তাহাতে ইলীশাবেত গর্ভবতী হন এবং ইহার ছয় মাস পরে অবিবাহিতা মরিয়মও ১৬ বৎসর বয়সে স্বর্গীয় দূতের মারফত পুত্রবরপ্রাপ্ত হইয়া গর্ভবতী হন। যথাসময়ে ইলীশাবেত এক পুত্র প্রসব করেন এবং তাহার নাম রাখা হয় যোহন (হজরত ইয়াহইয়া)।
অবিবাহিতা মরিয়ম সখরিয়ার আশ্রমে থাকিয়া গর্ভবতী হইলে লোকলজ্জার ভয়ে ধর্মমন্দির ত্যাগ করিয়া নিজ জ্ঞাতিভ্রাতা যোসেফ (ইউসুফ)-এর সঙ্গে জেরুজালেমের নিকটবর্তী বয়তুল হাম নামক স্থানে অবস্থান করেন। এই স্থানে যথাসময়ে এক শুষ্ক খজুরবৃক্ষের ছায়ায় যীশু খ্রীস্ট (হজরত ঈসা আ.) ভূমিষ্ঠ হন।
কুমারী মরিয়ম এক পুত্রসন্তান প্রসব করিয়াছেন, ইহা জানিতে পারিয়া তাহাকে তীব্র ভর্ৎসনা করিতে থাকে এবং তাহারা মরিয়মের পালক পিতা সুবৃদ্ধ সখরিয়ার উপর ব্যভিচারের অপবাদ আরোপ করিয়া তাহাকে হত্যা করিতে ধাবিত হয় এবং সখরিয়া এক বৃক্ষকোটরে লুকাইয়া থাকেন। কিন্তু ইহুদিগণ খোঁজ পাইয়া করাত দ্বারা ঐ বৃক্ষটি ছেদন করার সঙ্গে সঙ্গে বৃদ্ধ সখরিয়া দ্বিখণ্ডিত হইয়া প্রাণত্যাগ করেন।[২৮]
ইহুদি ধর্মের বিধানমতে, ব্যভিচার ও নরহত্যা– এই উভয়বিধ অপরাধের শাস্তিই হইল প্রাণদণ্ড। এইখানে ব্যভিচারের অপরাধে বা অপবাদে সখরিয়ার প্রাণদণ্ডের বিষয় জানা যায় বটে, কিন্তু সখরিয়াকে বধ করার অপরাধে কোনো ইহুদির প্রাণদণ্ডের বিষয় জানা যায় না।
নারী ও পুরুষ
সৃষ্টি বলা হইয়াছে যে, মানুষের জীবকোষে ক্রোমোসোম থাকে ৪৬টি। কিন্তু ইহারা সবই এক ধরণের নহে। ইহাদের মধ্যে এক বিশেষ ধরণের ক্রোমোসোম আছে, যাহাদের বলা হয় সেক্স ক্রোমোসোম। ইহাদের মধ্যে আবার দুইটি ভাগ আছে। যথা –এক্স (X) ক্রোমোসোম এবং ওয়াই (Y) ক্রোমোসোম। পুরুষের জার্মসেলে এক্স ক্রোমোসোম সব সময় একটিই থাকে, কিন্তু স্ত্রীলোকের ডিম্বকোষ বা এগসেলে থাকে কখনও একটি এবং কখনও দুইটি করিয়া। ওয়াই ক্রোমোসোম শুধু পুরুষেরই থাকে, স্ত্রীলোকের সেলে কখনও থাকে না।
যখন কোনো ডিম্বকোষে দুইটি এক্স ক্রোমোসোম থাকে, এবং তাহা হইতে সূণের উৎপত্তি হয়, তখন তাহা হইতে জন্মে নারী এবং ডিম্বকোষে একটি এক্স ক্রোমোসোম থাকিয়া ভূণের উৎপত্তি হইলে, তাহাতে জন্মে পুরুষ।
যমজ সন্তান সৃষ্টি
ছাগ, মেষ, কুকুর, বিড়াল ও শৃগালাদি পশুরা এক সময়ে দুই, তিন বা চারি-পাঁচটি করিয়া সন্তান প্রসব করে, ইহাতে কোনোরূপ কথোপকথন বা হৈ চৈ হয় না। কেননা, উহা চলতি ঘটনা। কিন্তু মানুষের একবারের গর্ভে ঐরূপ সন্তান জন্মিলে পাড়া, দেশ, এমনকি সময় সময় জগতময় সাড়া পড়িয়া যায়। ক্যানাডার ডিওন পরিবারে এক রমণীর এক গর্ভে পাঁচটি কন্যা জন্মিয়াছিল এবং উহা দেশে-বিদেশে প্রচারিত হইয়াছিল। কেননা ঐ পাঁচটি কন্যাই নাকি বাঁচিয়া ছিল ও পূর্ণবয়স্কা হইয়াছিল। তবে সচরাচর দেখা যায় যে, দুইয়ের অধিক যমজ সন্তানরা হয়তো মৃত অবস্থায় ভূমিষ্ঠ হয়, নচেৎ ভূমিষ্ঠ হইয়া মারা যায়।
একেবারে গোড়ার অ্যামিবার মতো জীবের দিকটা বাদ দিয়া অপেক্ষাকৃত উন্নত শ্রেণীর জীবের দিকে চাহিলে আমরা দেখিতে পাই যে উহারা হয়তো ডিম্বপ্রসূ, নয়তো বাচ্চাপ্রসূ। ডিম্বপ্রসূদের মধ্যে আবার নানা রকম ডিমের সংখ্যা। যেমন– মাছেরা এক বারে হাজার হাজার, হাঁস-মুরগি পাঁচ-দশ গণ্ডা; কিন্তু কবুতরেরা মাত্র দুইটি ডিম্ব প্রসব করে। মানুষ কিংবা পশুরা ঐরূপ ডিম্ব প্রসব করে না বটে, কিন্তু আসলে উহারাও ডিম্বপ্রসূ জীব। পার্থক্য এই যে, আমরা যাহাদের ডিম্বপ্রসূ বলি, তাহারা সদ্য ডিম্ব প্রসব করে এবং ডিম্ব হইতে বাচ্চা জন্মে বাহিরে থাকিয়া, আর বাচ্চাপ্রসূদের ডিম্ব হইতে বাচ্চা জন্মে গর্ভে অর্থাৎ জরায়ুর ভিতরে থাকিয়া। ডিম্ব অথবা বাচ্চা –মায়েরা যাহাই প্রসব করুক, আসলে ডিমের সংখ্যার উপর নির্ভর করে বাচ্চাদের সংখ্যা।
সাধারণত মানুষের ডিম্বাধারে যথাসময়ে একটি ডিম্বই জন্মে। কিন্তু কোনো কোনো ক্ষেত্রে একাধিক ডিম্বও জন্মিয়া থাকে। মানুষের যখন যমজ সন্তান জন্মে, যে কারণেই হউক, তখন গর্ভিনীর গর্ভাধারে ডিম্ব জন্মে দুইটি এবং তখন পুরুষের মিলনে যদি ঐ দুইটি ডিম্বই নিষিক্ত হয়, তবে উহাতে সন্তান জন্মে দুইটি। অনুরূপভাবে তিন, চারি বা পাঁচটি ডিম্ব জন্মিলে সন্তানও জন্মে ঐ কয়টি। বৃটেনে নাকি হাজার করা এক গর্ভে তিনটি সন্তান জন্মিয়া থাকে। ততোধিক সন্তান হওয়া খুবই বিরল, তবে অসম্ভব নহে।
যমজ দুই প্রকার। যথা –অসম যমজ ও সম যমজ।
অসম যমজ –যদি কখনও কোনো নারীর ডিম্বাধারে একই সময়ে দুই বা ততোধিক ডিম্ব জন্মে এবং উহা পুরুষের মিলনে প্রাণবন্ত হয়, তবে যে যমজ সন্তান জন্মে, তাহাকে বলা হয় অসম যমজ।