.
# জীবজগতের বিবর্তন
পরিবর্তন জগতের রীতি। বিশ্বে এমন কোনো পদার্থ নাই, যাহার কোনোরূপ পরিবর্তন বা। রূপান্তর নাই। বিজ্ঞানীগণ বলেন যে, পৃথিবীতে আজ আমরা যে আম, জাম, শাল, সেগুন। ইত্যাদি বৃক্ষরাজি ও অসংখ্য রকম লতাগুল্ম দেখিতেছি, উহারা চিরকালই ঐরূপ ছিল না। আদিতে উহারা ছিল শেওলা জাতীয় এক প্রকার জলজ উদ্ভিদ এবং হাতি, ঘোড়া, শিয়াল, কুকুর। ও অন্যান্য যাবতীয় জীব, এমনকি মানুষও তাহার বর্তমান রূপে ছিল না। গোড়ার দিকে উহারা সকলেই ছিল এক জাতীয় জলজ পোকা।
প্রকৃতির অমোঘ বিধানে জীবজগতে যে রূপান্তর ঘটিয়া থাকে, বৈজ্ঞানিক পরিভাষায় তাহাকে বলে বিবর্তন (Evolution)। বিবর্তন দুই রকম। যথা –১. মানুষের ইচ্ছা বা বুদ্ধির দ্বারা জন্তু। বা উদ্ভিদের মধ্যে মিলন ঘটাইলে, তাহার ফলে এক ঈপ্সিত স্বতন্ত্র জাতির উৎপত্তি হয় –ইহাকে বলা হয় কৃত্রিম নির্বাচন (Artificial Selection), ২. ইচ্ছা বা বিচারবুদ্ধির বালাই নাই, স্বাভাবিকভাবেই বিভিন্ন প্রাণীর মিলন সংঘটন ও নব নব জাতির বিকাশ হইয়া থাকে– ইহাকে বলা হয় প্রাকৃতিক নির্বাচন (Natural selection)। প্রাকৃতিক নির্বাচন ও কৃত্রিম নির্বাচনে পার্থক্য অনেক আছে। প্রধানত কৃত্রিম নির্বাচন বেশি সময়সাপেক্ষ নহে। কিন্তু প্রাকৃতিক নির্বাচনে কোনো প্রাণীর এতটুকু রূপান্তর ঘটিতে সময় লাগে লক্ষ লক্ষ বৎসর।
মেণ্ডেলপন্থী বিজ্ঞানীগণ জীববিজ্ঞানে বিশেষত চিকিৎসা ও উদ্ভিদবিজ্ঞানে তথা কৃষিক্ষেত্রে নানাবিধ অলৌকিক কার্য সম্পাদন করিতেছেন। আমেরিকার স্বনামখ্যাত লুথার মানুষের চাহিদা বা পরিকল্পনানুযায়ী অল্প সময়ের মধ্যে নানারকম নুতন জাতীয় ফুল, ফল বা ফসলের গাছ উৎপন্ন করিয়া দিয়া উদ্ভিদজগতে যুগান্তর আনয়ন করিয়াছেন। আর প্রাকৃতিক নির্বাচনে বানরের লেজ খসিতে, মস্তিষ্ক বড় হইতে এবং সামান্য কিছু কিছু অবয়বগত পরিবর্তন হইতে সময় লাগিয়াছে সাত কোটি বৎসর।
বিবর্তন কেন হয় এবং কি রকম হয়, এই সকলের বিশদ আলোচনা করা এই ক্ষুদ্র পুস্তকে অসম্ভব এবং যাবতীয় জীবের বিবর্তনের বিষয় আলোচনা করাও সম্ভব নহে। আমরা শুধু মানুষ জাতির বিবর্তনের মাত্র প্রধান প্রধান ধাপগুলির আলোচনা করিব।
বিজ্ঞানীগণ বলেন যে, জন্মের সময় পৃথিবীর তাপ সূর্যের বহিরাবরণের তাপের সমান ছিল। অতঃপর তাহা বিকীর্ণ হইয়া জীবসৃষ্টির অনুকূল তাপের সৃষ্টি হইতে সময় লাগিয়াছে প্রায় ২০০ কোটি বৎসর। ইহার পর প্রায় ১৫০ কোটি বৎসর হইল পৃথিবীতে জীবনের আবির্ভাব ঘটিয়াছে এবং চোখের দেখায় চিনিতে পারার মতো জীবের সৃষ্টি হইয়াছে মাত্র ৫০ কোটি বৎসরের মধ্যে। কিন্তু উহার মধ্যে ৫ হাজার বৎসরের বেশি সময়ের লিখিত ইতিহাস মানুষের হাতে নাই।
এখন প্রশ্ন হইতে পারে যে, অনন্ত অতীতের বহু খবর মানুষ জানিতে পাইয়াছেন ধর্মগুরুদের কাছে এবং ধর্মগুরুরা পাইয়াছেন প্রত্যাদেশরূপে বা সৃষ্টিকর্তার সাথে আলাপ-আলোচনা করিয়া; বিজ্ঞানীগণ উহা পাইলেন কোথায়?
এই কথা সত্য যে, বিজ্ঞানীগণ কোনোরূপ প্রত্যাদেশ বা সৃষ্টিকর্তার দেখা-সাক্ষাত পান নাই। তাঁহারা বলেন যে, সৃষ্টির ইতিহাস লেখা আছে সৃষ্ট পদার্থের গর্ভে। তাহারা যে লিপির সাহায্যে অতীতকালের জীবেতিহাস জানিতেছেন, তাহার নাম জীবাশ্ম বা ফসিল (Fossil)।
.
# ফসিল কি?
ভূতত্ত্ব হইতে জানা যায় যে, পৃথিবীর সমতল ভূমি ও সমুদ্রতল স্তরে স্তরে সজ্জিত আছে। পর্বতাদি হইতে নদীর জল পলি আনিয়া প্রতি বৎসর সমতলভূমি বা সমুদ্রতলে উহা বিছাইয়া দেওয়ার ফলে ঐ স্তরের সৃষ্টি হয়। ক্রমশ স্তর যতই উঁচু হইতে থাকে, ইহাতে নিম্নাঞ্চলের মাটি কঠিন হইয়া পাথরের আকৃতি ধারণ করে। ভূবিজ্ঞানীগণ বিভিন্ন স্তরের প্রকৃতি ও গুণাগুণ পরীক্ষা করিয়া বলিতে পারেন যে, কোন্ স্তরের বয়স কত।
গাছের গুঁড়ি বহুকাল মাটির নিচে চাপা পড়িয়া থাকিলে উহা পাথরের আকার ধারণ করে। এই অবস্থায় উহাকে আমরা পাথর কয়লা বলি। ঐরূপ কোনো জন্তুর দেহ বহুকাল মাটির নিচে চাপা পড়িয়া থাকিলে উহার কতকালসমূহ পাথরের আকার ধারণ করে। বৈজ্ঞানিক পরিভাষায় উহাকে বলা হয় জীবাশ্ম বা ফসিল। সেই স্তর সৃষ্টি হইবার সমকালে ভূপৃষ্ঠে যে জীব বর্তমান ছিল, সেই জীবের দেহের কিছু না কিছু চিহ্ন সেই স্তরে থাকিয়া গিয়াছে এবং উহা ফসিলরূপে বর্তমান আছে। বলা বাহুল্য যে, ভূগর্ভস্থ যে স্তর যত নিমে, সেই স্তর তত পুরাতন এবং যে স্তর যত উপরে, সেই স্তর তত আধুনিক। ভূগর্ভস্থ কোনো বিশেষ স্তরে প্রাপ্ত ফসিল পর্যবেক্ষণ করিয়া বিজ্ঞানীগণ বলিতে পারেন যে, ঐ জন্তুটি কোন যুগে বা কত বৎসর পূর্বে বর্তমান ছিল এবং উহার আকৃতি, প্রকৃতি, চাল-চলন এমনকি আহার-বিহার কি রকম ছিল।
.
# যুগ বিভাগ
হিন্দুশাস্ত্র মতে, যুগ চারিটি। যথা –সত্য, ত্রেতা, দ্বাপর ও কলি.। বৈশাখ মাসের শুক্লপক্ষীয় তৃতীয়ায় রবিবারে সত্য যুগের উৎপত্তি হয়। এই যুগের পরিমাণ ১৭,২৮,০০০ বৎসর। এই যুগে মৎস্য, কুর্ম, বরাহ ও নৃসিংহ– এই চারি অবতার। সত্যযুগে বৈবস্বত, মনু, ইক্ষাকু, বলি, পৃথু, মান্ধাতা, পুরোরবা প্রভৃতি রাজা ছিলেন। মানবগণের লক্ষ বৎসর পরমায়ু ও একবিংশতি হস্ত পরিমিত দেহ ছিল।