পাইওনিয়ার ৪
১৯৫৯ সালের ৩ মার্চ তারিখে আমেরিকার বিজ্ঞানীগণ এই গ্রহটিকে আকাশে নিক্ষেপ করেন। ইহার ওজন মাত্র ১৩.৪ পাউণ্ড। এই ক্ষুদ্র গ্রহটি ৩৯২ দিনে একবার সূর্যকে প্রদক্ষিণ করিয়া আসে। সূর্য হইতে ইহার গড় দূরত্ব ৯ কোটি ৬৬ লক্ষ ৫০ হাজার মাইল। কিন্তু ইহা কমিয়া কোনো সময় হয় ৯ কোটি ২২ লক্ষ মাইল, আবার বৃদ্ধি পাইয়া হয় ১০ কোটি ৬১ লক্ষ মাইল।
লুনিক ১ এবং পাইওনিয়ার ৪ –এই উভয় গ্রহের কক্ষপথ পৃথিবী ও মঙ্গল গ্রহের কক্ষপথের মাঝখানে অবস্থিত। তবে উহার কোনোও অংশ পৃথিবীর কক্ষপথকে ছেদ করিয়াছে, কিন্তু মঙ্গলের কক্ষপথকে কোথায়ও ছেদ করে নাই। বিজ্ঞানীদের মতে, পাইওনিয়ার ৪ আকাশে থাকিয়া অনন্তকাল সূর্যকে প্রদক্ষিণ করিতে থাকিবে।
আলোচ্য গ্রহ ও উপগ্রহদের কাহাকেও দূরবীন ব্যতীত খালি চোখে দেখা সম্ভব নহে।
————
১৫. প্রকৃতি, রামেন্দ্রসুন্দর ত্রিবেদী, পৃ. ৮।
১৬. মহাকাশের ঠিকানা, অমল দাসগুপ্ত, পৃ. ৫৭–৫৯।
১৭. পৃথিবীর ঠিকানা, অমল দাসগুপ্ত, পৃ. ৮৩-৮৪।
১৮. মহাকাশের ঠিকানা, অমল দাসগুপ্ত, পৃ. ২৯।
১৯. মহাকাশের ঠিকানা, অমল দাসগুপ্ত, পৃ. ৫৫-৫৭।
২০. মহাকাশের ঠিকানা, অমল দাসগুপ্ত, পৃ. ১৮৩।
২১. মহাকাশের ঠিকানা, অমল দাসগুপ্ত, পৃ. ১৮১।
২২. সরল বাঙ্গালা অভিধান, সুবলচন্দ্র মিত্র, পৃ. ৪৩২।
২৩. মহাশূন্য থেকে দেখা পৃথিবী, মীর ফখরুল কাইয়ূম (অনুবাদক), পৃ. ৭২।
০৯. বিজ্ঞান মতে সৃষ্টিতত্ত্ব (জীব বিষয়ক)
বিজ্ঞান মতে সৃষ্টিতত্ত্ব
জীব বিষয়ক
জীবন রহস্য জানার কৌতূহলটি মানবমনে বহুদিনের পুরাতন। এই কৌতূহলের নিবৃত্তির জন্য মানুষ বহু মতবাদের জন্ম দিয়াছে। কিন্তু তন্মধ্যে প্রাধান্য লাভ করিয়াছে মাত্র দুইটি। উহার একটি হইল সৃষ্টিবাদ, অপরটি বিবর্তনবাদ।
বর্তমান জগতে আমরা যত রকম গাছপালা ও জীব-জানোয়ার দেখিতেছি, ঈশ্বর নামক এক পরম পুরুষ তাহার প্রত্যেকটিকে বর্তমান রূপেই সৃষ্টি করিয়া পৃথিবীতে ছাড়িয়া দিয়াছেন; ইহাদের মধ্যে কাহারও ‘জাতিগত রূপ’-এ কোনো পরিবর্তন বা নূতনত্ব নাই; ইহারা প্রত্যেকে নিজ নিজ জাতিগত রূপ ও চরিত্রগত বৈশিষ্ট বজায় রাখিয়া বংশবৃদ্ধি করিতেছে মাত্র –সাধারণত এইরূপ ধারণাকে বলা হয় সৃষ্টিবাদ এবং জড় কিংবা জীবজগতে এক-এর রূপান্তরে বহুর উৎপত্তি – এইরূপ ধারণাকে বলা হয় বিবর্তনবাদ।
পূর্বে আলোচিত বেদ ও বাইবেলাদির সৃষ্টিতত্ত্বসমূহ সৃষ্টিবাদের অন্তর্ভুক্ত এবং সামান্য মতানৈক্য থাকিলেও জগতের যাবতীয় ধর্মীয় মতবাদই সৃষ্টিবাদের আওতাভুক্ত। জগত ও জীবনের সৃষ্টি সম্বন্ধে যাবতীয় বিজ্ঞানীদের সর্বস্বীকৃত যে মত, তাহাই বিবর্তনবাদ। এই বিষয়ে বিশেষ আলোচনা পরে করিব।
.
# প্রাণ কি?
প্রাণ কি, এই প্রশ্নের উত্তর এক কথায় দেওয়া কাহারও পক্ষে সম্ভব নহে। তাহার কারণ এই যে, প্রাণ মানুষের ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য নহে।
আমরা প্রাণের অস্তিত্ব অনুভব করিতে পারিব না তাহার লক্ষণ ব্যতিরেকে। প্রাণের লক্ষণ প্রধানত স্পন্দন ক্ষমতা, বোধশক্তি, খাদ্যের সাহায্যে দেহপুষ্টি, বংশবৃদ্ধি ইত্যাদি। ইহার মধ্যে, খাদ্যের সাহায্যে দেহপুষ্টি ও বংশবৃদ্ধি –এই দুইটি প্রধান এবং সৃষ্টির আদিম প্রক্রিয়া।
ধর্মীয় মতে, জীবন জীবদেহ হইতে ভিন্ন। দেহসৃষ্টির পূর্বে উহা কোথায়ও কোনো অবস্থায় বর্তমান ছিল এবং দেহাবসানের পরেও কোনো অবস্থায় কোথায়ও থাকিবে। এই মতে, দেহ পার্থি এবং জীবন ঐশ্বরিক।
জগতের যাবতীয় কার্যাবলীর মধ্যে যে সকল কার্যের কারণসমূহ সাধারণ মানুষের সহজবোধ্য, তাহাকে পার্থিব এবং যে সকল কার্যের কারণসমূহ সহজবোধ্য নহে, তাহাকে ঐশ্বরিক বলাই ধর্মীয় মতবাদের নীতি। বিশেষত যে সকল ঘটনাকে ঐশ্বরিক বলা হয়, তাহার কোনো কারণ খোঁজ করিতে যাওয়াও ধর্মীয় মতে নিষেধ। বরং বলা হয়, উহা গুরুতর অন্যায় বা মহাপাপ। কিন্তু বিজ্ঞানের নীতি হইল অজানাকে জানা ও অচেনাকে চেনা। তাই ধর্মের শত বাধা-নিষেধ সত্ত্বেও বিজ্ঞানীগণ প্রাণসৃষ্টির রহস্য উদঘাটনের প্রচেষ্টায় বিরত থাকিতে পারেন নাই। বিজ্ঞানীগণ এই প্রচেষ্টায় যেটুকু সাফল্য লাভ করিয়াছেন, এখন তাহার সামান্য আলোচনা করিব।
.
# জৈব পদার্থ
আমরা পূর্বের আলোচনায় জানিয়াছি যে, জগতের যাবতীয় পদার্থ দুই জাতীয় –মৌলিক ও যৌগিক। আবার যে সব পদার্থের দ্বারা উদ্ভিদ ও জীবদেহ তৈয়ারী, তাহাকে বলা হয় জৈব পদার্থ, বাকিগুলিকে বলা হয় অজৈব।
জৈব ও অজৈব পদার্থের মধ্যে আসল পার্থক্য এই যে, জৈব পদার্থের প্রত্যেকটি অণুর কেন্দ্রে সব সময়ই থাকে একটি মৌলিক পদার্থের পরমাণু– কার্বন। কোনো অজৈব পদার্থের অণুর কেন্দ্রে কখনও কার্বন থাকে না। কার্বনকে বাংলা ভাষায় বলা হয় অগার। যে কোনো জৈব পদার্থ পোড়াইলে অঙ্গার পাওয়া যায়। কিন্তু কোনো অজৈব পদার্থ পোড়াইলে কখনও অঙ্গার পাওয়া যায় না। যেমন –কাঁচ, পাথর বা কোনো ধাতু পোড়াইয়া কিছুতেই অঙ্গার পাওয়া যাইবে না। যেহেতু তাহাদের কোনো অণুর কেন্দ্রেই কার্বন বা অঙ্গর নাই।
জৈব পদার্থের মুখ্য উপাদান কার্বন হইলেও তাহার সাথে পদার্থবিশেষে মিশিয়া থাকে হাইড্রোজেন, অক্সিজেন, নাইট্রোজেন, গন্ধক, ফসফরাস এবং আরও অনেক পদার্থ। জৈব পদার্থের অণুর গর্ভে কার্বনের সঙ্গে ইহাদের বিভিন্ন জাতীয় পরমাণুর বিভিন্ন ভঙ্গিতে মিলনের ফলে জন্ম হয় বিভিন্ন জাতীয় জৈব পদার্থের। যেমন –কার্বন ও হাইড্রোজেন মিলিয়া হয় হাইড্রোকার্বন। আর ইহা হইতে হয় নানাবিধ খনিজ তৈল বা ঐ জাতীয় যাহা কিছু।