হিন্দুশাস্ত্র মতে –সুর্যের ঔরসে তৎপত্নী ছায়ার গর্ভে শনির জন্ম হয়। যমের হিসাবলেখক কর্মচারী চিত্রগুপ্তের কন্যার সহিত শনির বিবাহ হয়। একদা তাহার স্ত্রীর সহিত ঝগড়া হইলে স্ত্রী তাহাকে এই বলিয়া অভিশাপ দেয় যে, সে যাহার প্রতি দৃষ্টিপাত করিবে, তাহাই বিনষ্ট হইবে। অতঃপর মহাদেবের পুত্র গণেশের জন্ম হইলে অন্যান্য দেবতার সহিত শনি গণেশকে দেখিতে যায় এবং দৃষ্টিপাত করিতেই গণেশের মুণ্ড উড়িয়া যায়। তৎক্ষণাৎ একটি হাতির মুণ্ড আনিয়া গণেশের স্কন্ধে লাগাইলে গণেশ বাঁচিয়া যায় এবং তাহাতে গণেশ ‘গজানন’ অর্থাৎ ‘হস্তিমুণ্ড’ হয়।
ঐ সকল কাহিনী গাঁজার পর্যায়ে পড়িলেও শাস্ত্রকারের কল্পনার মূল্য আছে এবং সেজন্য শাস্ত্রকার ধন্যবাদের পাত্র।
.
# ৭. ইউরেনাস
পূর্বে আলোচিত ছয়টি গ্রহ এবং পৃথিবীর একটি উপগ্রহ সম্বন্ধে আগেকার জ্যোতিষীদের কিছু কিছু তত্ত্ব জানা ছিল। বাকি গ্রহ-উপগ্রহগুলি দূরবীন তৈয়ারীর পরের আবিষ্কার। অপেক্ষাকৃত শক্তিশালী দূরবীন আবিষ্কারের সাথে সাথে গ্রহ-উপগ্রহদের সংখ্যা বাড়িয়াছে, হয়তো ভবিষ্যতে আরও বাড়িতে পারে।
শনির ভ্রমণপথের বাহিরে ইউরেনাসের ভ্রমণপথ। ইহার ব্যাস ৩২,৮৮০ মাইল, পৃথিবীর ব্যাসের প্রায় চারিগুণ। সূর্য হইতে ইহার দূরত্ব ১৭৮ কোটি মাইল এবং প্রতি সেকেণ্ডে ৪.২ মাইল বেগে চলিয়া ৮৪.০১ বৎসরে একবার সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে। অর্থাৎ ইউরেনাসের এক বৎসর পৃথিবীর প্রায় ৮৪ বৎসরের সমান। ইউরেনাস নিজ মেরুদণ্ডের উপরে একবার আবর্তিত হয় ১০ ঘণ্টা ৪৫ মিনিটে। সুতরাং ইউরেনাসের দিন-রাত শনির দিন-রাতের চেয়ে ২৯ মিনিট বড়।
এই পর্যন্ত ইউরেনাসের পাঁচটি চাঁদের সন্ধান পাওয়া গিয়াছে। নিকটবর্তী চাঁদটির নাম আরিয়েল। এই চাঁদটি ১ লক্ষ ২০ হাজার মাইল দূরে থাকিয়া প্রায় আড়াই (২.৫২) দিনে ইউরেনাসকে একবার প্রদক্ষিণ করে। দূরতম চাঁদটির নাম মিরাণ্ডা। এই চাঁদটির দূরত্ব কত, তাহা এখনও নিণীত হয় নাই। তবে ইউরেনাসকে একবার প্রদক্ষিণ করিতে ইহার সময় লাগে প্রায় দেড় (১.৪০) দিন।
ইউরেনাসের দেহের বস্তুপুঞ্জের গড় গুরুত্ব ১.২৭ এবং আয়তন ৬৪টি পৃথিবীর সমান। কিন্তু ওজনে ইউরেনাস ১৫টি পৃথিবীর সমানও নহে, পৃথিবীর তুলনায় মাত্র ১৪.৭ গুণ।
ইউরেনাসের নিষ্ক্রমণ বেগ ১৪.০০ মাইল। ইহা পৃথিবীর নিষ্ক্রমণ বেগের দ্বিগুণ। সুতরাং ইউরেনাসের আকাশের কোনো বায়বীয় পদার্থের একটি অণুও ইউরেনাসকে ছাড়িয়া পলাইতে পারে নাই। ইহার তাপ হিমাঙ্কের ১৮০° সে. নিচে। কাজেই সেখানে একবিন্দু জলও নাই, সমস্তই বরফ হইয়া আছে।
ইউরেনাসের জলবায়ু মোটামুটি শনিগ্রহের জলবায়ুর অনুরূপ। সুতরাং সেখানে কোনোরূপ জীব থাকিতে পারে না।
.
# ৮. নেপচুন
ইউরেনাসের পরেই নেপচুনের ভ্রমণপথ। দূরত্ব সূর্য হইতে ২৭৯ কোটি ৭০ লক্ষ মাইল। আয়তনে নেপচুন ৬০টি পৃথিবীর সমান। আপেক্ষিক গুরুত্ব ১.৫৮ মাত্র। কাজেই আয়তনের তুলনায় নেপচুনের ওজন কম, প্রায় ১৭টি পৃথিবীর সমান (১৭.২)। প্রতি সেকেণ্ডে ৩.৪ মাইল পথ চলিয়া প্রায় ১৬৫ (১৬৫.৭৮৮) বৎসরে নেপচুন একবার সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে। সুতরাং পৃথিবীর ১৬৫ বৎসরের সমান নেপচুনের এক বৎসর। বৎসরটি এত বড় হইলেও নেপচুনের দিন-রাত পৃথিবীর দিন-রাতের চেয়ে ছোট, মাত্র ১৫ ঘণ্টা ৪০ মিনিট।[২১]
ট্রাইটান ও নেরেইড নামে নেপচুনের দুইটি চাঁদ আছে। প্রথমটি ২,২১,৫০০ মাইল দূরে থাকিয়া প্রায় পৌনে ছয় (৫.৮৮) দিনে নেপচুনকে একবার প্রদক্ষিণ করে। দ্বিতীয়টির কক্ষ পরিক্রমা ও দূরত্ব সঠিকভাবে এখনও জানা যায় নাই।
নেপচুনের নিষ্ক্রমণ বেগ ১৫.০০ মাইল; ইহা পৃথিবীর নিষ্ক্রমণ বেগের দ্বিগুণেরও বেশি। নেপচুনের তাপ ইউরেনাসের তাপের চেয়ে অনেক কম। কাজেই নেপচুনের জলবায়ুর প্রকৃতি ইউরেনাস বা শনি গ্রহের মতোই। সুতরাং সেখানে জীবের অস্তিত্ব নাই।
.
# ৯. প্লুটো
ইহার দূরত্ব সূর্য হইতে ৩৬৭ কোটি মাইল। সেকেণ্ডে প্রায় তিন (২.৯) মাইল গতিতে চলিয়া প্রায় ২৪৮ (২৪৭.৬৯৭) বৎসরে লুটো একবার সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে। নেপচুনের রাস্তার চেয়ে লুটোর রাস্তা বড় এবং চলন ধীর। তাই আমাদের পৃথিবীর প্রায় ২৪৮ বৎসরের সমান পুটোর এক বৎসর। পৃথিবীতে যাহার বয়স ২০ বৎসর, প্লুটোর রাজ্যে তাহার বয়স এক মাসেরও কিছু কম।
প্লুটো গ্রহটি আছে সৌরজগতের দূর প্রান্তে এবং আকারও তাহার বেশি বড় নহে। এই দুই কারণে পুটো সম্বন্ধে বেশি কিছু বিজ্ঞানীরা এখনও জানিতে পারেন নাই। অপেক্ষাকৃত শক্তিশালী দূরবীনের আবিষ্কার হইলে প্লুটো সম্বন্ধে অনেক অজানা বিষয় জানা যাইবে। বিশেষত বিজ্ঞানীদের শুক্র ও মঙ্গলাভিযান সফল হইলে মহাবিশ্বের অনেক নূতন তথ্য অবগত হওয়া যাইবে।
.
# ১০. ভালকান ও ১১. পসিডন
বিগত কয়েক বৎসর যাবত প্লুটো গ্রহটিকেই সৌররাজ্যের সীমান্তের গ্রহ বলিয়া মনে করা হইত। ইদানিং তাহারও বাহিরে ভালকান ও পসিডন নামে আরও দুইটি গ্রহ আবিষ্কৃত হইয়াছে। সূর্য হইতে পসিডন গ্রহটির দূরত্ব প্রায় ৭১৭ কোটি ৯০ লক্ষ মাইল। সদ্য আবিষ্কৃত বলিয়া উহাদের সম্বন্ধে অন্যান্য কোনো তথ্য এখনও জানা যায় নাই। হয়তো অতিশয় দূরে অবস্থিত বলিয়া অন্যান্য গ্রহদের ন্যায় উহাদের সম্বন্ধে তত বেশি তথ্য কখনও জানা যাইবে না।