পূর্বকালে ঋষি বিশ্বামিত্রকে ঘোর তপস্যারত দেখে ইন্দ্র ভীত হয়ে তার তপস্যাভঙ্গের জন্য অপ্সরা মেনকাকে প্রেরণ করেন। সর্বাঙ্গসুন্দরী বিবস্ত্রা মেনকার রূপে মুগ্ধ হয়ে বিশ্বামিত্ৰ মেনকার সহিত মিলিত হয় । এই মিলনের ফলে বিশ্বামিত্রের ঔরসে ও অপ্সরা মেনকার গর্ভে কন্যা শকুন্তলার জন্ম হয়। শকুন্তলার জন্মের পর বিশ্বামিত্র অপ্সরা মেনকাকে বিদায় দিয়ে আবার তপস্যায় রত হন । তখন মেনকা সদ্যজাতা কন্যাকে বনমধ্যে মালিনী নদীর তীরে পরিত্যাগ করে ইন্দ্ৰসভায় প্ৰস্থান করেন। এই পরিত্যক্ত কন্যা শকুন্ত অর্থাৎ পক্ষী কর্তৃক রক্ষিত হয় ও মহৰ্ষি কন্বের দৃষ্টিপথে পতিত হয় । মহর্ষি কন্ব নিজের আশ্রমে এনে একে নিজ কন্যার ন্যায় পালন করতে থাকেন। শকুন্ত কর্তৃক রক্ষিত বলে কন্যাটির নাম হয় শকুন্তলা । গন্ধৰ্বরাজ বিশ্বাবসুর ঔরসেও অপ্সরা মেনকার গর্ভে প্ৰমদ্বারা নামে এক কন্যা হয় । জন্মের পর মেনকা প্ৰমদ্বারাকে পরিত্যাগ করলে মহৰ্ষি স্থূলকেশ্ তাকে নিজ আশ্রমে এনে পালন করেন। রুরু মুনির সঙ্গে তার বিবাহ হয়।
ইন্দ্ৰ সব সময়েই সন্ত্রস্ত হয়ে থাকতেন, পাছে কেউ কঠোর তপস্যা করে তাঁর ইন্দ্ৰত্ব কেড়ে নেয় । সেজন্য ইন্দ্ৰ স্বর্গের বারযোষিতদের নিযুক্ত করতেন তাদের তপস্যা ভঙ্গ করবার জন্য। একটা প্রাসঙ্গিক প্রশ্ন এখানে তোলা যেতে পারে । স্বর্গের এসব বারযোষিতদের মধ্যে সবচেয়ে বেশী সুন্দরী ছিল কে ? মনে হয় তিলোত্তমাই সবচেয়ে বেশী সুন্দরী ছিল । সেটা তিলোত্তমার উৎপত্তি থেকে আমরা জানতে পারি । এ সম্বন্ধে উপাখ্যানটি এখানে বিবৃত করা যেতে পারে । একবার দৈত্যরাজ নিষ্কুম্ভের দুই পুত্র সুন্দ ও উপসুন্দ ব্ৰহ্মার কঠোর তপস্যা করে ত্ৰিলোক বিজয়ের জন্য অমরত্ব প্রার্থনা করে । কিন্তু ব্ৰহ্মা তাদের অমরত্বের বর না দিয়ে বলেন যে ত্রিলোকের কোন প্রাণীর হাতে তাদের মৃত্যু হবে না। যদি কখনও তাদের মৃত্যু হয় তবে পরস্পরের হাতে হবে । এই বর পাবার পর তারা আবার দেবতাদের পীড়ন করতে থাকে, তখন দেবতারা ব্ৰহ্মার কাছে যায়। ব্ৰহ্মা বিশ্বকর্মাকে এক পরমাসুন্দরী নারী সৃষ্টি করতে বলেন । ত্ৰিভুবনের সমস্ত উত্তম জিনিস তিল তিল করে সংগ্ৰহ করে বিশ্বকর্মা এক অতুলনীয় সুন্দরী নারী সৃষ্টি করে। এই কারণেই তার নাম হয় তিলোত্তমা । সৃষ্টির পর তিলোত্তমা দেবতাদের প্রদক্ষিণ করে । তাকে দেখবার জন্য ব্ৰহ্মার চারদিকে চারটি মুখ সৃষ্টি হয় ও ইন্দ্রের সহস্ৰ চক্ষু হয় । তাকে সুন্দ ও উপসুন্দকে প্ৰলুব্ধ করবার জন্য পাঠিয়ে দেওয়া হয় । তিলোত্তমা তাদের সামনে গিয়ে নৃত্য করতে থাকে । সুন্দ ও উপসুন্দ তিলোত্তমার রূপে মুগ্ধ হয়ে তাকে পাবার জন্য পরস্পর যুদ্ধে প্ৰবৃত্ত হয়, এবং সেই যুদ্ধেই তারা পরস্পরের হাতে নিহত হয়। ব্ৰহ্মবৈবর্তপুরাণ অনুযায়ী তিলোত্তমা একবার দুর্বাশা মুনির ধ্যান ভঙ্গ করতে গেলে দুর্বাশার শাপে বাণের কন্যা ঊষারূপে জন্মগ্রহণ করে ।
অপ্সরা ঘৃতাচী, দু’দুজন ঋষিকে কাৎ করেছিলেন । তার মধ্যে একজন হচ্ছেন ভরদ্বাজ ঋষি। মহাভারতের আদিপর্ব অনুযায়ী ওই ঋষি গঙ্গোত্তরী প্রদেশে বাস করতেন। একদিন স্নানরতা অপ্সরা ঘৃতাচীকে দেখে তার রেতস্খলন হয়। ওই বীৰ্য তিনি কলসের মধ্যে রাখেন এবং তা থেকে কৌরবদের শিক্ষাগুরু দ্রোণের জন্ম হয়। ভাগবত ও বিষ্ণুপুরাণ অনুযায়ী বশিষ্ঠের ঔরসে অপ্সরা ঘৃতাচীর গর্ভে কপিঞ্জলের জন্ম হয় । চ্যবন ও সুকন্যার পুত্র প্রমতির ঔরসেও ঘৃতাচীর গর্ভে রুরু নামে এক পুত্র হয় । ( আগে মেনকা দেখুন )। রামায়ণের আদিকাণ্ড অনুযায়ী রাজৰ্ষি কুশানাভ ও ঘৃতাচীর গর্ভে একশত পরম রূপবতী কন্যা উৎপাদন করেছিলেন। বর্গাও একজন অপ্সরা । একদিন চার সহচরীর সঙ্গে তিনি ইন্দ্রসভা থেকে ফিরছিলেন। পথে এক তপস্যারত ব্রাহ্মণের সঙ্গে তাদের দেখা হয় । তারা এই ব্ৰাহ্মণের তপোভঙ্গ করবার জন্য তাকে প্রলুব্ধ করতে থাকে। ব্রাহ্মণ ক্রুদ্ধ হয়ে অভিশাপ দেন যেন শতবর্ষ তারা কুম্ভীর হয়ে জলে বাস করে। অনেক অনুনয় বিনয়ের পর ব্ৰাহ্মণ প্রশমিত হয়ে বলেন, যদি কোন পুরুষ তাদের জলমধ্য থেকে তোলেন, তবেই তারা তাদের পূর্ব রূপ ফিরে পাবে। অর্জুন একসময় তীর্থভ্ৰমণ করতে এসে শোনেন যে ওই তীর্থে পাঁচটি কুম্ভীর বাস করে এবং তারা মানুষকে জলের মধ্যে টেনে নেয় । জলের মধ্যে অৰ্জুনের পা আঁকড়ে ধরলে, অৰ্জুন সবলে তাকে তুলে ধরে। সঙ্গে সঙ্গে সে সুন্দরী নারীরূপ পায় । সেই অপ্সরা বর্গা ওইভাবে অৰ্জুন তার সহচরীদেরও উদ্ধার করে । এ কাহিনীটা মহাভারতের আদিপর্বে আছে।
আর একজন অপ্সরাা পঞ্জিকাস্থলা । পঞ্জিকাস্থলা পঞ্চচূড়াবিশিষ্ট অপ্সরাদের অন্যতম । ইন্দ্র একবার মার্কণ্ডেয় মুনির তপোভঙ্গের জন্য পঞ্জিকাস্থলাকে নিযুক্ত করেছিলেন। কিন্তু পঞ্জিকাস্থলাকে ব্যর্থ হয়ে ফিরে আসতে হয়েছিল । একবার পঞ্জিকাস্থলা যখন ব্ৰহ্মার কাছে যাচ্ছিল, তখন রাবণ তাকে বিবসনা করেছিল । ব্ৰহ্মা একথা শুনে রাবণকে অভিশাপ দিয়েছিলেন যে ভবিষ্যতে কোন স্ত্রীলোকের প্রতি বলপ্রয়োগ করলে তার মস্তক শতধা চুৰ্ণ হবে। এই অপ্সরাাই বানররাজ কেশরীর স্ত্রী অঞ্জনা রূপে জন্মগ্রহণ করেছিলেন । পবনদেব এর গর্ভে হনুমানকে উৎপাদন করেছিলেন ।