(৬) স্বামী বা স্ত্রীর কেউ যদি অন্য কোন ধর্ম সম্প্রদায়ে যোগদান করে সংসার ত্যাগ করে।র
(৭) স্বামী বা সস্ত্রীর মধ্যে কেউ যদি ক্ৰমান্বয়ে সাত বৎসর নিরুদিষ্ট থাকে।
(৮) যেখানে জুডিশিয়াল সেপারেশনের ডিক্রির পর উভয়পক্ষ আর স্বামী-স্ত্রীরূপে সহবাস করেনি
(৯) যদি রেস্টিটিটিউশন অভ কনজুগাল রাইটস-এর ডিক্রি হবার পর কোন একপক্ষ সেই ডিক্রি অমান্য করে অপর পক্ষ থেকে ক্ৰমান্বয়ে দু’বৎসর পৃথক বসবাস করে।
এছাড়া আরও দু’টি কারণে স্ত্রী আদালতের কাছে বিবাহ-বিচ্ছেদের জন্য প্রার্থনা করতে পারে। এ দলটি কারণের প্রথমটি হচ্ছে—যদি এক স্ত্রী বিদ্যমান থাকতে স্বামী অন্য স্ত্রী গ্রহণ করে থাকে এবং আদালতে প্রার্থনা করবার সময় সেই স্ত্রী জীবিত থাকে। দ্বিতীয় কারণ হচ্ছে–স্বামী যদি বলাৎকরণ, পুংমৈথুন বা কোনরূপে অস্বাভাবিক যৌনকর্মে লিপ্ত হয়ে থাকে।
১৯৫৫ সালের বিবাহ আইন সম্পর্কে তিনটি কথা বলা প্রয়োজন। প্রথম, বিবাহ সিদ্ধ হবার সময় থেকে তিন বৎসরের পূর্বে কোন পক্ষ আদালতে বিবাহ-বিচ্ছেদের কোন দরখাস্ত করতে পারবে না, দ্বিতীয়, আদালত কর্তৃক বিবাহ-বিচ্ছেদের নির্দেশ দেবার পর যদি তার বিপক্ষে কোন আপীল না করা হয়ে থাকে তাহলে এক বছর অপেক্ষা করে উভয় পক্ষই পুনরায় বিবাহ করতে পারে। (যদি বিবাহ না করে তাহলে আদালত খোরপোষের দাবি গ্রাহ্য করতে পারে), এবং তৃতীয়, আদালত কর্তৃক বিবাহ-বিচ্ছেদের নির্দেশ দেওয়া সত্ত্বেও ওই নিদেশের পাবে স্ত্রী যে সন্তান গর্ভে ধারণ করেছে সে সন্তান বৈধ বলে গণ্য হবে।
আশা করা হয়েছিল যে এই আইন প্রণয়নের ফলে হিন্দু-বিবাহ যে শুধু গণতান্ত্রিকতা লাভ করবে তা নয়, বিবাহিতা হিন্দু নারী সামাজিক ও পারিবারিক নিষ্ঠুরতা ও অন্যায়ের হাত থেকে নিষ্কৃতি লাভ করবে। কিন্তু আমাদের সে আশা আজ বিনষ্ট। নারী-মুক্তির পরিবর্তে এসেছে নারী নির্যাতন। প্রতিদিনই খবরের কাগজে একটি-দু’টি বধূ নিধনের খবর প্রকাশিত হয়। আদিম বর্বরতার বশীভূত হয়ে শ্বশুর শাশুড়ি, ননদ-দেবর, এমন কি স্বামী সকলেই হয় আগুনে পুড়িয়ে নয়তো গলায় ফাঁস লাগিয়ে বা বিষ খাইয়ে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে। শিক্ষিত, অশিক্ষিত সব ধরনের মেয়েই এর শিকার। তাই আজ অধিকাংশ মেয়ের কাছে পবিত্র বিবাহবন্ধন একটা বিভীষিকা হয়ে উঠেছে।
অন্যান্য রাজ্যের তুলনায় বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গেই বধূ হত্যার সংখ্যা ভয়াবহভাবে বেড়ে যাচ্ছে। বধূনিধন যেন একটা খেলাধূলার সামিল হয়ে দাঁড়িয়েছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই প্রতিশ্রুত বা প্রত্যাশিত পণ দিতে না পারাই বধ হত্যার প্রধান কারণ। তবে সমাজ থেকে পণপ্রথা উঠছে না! আইন হয়েছে, কিন্তু সে আইন কেউ মানছে না। পণ দেওয়ানেওয়া পুর্ণোদ্যমেই চলেছে। কেবল তার জন্য কিছ নিরীহ মেয়ের জীবনাবসান ঘটছে।
বধূহত্যা না করে, বনিবনা না হলে অনায়াসেই বিবাহ-বিচ্ছেদের পথ বেছে নেওয়া যায়। তার জন্য আইনও রয়েছে। কিন্তু সে রাস্তায় কেউ পা বাড়বে না। কারণ সেটা ব্যয়সাপেক্ষ ব্যাপার। তার চেয়ে অনেক সুবিধাজনক ও সস্তা হচ্ছে মেয়েটিকে মেরে ফেলা। আজ স্ত্রী শিক্ষার প্রসার যতটা ঘটেছে, তার চেয়ে বেশি প্রবল হয়েছে বধূ নিধনের মত অমানুষিক নৃশংসতা।