ইংরেজ শাসকগণ
১। ক্লাইভ (১৭৫৭-১৭৬০)
২। হলওয়েল (১৭৬০-১৭৬৫)
৩। ক্লাইভ দ্বিতীয় বার (১৭৬৫-১৭৬৭)
৪। ভেরেলস্ট (১৭৬৭- )
৫। কার্টিয়ার ( -১৭৭২)
৬। ওয়ারেন হেস্টিংস (১৭৭২)
গভর্নর জেনারেলগণ
১। ওয়ারেন হেষ্টিংস (১৭৭৩-১৭৮৫)
২। স্যার জন ম্যাকফারসন (১৭৮৫-১৭৮৬)
৩। লর্ড কর্নওয়ালিশ (১৭৮৬-১৭৯৩)
৪। স্যার জন শোর (১৭৯৩-১৭৯৮)
৫। লর্ড ওয়েলেসলী (১৭৯৮-১৮০৫)
পরিশিষ্ট ‘গ’ – সংযোজন
১। অন্ধকূপ হত্যা — অন্ধকূপ হত্যা ইতিহাসের এক বিতর্কিত ব্যাপার। সেজন্য বইয়ের মধ্যে এর উল্লেখ বৰ্জিত হয়েছে। এই বিতর্কের সূত্রপাত করেছিলেন ভোলানাথ চন্দ্র ও অক্ষয়কুমার মৈত্র। জে. লিটল সাহেবও এটাকে অলীক ঘটনা বলে অভিহিত করেছিলেন। এঁরা সকলেই বলেছিলেন যে এটা হলওয়েল সাহেবের (যিনি এই ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ছিলেন) স্বকপোলকল্পিত। প্রেসিডেন্সি কলেজের ইতিহাসের অধ্যাপক ওটেন সাহেব এঁদের বিরোধিতা করেন। এ সম্পর্কে উল্লেখনীয় যে অষ্টাদশ শতাব্দীর মুসলমান লেখক ইউসুফ আলি তার ‘তারীখ-ই-বাংলা-মহব্বত জঙ্গ’ গ্রন্থে ঘটনাটির উল্লেখ করে বলেছেন যে ‘ঘটনাটি সত্যই ঘটেছিল’।
২। পলাশীর যুদ্ধ — পলাশীর যুদ্ধের প্রাক্কালে সিরাজ যখন জানতে পারেন যে মীরজাফর চক্রান্ত করে ইংরেজদের সঙ্গে এক গোপন চুক্তি করেছে, তখন তিনি ভীত হয়ে মীরজাফরের বাড়ি ছুটে যান, ও অনুনয়-বিনয় করে তাকে প্ৰতিশ্রুতিবদ্ধ করান যে সে ইংরেজদের কোনরূপ সাহায্য করবে না। ক্লাইভ যখন এ খবর পান তখন তিনি ভাবেন যে মীরজাফর বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। সন্ত্রস্ত হয়ে তিনি মীরজাফরকে লিখে পাঠান। উত্তরে মীরজাফর বলে যে নবাবের কাছে তার প্রতিশ্রুতি কপট, এবং ইংরেজদের সঙ্গে তার যে চুক্তি হয়েছে, তা সে রক্ষা করবে। মুরশিদাবাদের পথে ইংরেজরা প্ৰথম পাটুলি গ্রামে এসে উপস্থিত হয়। তারপর কাটোয়া দুর্গ অধিকার করে। এখানে ইংরেজরা গড়িমসি করতে থাকে, এখনই আক্রমণ করবে, কি বর্ষার জন্য অপেক্ষা করবে। শেষে তৎক্ষণাৎ আক্রমণ করাই সিদ্ধান্ত করে। এদিকে নবাবের বাহিনী তখন মুরশিদাবাদের ছয় মাইল দক্ষিণে মানকরে এসে পৌঁছেছে। ক্লাইভ যখন পলাশী গ্রামে গিয়ে পৌঁছায়, নবাববাহিনী তখন আগেই সেখানে এসে উপস্থিত হয়েছিল। নবাববাহিনী মীরমদন ও মোহনলাল কর্তৃক পরিচালিত হচ্ছিল। দু’পক্ষই কামান থেকে ভীষণ গোলাবর্ষণ করতে থাকে।
মীরজাফর ক্লাইভকে সংবাদ পাঠায় যে যুদ্ধে যখন মীরমদন ও মোহনলালের পতন ঘটবে, তখন সে ক্লাইভের সঙ্গে যোগ দেবে। অসীম বীরত্বের সঙ্গে যুদ্ধ করতে করতে মধ্যাহ্নকালে কামানের গোলার আঘাতে মীরমদন নিহত হয়। সিরাজ আর একবার মীরজাফরের হাতেপায়ে ধরে যুদ্ধে তার মানরক্ষা করবার জন্য বিনীত প্রার্থনা জানায়। মীরজাফর পরদিন প্ৰভাতে শক্ৰকে প্ৰতিহত করবার প্রতিশ্রুতি দেয়, এবং মোহনলালকে তার শিবিরে ফিরে যেতে বলে। এর পরই মীরজাফর গোপনে ক্লাইভকে সব সংবাদ পাঠিয়ে, তাকে রাত্রিকালে মোহনলালের শিবির আক্রমণ করতে বলে। এদিকে মোহনলাল তার গোলন্দাজবাহিনীসহ শিবিরে প্রত্যাগমন করছে। দেখে নবাববাহিনী ভাবে যে সমস্ত সৈন্যবাহিনীরই প্ৰত্যাগমনের আদেশ হয়েছে। নবাববাহিনীর মধ্যে এক বিশৃঙ্খল অবস্থার উদ্ভব হয় ও সৈন্যগণ ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। এভাবে বিনাযুদ্ধে ক্লাইভ পলাশীতে বিজয়ী হয়।
৩। কালীচরণ ঘোষ — মীরজাফরের বিপরীত চরিত্র প্রদর্শন করেছিল অষ্টাদশ শতাব্দীর এক বাঙালী। নাম তার কালীচরণ ঘোষ। ইস্ট ইণ্ডিয়া কোম্পানীর জঙ্গীবিভাগে করণিকের কাজ করতেন। তৃতীয় মহারাষ্ট্র যুদ্ধে ভরতপুর অবরোধের সময় ইংরেজবাহিনীর সেনাপতি নিহত হলে, তিনি মৃত সেনাপতির পোশাক পরে অসীম বীরত্বের সঙ্গে যুদ্ধ পরিচালনা করে ইংরেজবাহিনীকে বিজয়ী করেছিলেন। বিনা অনুমতিতে সেনাপতির পোশাক ব্যবহারের জন্য সামরিক আইন অনুযায়ী তার জরিমানা হয়। কিন্তু তাঁর প্রত্যুৎপন্নমতিতা ও বীরত্বের জন্য তিনি পুরস্কৃত হন ও উচ্চপদে অধিষ্ঠিত হন। ঘটনাটা উনবিংশ শতাব্দীর গোড়ায় ঘটলেও, কালীচরণ আঠারো শতকেই জঙ্গীবিভাগে কর্মে নিযুক্ত ছিলেন।
৪। এজেন্সী হাউস — কোম্পানির কর্মচারীরা গোপন ব্যবসায়ে লিপ্ত থেকে প্ৰভূত অর্থ উপার্জন করত। গোপন ব্যবসায় যখন নিষিদ্ধ হল ও এরূপে উপার্জিত অর্থ যখন দেশে পাঠানো মুস্কিল হল, তখন তারা এজেন্সী হাউস খুলে সেই টাকা এখানেই ব্যবসায়ে বিনিযুক্ত করল। নীল ও চিনি উৎপাদন ও মাদ্রাজে চাউল ও চীনে অহিফেন রপ্তানীতেই টাকাটা খাটাতে লাগল। আবার কোম্পানির টাকার অনাটন হলে, কোম্পানিকেও তারা টাকা ধার দিত। ১৭৯৬ খ্রীস্টাব্দে কলকাতায় ১৫টি এজেন্সী হাউস ছিল। পরবর্তীকালে এজেন্সী হাউসগুলি ম্যানেজিং এজেন্সী ফর্মের রূপ ধারণ করেছিল। সেকালে এজেন্সী হাউসগুলি সওদাগরী অফিস নামে অভিহিত হত।
৫। ডাকাতি দমন — ছিয়াত্তরের মন্বন্তরের পদাঙ্কে সংঘঠিত সন্ন্যাসী বিদ্রোহের সময় বাঙলার অন্যান্য অঞ্চলের ন্যায় সুন্দরবন অঞ্চলেও ডাকাতির খুব প্ৰাদুৰ্ভাব ছিল। ডাকাতরা ইংরেজ ও অন্যান্য বণিকদের নৌকা প্রায়ই লুট করত। এই ডাকাতদলের নেতা ছিল মহম্মদ হায়াৎ৷ ১৭৯০ খ্রীস্টাব্দে ইংরেজরা মহম্মদ হায়াৎ সমেত এই দলটিকে গ্রেপ্তার করে। মহম্মদ হায়াৎ এর যাবজীবন কারাদণ্ড হয়। তাকে প্রিন্স অভ ওয়েলস দ্বীপে বন্দী করে রাখা হয়।