তাঁর সময়ে ভুষনার জমিদার সীতারাম রায় তাঁর বিরুদ্ধাচরণ করেন। মুরশিদকুলি কয়েকবার তাঁকে দমনের চেষ্টা করেও অক্ষম হন। ফলে তিনি সৰ্ববিষয়েই স্বাধীন রাজার ন্যায় আচরণ করতে থাকেন। পরে ঐশ্বৰ্যমদে মাত্ত হয়ে ওঠায় তার রাজ্যে বিশৃঙ্খলতার উদ্ভব হয়। সেই সুযোগে নবাব সৈন্য তাঁর বাসগ্ৰাম মহম্মদপুর আক্রমণ করে তাঁকে পরাজিত ও বন্দী করেন। কিংবদন্তী অনুযায়ী তাকে শূলে দেওয়া হয়।
জমিদারদের নিপীড়ন ছাড়া, মুরশিদকুলি খান খুব ন্যায়পরায়ণ শাসক ছিলেন। তার বিচার এত পক্ষপাতশূন্য ছিল যে আইনভঙ্গের জন্য তিনি নিজ পুত্রকেও মৃত্যুদণ্ড দিতে কুষ্ঠিত হননি।
মুরশিদকুলি খানের প্রতাপ ও প্ৰতিপত্তি দেখে ত্রিপুরা, কুচবিহার ও আসামের রাজারা এমনভাবে সন্ত্রস্ত হয়েছিল যে তারা তাঁকে মূল্যবান উপঢৌকন পাঠাতেন, এবং মুরশিদকুলি খান তার পরিবর্তে তাদের প্রতীক-পোষাক উপহার দিতেন, যে পোষাক পরিধান করলে নবাবের আনুগত্য স্বীকার করা হয়। প্ৰতি বৎসরই এইরূপ উপঢৌকন ও উপহার বিনিময় করা হত।
তিন
এই সময় হুগলীর ফৌজদার বাঙলার দেওয়ান ও নাজিম থেকে স্বতন্ত্র ও স্বাধীন ছিল। কিন্তু একই রাজ্যের মধ্যে অন্য এক দ্বিতীয় শাসক থাকা অযৌক্তিক প্ৰতিপন্ন করে, মুরশিদকুলি খান সম্রাটের কাছ থেকে অনুমতি সংগ্ৰহ করেন যে ওই পদে তিমি নিজ মনোনীত ব্যক্তিকে নিযুক্ত করবেন। সেই অনুসারে তিনি ওয়ালি বেগ নামে এক ব্যক্তিকে হুগলীর ফৌজদার নিযুক্ত করেন। আপস্থত ফৌজদার জিনুদ্দিন শান্তভাবেই প্ৰস্থান করবার জন্য প্ৰস্তুত হয়, কিন্তু ওয়ালি বেগ যখন অপস্থত ফৌজদারের পেশকার কিঙ্কর সেনকে হিসাবপত্র বুঝিয়ে দেবার জন্য আটক করে, তখন অপস্থত ফৌজদার জিমুদিন এর প্ৰতিবাদ করে এবং তার ফলে সংঘর্ষ হয়। জিমুদ্দিন চুঁচুড়ায় অবস্থিত ওলন্দাজদের ও চন্দ্রনগরে অবস্থিত ফরাসীদের কাছ থেকে সাহায্য প্রার্থনা করে। মুরশিদকুলি খান তখন ওয়ালি বেগের সাহায্যার্থে দলপত সিং নামে এক ব্যক্তির অধীনে সৈন্য প্রেরণ করেন। দলপত সিং চন্দ্রনগরের কাছে শিবির স্থাপন করে। কিন্তু কোনরূপ যুদ্ধে প্ৰবৃত্ত হয় না। কিছুদিন পরে জিনুদিন। সন্ধি স্থাপনের জন্য দলপত সিং-এর কাছে এক দূত প্রেরণ করে। ওই দূতের সঙ্গে দলপত সিং যখন কথোপকথনে নিযুক্ত ছিলেন, সেই সময় এক ফরাসী গোলন্দাজ কর্তৃক নিক্ষিপ্ত গোলা এসে তাঁর ওপর পড়ে, এবং তিনি নিহত হন। দলপত সিং-এর মৃত্যুর পর নবাবের সৈন্যবাহিনী কিংকর্তব্য বিমূঢ় হয়ে হুগলীতে গিয়ে আশ্ৰয় নেয়। এর পর জিমুদ্দিন শান্তভাবে দিল্লীতে চলে যায়। নবাব কিঙ্কর সেনকে ক্ষমা করেন এবং তাঁকে হুগলী জেলায় রাজস্ব আদায়কারীর পদে নিযুক্ত করেন। কিন্তু পরে তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ আসায়, তাকে কারারুদ্ধ করা হয়। এর অল্পদিন পরে কারাগারেই তার মৃত্যু হয়।
রাজস্ব আদায় ব্যাপারে মুরশিদকুলি খানের নীতি কঠোরতার চূড়ান্ত ছিল। এ বিষয়ে তাঁর নিযুক্ত লোকেরা নানাবিধ অমানুবিক শান্তি ও পীড়ন দ্বারা রাজস্ব আদায় করত, যেমন মাথা নীচের দিকে করে পা বেঁধে ঝুলিয়ে রাখা কিংবা শীতকালে উলঙ্গ করে গায়ে ঠাণ্ডা জল ঢেলে দেওয়া, বগলের তলা দিয়ে দড়ি বেঁধে পচা পুকুরের মধ্য দিয়ে টেনে নিয়ে যাওয়া ইত্যাদি। কখনও কখনও তাদের ঢাউস ইজের পরিয়ে তার ভিতর জ্যান্ত বিড়াল ছেড়ে দিত। এরূপ উৎপীড়ন ও অত্যাচার দ্বারা জমিদারদের কাছ থেকে রাজস্ব আদায় করা হত। এবং প্ৰতি বৎসর বৈশাখ মাসে ৩০০ অশ্বারোহী ও ৫০ ০ পদাতিক সৈন্য সমভিব্যাহারে দিল্লীতে সম্রাটের নিকট এক কোটি পঞ্চাশ লক্ষ টাকা পাঠানো হতু। এর ফলে গোটা দেশ করভারে পীড়িত হয়ে পড়েছিল।
চার
আমরা আগেই বলেছি যে আজিম-উস-শান যখন দিল্লীতে প্ৰত্যাগমন করেন, তখন তিনি তাঁর পুত্র ফারুকশিয়ারকে বাঙলা ও ওড়িশার মসনদে তার প্রতিভু হিসাবে বসিয়ে গিয়েছিলেন। যদিও মুরশিদকুলি খানই বাঙলায় কাৰ্যত শাসক হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন, তা হলেও ফারুকশিয়ার মুরশিদকুলি খানের সঙ্গে সম্ভাবই রেখেছিলেন। কিন্তু সম্রাট বাহাদুর শাহের মৃত্যুর (১৭১২) পর তাঁর জ্যেষ্ঠ পুত্ৰ জাহান্দর শাহ যখন নিজ ভ্ৰাতা আজিম-উস-শানকে হত্যা করে সম্রাট হন, ফারুকশিয়ার তখন পিতার মৃত্যুর প্রতিহিংসা নেবার জন্য মুরশিদকুলি খানের কাছে সাহায্য প্রার্থনা করেন। মুরশিদকুলি খান দিল্লীর সম্রাটের আনুগত্য পরিহার করতে অস্বীকার করেন। তখন ফারুকশিয়ার পাটনায় গিয়ে, আজিমউস-শান কর্তৃক অধিষ্ঠিত বিহারের শাসক সৈয়দ হুসেন আলি খানের সাহায্য প্রার্থনা করেন। হুসেন আলি প্ৰথমে ইতস্তত করেন, কিন্তু যখন ফারুকশিয়ারের পরিবারের মেয়েরা গিয়ে তাঁকে অনুনয় বিনয় করল, তখন তিনি ফারুকশিয়ারকে সাহায্য করতে সম্মত হন। অ্যালাহাবাদের শাসক সৈয়দ আবদুল্লা খানকেও আজিম-উল-শানই তার পদে অধিষ্ঠিত করেছিলেন। আবদুল্লা খান সৈয়দ-হুসেন আলি খানেরই ভ্ৰাতা। দুই ভাই একত্রিত হয়ে ফারুকশিয়ারকে সাহায্য করতে প্ৰবৃত্ত হয়। দিলী অভিগামী রাজস্ব তারা লুঠ করে এবং পাটনা ও বারাণসীর ব্যাঙ্কারদের কাছ থেকে টাকা ধার করে, তারা এক সৈন্যবাহিনী গঠিত করে। কাঠগয়া নামক স্থানে তারা জাহান্দর শাহের জ্যেষ্ঠ পুত্ৰ আজিউদ্দিনকে যুদ্ধে পরাজিত করে (১৭১২)। ১৭১৩ খ্রীস্টাব্দে স্বয়ং সম্রাট কর্তৃক পরিচালিত সৈন্যবাহিনীকেও ফারুকশিয়ারের সৈন্যদল আগরায় পরাজিত করে। সম্রাট SBBBDB BB DB BBD DBBDSDDSDDB DuDB DBDuB BD DDD আসাদ-উদ-দৌল বিশ্বাসঘাতকতা করে সম্রাটকে ফারুকশিয়ারের হাতে সমর্পণ করে। ফারুকশিয়ার সম্রাটকে হত্যা করে। এইভাবে ১৭১৩ খ্রীস্টাব্দে ফারুক-শিয়ার হিন্দুস্থানের সম্রাট হন।