(১) বিবাহকালে স্বামীর অন্য স্ত্রী বা স্ত্রীর অন্য স্বামী জীবিত থাকবে না ।
(২) উভয়পক্ষের কেহই পাগল বা জড়বুদ্ধিসম্পন্ন হবে না।
(৩) ন্যূনপক্ষে বরের ১৮ এবং কনের ১৫ বৎসর বয়স হওয়া চাই ।
(৪) উভয়পক্ষের কেহই নিষিদ্ধ নিকট আত্মীয়ের মধ্যে হবে না।
(৫) উভয়ের কেহই সপিণ্ড হবে না।
(৬) যেস্থলে কনের বয়স ১৫ বছরের কম সেস্থলেও অভিভাবকের সম্মতির প্রয়োজন হবে।
এই আইনে আরও বলা হয়েছে যে সিদ্ধ বিবাহ অসিদ্ধ বলে সাব্যস্ত হবে। যথা :
(১) যদি স্বামী পুরুষত্বহীন হয়।
(২) যদি বিবাহের সময় কোন পক্ষ পাগল বা জড়বুদ্ধিসম্পন্ন হয় ।
(৩) যদি প্রতারণা দ্বারা বা বলপূর্বক অভিভাবক দ্বারা দরখাস্তকারীর সম্মতি নেওয়া হয়ে থাকে।
(৪) যদি বিবাহের পূর্বে স্ত্রী স্বামী ব্যতীত অপর কারোর দ্বারা গর্ভবতী হয়ে থাকে।
(৫) যদি অন্য স্ত্রী কি স্বামী বিদ্যমান থাকায় বিবাহ হয়ে থাকে।
(৬) যদি নিষিদ্ধ নিকট আত্মীয়ের মধ্যে বিবাহ হয়ে থাকে।
এ ছাড়া নিম্নলিখিত কারণগুলির মধ্যে যে কোন একটি কারণ দেখাতে পারলে আদালত বিবাহ-বিচ্ছেদেরও আদেশ দিতে পারে—
(১) স্বামী বা স্ত্রী কেউ যদি ব্যভিচারে লিপ্ত হয়।
(২) ধর্মান্তর গ্রহণের ফলে যদি আর হিন্দু না থাকে।
(৩) আদালতের কাছে বিবাহ ভঙ্গের জন্য দরখাস্ত করবার পূর্বে ক্রমান্বয়ে তিন বৎসর স্বামী কী স্ত্রী কেউ যদি বিকৃত মস্তিষ্ক হয়।
(৪) ওইরকম তিন বৎসরকাল যদি স্বামী কী স্ত্রী অনারোগ্য কুষ্ঠব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে থাকে।
(৫) ওইরকম তিন বৎসরকাল স্বামী কী স্ত্রী যদি কোন সংক্রামক যৌনব্যাধিতে আক্রান্ত হয়।
(৬) স্বামী কী স্ত্রীর কেউ যদি কোন ধর্মসম্প্রদায়ে যোগদান করে বা সংসার ত্যাগ করে।
(৭) স্বামী কী স্ত্রীর মধ্যে কেউ যদি ক্রমান্বয়ে সাত বৎসর নিরুদিষ্ট থাকে।
(৮) যেখানে জুডিসিয়াল সেপারেশনের ডিক্রীর পর উভয়পক্ষ আর স্বামী-স্ত্রীরূপে সহবাস করে নি।
(৯) যদি রেষ্টিটিউশন অভ কনজুগাল রাইটস্-এর ডিক্ৰী হবার পর কোন একপক্ষ সেই ডিক্ৰী অমান্ত করে অপর পক্ষ থেকে ক্রমান্বয়ে দু বৎসর পৃথক বসবাস করে থাকে।
এছাড়া আরও দু’ কারণে স্ত্রী আদালতের কাছে বিবাহ-বিচ্ছেদের জন্য প্রার্থনা করতে পারে। এ ছটি কারণের প্রথমটি হচ্ছে—যদি এক স্ত্রী বিদ্যমান থাকতে স্বামী অন্ত স্ত্রী গ্রহণ করে থাকে এবং আদালতে প্রার্থনা করবার সময় সে স্ত্রী জীবিত থাকে। দ্বিতীয় কারণ হচ্ছে—স্বামী যদি বলাৎকরণ, পুংমৈথুন বা কোনরূপ অস্বাভাবিক যৌনকর্মে লিপ্ত হয়ে থাকে। ১৯৫৫ সালের এই আইন সম্পর্কে তিনটি কথা বলা প্রয়োজন। প্রথম, বিবাহ সিদ্ধ হবার সময় থেকে তিন বছরের পূর্বে কোন পক্ষ আদালতে বিবাহবিচ্ছেদের কোন দরখাস্ত করতে পারবে না । দ্বিতীয়, আদালত কর্তৃক বিবাহ-বিচ্ছেদের নির্দেশ দেবার পর যদি তার বিপক্ষে কোন আপীল না করা হয়ে থাকে তাহলে এক বছর অপেক্ষা করে উভয়পক্ষই পুনরায় বিবাহ করতে পারে (যদি বিবাহ না করে তাহলে আদালত খোরপোশ দেবার দাবী গ্রাহ করতে পারে ) এবং তৃতীয়, আদালত কর্তৃক বিবাহ-বিচ্ছেদের নির্দেশ দেওয়া সত্বেও ওই নির্দেশের পূর্বে স্ত্রী যে সস্তান গর্ভে ধারণ করছে সে সস্তান বৈধ বলে গণ্য হবে।
বলাবাহুল্য, এসকল আইন প্রণয়নের ফলে হিন্দুবিবাহ যে মাত্র গণতান্ত্রিকতা লাভ করেছে তা নয়, হিন্দুবিবাহ নূতন মর্যাদা পেয়েছে। বিবাহিত হিন্দু নারী আজ সামাজিক বা পারিবারিক নিষ্ঠুরতা ও অবিচারের হাত থেৱে নিস্কৃতি লাভ করেছে। আজ সে শিক্ষা পেয়েছে ; আজ সে স্বাধীনতা পেয়েছে ; আজ সে পুরুষের সঙ্গে সমান পদক্ষেপ ফেলে জীবনযাত্রার পথে অগ্রসর হবার সাহস ও সুযোগ পেয়েছে। অাজ সে স্মৃতিকারদের নাগপাশ থেকে নিজেকে সম্পূর্ণভাবে মুক্ত করেছে। আজ স্মৃতিকারদের স্থান গ্রহণ করেছে বিধান সভার সদস্যরা । তাদের মধ্যে এমন অনেকেই আছেন যার স্মৃতিকারদের ভাষায় “অন্ত্যজ” জাতিভুক্ত। একমাত্র গণতান্ত্রিক প্রভাবেই এই যুগান্তকারী বিপ্লব ঘটেছে।