ঘোটুলের মধ্যে কেহ ব্যভিচার করলে তাকে ঘোটুল থেকে বহিস্কৃত করে দেওয়া হয়। ঘোটুল থেকে বহিস্কৃত ছেলে বা মেয়ের প্রকৃত বিবাহের সময় কোন নাচ-গান করা হয় না। মুরিয়াদের মধ্যে বিবাহে নাচ-গানের ভূমিকা এত গুরুত্বপূর্ণ যে বিবাহের সময় নাচ-গান না হলে সেটা গুরুতর শাস্তি বলে ধরা হয়। এ ছাড়া অন্য রকমের শাস্তিও আছে। যেমন, ব্যভিচারিণী মেয়ের যোনির মধ্যে ছাই ভরে দেওয়া হয়।
ঘোটুলের কোন মেয়ের বিবাহের পর তাকে আর ঘোটুলে প্রবেশ করতে দেওয়া হয় না। কিন্তু বিবাহের আগে যেদিন সে ঘোটুল থেকে শেষবারের মত বিদায় নেয় সেদিন তাকে ঘোটুলের সমস্ত ছেলের চিত্তবিনোদন করতে হয়। ছেলেদের বেলায় কিন্তু নিয়ম স্বতন্ত্র। বিবাহের পর যতদিন না ঘোটুলের সমস্ত সদস্যদের সে ভোজ দেয় ততদিন তাকে ঘোটুলে আসতে দেওয়া হয়। তবে এরূপ ভোজ সাধারণত তিন চার মাসের মধ্যেই দেওয়া হয়। ভোজ দেওয়৷ হয়ে গেলে তাকে চিরদিনের মত ঘোটুল থেকে বিদায় নিতে হয়।
ঘোটুলের প্রচলন সম্বন্ধে মুরিয়ার নানা রকম যুক্তি দৰ্শায়। তার মধ্যে প্রধান যুক্তি হচ্ছে, ছেলে-মেয়েদের সামনে বাপ-মায়ের যৌন ক্রিয়া করা পাপ। সেইহেতু যখনই ছেলেমেয়ে যৌন ক্রিয়ার অর্থ বুঝতে পারে তখনই তাকে ঘোটুলে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। যদি কোন কারণে রাত্রে কোন মেয়ে ঘোটুল থেকে বাড়ীতে ফিরে আসে এবং বাপ-মাকে আলিঙ্গনাবদ্ধ অবস্থায় দেখে তবে তার বাপ-মা অত্যন্ত ক্রুদ্ধ হয়ে তাকে তিরস্কার করে বলে “তোর কি ঘোটুল নেই, তুই কিজস্য এখানে এসেছিস ?”
বাপ-মায়ের যৌনজীবন ছেলে-মেয়েদের কাছ থেকে গোপন রাখা ছাড়া ঘোটুলের অপর উদ্দেশ্য হচ্ছে এই যে, উত্তরকালে ছেলে-মেয়ের যৌনজীবন যাতে সার্থকতা ও পূর্ণতা লাভ করতে পারে সে সম্বন্ধে ঘোটুল প্রস্তুতি শিক্ষা দেয়।
ঘোটুলের ছেলেমেয়েদের পক্ষে সবচেয়ে বড় অপরাধ হচ্ছে, ঘোটুলের ভেতর কী ঘটেছিল তা ঘোটুলের বাইরে কারুকে বলা । সেজন্য তাদের বিশ্বাস যে তারা ঘোটুলের ভেতর কী করেছে বা না করেছে তা তাদের বাপ-মা কেউ টের পায় না । কিন্তু প্রকৃতপক্ষে বাপ-মা সবই জানে। তবে পরস্পরের কাছে প্রকাশ করাটা দূষণীয় বলে মনে করে। এর জন্য ঘোটুলের উপর ছেলেমেয়েদের আস্থা দৃঢ়তর হয়। এই কারণে ঘোটুলের মধ্যে অজাচারের জন্য কোন দণ্ড দেওয়া হয় না। কিন্তু এরূপ অজাচারের ফলে যদি ঘোটুলের কোন মেয়ে সস্তানবতী হয় তা হলে ঘোটুলের ভেতরে ও বাইরে উভয় স্থানেই তাকে দণ্ড দেওয়া হয়।
ঘোটুলের মধ্যে মেয়ে থাকাকালীনই মুরিয়া পিতামাতা অপরের সঙ্গে তার বিবাহ দেওয়া সম্বন্ধে বাগদান করে। যেখানে বাগদত্ত কোন মেয়ে ঘোটুলের মধ্যে সস্তানবতী হয় সেক্ষেত্রে যাকে বাগ দান দেওয়া হয়েছে তার সঙ্গেই তার বিবাহ দেওয়া হয় এবং তাকেই সন্তানের পিতা বলে গণ্য করা হয়। ’
এখানে একথা বলা দরকার যে বিবাহের পূর্বে মেয়ের গর্ভবতী হওয়া মুরিয়ারাদের দৃষ্টিভঙ্গীতে অশোভনীয় নয়। মুরিয়ারা বলে, “হাতী যখন মোটা মোট চারটে পা থাকা সত্ত্বেও হোচট খায় তখন ছোট ছোট মেয়েদের কা কথা ।”
অবশ্য ঘোটুলের মধ্যে গর্ভ হওয়া খুব বিরল ঘটনা। এ সম্বন্ধে প্রশ্ন তোলা যেতে পারে, ঘোটুলের মধ্যে তরুণ-তরুণী ঘনঘন যৌন সঙ্গম করা সত্ত্বেও গর্ভ হয় না কেন ? এ সম্পর্কে মুরিয়ারা বলে যে, তাদের দুই দেবতা “লিঙ্গ পেন” ও “ধরিত্রী দেবী” মেয়েদের গর্ভবতী হওয়া থেকে তাদের রক্ষা করে। তবে কার্যক্ষেত্রে দেখা যায় যে ঋতুর পর যে সময়ট গর্ভধারণের পক্ষে প্রশস্ত সে সময়টা তাৰা যৌনসঙ্গমের জন্য পরিহার করে। তাছাড়া ঘনঘন জুরিদার পরিবর্তনও গর্ভধারণের বিরোধী। এ সম্বন্ধে বিজ্ঞানীরা বলেন যে কৈশোরে মেয়েদের বয়ঃসন্ধির পূর্বে এমন একটা সময় আছে, যে সময় তাদের গর্ভধারণ শক্তি থাকে না। বাস্তবক্ষেত্রে প্রায়ই লক্ষ্য করা যায় যে প্রথম ঋতুসঞ্চারের সঙ্গে সঙ্গেই মেয়ের গর্ভধারণ করে না। প্রথম ঋতুসঞ্চারের সময় থেকে গর্ভধারণ করবার শক্তি অর্জন করা পর্যন্ত কিছুকালের জন্য একটা সময়ের ব্যবধান থাকে। এই কারণেই ঘোটুলের মেয়েদের মধ্যে খুব কম মেয়ে গর্ভবতী হয়।
বিবাহ-বহির্ভূত যৌন সংসর্গ
জগতের অধিকাংশ সমাজেই স্বামী বিবাহ দ্বারা স্ত্রীর সঙ্গে যৌন মিলনের একাধিপত্য পায়। কিন্তু এমন অনেক সমাজ আছে যেখানে সামাজিকভাবে এই অধিকার অপরকে সমর্পণ করা হয়। যৌন মিলনের জন্য নিজের স্ত্রীকে অপরের হাতে সমর্পণ করবার পিছনে যে যুক্তি আছে সেটা হচ্ছে এই যে, যেহেতু স্বামীই হচ্ছে স্ত্রীর একমাত্র অধিকারী সেইহেতু তার ক্ষমতা আছে সেই অধিকার সাময়িকভাবে অপরকে সমর্পণ করবার। অনেক সমাজে এই অধিকার বিশেষভাবে সমৰ্পিত হয় অতিথির কাছে। যৌন মিলনের অধিকার সমর্পণ করে আতিথেয়তা পালন করা প্রাচীনকালে বহু সমাজে প্রচলিত ছিল । বর্তমানকালেও অনেক সমাজে এ রীতি আছে। বিখ্যাত সমাজতত্ত্ববিদ ওয়েষ্টারমারক বলেন যে যৌন আতিথেয়তা সাধারণ আতিথেয়তারই এক সম্প্রসারিত ক্রিয়ামাত্র। আদিমসমাজে অবচেতন মনে অতিথি সম্পর্কে ভয়, সন্ত্রাস, শ্রদ্ধা ইত্যাদি নানারূপ অনুভূতির উপর এর ভিত্তি প্রতিষ্ঠিত। মানুষ অপরিচিত আগন্তুককে স্থষ্টির প্রারম্ভ থেকেই ভয় করে এসেছে। সেজন্য এরূপ আগন্তুককে অতিথিরূপে যখন গ্রহণ করা হয় তখন তার , সন্তোষবিধানের জন্য অতিথিসেবক সবসময় প্রস্তুত থাকে সাময়িকভাবে তার কাছে নিজের স্ত্রী বা মেয়েকে পর্যন্ত সমর্পণ করতে।