ভীলদের মধ্যে বর তার পিতা ও অন্যান্য আত্মীয়-আত্মীয়াদেব নিয়ে কনের বাড়ী যায়। সেখানে বরের বাবা কনের পিতামাতাকে কিছু অর্থদান করে। তারপর বর-কনেকে এক সঙ্গে বসান হয় এবং দলের সমস্ত মেয়ে-পুরুষ তাদের ঘিরে নাচগান করতে থাকে। এরপর ভোজ ও মদ্যপান চলে এবং তার সঙ্গেই বিবাহ অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘটে। গোগুদের মধ্যে বরযাত্রী ও কন্যাযাত্রী উভয়দলই নিজ নিজ বাড়ী থেকে রওনা হয় এবং মধ্যপথে পরস্পরের সহিত মিলিত হয়। এখানে উভয় দলের মধ্যে দানসামগ্রীর আদান-প্রদান ঘটে। তারপর বর-কনে জল ভর্তি একটি মঙ্গলঘট সাতবার প্রদক্ষিণ করে। এই অনুষ্ঠানের দ্বারাই বিবাহ নিম্পন্ন হয়। এক্ষেত্রেও দলবেঁধে নাচগান ও মদ্যপান করে উৎসব শেষ করা হয়। মারিয়াদের মধ্যে বিবাহ অনুষ্ঠিত হয় বরের বাড়ীতে। মেয়ের বাপ-মা কনেকে সেখানে নিয়ে আসে। কোন দেবদেবীর পূজা হয় না কিন্তু একটি ছাগ বলি দেওয়া হয়। তারপর দলের সকলে মদ্যপান করে। উদয়পুরের পাণ্ডাদের মধ্যে বিবাহ উপলক্ষে একটি দণ্ড স্থাপন করা হয় এবং সাতবার সেই দণ্ড প্রদক্ষিণ করে বিবাহকর্ম শেষ করা হয়। উদয়পুরের সাওতালদের মধ্যে বিবাহের অনুষ্ঠান খুবই সরল এবং দুইজন কুমারী মেয়ে এই অনুষ্ঠানের নেতৃত্ব করে। ওরাওদের মধ্যে যারা ক্রীশ্চান তার প্রথমে গির্জায় গিয়ে বিয়ে করে কিন্তু তারপর আবার উপজাতিসমাজের আচার-অনুষ্ঠানগুলি পালন করে। নীলগিরি পাহাড়ের পালিয়ানদের মধ্যে বরের বোন কনের গলায় তালি বেঁধে দেয় এবং সেই সময় নিকটস্থ কোন বাড়ী থেকে কোন লোক চেচিয়ে ঘোষণা করে যে অমুকের বাড়ীতে বিয়ে হচ্ছে। তখন সংলগ্ন কোন বাড়ী থেকে কোন প্রবীণ ব্যক্তি তার উত্তর দিয়ে বলে “হ্যাঁ, এ বিয়েতে আমাদের সকলের সম্মতি আছে। মাত্রার পালিয়ানদের মধ্যে অনুষ্ঠান আরও সরল। এদের মধ্যে রীতি হচ্ছে, বর-কনে পরস্পরের গলায় কালরং-এর পুতির একটা মালা বেঁধে দেয় এবং কনেকে বর একখানা কাপড় দেয়। ওড়িষ্যার পরোজাদের মধ্যে লুণ্ঠনের নাটকীয় অনুকরণ করা হয়। তাদের মধ্যে বিবাহের নির্দিষ্টদিনে বর বন্ধুবান্ধবদের নিয়ে কনের বাড়ীর কাছে গিয়ে লুকিয়ে থাকে এবং কনে যখন সেই পথে এক অসে তখন সে তার উপর ঝাপিয়ে পড়ে ও তাকে লুণ্ঠন করে নিজের বাড়ী নিয়ে যায়। তারপর কনের বাবা বন্ধুবান্ধবদের নিয়ে মেয়েকে উদ্ধার করতে আসে। এরপর এক কপট যুদ্ধ হয় এবং যুদ্ধ করে যখন সকলে ক্লান্ত হয়ে পড়ে তখন তারা বরের বাড়ী গিয়ে মদ্যপান ও ভোজে যোগ দেয়। ত্রিবাঙ্কুরের মুড় বানদের মধ্যেও এরূপ লুণ্ঠন করে বিয়ে করার রীতি আছে। মুড় বানদের মধ্যে বিয়ের একট। অত্যাবশ্যকীয় অঙ্গ হচ্ছে বর, কনেকে একটা চিরুনী দেয় এবং কনে সেই চিরুনীট চিরদিন মাথার পিছন দিকে খোপায় রাখে। মান্নানদের মধ্যে রীতি হচ্ছে বরের বোন কর্তৃক কনের গলায় তালি বেঁধে দেওয়া। দক্ষিণ ভারতের অধিকাংশ উপজাতিদের মধ্যে বিবাহ তালিবন্ধন দ্বারাই অনুষ্ঠিত হয়। এই অনুষ্ঠান সাধারণত কনের বাড়ীতেই হয়। কিন্তু কোথাও কোথাও বরের বাড়ীতে হবার প্রথাও আছে । মাণ ডালা ও বালাঘাটের বাইগাদের মধ্যে বিবাহ স্থির হয়ে গেলেই বরের বাবা তু বোতল মদ এনে কনের বাবাকে উপহার দেয়। এই মদের কিছু পরিমাণ বুড়া দেওতার কাছে উৎসর্গ করা হয় আর বাকিটা সমবেত সকলের মধ্যে পরিবেশন করা হয়। এই অনুষ্ঠানকে “সাগাই” বলা হয়। একপক্ষকাল পরে বরের দল চার বোতল মদ নিয়ে আবার কনের বাড়ী আসে। কনের বাপ-মা তাদের ভোজ দিয়ে আপ্যায়ন করে এবং বিয়ের দিন স্থির করে। এই অনুষ্ঠানকে “বরোধি” বলা হয়। এরপর কনের বাবাকে দশদিনের সময় দেওয়া হয় বিয়ের আয়োজন করবার জন্য। দশদিন পরে বরের দল কনের বাড়ী আসে। কনের বাবা তাদের ভোজ দিয়ে আপ্যায়ন করে এবং সমস্তরাত্রি নাচগান চলতে থাকে। মদ্যপানও রীতিমত হয়। পরের দিন অপরাহ্লে “ভানওয়ার” অনুষ্ঠিত হয়। এরজন্য একটা মণ্ডপ তৈরী করা হয় এবং মাটিতে একটা দণ্ড পোত হয়। কনেকে নিয়ে বর তিনবার এই দণ্ড প্রদক্ষিণ করে। তারপর বর-কনে ও কনের বাপ-মা বরের বাড়ীর দিকে রওনা হয়। বরের বাড়ীতেও অনুরূপ একটি মণ্ডপ তৈরী করা থাকে এবং সেখানেও একটা দণ্ড পোতা থাকে। কনেকে নিয়ে বর সাতবার ওই দণ্ড প্রদক্ষিণ করে। তারপর ভোজ ও মদ্যপান করে উৎসবের পরিসমাপ্তি ঘটানো হয়। মধ্যপ্রদেশের অপরাপর উপজাতিদের মধ্যেও অনুরূপ অনুষ্ঠানসমূহ প্রচলিত আছে। তবে ওঁরাও, কোরবা প্রভৃতি জাতিসমূহ মণ্ডপের পাশে একটি জাত স্থাপন করে এবং তার উপর পাচটি চালের স্তৃপ রাখে। প্রতি ভূপের উপর যথাক্রমে একটি তামার পয়সা, হলুদ, সুপারি প্রভৃতি রাখা হয়। কনে একখানা কুলো হাতে নিয়ে বরের সামনে এসে দাড়ায়। কনের ছোট ভাই কিছু খই ওই কুলোয় দেয় আর বর পিছন দিক থেকে কনের হাত ধরে। তারপর তারা ওই কুলোর সমস্ত খই ছড়াতে ছড়াতে পাঁচবার মণ্ডপটি প্রদক্ষিণ করে। প্রতিবার প্রদক্ষিণ করবার সময় কনের পা দিয়ে বর জাতার উপর স্থাপিত চালের স্তৃপগুলি মাটিতে ফেলিয়ে দেয়। তারপর সিন্দুরদান অনুষ্ঠিত হয়। অনেক গ্রামে এ সম্পর্কে একটা অত্যাবগুকীয় অনুষ্ঠান পালন করা হয়। সেটা হচ্ছে, কনের বসা অবস্থায় তার ডানপায়ের উপর বর বা পায়ে দাড়ায় এবং একটা পাতা থেকে তেল নিয়ে কনের মাথায় মাখিয়ে দেয় ।