অনেক উপজাতির মধ্যে বরকে কন্যাপণের পরিবর্তে শ্রমদান করতে হয়। এরূপ বিবাহে বরকে নির্দিষ্টকালের জন্ত শ্বশুরবাড়ীতে বিনা পারিশ্রমিকে শ্রমিকের কাজ করতে হয়। এরূপ শ্রমদানের কাল সাধারণত তিন থেকে পাচ বৎসর নির্দিষ্ট হয়। কোন কারণে যদি বিবাহ না হয় তা হলে কন্যার পিতাকে বর যে সময়ের জন্ত শ্রমদান করেছে সে সময়ের নিমিত্ত প্রচলিত হারে পারিশ্রমিক অমনোনীত বরকে প্রদান করতে হয় । কন্যাপণের বিনিময়ে শ্রমদান যে সকল ক্ষেত্রে বলবৎ আছে সে সকল ক্ষেত্রে প্রায়ই লক্ষ্য করা যায় যে কন্যার কোন ভাই থাকে না। এসকল ক্ষেত্রে যুক্তি এই যে, যেহেতু মেয়েটি তার বাবাকে কাজে সাহায্য করতে সেহেতু তার পিতাকে ক্ষতিপূরণ স্বরূপ বরকে শ্রমদান করতে হবে। মধ্যপ্রদেশের ভীলদের মধ্যে কন্যাপণের বিনিময়ে শ্রমদানের প্রথা প্রচলিত আছে। এদের মধ্যে আগেকার দিনে সাধারণত সাত বছর শ্রমদান করতে হতো। কিন্তু বর্তমানে শ্রমদানের কাল বাড়িয়ে দিয়ে নয় বছর করা হয়েছে। প্রায়ই দেখা যায় যে দুই তিন বছর শ্রমদানের পর যুবক তার স্ত্রীকে নিয়ে পালিয়ে যায়। শ্রমদানের সময় যুবক-যুবতী সাধারণত স্বামী-স্ত্রী রূপে বাস করে। কিন্তু শ্রমদানের নির্দিষ্ট সময় উত্তীর্ণ না হলে যুবক সাধারণত শ্বশুরালয় ত্যাগ করতে পারে না। ঝাবুয়ার পাতলিয়াদের মধ্যে শ্রমদানের নির্দিষ্ট সময় সাত বৎসর। এই নির্দিষ্ট সময় উত্তীর্ণ হবার পর যুবকযুবতী স্বতন্ত্র গৃহ স্থাপন করে এবং তারা যাতে স্বাধীনভাবে কৃষিকর্ম করতে পারে তার ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়। নির্দিষ্ট সাত বৎসর উত্তীর্ণ হবার আগেই যদি তারা পালিয়ে যায় তা হলে বরকে অমৃত্তীর্ণকালের জন্য আনুপাতিক হারে কন্যাপণ দিতে হয়। বিন্ধ্য ও সাতপুর পর্বতমালা অঞ্চলের অধিবাসী ভাললা উপজাতিদের মধ্যেও কন্যাপণের বিনিময়ে শ্রমদান প্রথা প্রচলিত আছে । মাণ ডালা ও বালাঘাটের বাইগাদের মধ্যে ৫ থেকে ৯ টাকা কন্যাপণ দেবার প্রথা আছে, কিন্তু বর যদি অর্থাভাবের জন্য ওই কন্যাপণ দিতে না পারে তা হলে তাকে তিন বৎসরের জন্ত শ্রমদান করতে হয় । অনুরূপ প্রথা দক্ষিণ ভারতে উল্লাটানদের মধ্যেও প্রচলিত আছে। এদের মধ্যে সাধারণত কন্যাপণ দিয়েই কন্যা সংগ্রহ করতে হয়। কিন্তু বরের যদি কন্যাপণ দেবার ক্ষমতা না থাকে তা হলে তাকে শ্রমদান করে স্ত্রী সংগ্রহ করতে হয় । এরূপ শ্রমদান এড়াবার জন্য যুবক অনেক সময় যুবতীকে লুণ্ঠন করে নিয়ে গিয়ে তার সঙ্গে কোন গোপন জায়গায় কিছুকাল বসবাস করে। এরূপ বসবাসের পর বিবাহ বৈধ বলে গণ্য হয় এবং সমাজে তা স্বীকৃত হয়।
প্রেম করে বিবাহ করা কিংবা প্রণয়ীকে নিয়ে গোপনে পালিয়ে গিয়ে বিবাহ করা, উভয়ই আদিবাসীসমাজে প্রচলিত আছে। তবে এরূপ বিবাহের প্রতি আদিবাসীসমাজের দৃষ্টিভঙ্গী খুব কটাক্ষপূর্ণ। মধ্যপ্রদেশের ভাললা ও পাতলিয়৷ এই উভয় জাতির মধ্যেই প্রণয়ীকে নিয়ে গোপনে পালিয়ে গিয়ে বিবাহ করার রীতি আছে। বালাঘাট ও মাণ ডাল অঞ্চলের বাইগাদের মধ্যে কখন কখনও কন্যা নিজেই বর পছন্দ করে তার পিতামাতার কাছে নিজের পছন্দের কথা জানায়। তা সত্ত্বেও যদি অপর পুরুষের সঙ্গে তার বিয়ে দেওয়া হয় তা হলে বিয়ের পর মেয়ে সাধারণত পালিয়ে যায়। উদয়পুরের পাণ্ডোদের মধ্যে যুবক-যুবতী যদি গোপনে পালিয়ে যায় এবং ওই যুবকের ঔরসে যদি যুবতী গর্ভবতী হয় তা হলে সামাজিক রীতি অনুসারে যুবককে বাধ্য করা হয় মেয়েটিকে বিয়ে করতে। মাছরার পালিয়ানদের মধ্যে যুবক-যুবতী যদি প্রেমে পড়ে পরস্পরের সহিত যৌন-সঙ্গমে লিপ্ত হয় তা হলে সমাজ সেটা মার্জন করে নেয় এবং নিয়মানুগ অনুষ্ঠান দ্বারা তাদের বিবাহ দিয়ে দেয়। মধ্যপ্রদেশের কোলজাতির সমাজ কিন্তু এ সম্বন্ধে কঠোর দৃষ্টিভঙ্গ নেয়। তারা এরূপ দুনীতি মার্জনা করে না।
অজাচার সম্বন্ধে আদিবাসীর দৃষ্টি ভঙ্গী অত্যন্ত কঠোর। নিজ দল বা গোষ্ঠীর মেয়ের সঙ্গে যৌন-সঙ্গম অজাচার বলে গণ্য হয়। মাতৃকুলের উৰ্দ্ধতন চার পুরুষের মধ্যে যৌন-সঙ্গমও অজাচার বলে পরিগণিত হয়। এরূপ ক্ষেত্রে বিবাহ তো হয়-ই না। এটা হচ্ছে উত্তর ভারতের সাধারণ রীতি। দক্ষিণ ভারতে কিন্তু এমন অনেক উপজাতি আছে যাদের মধ্যে মাতৃকুলে বিবাহই হচ্ছে বাঞ্ছনীয় বিবাহ। অন্ধ্রপ্রদেশের মহবুবনগরের চেনচুদের মধ্যে মামাতো বোন কিংবা পিসতুতো বোনকে বিবাহ করাই প্রচলিত রীতি। তবে তারা খুড়তুতে কিংবা জাঠতুতো বোনকে কখনও বিবাহ করে না। মাণ ডালা ও বালাঘাট অঞ্চলের বাইগার মাত্র পিসতুতো বোনকেই বিবাহ করে, মামাতো বোনকে নয়। মুরিয়াদের মধ্যে পিসতুতো ও মামাতো উভয় বোনকেই বিবাহ করার রীতি আছে। মাত্রার পালিয়ানদের মধ্যে বিবাহ হয় মামাতো বোন বা ভগ্নীর সহিত, পিসতুতো বোনের সঙ্গে কখনও নয়। কিন্তু কোচিনের কাদারদের মধ্যে পিসতুতো বোনের সঙ্গেও বিবাহের চলন আছে। ত্রিবাঙ্কুরের মুড় বনদের মধ্যে এরূপ বিবাহই একমাত্র রীতি। ত্রিবাছুরের মলপুলায়ণ ও মলবেদনদের মধ্যেও এরূপ বিবাহের রীতি আছে। ত্রিবাঙ্কুরের উলুড়ণরা মাত্র পিসতুতো বোনকে বিবাহ করে কিন্তু মলকুরুবনর পিসতুতো বোনকে বিবাহ করে না। তারা মাত্র মামাতে বোনকেই বিবাহ করে। পণ্ডিতেরা অনুমান করেন যে, মামাতোপিসতুতো বোনের সঙ্গে বিবাহের উৎপত্তি হয়েছে অর্থনৈতিক কারণে। এরূপ বিবাহের দ্বারা খরচপত্র এড়ানো যায় ও সম্পত্তি অক্ষত অবস্থায় রাখা যায়। এই কারণে পিতার দিক থেকে তার বোনের মেয়ের সঙ্গে এবং মাতার দিক থেকে তার ভাইয়ের মেয়ের সঙ্গে বিবাহে উৎসাহ দেওয়া হয়। আবার অনেকে অল্পমান করেন যে কন্যা বিনিময় দ্বারা “পালটি” বিবাহের রীতি থেকেই এরূপ বিবাহের উৎপত্তি হয়েছে।