• আমাদের সম্পর্কে
  • যোগাযোগ
  • গোপনীয়তা নীতি
বুধবার, মে 14, 2025
  • Login
BnBoi.Com
  • বাংলাদেশী লেখক
    • অতুলচন্দ্র গুপ্ত
    • অভিজিৎ রায়
    • আখতারুজ্জামান ইলিয়াস
    • আনিসুল হক
    • আবু ইসহাক
    • আবু রুশদ
    • আবুল আসাদ
    • আবুল খায়ের মুসলেহউদ্দিন
    • আবুল বাশার
    • আরজ আলী মাতুব্বর
    • আল মাহমুদ
    • আসাদ চৌধুরী
    • আহমদ ছফা
    • আহমদ শরীফ
    • ইমদাদুল হক মিলন
    • উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী
    • কাসেম বিন আবুবাকার
    • জসীম উদ্দীন
    • তসলিমা নাসরিন
    • দাউদ হায়দার
    • দীনেশচন্দ্র সেন
    • নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়
    • নিমাই ভট্টাচার্য
    • প্রফুল্ল রায়
    • প্রমথ চৌধুরী
    • ময়ূখ চৌধুরী
    • মহাদেব সাহা
    • মাহমুদুল হক
    • মুহম্মদ জাফর ইকবাল
    • হুমায়ূন আহমেদ
  • ইন্ডিয়ান লেখক
    • অক্ষয়কুমার মৈত্রেয়
    • অতুল সুর
    • অদ্রীশ বর্ধন
    • অনির্বাণ বন্দ্যোপাধ্যায়
    • অনীশ দেব
    • অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর
    • অমিয়ভূষণ মজুমদার
    • আশাপূর্ণা দেবী
    • আশুতোষ মুখোপাধ্যায়
    • ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর
    • কাজী নজরুল ইসলাম
    • ক্ষিতিমোহন সেন
    • তারাদাস বন্দ্যোপাধ্যায়
    • তারাশংকর বন্দ্যোপাধ্যায়
    • দেবীপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায়
    • নারায়ণ সান্যাল
    • নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী
    • নীহাররঞ্জন গুপ্ত
    • পাঁচকড়ি দে
    • পূর্ণেন্দু পত্রী
    • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
    • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
    • বিমল মিত্র
    • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
    • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
    • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
    • হেমেন্দ্রকুমার রায়
  • বিভাগসমূহ
    • আত্মজীবনী
    • ইতিহাস
    • উপন্যাস
    • কবিতা
    • কল্পকাহিনী
    • কাব্যগ্রন্থ
    • খেলাধুলার বই
    • গল্পের বই
    • গোয়েন্দা কাহিনী
    • ছোট গল্প
    • জীবনী
    • দর্শন
    • ধর্মীয় বই
    • নাটকের বই
    • প্রবন্ধ
    • বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী
    • বৈজ্ঞানিক বই
    • ভূতের গল্প
    • মুক্তিযুদ্ধের-বই
    • রহস্যময় গল্পের বই
    • রোমাঞ্চকর গল্প
    • রোম্যান্টিক গল্পের বই
    • শিক্ষামূলক বই
    • সমগ্র
  • সিরিজ বই
    • মিসির আলী সমগ্র
    • হিমু সিরিজ
No Result
View All Result
  • বাংলাদেশী লেখক
    • অতুলচন্দ্র গুপ্ত
    • অভিজিৎ রায়
    • আখতারুজ্জামান ইলিয়াস
    • আনিসুল হক
    • আবু ইসহাক
    • আবু রুশদ
    • আবুল আসাদ
    • আবুল খায়ের মুসলেহউদ্দিন
    • আবুল বাশার
    • আরজ আলী মাতুব্বর
    • আল মাহমুদ
    • আসাদ চৌধুরী
    • আহমদ ছফা
    • আহমদ শরীফ
    • ইমদাদুল হক মিলন
    • উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী
    • কাসেম বিন আবুবাকার
    • জসীম উদ্দীন
    • তসলিমা নাসরিন
    • দাউদ হায়দার
    • দীনেশচন্দ্র সেন
    • নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়
    • নিমাই ভট্টাচার্য
    • প্রফুল্ল রায়
    • প্রমথ চৌধুরী
    • ময়ূখ চৌধুরী
    • মহাদেব সাহা
    • মাহমুদুল হক
    • মুহম্মদ জাফর ইকবাল
    • হুমায়ূন আহমেদ
  • ইন্ডিয়ান লেখক
    • অক্ষয়কুমার মৈত্রেয়
    • অতুল সুর
    • অদ্রীশ বর্ধন
    • অনির্বাণ বন্দ্যোপাধ্যায়
    • অনীশ দেব
    • অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর
    • অমিয়ভূষণ মজুমদার
    • আশাপূর্ণা দেবী
    • আশুতোষ মুখোপাধ্যায়
    • ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর
    • কাজী নজরুল ইসলাম
    • ক্ষিতিমোহন সেন
    • তারাদাস বন্দ্যোপাধ্যায়
    • তারাশংকর বন্দ্যোপাধ্যায়
    • দেবীপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায়
    • নারায়ণ সান্যাল
    • নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী
    • নীহাররঞ্জন গুপ্ত
    • পাঁচকড়ি দে
    • পূর্ণেন্দু পত্রী
    • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
    • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
    • বিমল মিত্র
    • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
    • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
    • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
    • হেমেন্দ্রকুমার রায়
  • বিভাগসমূহ
    • আত্মজীবনী
    • ইতিহাস
    • উপন্যাস
    • কবিতা
    • কল্পকাহিনী
    • কাব্যগ্রন্থ
    • খেলাধুলার বই
    • গল্পের বই
    • গোয়েন্দা কাহিনী
    • ছোট গল্প
    • জীবনী
    • দর্শন
    • ধর্মীয় বই
    • নাটকের বই
    • প্রবন্ধ
    • বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী
    • বৈজ্ঞানিক বই
    • ভূতের গল্প
    • মুক্তিযুদ্ধের-বই
    • রহস্যময় গল্পের বই
    • রোমাঞ্চকর গল্প
    • রোম্যান্টিক গল্পের বই
    • শিক্ষামূলক বই
    • সমগ্র
  • সিরিজ বই
    • মিসির আলী সমগ্র
    • হিমু সিরিজ
No Result
View All Result
BnBoi.Com
No Result
View All Result

দেবী – হুমায়ূন আহমেদ

Debi By Humayun Ahmed

মিসির আলি সাহেবের সঙ্গে তারা প্রায় দুই ঘন্টা সময় কাটাল। রানু খুব সহজ-স্বাভাবিক আচরণ করল। এর প্রধান কৃতিত্ব সম্ভবত মিসির সাহেবের। তিনি খুব আন্তরিক ভঙ্গিতে কথাবার্তা বললেন। এক পর্যায়ে রানু বলল, ‘আপনি আমাকে তুমি করে বলবেন, আমি আপনার মেয়ের বয়সী।’
‘মেয়ের বয়সী হলে হলে কী, আমার তো মেয়ে নেই। বিয়েই করি নি।’
রানু কিছু বলতে গিয়েও বলল না। ভদ্রলোক সেটি লক্ষ্য করলেন।
‘তুমি কিছু বলতে চাচ্ছিলে?’
‘জ্বি-না।’
‘কিছু বলতে চাইলে বলতে পার।’
‘না, আমি কিছু বলব না।’
মিসির আলি সাহেব চায়ের ব্যবসা করলেন। চা খেতে-খেতে নিতান্তই সহজ ভঙ্গিতে বললেন, ‘আনিস সাহেব বলেছিলেন, তুমি যা স্বপ্নে দেখ তা-ই সত্যি হয়।’
‘হুঁ।
‘যা স্বপ্নে দেখ তা-ই হয়?’
‘শুধুর স্বপ্ন না, যা আমার মনে আসে তা-ই হয়।’
‘বল কী!’
‘আপনার বিশ্বাস হচ্ছে না, না?’
‘বিশ্বাস হবে না কেন? পৃথিবীতে অনেক অদ্ভুদ ব্যাপার আছে। পৃথিবীটা বড় অদ্ভুদ।’
বলতে-বলতে মিসির আলি ড্রয়ার খুলে চৌকা ধরণের চারটি কার্ড বের করলেন। হাসিমুখে বললেন,‘রানু, এই কার্ডগুলিতে ডিজাইন আঁকা আছে। আমি একেকটি টেবিলের ওপর রাখব, ডিজাইন গুলি থাকবে নিচে। তুমি না দেখে বলার চেষ্টা করবে।’
রানু অবাক হয়ে বলল, ‘না দেখে বলব কীভাবে?’
‘চেষ্টা করে দেখ। পারতেও তো পার। বল দেখি এই কার্ডটিতে কী আঁকা আছে?’
‘কী আশ্চর্য, কী করে বলব?’
‘আন্দাজ কর। যা মনে আসে তা-ই বল।’
‘একটা ক্রস চিহ্ন আছে। ঠিক হয়েছে?
‘তা বলব না। এবার বল এটিতে কী আছে?’
‘খুব ছোট-ছোট সার্কেল।’
‘ক’টি, বলতে পারবে?’
‘মনে হচ্ছে তিনটি। চারটিও হতে পারে।’
মিসির সাহেব কার্ডগুলো ড্রয়ারে রেখে সিগারেট ধরালেন। তাঁকে কেমন যেন চিন্তিত মনে হতে লাগল। আনিস বলল, ‘ও কি বলতে পেরেছে?’ মিসির সাহেব তার জবাব না-দিয়ে বললেন, ‘রানু, এবার তুমি বল, প্রথম ভয়টা তুমি কীভাবে পেলে। সবকিছু বলবে, কিছুই বাদ দেবে না। আমি তোমাকে সাহায্য করতে চেষ্টা করছি।’
রানু চুপ করে রইল।
‘তুমি নিশ্চই চাও, অসুখটা সেরে যাক। চাও না?’
‘চাই।’
‘তাহলে বল। কোনোকিছু বাদ দেবে না।’
রানু তাকাল আনিসের দিকে। মিসির আলি বললেন, ‘আনিস সাহেব, আপনি না হয় পাশের ঘরে গিয়ে বসেন। ঐ ঘরে অনেক বইপত্র আছে, বসে-বসে পড়তে থাকুন। ন্যাশনাল জিওগ্রাফির কারেন্ট ইস্যুটা আছে, গতকালই এসেছে।’
রানু বলতে শুরু করল। মিসির আলি শুনতে লাগলেন চোখ বন্ধ করে। একটি প্রশ্নও জিজ্ঞেস করলেন না। মাঝখানে একবার শুধু বললেন, ‘পানি খাবে? তৃষ্ণা পেয়েছে?’ রানু মাথা নাড়ল। তিনি পানির জগ এবং গ্লাস নিয়ে এলেন। শান্ত স্বরে বললেন, ‘চোখে-মুখে পানি দিয়ে নাও, ভালো লাগবে।’ রানু সে সব কিছুই করল না। শান্ত ভঙ্গিতে বসে রইল। কথা বলতে লাগল স্পষ্ট স্বরে।

রানুর প্রথম গল্প
আমার বয়স তখন মাত্র এগার-বার বৎসর। আমি মধুপুরে আমার এক চাচার বাড়িতে বেড়াতে গেছি। চাচাতো বোনের বিয়েতে। চাচাতো বোনটির নাম হচেছ অনুফা। খুবই ভালো মেয়ে, কিন্তু চাচা বিয়ে ঠিক করেছেন একটা বাজে ছেলের সঙ্গে। ছেলের প্রচুর জায়গাটায়গা আছে, কিন্তু কিছুই করে না। দেখতেও বাজে, দাঁত উঁচু, মুখে বসন্তের দাগ। দারুণ বেঁটে। অনুফা আপার এই নিয়ে খুব মন-খারাপ। প্রায়ই এই নিয়ে কাঁদে। আমি তাকে সান্ত্বনাটান্ত্বনা দিতে চেষ্টা করি। কিন্তু আমি নিজে একটা বাচ্চা মেয়ে, তাকে কী সান্ত্বনা দেব? তবে আমার সঙ্গে অনুফা আপার খুব ভাব ছিল। আমাকে অনেক গোপন কথাটথা বলত।
যাই হোক, গায়ে হলুদের দিন খুব রঙ খেলা হলো। আমাদের ওদিকে রঙ খেলা হচ্ছে-উঠোনে কাদা ফেলে তাতে গড়াগড়ি খাওয়া। সারা দিন রঙ খেলে কাদা মেখে সবাই ভূত হয়ে গেছি। ঠিক করা হলো সবাই মিলে নদীতে গোসল সেরে আসবে। চাচা অবশ্যি আপত্তি করলেন-মেয়েছেলেরা নদীতে যাবে কী?
চাচার আপত্তি অবশ্যি টিকল না। আমরা মেয়েরা সবাই দল বেঁধে নদীতে গোসল করতে গেলাম। বাড়ি থেকে অল্প কিছু দূরেই নদী। আমরা প্রায় ত্রিশ-চল্লিশ জন মেয়ে, খুব হৈচৈ হচ্ছে। সবাই মিলে মহানন্দে পানিতে ঝাঁপাঝাঁপি করছি। সেখানেও খুব কাদা ছোঁড়াছুঁড়ি শুরু হলো। ঠিক তখন একটা কান্ড হলো, মনে হলো একজন কে যেন আমার পা জড়িয়ে ধরেছে। নির্ঘাত কেউ তামাশা করছে। আমি হাসতে-হাসতে বললাম-এ্যাই, ভালো হবে না। ছাড় বলছি, ছাড়। কিন্তু যে পা ধরেছে সে ছাড়ল না, হঠাৎ মনে হলো সে টেনে আমার পায়জামাটা খুলে ফেলতে চেষ্টা করছে। তখন আমি চিৎকার দিলাম। সবাই মনে করল কোনো-তামাশা হচ্ছে। কেউ কাছে এল না, কিন্তু ততক্ষণে আমার পায়জামাটা খুলে ফেলেছে আর, আর…..।
[এই সময় মিসির সাহেব বললেন, ‘বুঝতে পারছি তারপর কী হলো।’]
সবার প্রথম অনুফা আপা ছুটে এসে আমাকে ধরলেন, তারপর অন্যরা ছুটে এল। যে আমার পা জড়িয়ে ধরেছিল, সে আমাকে শক্ত করে চেপে ধরে গভীর জলের দিকে টেনে নিতে লাগল। তারপর আমার আর কিছু মনে নেই। জ্ঞান হবার পর শুনেছি ওরা আমাকে বহু কষ্টে টেনে পাড়ে তুলেছে এবং দেখেছে একটা মরা মানুষ আমাকে জড়িয়ে ধরে রেখেছে। ঐ মরা মানুষটাকে গ্রামের লোকেরা নদীর পাড়ে চাপা মাটি দিয়েছিল। সেইসব কিছুই অবশ্যি আমি দেখি নি, শুনেছি। কারণ আমার কোনো জ্ঞান ছিল না। চাচা আমার চিকিৎসার জন্যে আমাকে ঢাকায় নিয়ে এসেছিলেন। সবাই ধরে নিয়েছিল আমি বাঁচব না, কিন্তু বেঁচে গেলাম। এইটুকু আমার প্রথম ভয়ের গল্প।
রানু গল্প শেষ করে পুরো একগ্লাস পানি খেল। মিসির আলি সাহেব বললেন, ‘ঐ লোককে তুমি দেখ নি।?’
‘জ্বি-না।’
মিসির আলি সাহেব সিগারেট ধরিয়ে নিচু গলায় বললেন, ‘আমার কেন জানি মনে হচ্ছে কোনো একটি জিনিস তুমি আমাকে বল নি। কিছু একটা বাদ দিয়ে গেছ।’
রানু জবাব দিল না।
‘যে জিনিসটা বাদ দিয়েছ, সেটা আমার শোনা দরকার। সেটা কী, বলবে?’
‘অন্য আরেক দিন বলব।’
‘ঠিক আছে, অন্য এক দিন শুনব। তোমাকে আসতে হবে না, আমি গিয়ে শুনে আসব।’
রানু কিছু বলল না। মিসির আলি সাহেব কিছুক্ষণ ভুরু কুঁচকে থেকে হঠাৎ বললেন, ‘যখন তুমি একা থাক, তখন কি কেউ তোমার সঙ্গে কথা বলে?’
‘হ্যাঁ।’
মিসির আলি খুব উৎসাহ বোধ করলেন।
‘ব্যাপারটা গুছিয়ে বল।’
‘মাঝে-মাঝে কে যেন আমাকে নাম ধরে ডাকে।’
‘পুরুষের গলায়?’
‘জ্বি-না। মেয়েদের গলায়।’
‘শুধু ডাকে, অন্য কিছু বলে না?’
‘জ্বি-না।’
‘এবং যে ডাকে তাকে কখনো দেখা যায় না?’
‘জ্বি-না।
‘এটা প্রথম কখন হয়? অর্থাৎ প্রথম কখন শুনলে? নদীর ব্যাপারটা ঘটার আগেই?’
‘হুঁ।
‘কত দিন আগে?’
‘আমার ঠিক মনে নেই।’
‘আচ্ছা ঠিক আছে, আজ এ পর্যন্তই।’
রানুরা উঠে দাঁড়াল। মিসির আলি ভারি গলায় বললেন, ‘আবার দেখা হবে।’
রানু কিছু বলল না। আনিস বলল, ‘আমরা তাহলে যাই।’
‘আচ্ছা ঠিক আছে।’
মিসির আলি ওদের রিকসা পর্যন্ত এগিয়ে দিতে এলেন। ওরা রিকসায় উঠবার সময় তিনি হঠাৎ বললেন, ‘রানু, তোমার পা যে জড়িয়ে ধরেছিল, ওর নাম কী?’
‘ওর নাম জালালউদ্দিন।’
‘কি করে জানলে ওর নাম জালালউদ্দিন?’
রানু তাকিয়ে রইল, কিছু বলল না। মিসির আলি সাহেব বললেন, ‘ঠিক আছে, পরে কথা হবে।’
রিকসায় ওরা দুই জনে কোনো কথা বলল না। আনিসের এক বার মনে হলো, রানু কাঁদছে। সে সিগারেট ধরিয়ে সহজ স্বরে বলল, ‘ভদ্রলোককে তোমার কেমন লাগল রানু?’
‘ভালো। বেশ ভালো লোক। উনি আসলে কী করেন?’
‘উনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন পার্ট-টাইম টীচার। ক্লিনিক্যাল সাইকিয়াট্রি পড়ান। খুব জ্ঞানী লোক।’
‘ইউনিভার্সিটির টীচাররা এমন রোগা হয়, তা তো জানতাম না! আমার ধারণা ছিল তাঁরা খুব মোটাসোটা হন।’
রানু শব্দ করে হাসল। আনিস বলল, ‘আজ বাইরে খাওয়া-দাওয়া করলে কেমন হয়?’
‘শুধু-শুধু টাকা খরচ।’
‘তোমার গিয়ে রান্না চড়াতে হবে না। চল না, কিছু পয়সা খরচ হোক।’
‘কোথায় খাবে?’
‘আছে আমার একটা চেনা জায়গা। নানরুটি আর কাবাব। কি বল?’

দেবী – ০৬

৬
মিসির আলি সাহেব দেখলেন তাঁর ঘরের সামনে চারটি মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে। কোনো টিউটোরিয়েল ক্লাস আছে নাকি? আজ বুধবার, টিউটোরিয়েল ক্লাস থাকার কথা নয়। তবে কে জানে হয়তো নতুন রুটিন দিয়েছে। তিনি এখনো নোটিস পান নি।
‘এই, তোমাদের কী ব্যাপার?’
মেয়েগুলো জড়সড় হয়ে গেল।
‘কি, তোমাদের সঙ্গে কোনো ক্লাস আছে?’
‘জ্বি-না স্যার।
‘তাহলে কি? কিছু বলবে?’
‘স্যার নোটিস-বোর্ডে আপনি একটা নোটিস দিয়েছিলেন, সেই জন্যে এসেছি।
‘কিসের নোটিস?’
তিনি ভুরু কোঁচকালেন। মেয়েগুলো মুখ চাওয়াচাওয়ি করতে লাগল।
‘কী নোটিস দিয়েছিলাম?’
‘স্যার, আপনি লিখেছেন-কারো এক্সট্রাসেপ্সরি পারসেপশনের ক্ষমতা আছে কি না আপনি পরীক্ষা করে বলে দেবেন।
মিসির আলি সাহেবের সমস্ত ব্যাপারটা মনে পড়ল। মাস দুয়েক আগে এ রকম একটা নোটিস দিয়েছিলেন ঠিকই। কিন্তু এই প্রথম চার জনকে পাওয়া গেল, যারা উৎসাহী এবং সব ক’টি মেয়ে। মেয়েগুলো রোগা। তার মানে কি অকল্টের ব্যাপারে রোগা মেয়েরাই বেশি উৎসাহী? তিনি মনে-মনে একটা নোট তৈরি করলেন এবং তৎক্ষণাৎ তাঁর মনে হলো বিষয়টি ইন্টারেস্টিং। একটা সার্ভে করা যেতে পারে।
‘এস তোমরা। ঘরে এস। তোমরা তাহলে জানতে চাও তোমাদের ইএসপি আছে কি না?’
মেয়েগুলো কথা বলল না। যেন একটু ভয় পাচ্ছে। মুখ সবারই শুকনো।
‘বস তোমরা। চেয়ারে আরাম করে বস।’
ওরা বসল। মিসির আলি সাহেব একটা সিগারেট ধরালেন। নিচু গলায় বললেন, ‘সব মানুষের মধ্যেই ইএসপি কিছু পরিমাণে থাকে। টেলিপ্যাথির কথাই ধর। তোমাদের নিজেদেরই হয়তো এ বিষয়ে অভিজ্ঞতা আছে। সহজ উদাহরণ হচ্ছে, ধর, এক দিন তোমাদের কারো মনে হলো অমুকের সাথে দেখা হবে। যার সঙ্গে দেখা হবার কথা মনে হচ্ছে, সে কিন্তু এখানে থাকে না। থাকে চিটাগাং। কিন্তু সত্যি-সত্যি দেখা হয়ে গেল। কি, হয় না এ রকম?’
মেয়েগুলো কিছু বলল না। এর মধ্যে এক জন রুমাল দিয়ে কপাল মুছতে লাগল। মেয়েটি ঘামছে। নার্ভাস হয়ে পড়ছে মনে হয়। নিশ্চয়ই ব্ল্যাড-প্রেশার বেড়ে গেছে। মিসি আলি বিস্মিত হলেন। নার্ভাস মেয়েটির দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘এই বিষয়ে চর্চা এখনো বিজ্ঞানের পর্যায়ে পড়ে না। বেশির ভাগ সিদ্ধান্তই অনুমানের ওপর। তবে আমেরিকায় একটি ইউনিভার্সিটি আছে-ডিউক ইউনিভার্সিটি। ওরা কিছু-কিছু এক্মপেরিমেন্টাল কাজ শুরু করেছে। মুশকিল হচ্ছে, ফলাফল সবসময় রিপ্রডিউসিবল নয়।’
মিসির আলি সাহেব ড্রয়ার খুলে দশটি চৌকো কার্ড টেবিলে বিছালেন। হাসিমুখে বললেন,‘পরীক্ষাটি খুব সহজ। এই কার্ডগুলোতে বিভিন্ন রকম চিহ্ন আছে। যেমন ধর ক্রস, স্কয়ার, ত্রিভুজ, বিন্দু। কোনটিতে কী আছে সেটা অনুমান করতে চেষ্টা করবে। দুই এক বার কাকতালীয়ভাবে মিলে যাবে। তবে ফলাফল যদি স্ট্যাটিসটিক্যালি সিগফিকেন্ট হয়, বুঝতে হবে তোমাদের ইএসপি আছে। এখন এস দেখি, কে প্রথম বলবে? তোমার নাম কী নাম?’
‘নীলুফার।’
‘হ্যাঁ নীলুফার, তুমিই প্রথম চেষ্টা কর। যা মনে আসে তা-ই বল।’
‘আমার কিছু মনে আসছে না।’
‘তাহলে অনুমান করে বল।’
মেয়েটি ঠিকমতো বলতে পারল না। তার সঙ্গীরাও না। মিসির আলি হাসতে-হাসতে বললেন,‘নাহ্‌, তোমাদের কারো কোনো ইএসপি নেই।’ ওরা যেন তাতে খুশিই হলো। মিসির আলি গম্ভীর গলায় বললেন,‘আধুনিক মানুষদের এসব না থাকতে নেই। এতে অনেক রকম জটিলতা হয়।’
‘কী জটিলতা?’
‘আছে, আছে।’
‘বলুন না স্যার।’
মিসির আলি লক্ষ্য করলেন, নীলুফার নামের মেয়েটিই কথা বলছে। স্পষ্ট সতেজ গলা।
‘অন্য আরেক দিন বলব। আজ তোমরা যাও।’
নীলুফার বলল, ‘এমন কিছু কি আছে স্যার, যা করলে ইএসপি হয়?’
‘লোকজন বলে, প্রেমে পড়লেও এই ক্ষমতাটা অসম্ভব বেড়ে যায়। আমি ঠিক জানি না। তোমরা যদি কেউ কখনো প্রেমে পড়, তাহলে এস, পরীক্ষা করে দেখব।’
কথাটা বলেই মিসির আলি অপ্রস্তুত বোধ করলেন। ছাত্রীদের এটা বলা ঠিক হয় নি। কথাবার্তায় তার আরো সাবধান হওয়া উচিত। এ রকম হালকা ভঙ্গিতে কথা বলা ঠিক হচ্ছে না।
‘স্যার, আমরা যাই?’
‘আচ্ছা্‌ ঠিক আছে, দেখা হবে।’
মিসির আলি নিজের টীচার্স লাউঞ্জে চা খেতে এলেন। বেলা প্রায় তিনটা। লাউঞ্জে লোকজন নেই। পলিটিক্যাল সায়েন্সের রশিদ সাহেব এক কোণায় বসেছিলেন। তিনি অস্পষ্ট স্বরে বললেন, ‘মিসির সাহেব, অনেক দিন পর মনে হয় এলেন এদিকে। চা খাবেন?’
‘কে যেন বলছিল, আপনি নাকি ভূতে-ধরা সারাতে পারেন। ঠিক নাকি?’
‘জ্বি-না। আমি ওঝা নই।’
‘রাগ করলেন নাকি? আমি কথার কথা বললাম।’
‘না, রাগ করব কেন?’
‘আচ্ছা মিসির আলি সাহেব, আপনি ভূত বিশ্বাস করেন?’
‘না।’
রশিদ সাহেব উৎসাহিত হয়ে উঠলেন।
‘আত্মা, আত্মায় বিশ্বাস করেন?’
‘না ভাই, আমি একজন নাস্তিক।’
‘আত্মা নেই-এই জিনিসটা কি প্রমাণ করতে পারবেন? কী কী যুক্তি আছে আপনার হাতে?’
মিসির আলি একটি দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেললেন। রশিদ সাহেব বললেন, ‘আত্মা যে আছে, এর পক্ষে বিজ্ঞানীদের কিছু চমৎকার যুক্তি আছে।’
‘থাকলে তো ভালোই। বিজ্ঞানীরা জড়জগৎ বাদ দিয়ে আত্মাটাত্মা নিয়ে উৎসাহী হলেই কিন্তু ঝামেলা। রশিদ সাহেব, আমার মাথা ধরেছে। এ নিয়ে আর কথা বলতে চাই না। কিছু মনে করবেন না।’
মিসির আলি চা না খেয়েই উঠে পড়লেন। তাঁর সত্যি-সত্যি মাথা ধরেছে। প্রচন্ড ব্যথা। রড় রকমের কোনো অসুখের পূর্বলক্ষণ।

দেবী – ০৭

৭
নীলু ইউনিভার্সিটি থেকে ফিরে এসে দেখে তার বিছানার উপর চমৎকার একটি প্যাকেট পড়ে আছে। ব্রাউন কাগজে মোড়া প্যাকেটে গোটা-গোটা করে তার নাম লেখা। নীলুর বুক কেঁপে উঠল, বিলুর চোখে পড়ে নি তো? বিলুর খুব খারাপ অভ্যাস আছে, অন্যের চিঠি খুলে-খুলে পড়বে। হাসাহাসি করবে। নীলু দরজা বন্ধ করেই প্যাকেটটি খুলল। ছোট্ট চিঠি, কিন্তু কী চমৎকার করেই না লেখা:

Page 4 of 10
Prev1...345...10Next
Previous Post

কহেন কবি কালিদাস – হুমায়ূন আহমেদ

Next Post

নিষাদ – হুমায়ূন আহমেদ

Next Post

নিষাদ - হুমায়ূন আহমেদ

’৭১ এর রোজনামচা – আহসান হাবীব

মন্তব্য করুন জবাব বাতিল

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

সাম্প্রতিক প্রকাশনাসমূহ

  • তিন গোয়েন্দা ভলিউম ১১৫: ভূমিকম্প – শামসুদ্দীন নওয়াব
  • তিন গোয়েন্দা ভলিউম ১১৮: বিভীষিকার প্রহর – রকিব হাসান
  • তিন গোয়েন্দা ভলিউম ১১৭: বড়দিনের ছুটি – রকিব হাসান
  • তিন গোয়েন্দা ভলিউম ১১৭: আলাস্কা অভিযান – রকিব হাসান
  • তিন গোয়েন্দা ভলিউম ১১৭: আমিই কিশোর – রকিব হাসান

বিভাগসমূহ

  • আত্মজীবনী
  • ইতিহাস
  • উপন্যাস
  • কবিতা
  • কাব্যগ্রন্থ
  • গল্পের বই
  • গোয়েন্দা কাহিনী
  • ছোট গল্প
  • জীবনী
  • দর্শন
  • ধর্মীয় বই
  • নাটকের বই
  • প্রবন্ধ
  • বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী
  • বৈজ্ঞানিক বই
  • ভূতের গল্প
  • রহস্যময় গল্পের বই
  • রোমাঞ্চকর গল্প
  • রোম্যান্টিক গল্পের বই
  • শিক্ষামূলক বই
  • আমাদের সম্পর্কে
  • যোগাযোগ
  • গোপনীয়তা নীতি

© 2023 BnBoi - All Right Reserved

No Result
View All Result
  • বাংলাদেশী লেখক
    • অতুলচন্দ্র গুপ্ত
    • অভিজিৎ রায়
    • আখতারুজ্জামান ইলিয়াস
    • আনিসুল হক
    • আবু ইসহাক
    • আবু রুশদ
    • আবুল আসাদ
    • আবুল খায়ের মুসলেহউদ্দিন
    • আবুল বাশার
    • আরজ আলী মাতুব্বর
    • আল মাহমুদ
    • আসাদ চৌধুরী
    • আহমদ ছফা
    • আহমদ শরীফ
    • ইমদাদুল হক মিলন
    • উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী
    • কাসেম বিন আবুবাকার
    • জসীম উদ্দীন
    • তসলিমা নাসরিন
    • দাউদ হায়দার
    • দীনেশচন্দ্র সেন
    • নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়
    • নিমাই ভট্টাচার্য
    • প্রফুল্ল রায়
    • প্রমথ চৌধুরী
    • ময়ূখ চৌধুরী
    • মহাদেব সাহা
    • মাহমুদুল হক
    • মুহম্মদ জাফর ইকবাল
    • হুমায়ূন আহমেদ
  • ইন্ডিয়ান লেখক
    • অক্ষয়কুমার মৈত্রেয়
    • অতুল সুর
    • অদ্রীশ বর্ধন
    • অনির্বাণ বন্দ্যোপাধ্যায়
    • অনীশ দেব
    • অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর
    • অমিয়ভূষণ মজুমদার
    • আশাপূর্ণা দেবী
    • আশুতোষ মুখোপাধ্যায়
    • ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর
    • কাজী নজরুল ইসলাম
    • ক্ষিতিমোহন সেন
    • তারাদাস বন্দ্যোপাধ্যায়
    • তারাশংকর বন্দ্যোপাধ্যায়
    • দেবীপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায়
    • নারায়ণ সান্যাল
    • নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী
    • নীহাররঞ্জন গুপ্ত
    • পাঁচকড়ি দে
    • পূর্ণেন্দু পত্রী
    • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
    • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
    • বিমল মিত্র
    • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
    • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
    • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
    • হেমেন্দ্রকুমার রায়
  • বিভাগসমূহ
    • আত্মজীবনী
    • ইতিহাস
    • উপন্যাস
    • কবিতা
    • কল্পকাহিনী
    • কাব্যগ্রন্থ
    • খেলাধুলার বই
    • গল্পের বই
    • গোয়েন্দা কাহিনী
    • ছোট গল্প
    • জীবনী
    • দর্শন
    • ধর্মীয় বই
    • নাটকের বই
    • প্রবন্ধ
    • বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী
    • বৈজ্ঞানিক বই
    • ভূতের গল্প
    • মুক্তিযুদ্ধের-বই
    • রহস্যময় গল্পের বই
    • রোমাঞ্চকর গল্প
    • রোম্যান্টিক গল্পের বই
    • শিক্ষামূলক বই
    • সমগ্র
  • সিরিজ বই
    • মিসির আলী সমগ্র
    • হিমু সিরিজ

© 2023 BnBoi - All Right Reserved

Welcome Back!

Login to your account below

Forgotten Password?

Retrieve your password

Please enter your username or email address to reset your password.

Log In