নিশি নড়ে বসল। মিসির আলি বললেন, তুমি কিছু বলবে?
নিশি চাপা গলায় বলল, আপনি কি আমার সঙ্গে একটু আসবেন?
কোথায় যাব?
আমার শোকার ঘরে।
কেন?
শরিফ আমার ঘরে বসে আছে। আপনি তাকে দেখবেন, তার সঙ্গে কথা বলবেন।
আমি দেখতে চাচ্ছি না নিশি। তোমার ভয়ঙ্কর জগতের অংশ আমি হতে চাই না।
আসুন না। প্লিজ।
না। শোন নিশি আমি যখন না বলি তখন সেই না কখনো হ্যাঁ হয় না। ওই প্রসঙ্গ থাক। ভালো কথা তুমি যে ওই দিন টেলিফোনে ফট করে বলে দিলে দোকানের মালিকের মেয়ের নাম লয়লা-কীভাবে বললে? আমি অনেক চিন্তা করেও বের করতে পারি নি।
আমি যদি বলি। শরিফ আমাকে বলেছে আপনি কি বিশ্বাস করবেন?
না।
আপনার খিদে পেয়েছে আসুন খাবার দি।
মিসির আলি খুব তৃপ্তি করে খেলেন। সামান্য খাবার কিন্তু খেতে এত ভালো হয়েছে।
আলু ভর্তার উপর মেয়েটি গাওয়া ঘি ছড়িয়ে দিল। গন্ধে চারদিক ম মা করছে।
আপনাকে কি শুকনো মরিচ ভেজে দেব? একটা বইয়ে পড়েছিলাম ভাজা শুকনো মরিচ আপনার খুব পছন্দ।
দাও।
নিশি মরিচ ভেজে নিয়ে এল। কী যত্ন করেই না মেয়েটি তার প্লেটে খাবার তুলে দিচ্ছে। মিসির আলি হঠাৎ লক্ষ করলেন মেয়েটির চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পড়ছে।
একবার তাঁর ইচ্ছে হল নিজের হাতে মেয়েটির চোখের জল মুছে দেন—পরমুহুর্তেই মনে হল–না, নিশির চোখের জল মুছিয়ে দেবার দায়িত্ব তাঁর না। তাঁর দায়িত্ব জলের উৎসমুখ খুঁজে বের করা। এই কাজটা তিনি করেছেন। তাঁর দায়িত্ব শেষ হয়েছে। মেয়েটি যদি তার চোখের জল মুছতে চায় তা হলে তাকেই তা করতে হবে।