উত্তর : জি না। একেক সময় একেক কাপড় পরা থাকত।
প্রশ্ন : তিনি তোমার গায়ে হাত দিয়ে আদর করতেন?
উত্তর : জি করতেন। মাঝে মাঝে আমি তার কোলে উঠে বসে থাকতাম।
যেসব প্রশ্ন আমার মাথায় এসেছে তার উত্তর দিলাম। অনেক চিন্তা করেও আর কোনো প্রশ্ন পাচ্ছি না। আপনারা যারা সাইকিয়াট্রিস্ট তাঁরা তো রাজ্যের প্রশ্ন করেন। উদ্ভট সব প্রশ্ন। আপনার মাথাতেও নিশ্চয়ই উদ্ভট সব প্রশ্ন আসছে। ও না ভুল করলামআপনি তো আবার অন্যদের মতো না। আপনি প্রশ্ন করেন না। শুধু শুনে যান। একই গল্প বারবার শোনেন। শুনতে শুনতে হঠাৎ এক জায়গায় খটকা লাগে। সেখান থেকে আপনার যাত্রা শুরু হয়। আমার গল্পে কোথাও কি কোনো খটকা লেগেছে? নাকি পুরো গল্পই খটকাময়? পুরো গল্প খটকাময় হলে তো। আপনি কাগজগুলি ছুঁড়ে ফেলে বলবেন-আরে দূর দূর।
প্লিজ তা করবেন না। আমার অনেক কিছু বলার আছে। Please Help Me, আপনি নিশ্চয়ই এখন বিরক্তিতে ভুরু কুঁচকাচ্ছেন। ভাবছেন মেয়েটার কী কনট্রাডিকশানসাহায্য চাচ্ছে, আবার কোনো ঠিকানা দিচ্ছে না। যোগাযোগ করছে না। নিজের পরিচয় গোপন করছে। আসল নাম না বলে, বলছে নাম চিত্রা। তা হলে সাহায্যটা করা হবে কীভাবে? আসলে আমি সাহায্য চাই না। কারণ আমি ভালোই আছি। আমার বিচিত্র জীবন সম্পর্কে আমি আপনাকে বলব। আপনি শুনবেন। আমার সমস্যার সমাধান করবেন। তার উপর একটা বই লেখা হবে। সেই বই কিনে আমি পড়ব। আমার এতেই হবে। এর বেশি সাহায্যের আমার প্রয়োজন নেই।
আরেকটা কথা-আপনি আবার ভাবছেন না তো আমার এই গল্প বানোয়াট গল্পী? আপনাকে বিভ্ৰান্ত করার জন্যে উদ্ভট একটা গল্প কেঁদেছি? একবার আপনার মাথায় এই ব্যাপারটা ঢুকে গেলে আপনি মনোযোগ দিয়ে আমার লেখা পড়বেন না। এমনও হতে পারে যে কাগজগুলি ডাক্টবিনে ফেলে দেবেন। আমার প্রধান দায়িত্ব আপনাকে বিশ্বাস করানো-আমি যা বলছি, সত্যি বলছি। আমার কাছে যা সত্যি অন্যের কাছে হয়তো নয়। সত্য একেক জনের কাছে একেক রকম। Truth has many faces. তাই না?
আমি যে সত্যি বলছি সেটা কী করে প্রমাণ করব? আমি জানি না। আমি আপনার হৃদয়ের মহত্ত্বের কাছে সমৰ্পণ করছি এবং আশা করছি আমাকে বিশ্বাস করবেন। আজ এই পর্যন্তই লিখলাম। মাথা ধরেছে—এখন আর লিখতে পারছি না। আপনার ঠোঁটে কি এখন মৃদু একটা হাসির রেখা? সাইকিয়াট্রিস্টরা মাথা ধরেছে বাক্যটা শুনলেই নড়েচড়ে বসেন। তাদের ভাবটা হচ্ছে–এইবার পাওয়া গেছে মাথায় সমস্যা বলেই মাথা ধরা।
আমেরিকার একজন সাইকিয়াট্রিস্টর কাছে গিয়েছিলাম। আমি যাই নি–আমার যাবা। আমাকে নিয়ে গিয়েছিলেন। ভদ্রমহিলা কিছুক্ষণ কথা বলার পরই গম্ভীর গলায় ফললেন, ইয়াং লেডি, তোমার কি প্রায়ই মাথা ধরে?
আমি বললাম–হ্যাঁ।
ভদ্রমহিলার ঠোঁটে আনন্দের হাসি দেখা গেল। ভাবটা হচ্ছে-I got you at last.
তারপর অসংখ্য প্রশ্ন, সবই মাথা ধরা নিয়ে।
কখন মাথা ধরে? রাতে বেশি, না দিনে?
মাথা ধরার সময় কি চোখ জ্বালা করে?
কান লাল হয়ে যায়?
মাথা ধরার তীব্ৰতা কেমন?
কতক্ষণ থাকে?
তখন কি পানির পিপাসা হয়?
আমি যখন বললাম, ম্যাডাম আমার মাথা ধরাটা খুবই স্বাভাবিক ধরনের। মাঝে মধ্যে মাথা ধরে-প্যারাসিটামল খাই, কিংবা গরম চা খাই। মাথা ধরা সেরে যায়। অদ্রমহিলা তাতে খুব হতাশ হলেন।
আপনিও কি হতাশ হচ্ছেন?
এমনিতে আমি কিন্তু খুব স্বাভাবিক মানুষ। আমি আমার মৃত মাকে দেখতে পেতাম এই অস্বাভাবিকতাটা ছোটবেলায় ছিল-বেশি দিনের জন্যে কিন্তু না। খুব বেশি হলে সাত কিংবা অ্যাট মাস। হঠাৎ একদিন সব আগের মতো হয়ে গেল। ছোট মার আসা বন্ধ হল। আমি কিছুদিন প্রবল হতাশায় কাটালাম। ছোটদের হতাশা তীব্র আকার ধারণ করতে পারে। তবে তার স্থায়িত্বও কম হয়। শিশুদের প্রবল শোক এবং প্রবল হতাশা কাটিয়ে ওঠার সহজাত ক্ষমতা থাকে। আমিও হতাশ কাটিয়ে উঠলাম। ধীরে ধীরে সব আগের মতো হয়ে গেল। অবিশ্যি ছোট মা আসা পুরোপুরি বন্ধ করলেন তাও না। তিনচার মাস পরপর হঠাৎ চলে আসতেন। আমি তখন বলতাম, এতদিন আস নি কেন? তিনি বলতেন-আসার পথ ভুলে যাই। মনে থাকে না। আমার জীবন যাপন স্বাভাবিক হলেও আমি বড় হচ্ছিলাম নিঃসঙ্গতায়। আমার চারপাশে কেউ ছিল না। আমার নিঃসঙ্গতা দূর করলেন নীতু আন্টি। তিনি আমাদের বাড়িতে থাকতে এলেন। আরো পরিষ্কার করে বলি-বাবা তাকে বিয়ে করলেন। আচ্ছা। আপনি কি বাবার ওপর বিরক্ত হচ্ছেন? কেমন মানুষ, একের পর এক বিয়ে করে যাচ্ছে! দয়া করে বিরক্ত হবেন না। আমার বাবা অসাধারণ একজন মানুষ।
এই যা মাথা ধরা নিয়ে অনেকক্ষণ লিখে ফেললাম। আচ্ছা আপনার কি এখন মাথা ধরেছে? কেন জিজ্ঞেস করলাম জানেন। ধরুন। আপনি একজনের সঙ্গে কথা বলছেন! যার সঙ্গে কথা বলছেন তার প্রচণ্ড মাথায় যন্ত্রণা। কিছুক্ষণ কথা বলার পরই দেখবেন আপনারও মাথা ধরেছে। কোনো কারণ ছাড়াই ধরেছে। এটা বহুল পরীক্ষিত একটা ব্যাপার। আমি অনেকবার পরীক্ষা করে দেখেছি! আপনিও করে দেখতে পারেন। এবার আপনাকে একটা ধাঁধা জিজ্ঞেস করছি। বলুন তো কোন প্রাণীর দুটা লেজ? খুব সহজ! একটু চিন্তা করলেই পেয়ে যাবেন।
মিসির আলি পড়া বন্ধ করলেন। তিনি অনেক ভেবেও বের করতে পারলেন নাকোন প্রাণীর দুটা লেজ। একবার টিকটিকির কথা মনে হয়েছিল। টিকটিকির একটা লেজ খসে গেলে আরেকটা গজায় সেই অর্থে টিকটিকিকে দুই লেজের প্রাণী কি বলা যায়? না-টিকটিকি হবে না।