এরই মধ্যে অর্থাৎ বাইশে শ্রাবণের অনুষ্ঠান বাতিল, চার্চিলের মৃত্যু, কুনিয়ার অন্তর্ধান, বীর সিং-এর একটানা অনুপস্থিতি বা না-ফেরা ইত্যাদি প্রসূত সঙ্কটের মধ্যে অমলের বম্বে হেড অফিসে বদলির প্রত্যাশিত এবং অনাকাঙিক্ষত আদেশটি এসে পড়ল। আসবাবপত্র গেরস্থালি বেঁধেহেঁদে চার্চিলসহ বীর সিং-এর নতুন জায়গায় নতুন বাড়িতে নতুন করে সংসার পাতার পরিচিত কার্যক্রমটিতে এবারে ছেদ। অমলের তখন আর জিনিসে সংসারে আগ্রহ নেই যদিও মনে মনে জানে সবই প্রয়োজন। কিন্তু বাঁধা-ঘঁদার ঝামেলা পোষাচ্ছে না।
ড্রাইভার রমেশ এতবছর ধরে ভুবনেশ্বরেনবাগত একতারনতুন সদস্যদের সংসারপাতা এবং বিদায়ী পুরনো সদস্যদের সংসার তুলে নিয়ে যাওয়া দেখতে দেখতে একটি সাইড বিজনেস চালু করে ফেলেছে-পুরনো ফার্নিচার ফ্রিজ-টিভি কেনা-বেচা। তার সাহায্যে অমলের সব আসবাবপত্র ইলেকট্রিক্যাল জিনিস বিক্রি হয়ে গেল, বেটা রমেশ কত পারসেন্ট কমিশান পেল কে জানে। টিভিটা বোধহয় ও-ই বেনামে কিনল। মৈত্রেয়ী সপ্তাহান্তের সঙ্গে দুদিন যোগ করে বাকি প্যাকিং তদারকি সারল। স্কুলে তখন ওর পুরো সেশান চলছে, তারও সময় নেই। শুধু একেবারে জলের দামে জিনিসগুলো অমল বেচে দিল এই দুঃখ করা ছাড়া বিশেষ কীই বা করবে।
সেপ্টেম্বর মাসের বম্বে। ভয়াবহ। কলকাতার বর্ষা সে তুলনায় কাব্য। আকাশ বাতাস ঘর অফিস মেঝে ছাদ সর্বত্র ভিজে ভিজে। বম্বে মানে এখানে ওখানে ওপরে নীচে বিন্দু বিন্দু জল আর জল। অমলের স্মৃতিতে বম্বে আর বর্ষা একাকার। এমন কি তার মধ্যে গণেশ চতুর্থও মনে পড়ে না।
—কী যে বলেন। মুম্বাই হইল গিয়া ইন্ডিয়ার কমার্শিয়াল ক্যাপিটাল। আর আপনার কি না মনে আছে শুধু জল। অমল চুপ করে থাকে।
—সত্যি আমার আর কিছু মনে নেই। কত মাস কিছু মনে পড়ল না।