চেঁচামেচি, ধস্তাধস্তি?
হ্যাঁ, পুলিশকে তাই বলতে হয়েছে বইকি।
বলতে হয়েছে একসঙ্গে চার-পাঁচজন গুণ্ডা ঝাঁপিয়ে পড়ে
কিন্তু প্রভাত তো জানে একটাই মাত্র লোক। যে লোকটা একখানা ছোট গাড়ি নিয়ে পথের একধারে চুপ করে বসেছিল চালকের আসনে, গাড়ির দরজা খুলে। স্পষ্ট সাদা চোখে দেখেছে প্রভাত, সেই খোলা দরজা দিয়ে ঝপ করে ঢুকে পড়েছে ঝলমলে ঝকঝকে, চোখে সুর্মা টানা মল্লিকা।
আর প্রভাত?
প্রভাত তো তখন রাস্তার ওপারে পানের দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে রঙিন মশলা দিয়ে মিঠে পান সাজাচ্ছিল। হঠাৎ যে মল্লিকার রঙিন মশলা দেওয়া মিঠে পান খাবার ইচ্ছে হয়েছিল।
তাই তো প্রভাতকে ঠেলে পাঠিয়েছিল রাস্তার ওপারে পানের দোকানে। বলেছিল, আমি দাঁড়াচ্ছি। দেরি করবে না কিন্তু।
দেরি কি করেছিল প্রভাত? বড্ড বেশি দেরি? তাই ধৈর্য হারিয়েছিল মল্লিকা?
গাড়ীর নম্বর?
না, সে আর দেখবার অবকাশ হয়নি প্রভাতের। রাস্তা পার হবার আগেই হুস করে ছুটে বেরিয়ে গিয়েছিল গাড়ীটা, দরজা বন্ধ করার রূঢ় একটা শব্দ তুলে, যে শব্দটা অবিরত ধ্বনিত হচ্ছে প্রভাতের কানে। গাড়ীর পিছনে বৃথা ছুটতে গিয়ে হোঁচট খেয়ে পড়েছিল। কিন্তু চালকের মুখটা দেখা হয়ে গিয়েছিল তার পাশের দোকানের আলোতে।
চিনতে পেরেছিল বইকি।
ওর সঙ্গে কতগুলো দিন একই জিপের মধ্যে গায়ে গায়ে বসে কত মাইল রাস্তা পাড়ি দিয়েছে প্রভাত।
বউ হারিয়ে চুপ করে বসে থাকা যায় না।
পুলিস কেস করতে হচ্ছে।
হাওড়া অঞ্চলের অনেক গুণ্ডাকেই দেখতে যেতে হচ্ছে প্রভাতকে, সনাক্ত করতে। কিন্তু কই, সেই চার-পাঁচটা লোককে তো–? নাঃ, তাদের বার করতে পারছে না পুলিশ।
হাওড়া অঞ্চলে দুবৃত্তের অত্যাচারের একটা খবর খবরের কাগজেও ঠাঁই পেয়েছে কোন একটা তারিখে। তা ও আর আজকাল কেউ তাকিয়ে দেখে না।
দেখেওনি। কেউ লক্ষ্য করেনি। কে কত লক্ষ্য করে?
নইলে প্রভাতের বাড়ির পিছনের বাগানের মধ্যেকার ওই সর্টকাটটা ধরে তো পাড়ার কত লোকই বাস-রাস্তায় যাওয়া আসা করে, কেউ তো তাকিয়ে দেখে নি ঘাসের জঙ্গলের মধ্যে ছেঁড়া চুলের নুড়ো, এঁটো শালপাতার ঠোঙা, আর বাজে কাগজের কুচোর গাদায় চার ইঞ্চি লম্বা চওড়া ওই কাগজের টুকরোটুকু পড়ে আছে কত বড় ভয়ঙ্কর একটা সাক্ষ্যপ্রমাণ নিয়ে।
তা তারা দেখলেই কি ধরতে পারত, কতখানি ভয়ঙ্করতা লুকিয়ে আছে ওই কাগজটুকুর মধ্যে?
পারত না। কী করে পারবে?
চিঠি নয়, দলিল নয়, শুধু দুটি বাক্য। নির্ভুল বানানে পরিষ্কার ছাঁদে লেখা। বাংলা নয় ইংরিজি অক্ষরে। তা হোক, চিনতে ভুল হয় না প্রভাতের। এই এতগুলো দিনের মধ্যে মল্লিকার হাতের লেখা তো কতই দেখতে হয়েছে প্রভাতকে। বাংলা, ইংরেজি সবই। হাওড়া টকি ইভনিং শো। এই ছোট্ট দুটি কথাই তাই যথেষ্ট।