ডাক্তার সাহেবের পৈতৃক বাড়ি বারোকাদায়।
ময়মনসিংহ-মোহনগঞ্জ লাইনের অতিথপুর ষ্টেশনে নেমে ছমাইল যেতে হয়। রিকশায়, দু-মাইল হেঁটে, এবং বাকি দু-তিন মাইল নৌকায়।
মিসির আলির খুবই কষ্ট হল। অতিথপুর থেকে রওনা হয়ে বেশ কয়েকবার মনে হল না গেলে কেমন হয়? শেষ পর্যন্ত পৌঁছলেন একটা মাত্র কারণে – ডাক্তার সাহেব নানান জোগাড়যন্ত্র করে রেখেছেন। লোকজনকে খবর দেয়া হয়েছে। এরপরে না-যাওয়াটা অন্যায়।
ডাক্তার সাহেবের পৈতৃক বাড়ি খুবই সুন্দর। সম্প্রতি চুনকাম করা হয়েছে বলেই বোধহয় – সবুজের ভেতর ধবধবে সাদা বাড়ি ঝকঝকে করছে। বাড়ি দেখে খুশি হবার বদলে মিসির আলির মন-খারাপ হয়ে গেল। এতবড় বাড়ি খালি পড়ে আছে। খাঁ খাঁ করছে। কোনো মানে হয়? বাড়ির জন্যে তো মানুষ নয়, মানুষের জন্যই বাড়ি।
বাড়ির সামনে নদী না- খালের মত আছে। অল্প পানি। সেই পানিতেই পানশি জাতীয় বিরাট এক নৌকা। বজলু হাসিমুখে বলল, ‘স্যার। নৌকা আপনার জন্যে। বড়আপা চিঠি দিয়েছে যেন প্রত্যেক বিকালে নৌকার মধ্যে আপনার চা দেই।’
‘ঠিক আছে, নৌকাতে চা দিও।’
‘আগামীকাল কী খাবেন স্যার যদি বলেন। মফস্বল জায়গা। আগে-আগে না বললে জোগাড়যন্ত্র করা যায় না। রাতের ব্যবস্থা আছে কইমাছ, শিংমাছ। মাংসের মধ্যে আছে কবুতরের মাংস। মাছের মাথা দিয়া মাষকালাইয়ের ডাল রানধা করছি।’
‘যথেষ্ট হয়েছে। দেখো বজলু, খাওয়াদাওয়া নিয়ে তুমি বেশি ব্যস্ত হয়ো না। খাওয়াদাওয়ার ব্যাপারে আমার আগ্রহ খুব কম। দুই পদের বেশি কখনো রান্না করবে না।’
বজলু সব ক’টা দাঁত বের করে হেসে ফেলল –
‘আপনি বললেতো স্যার হবে না। বড়আপা চিঠি দিয়ে দিয়েছেন – লিখেছেন স্যারের যত্নের যেন কোনো ত্রুতি না হয়। সবসময় খুব কম করে হলেও যেন প্রতি বেলা পাঁচ পদের আয়োজন হয়। আমি স্যার অনেক কষ্টে পাঁচ পদের ব্যবস্থা করেছি – কইমাছের ভাজি, শিংমাছের ঝোল, কবুতরের মাংস, বেগুন ভর্তা আর ডাল। আগামীকাল কি করি এই চিন্তায় আমি অস্থির।’
‘অস্থির হবার কোনো প্রয়োজন নেই বজলু। আপাতত চা খাওয়াও।’
‘তা হলে স্যার নৌকায় গিয়ে বসেন। বিছানা পাতা আছে। আপা বলে দিয়েছেন নৌকায় চা দেওয়ার জন্যে।’
মিসির আলি সাহেব নৌকাতেই বসলেন। তাঁর মন বলছে বজলু তাঁকে বিরক্ত করে মারবে। ভালবাসার অত্যাচার কঠিন অত্যাচার। একে গ্রহণও করা যায় না, বর্জনও করা যায় না।
নৌকায় বসে মিসির আলি একটা মজার জিনিস লক্ষ করলেন। খাল বরাবর আমগাছগুলি টিয়াপাখিতে ভরতি। দশ-পনেরোটি নয় – শত শত। এরা যখন ওড়ে তখন আর এদের সবুজ দেখায় না। কালো দেখায়। এর মানে কী? টিয়া কালো দেখাবে কেন? চলমান সবুজ রঙ যদি কালো দেখায় তা হলে তো চলন্ত ট্রেনের সবুজ কামরাগুলিও কালো দেখানোর কথা। তা কি দেখায়? মিসির আলি মনে করতে পারলেন না। বজলুকে একবার পাঠাতে হবে চলন্ত ট্রেন দেখে আসার জন্যে। সে দেখে এসে বলুক।
প্রথম রাতে মিসির আলির ঘুম ভাল হল না। প্রকাণ্ড বড় খাট – তাঁর মনে হতে লাগল তিনি মাঠের মাঝখানে শুয়ে আছেন। বাতাসও খুব সমস্যা করতে লাগল। জানালা দিয়ে এক-একবার দমকা হাওয়া আসে আর তাঁর মনে হয় তাঁকে উড়িয়ে নিয়ে যাবে। মাঝরাতে দরজা-জানালা বন্ধ করে তিনি বুড়ির খাতা নিয়ে বসলেন।
অনীশ – ০৫
আমার বাবা মারা যান যখন আমার বয়স পনেরো মাস।
বাবার অভাব আমি বোধ করিনি, কারণ বাবা সম্পর্কে আমার কোনো স্মৃতি নেই। স্মৃতি থাকলেই অভাববোধের ব্যাপারটা চলে আসত। আমাকে মানুষ করেছেন আমার মা। তিনি অত্যন্ত সাবধানি মহিলা। বাবার অভাব যাতে আমি কোনদিন বুঝতে না পারি তার সবরকম চেষ্টা তিনি বাবার মৃত্যুর পর থেকেই করে আসছেন। তিনি যা যা করেছেন তার কোনোটিই কোনো সুস্থ মহিলা করবেন না। মা হচ্ছেন একজন অসুস্থ, অস্বাভাবিক মহিলা। যেহেতু জন্ম থেকেই আমি তাঁকে দেখে আসছি, তাঁর অস্বাভাবিকতা আমার চোখে ধরা পড়তে অনেক সময় লেগেছে।
বাবার মৃত্যুর পর ঘর থেকে তাঁর সমস্ত ছবি, ব্যবহারি জিনিস সরিয়ে ফেলা হয় – কিছু নষ্ট করে দেয়া হয়, কিছু পাঠিয়ে দেয়া হয় আমার দাদার বাড়িতে। মা’র যুক্তি ছিল – বাবার স্মৃতিজড়িত কিছু তাঁর চারপাশে রাখতে পারবেন না। স্মৃতির কষ্ট সহ্য করার ক্ষমতা তাঁর নেই।
বাবা কেমন ছিলেন, তিনি কী করতেন, কী গল্প করতেন এসব নিয়েও মা কখনো আমার সঙ্গে কিছু বলেননি। বাবার সম্পর্কে কিছু বলতে গেলেই তাঁর নাকি অসম্ভব কষ্ট হয়। মা এই কষ্ট থেকেক মুক্তি পাওয়ার জন্যে বাবার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত সবকিছু থেকে নিজেকে সরিয়ে নিলেন। বাবার আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব সবার সঙ্গেই সম্পর্ক ছিন্ন করলেন। আমার নাম ‘তিতলি’ যা বাবা আগ্রহ করে রেখেছিলেন তাও বদলানো হল। আমার নতুন নাম হল রূপা। তিতলি নাম মা বদলালেন, কারণ এই নাম তাঁকে বাবার কথা মনে করিয়ে দিত।
মা অসম্ভব রূপবতী। আরেকটি বিয়ে করাই মা’র জন্যে স্বাভাবিক ছিল। পাত্রের অভাব ছিল না। রূপবতীদের পাত্রের অভাব কখনো হয় না। মা বিয়ে করতে রাজি হলেন না। বিয়ের বিপক্ষে একটি যুক্তি দিলেন – যে-ছেলেটিকে বিয়ে করব তার স্বভাব-চরিত্র যদি রূপার বাবার চেয়ে খারাপ হয় তাহলে কখনো তাকে ভালবাসতে পারব না। দিনরাত রূপার বাবার সঙ্গে তার তুলনা করে নিজেই কষ্ট পাব, তাকেও কষ্ট দেব। সেতা ঠিক হবে না। আর যদি ছেলেটি রূপার বাবার চেয়ে ভাল হয় তা হলে রূপার বাবাকে আমি ক্রমে ক্রমে ভুলে যাব। তাও ঠিক হবে না। এই মানুষটিকে আমি ভুলতে চাই না।
আমার মামারা ছাপোষা ধরনের মানুষ। মাকে নিয়ে তাড়া দুশ্চিন্তায় পড়ে গেলেন। কন্যাসহ বোনের বোঝা মাথায় নেবার মতো সামর্থ্য বা ইচ্ছা কোনটাই তাঁদের ছিল না। তবু মা তাঁদের ঘাড়ে সিন্দাবাদের ভূতের মতো চেপে রইলেন। কিছুদিন তিনি এক ভাইয়ের বাড়িতে থাকেন, তারপর যান অন্য ভাইয়ের বাসায়। মামারা ধরেই নিলেন মা তাঁর জীবনটা এভাবেই পার করবেন। তাঁরা মা’র সঙ্গে কুৎসিত গলায় ঝগড়া করেন। গালাগালি করেন। মা নির্বিকার। আমার বয়স যখন পাঁচ হল তখন আমাকে বললেন, রূপা, তোকে তো এখন একটা স্কুলে দিতে হয়। ঘুরে ঘুরে জীবন পার করলে হবে না। আমাকে থিতু হতে হবে। আমি এখন একটা বাসা ভাড়া নেব। সম্ভব হলে একটা বাড়ি কিনে নেব। আমি বললাম, টাকা পাবে কোথায়? মা বললেন, টাকা আছে। তোর বাবার একটা পয়সাও খরচ করিনি, জমা করে রেখেছি।
বাবা বিদেশি এক দূতাবাসে চাকরি করতেন। চাকরিকালীন রোড অ্যাক্সিডেন্টে মারা যান বলে ইনশুরেন্স থেকে এবং দূতাবাস থেকে বেশ ভাল টাকাই পেয়েছিলেন। মা সেই টাকার অনেকখানি খরচ করে নয়াটোলায় দোতলা এক বাড়ি কিনে ফেললেন। বেশ বড় বাড়ি। প্রায় এক বিঘা জমি নিয়ে বাড়ি। একতলা দোতলা মিলে অনেকগুলি ঘর। ভেতরের দিকে দুটো আমগাছ, একটা সজনেগাছ, একটা কাঁঠালগাছ। বাড়ি পুরান হলেও সব মিলিয়ে খুব সুন্দর। একতলাটা পাঁচ হাজার টাকায় ভাড়া হল। আমরা থাকি দোতলায়। পাঁচিল দিয়ে ঘেরা বাড়ি। মা সেই পাঁচিল আরও উঁচু করলেন। ভারী গেট করলেন। একজন দারোয়ান রাখলেন। আমাদের নতুন জীবন শুরু হল।
নতুন জীবন অনেক আনন্দময় হওয়া উচিত ছিল। মামাদের ঝগড়া গালাগালি নেই। অভাব-অনটন নেই। এত বড় দোতলায় আমরা দুজনমাত্র মানুষ। বাড়িটাও সুন্দর। দোতলায় রেলিং দেয়া টানা বারান্দাও আছে। আমার খেলার সঙ্গীসাথিও আছে। একতলার ভাড়াটের দুটি আমার বয়েসি যমজ মেয়ে আছে। মজার ব্যাপার হচ্ছে, আমাদের নিজস্ব বাড়িতে আমার ভয়াবহ জীবন শুরু হল। মা সারাক্ষণ আমাকে আগলে রাখেন। নিজে স্কুলে নিয়ে যান, যে-চারঘণ্টা স্কুল চলে মা মাঠে বসে থাকেন। ছুটি হলে আমাকে নিয়ে বাসায় ফেরেন। দুপুরে খাবার পরই আমাকে আমার ঘরে আটকে দেন। ঘুমুতে হবে। বিকেলে যদি বলি, মা নিচে খেলতে যাই? তিনি গম্ভীর মুখে বলেন, না। দোতলার বারান্দায় বসে খেলো। খেলার জন্যে নিচে যেতে হবে কেন?
‘নিচে গেলে কী হবে মা?’
‘তুমি নিচে গেলে আমি এখানে একা একা কী করব?’
আসল কথা হচ্ছে মা’র নিঃসঙ্গতা। আমি তাঁর একমাত্র সঙ্গী। সেই সঙ্গী তিনি এক মুহূর্তের জন্যেও চোখের আড়াল করবেন না। দিনের পর দিন রাগারাগি করেছি, কান্নাকাটি করেছি, কোনো লাভ হয়নি।
কতবার বলেছি, মা সবাই কত জায়গায় বেড়াতে যায় – চলো আমরাও যাই। বেড়িয়ে আসি।
‘কোথায় যাবে?’
‘চলো কক্সবাজার যাই।’
‘না।’
‘তা হলে চল অন্য কোথাও যাই।’
‘ঢাকার বাইরে যেতে আমার ইচ্ছা করে না।’
‘ঢাকার ভেতরেই কোথাও যাই চলো।’
‘কোথায় যেতে চাস?’
‘মামাদের বাড়ি।’
‘না।’
‘বাবাদের দেশের বাড়িতে যাবে মা? বড়চাচা তো লিখেছেন যেতে।’
‘সেই চিঠি তুমি পড়েছ?’
‘হ্যাঁ।’
‘কেন পড়লে? আমি বলিনি – আমার কাছে লেখা কোনো চিঠি তুমি পড়বে না? বলেছি, না বলিনি?’
‘বলেছ।’
‘তা হলে কেন পড়েছ?’
‘আর পড়ব না মা।’
‘এইভাবে বললে হবে না। চেয়ারের উপর উঠে দাঁড়াও। কানে ধরো। কানে ধরে বলো- আর পড়ব না।’
মা’র চরিত্রে অস্বাভাবিকতার বীজ আগে থেকেই ছিল। যত দিন যেতে লাগল তত তা বাড়তে লাগল। মানুষের মানিয়ে চলার ক্ষমতা অসাধারণ। আমি মা’র সঙ্গে মানিয়ে চলার চেষ্টা করতে লাগলাম, এবং চলতেও লাগলাম। নিজের মনে থাকি। প্রচুর গল্পের বই পড়ি। মাঝে মাঝে অসহ্য রাগ লাগে। সেই রাগ নিজের মধ্যে রাখি, মা’কে জানতে দিই না। আমার বয়স অল্প হলেও আমি ততদিনে বুঝে গিয়েছি – আমিই মা’র একমাত্র অবলম্বন। তাঁর সমস্ত জগৎ, সমস্ত পৃথিবী আমাকে নিয়েই।
মাঝে মাঝে মা এমনসব অন্যায় করেন যা ক্ষমার অযোগ্য। আমি সেই অপরাধও ক্ষমা করে দেই। একটা উদাহরণ দিই। আমি সেবার ক্লাস নাইনে উঠেছি। যারা এসএসসি পরীক্ষা দেবে তাদের ফেয়ারওয়েল হচ্ছে। ফেয়ারওয়েলে নাটক করা হবে। আমাকে নাটকে একটা পার্ট দেয়া হল। আমার উৎসাহের সীমা রইল না। মাকে কিছুই জানালাম না। জানালে মা নাটক করতে দেবেন না। মা জেনে গেলেন। গম্ভীর হয়ে রইলেন। কিছু বললেন না। আমি মাকে সহজ করার অনেক চেষ্টা করলাম। মা সহজ হলেন না। যেদিন নাটক হবে তার আগের রাতে খাবার টেবিলে মা প্রথমবারের মতো বললেন, তোমাদের নাটকের নাম কী?
আমি উৎসাহের সঙ্গে বললাম – হাসির নাটক মা। নাম হচ্ছে – দুই দুগুণে পনেরো। দম-ফাটানো হাসির নাটক।
‘তোমার চরিত্রটা কী?’
‘আমি হচ্ছি বড় বোন, পাগলাটে ধরনের মেয়ে। তাকে যে-কাজটি করতে বলা হয় সেসব সময় তার উলটো কাজটি করে। তারপর খুব অবাক হয়ে বলে – Oh my god, এটা কী করলাম! আমার অভিনয় খুব ভাল হচ্ছে মা। আমাদের বড়আপা গতকালই আমাকে ডেকে নিয়ে বলেছেন – আমার ভেতর অভিনয়ের জন্মগত প্রতিভা আছে। চর্চা করলে আমি খুব নাম করব। মা, তুমি কি নাটকটা দেখবে?’
‘না।’
‘দেখতে চাইলে দেখতে পারবে। এই অনুষ্ঠানে গার্জিয়ানরা আসতে পারবেন না। তবে বড় আপা বলেছেন, যারা অভিনয় করছে তাদের মা’রা ইচ্ছে করলে আসতে পারবেন। তুমি যাবে মা? চল-না! প্লীজ!’
মা শুকনো বললেন, দেখি।
‘তুমি গেলে আমি অসম্ভব খুশি হব মা। অসম্ভব, অসম্ভব, অসম্ভব খুশি হব। এত খুশি হব যে চিৎকার করে কাঁদব।’
মা কিছু বললেন না। আমার মনে ক্ষীণ আশা হল যে মা হয়তো যাবেন। আনন্দে সারারাত আমি ঘুমুতে পারলাম না। তন্দ্রামতো আসে আবার তন্দ্রা ভেঙ্গে যায়। কী যে আনন্দ!
ভোরবেলা দরজা খুলে বেরুতে গিয়ে দেখি দরজা বাইরে থেকে তালাবন্ধ। আমি চেঁচিয়ে ডাকলাম, মা-মা-মা!
মা এলেন। আমি চেঁচিয়ে বললাম, তালাবন্ধ করে রেখেছ কেন মা?
মা শীতল গলায় বললেন, আমি অনেক চিন্তা করে দেখলাম তোমার অভিনয় করা ঠিক হবে না।
‘কী বলছ তুমি মা!’
‘যা সত্যি তা-ই বলছি।’
‘স্কুলে আপারা কী মনে করবেন মা। আমি না গেলে নাটক হবে না।’
‘না হলে না হবে। নাটক এমন-কিছু বড় জিনিস না।’
‘পরে যখন স্কুলে যাব ওদের আমি কী বলব?’
‘বলবি অসুখ হয়েছিল। মানুষের অসুখ হয় না?’
আমি কাঁদতে কাঁদতে বললাম, ঠিক আছে মা, আমি স্কুলে যাব না। তুমি তালা খুলে দাও।
‘তালা সন্ধ্যার সময় খুলব।’
আমি যাচ্ছি না দেখে স্কুলের এক আপা আমাকে নিতে এলেন, মা তাঁকে বললেন, মেয়েটা অসুস্থ। খুবই অসুস্থ। সে মামার বাড়িতে আছে।
একবার ভাবলাম চিৎকার করে বলি – আপা, আমি বাড়িতেই আছি, মা আমাকে তালাবন্ধ করে রেখেছে। পরমুহূর্তেই মনে হল – থাক।
মা তালা খুললেন সন্ধ্যাবেলায়। তাঁকে কিছুমাত্র লজ্জিত বা দুঃখিত মনে হল না। শুধু রাতে আমার সঙ্গে ঘুমুতে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে ব্যাকুল হয়ে কাঁদতে লাগলেন। কান্না দেখে আমি মা’র অপরাধ ক্ষমা করে দিলাম।