সদ্যোলব্ধ সৌভাগ্যে বিভোর তাপসী সচকিত প্রশ্ন করে কাকে? কে?
–কেন, আমাদের বল্লভজী! পাকা খেলোয়াড় হয়েও হঠাৎ বেজায় একটা ভুল চাল’ দিয়ে ফেলে ভারী বেকায়দায় পড়ে গিয়েছিলেন ভদ্রলোক! শোধরাতে এক যুগ লেগে গেল বেচারার! মাত হতেই বসেছিলেন প্রায়!
.
কথার মাঝখানে হঠাৎ সচকিত বুলু কাহাকে যেন দেখিয়া ঈষৎ অপ্রতিভ হাস্যে খানিকটা সরিয়া দাঁড়ায়।
দালানের সারি সারি খিলানের একটা থামের পাশে হেমপ্রভা দাঁড়াইয়া। কখন যে আসিয়া দাঁড়াইয়াছেন, এরা টেরও পায় নাই–পাইবার কথাও অবশ্য নয়।
বুলু তো সরিয়া দাঁড়াইয়া তার লাজুক মুখে অপ্রতিভ হাসি মাখাইয়া মুখরক্ষা করিল–কিন্তু তাপসী? নানির সামনে ধরা পড়িয়া যাওয়ায়, লজ্জায় আরক্তিম মুখখানা লুকাইবার মত জায়গার অভাবেই বোধ করি সরিয়া আসিয়া নানির কাঁধেই মুখটা চাপিয়া ধরে। তেমনি মুখ চাপিয়া বলিয়া ফেলে–আবেগবিহ্বল অর্থহীন অস্ফুট একটা কথা-নানি, নানি, কেন তুমি–
হেমপ্রভারও কি কথা বলিবার অবস্থা আছে? কিংবা হেমপ্রভা বলিয়াই আছে, তাই কণ্ঠ। পরিষ্কার করিয়া প্রায় হাসির সঙ্গে বলেন–কি আমি? কেন–কেন আড়ি পাতছি?
–ধ্যেৎ যাও!
–হ্যাঁ, যাব। এইবার যাব। এতদিনে ছুটি দিলেন বিশ্বনাথ, এইবার বড় শান্তি নিয়ে তার রাজ্যে ফিরে যাব। মুখ তো দিদি,বুলু এসো ভাই, কাছে এসো। চোখ ভরে একবার একসঙ্গে দেখি দু’জনকে। বৃথা অভিমানে এতদিন তার নামে কত কলঙ্ক দিয়ে এসেছি, আজ বুঝলাম এতটাই দরকার ছিল। যে বস্তু সহজে মেলে তার মূল্য বোঝা যায় না। ধরা যায় না খাঁটি ও অ-খাঁটি। কি জ্বালা, এ মেয়েটা মুখ তোলে না! কেন গা? ঘাড় ব্যথা হয়ে গেল যে আমার? ঠাকুর-মন্দিরে বসে থেকে থেকে ভেবে বাঁচি না নাতনী আমার গেল কোথায়! কাঠের ঘোড়া পক্ষীরাজ হয়ে উড়িয়ে নিয়ে গেল নাকি! অধৈর্য হয়ে উঠে এলাম। নাও, এখন দু’জনে মনে মনে যত খুশি গাল দাও বুড়ীকে!