রমণীর তপ্তাকাঞ্চন-সন্নিভ বর্ণের কথা অনেকেই শুনিয়াছে, কিন্তু কেহ কখনও চোখে দেখে নাই। কিন্তু আজ সকলে রক্ত চেলী পরিহিতা ভৈরবীর প্রতপ্ত স্বর্ণ-সিন্নভ বর্ণ দর্শনে বিস্ময় মানিল। এমন টানা টানা বাঁকা বাঁকা জোড়া ভুরু, ভাসা ভাসা উজ্জ্বল অথচ প্রশান্ত চক্ষু, এমন প্রভাত প্রস্ফুটিত কমলের ন্যায় প্রফুল্ল বদনমন্ডল, এমন ঊষার সিন্দু রসুবর্ণরাগমিশ্রিত রক্তিমা মাখা পেলবগও তাহারা কখনও দেখে নাই। দেখামাত্র মনে হয়ঃ
বিরলে বসিয়া ভাবিয়া ভাবিয়া
একেলা গড়েছে বিধি
কামলার ধন ত্রিলোকমোহন
অতুল রূপের নিধি!
বাছনি করিয়া সুষমা লইয়া
সারাজি জগৎ হ’তে,
শতবার করি ভাঙ্গি আর গড়ি
গড়িলা মনের মতে।
সে রূপমাধুরী আহা! মরি! মরি!
দেখিয়া মেটে না আশা,
রূপের প্রতিমা প্রেমের মহিমা
কহিতে নাহি ক ভাষা।
চরণ-পরশে ধরণীর অঙ্গে
থরে থরে ফুল ফুটে,
নয়ন-কটাক্ষে কাদম্বিনী-অঙ্গে
শতেক দামিনী ছুটে।
গগনেরি গায় চারু নীলীমায়
অয়ুত তারকা জ্বলে।
প্রেমিক সুজন পেলে দরশন
ভাসে প্রেমরস-জলে।
যুগ যুগ ধরি সে রূপমাধূরী
দরশে না মিটে আশা;
দেখে তারে যত রূপ বাড়ে তত
সৃজিয়া অসীম তৃষা।
হেন রূপবতী হেন রসবতী
হেন গুনাবলী বালা,
দেখিল যে জন মজিল সে জন
হইয়ে আপন ভোলা।