ইয়েস, বললেন ঢানঢানিয়া, অ্যান্ড দিস ইজ মাই ফ্রেন্ড ইনস্পেক্টর চৌবে।
ইনি আমার বন্ধু টম ম্যাক্সওয়েল, আর এঁরা তিনজনও আমার বন্ধুস্থানীয়।
ফেলুদা বলল, আমার নাম প্রদোষ মিত্র, ইনি মিঃ গাঙ্গুলী, আর এ আমার ভাই তপেশ।
সিট ডাউন, বৈঠিয়ে। —কিশোরী, রামভজনকে বোলো মিঠাই আর সরবতকে লিয়ে।
কিশোরীলাল আজ্ঞা পালন করতে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল। আমরা চেয়ার আর সোফায় ভাগাভাগি করে বসলাম। এবারে লক্ষ করলাম দেয়ালে চতুর্দিকে টাঙানো দেবদেবীর ছবি। মগনলাল মেঘরাজের বেনারসের বৈঠকখানার কথা মনে পড়িয়ে দেয়।
আমরা বসতে ফেলুদা গলা খাকরিয়ে বলল, আমাদের তো কোনও অ্যাপয়েন্টমেন্ট ছিল না, আমরা এসেছি মিঃ রবার্টসনের সঙ্গে। আপনার কোনও আপত্তি থাকলে কিন্তু আমরা এখুনি চলে যেতে পারি।
নো, নো। স্রেফ একটা পাথর দেখার ব্যাপার, আপনারা থাকলে ক্ষেতি কী?
ম্যাক্সওয়েল হঠাৎ বলে উঠল, মে আই টেক সাম পিকচার্স, মিঃ ড্যানড্যানিয়া!
হোয়াট পিকচার্স।
অফ দিস রুম।
ঠিক হ্যায়।
হি সেজ ইউ মে, বলে দিল ফেলুদা।
লেকিন পাহলে তো উয়ো রুবি দেখলাইয়ে।
হি ওয়ন্টস ঢুঁ সি দ্য রুবি ফাস্ট, বলল ফেলুদা।
আই সি
ম্যাক্সওয়েল ক্যামেরাটা পাশে সরিয়ে রেখে ব্যাগের ভিতর হাত ঢুকিয়ে রুবির কোটাটা বার করল। তারপর সেটাকে খুলে ঢানঢানিয়ার দিকে এগিয়ে দিতে আমার বুকটা কেন জানি ধুকপুক করে উঠল।
ঢানঢানিয়া পাথরটা বার করে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখে কোনও মন্তব্য না করে সেটা তাঁর বন্ধু ইন্সপেক্টর চৌবের হাতে চালান দিলেন। চৌবে সেটা খুব তারিফের দৃষ্টিতে দেখে আবার ঢগনঢানিয়াকে ফেরত দিল।
হোয়াট প্রাইস ইন ইংল্যান্ড? ঢানঢানিয়া প্রশ্ন করলেন।
টোয়েন্টি থাউজ্যান্ড পাউন্ডস, বলল। পিটার রবার্টসন।
হুম—দশ লাখ রূপয়া…
এবার পাথরটা বাক্সে রেখে সেটা ম্যাক্সওয়েলকে ফেরত দিয়ে ঢানঢানিয়া বললেন, আই উইল পে টেন ল্যাখস।
লাখ ব্যাপারটা সাহেবরা বাঝে না বলে আবার ফেলুদাকে বলে দিতে হল, হি মিনস ওয়ান মিলিয়ান রুপিজ।
কিন্তু তার প্রশ্ন আসছে কী করে, বলল রবার্টসন, আমি তো পাথরটা বিক্রি করব না।
এই প্রথম বুঝলাম ঢানঢানিয়া ইংরেজিটা দিব্যি বাঝেন, কেবল বলার সময় হাঁচট খান।
হোয়াই নট? শুধোলেন ঢানঢানিয়া।
আমার পূর্বপুরুষের সাধ ছিল এটা ভারতবর্ষে ফেরত যাক, বলল রবার্টসন, আমি তাঁর সে সাধ পূরণ করতে এসেছি। আমি এ পাথর নিয়ে ব্যবসা করব না। এটা আমি কলকাতার মিউজিয়মে দিয়ে দেব।
দ্যাট ইজ ফুলিশ, বললেন ঢানটানিয়া। জাদুঘরে এই পাথর আলমারির এক কোণে পড়ে থাকবে। লোকে ভুলেই যাবে ওটার কথা।
সে তো আপনাকে বিক্রি করলে আপনি ওটা বাক্স-বন্দি করে রেখে দেবেন।
ননসেন্স! বেশ জোরের সঙ্গে বলে উঠলেন ঢানঢানিয়া। আমি আমার নিজের মিউজিয়ম করব—যেমন সালার জং মিউজিয়ম আছে হায়দ্রাবাদে। সেই রকম মিউজিয়ম আমি করব, দুবরাজপুরে নয়, কলকাতায়। গণেশ ঢানঢানিয়া মিউজিয়ম। লোকে এসে আমার কালেকশন দেখে যাবে; ইওর রুবি উইল বি ইন এ স্পেশাল শো কেস। লোকে এসে দেখে তারিফ করবে। রুবির তলায় লেখা থাকবে সেটা কেথেকে কী ভাবে পাওয়া গেছে। তোমার নাম ভি থাকবে।
এবার দুজন ভূত্যের প্রবেশ ঘটল। তাদের একজনের হাতে ট্রেতে লাডু, আরেকজনের ট্রেতে সরবত।
লাড়ু খান, খেয়ে ডিসাইড করুন। মিঃ রবার্টসন।
আমরা ডান হাতের কাজটা সেরে ফেলার জন্য তৈরি হলাম। লাঞ্চ টাইম হতে এখনও দেরি, কিন্তু পেট বলছে খেতে আপত্তি নেই। বীরভূমের জলের কথা আগেই শুনেছিলাম।
আমাদের সঙ্গে সাহেবরাও লাড়ু খেল। তারপর সরবত খাবার সময় দেখি টম ম্যাক্সওয়েল পকেট থেকে একটি বড়ি বের করে তাতে ফেলে দিল।
মিঃ মিটার, বললেন গণেশ চানচানিয়া, আপনার বন্ধুদের বলে দিন কি বীরভূমের জল পিউরিফাই করার কোনও দরকার হয় না।
ফেলুদা অবিশ্যি সেটা আর বলল না।
ওয়েল? মিষ্টি খাবার পর গুরুগম্ভীর গলায় জিজ্ঞেস করলেন গণেশ ঢানাগনিয়া। ওক্স শীর্ণ শরীর থেকে এই হেঁড়ে গলা বার হওয়াটাও বেশ একটা অবাক করা ব্যাপার।
ভেরি সরি মিঃ ড্যানড্যানিয়া, বলল রবার্টসন, আমি তো বলেই ছিলাম। এ পাথর বিক্রির জন্য নয়। তুমি দেখতে চেয়েছিলে তাই দেখলাম।
এবার ইন্সপেক্টর চৌবে মুখ খুললেন।
আমি খালি একটা প্রশ্ন করতে চাই। পাথর বিক্রি করা না-করা আপনার মার্জি। কিন্তু এমন একটা জিনিস আপনার বন্ধু ব্যাগে নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন দেখে আমার মোটেই ভাল লাগছে না! আপনি বললে আমি ওটার প্রোটেকশনের জন্য লোক দিতে পারি। সে হবে। প্লেন ক্লোদস ম্যান। আপনি তাকে পুলিশ বলে বুঝতেও পারবেন না, কিন্তু সে আপনাদের নিরাপত্তা এনশিওর করবে।
পুলিশের কোনও প্রয়োজন নেই, বলল। টম ম্যাক্সওয়েল। আমার কাছে এ পাথর সম্পূর্ণ নিরাপদ অবস্থায় আছে। চার ছ্যাঁচড় এর ওপর দৃষ্টি দিলে তাকে কীভাবে শায়েস্তা করতে হয় তা আমি জানি। আমি নিজেই অস্ত্ৰধারণ করি, পুলিশের কোনও প্রয়োজন নেই।
চৌবে হাল ছেড়ে দিলেন।
ঠিক আছে। আপনার যদি এতই কনফিডেন্স থাকে তা হলে আমার বলার কিছু নেই।
আপনারা ক’দিন আছেন? জিজ্ঞেস করলেন ঢানঢানিয়া।
চার পাঁচ দিন তো বটেই, বলল। পিটার রবার্টসন। আমি নিজে টেরা কোটা মন্দির সম্বন্ধে ইন্টারেস্টেড, এবং সেই নিয়ে কিছু পড়াশুনাও করেছি।