বৃহস্পতিবার, মে 15, 2025
  • Login
BnBoi.Com
No Result
View All Result
No Result
View All Result
BnBoi.Com
No Result
View All Result

গোসাঁইপুর সরগরম – সত্যজিৎ রায়

Gosaipur Sargaram by Satyajit Ray

সুধাকর দারোগ সশব্দে হেসে মোড়া থেকে উঠে দাঁড়ালেন। তারপর ফেলুদার দিকে চেয়ে চুক চুক করে আক্ষেপের শব্দ করে বললেন, মুশকিল হচ্ছে কী জানেন, আপনারা বেশি ভেবে সহজ জিনিসটাকে জটিল করে ফেলেন। কেসটা জলের মতো পরিষ্কার।

আপনাদের জাল ফেলা পুকুরের জলের মতো?

ফেলুদার খোঁচা অগ্রাহ্য করে দারোগা বলে চললেন, আপনি একটু ভেবে দেখলেই বুঝতে পারতেন কেন ভোলানাথবাবুর কথা বলছি। ডাকাতি এবং খুন দুটোর জন্যেই সে দায়ী। এ ডাকাতি ঘরের লোকের কাজ সে তো বোঝাই যায়। আসল ডাকাত হলে সিন্দুক ভাঙত-চাবি দিয়ে খুলত না। ভোলানাথ টাকা নিয়ে পালাচ্ছিল, পিছনের বাগান দিয়ে, খুন করবার কোনও অভিপ্রায় ছিল না তার। জীবনবাবু ঘুম ভেঙে ট্টের পেয়ে তাকে ধাওয়া করেন; ভোলানাথ খুন করতে বাধ্য হয়। তারপর সন্দেহ যাতে না পড়ে। তাই আপনাদের খবর দিতে আসে। ভোলানাথ বলেছে ডাকাত তাকেও বেঁধে রেখেছিল, জীবনবাবু এসে তার বাঁধন খোলে। এ কথা যে সত্যি তার প্রমাণ কই? এর তো কোনও সাক্ষী নেই।

সিন্দুকের টাকা তা হলে কোথায় গেল সুধাকরবাবু? ফেলুদা গভীরভাবে জিজ্ঞেস করল।

সেইেটাকাও খুঁজতে হবে, বললেন সুধাকরবাবু। লাশ পেলে পর আমরা ভোলানাথবাবুকে জেরা করব। তখন সব সুরসুর করে বেরিয়ে পড়বে।

আমার কিন্তু সুধাকরবাবুর কথাগুলো বেশ মনে ধরল; কিন্তু ফেলুদা কেন আমল দিচ্ছে না? দারোগ যখন সিঁড়ি দিয়ে নামছে তখনই কেন সে বলতে গেল, আজি সন্ধ্যায় জীবনলালের আত্মা নামানো হবে মৃগাঙ্কবাবুর বাড়িতে! এলে ঠিকবেন না!

তুলসীবাবুর দেখলাম একমাত্র চিন্তা কালকের সংবর্ধনা হবে কি না সেই নিয়ে; রহস্যের কিনারা না হলে, খুনির হাতে হাতকড়া না পড়লে, নিশ্চয়ই হবে না, কারণ গ্রামের লোকের সংবর্ধনা সভায় যোগ দেবার উৎসাহই হবে না। লালমোহনবাবু অবিশ্যি মেনেই নিয়েছেন যে মালা আর মানপত্র ফসকে গেল, আর স্পিচটা মাঠে মারা গেল। হয়তো নিজেকে সাত্মনা দেবার জন্যই বললেন, আমরা মশাই রহস্য বেচে খাই; বাস্তবিক একটা খাঁটি রহস্যের সামনে পড়লে সেইটেই আমাদের সবচেয়ে বড় পুরস্কার।

মুখে এটা বলা সত্ত্বেও লক্ষ করছি উনি বার বার নিজের অজানতে বিড় বিড় করে স্পিচের লাইন বলছেন, আর বলেই নিজেকে সামলে নিচ্ছেন।

মৃগাঙ্ক ভটাচায্যি কোন বাড়িতে থাকেন বলতে পারেন?

প্রশ্নটা এল তুলসীবাবুর বাড়ির দরজার বাইরে থেকে।

এই শুরু হল, বললেন তুলসীবাবু।সোম আর শুকুরে এ উপদ্রব লেগেই আছে, আর রাস্তায় প্রথম বাড়ি বলে আমাকেই এ ঝক্কি পোয়াতে হয়।

ভদ্রলোক জানালা দিয়ে নীচের দিকে চেয়ে বললেন, আরও তিনটে বাড়ি পরে ডান দিকে।

ফেলুদা বলল, আমরা আসছি বলে খবরটা পাঠিয়ে দিতে পারলে ভাল হত। আর বলবেন কিউয়ে দাঁড়াতে পারব না। আমাদের আত্মাকে প্রাইয়রিটি দিতে হবে।

তুলসীবাবু বোধহয় এই প্রথম বুঝলেন যে ফেলুদা ব্যাপারটা সম্বন্ধে সত্যিই সিরিয়াস। তাঁর মুখের ভাব দেখে ফেলুদা বলল, আমার একার কাজ ফুরিয়ে গেছে তুলসীবাবু। এখন ভটচায্যি মশাইয়ের সাহায্য ছাড়া এগোতে পারব না।

ফেলুদা অনেক সময়ই বলে যে মনের দরজা খোলা রাখা উচিত, বিশেষ করে আজকের দিনে; কারণ রোজই প্রমাণ হচ্ছে যে এমন অনেক ঘটনা পৃথিবীতে ঘটে যার কারণ বৈজ্ঞানিকেরা জানে না, অথচ জানে না বলে সেটাকে উড়িয়েও দিতে পারছে না। এই যেমন সেদিন কাগজে বেরোল যে ইউরি গেলর বলে এক হুইদি যুবক চোখের  চাহনির জোরে পাঁচ হাত দূর থেকে বৈজ্ঞানিকের হাতে ধরা কাঁটা চামচ বেঁকিয়ে ফেলছে। এ ঘটনা চোখের  সামনে দেখছে আরও একজন ডাকসাইটে বৈজ্ঞানিক, আর দেখে তারা না পারে কারণ বলতে, না পারে উড়িয়ে দিতে। মৃগাঙ্কবাবুর ক্ষমতাও কি এই ধরনের?

তুলসীবাবু বললেন, সাড়ে পাঁচটা বাজে; চলুন আমি আপনি একসঙ্গে গিয়ে ওঁকে রিকোয়েস্টটা করি, তা হলে জোরটা বেশি হবে।

ফেলুদা উঠে পড়ে বলল, তোরা বরং একটু বেড়িয়ে আয় না।

আমার নিজেরও এক ঘরে বেশিক্ষণ বসে থাকতে ভাল লাগছিল না, লালমোহনবাবুও বলছিলেন গোসাঁইপুরের শরৎকালের বিকেলের তুলনা নেই, তাই ফেলুদার বেরোনোর সঙ্গে সঙ্গেই আমরাও দুজন বেরিয়ে পড়লাম।

০৭. মূকাভিনেতা বেণীমাধব

দুদিন আগে যখন এসেছিলাম, তখন একরকম মনে হয়েছিল গ্রামটাকে; আজ আমার মনে হচ্ছে আরেক রকম। তার কারণ মন বলছে এই সুন্দর গ্রামের কোনও একটা গোপন জায়গায় গলায়-ফাঁসি-দিয়ে-মরা মানুষের লাশ লুকিয়ে আছে। হঠাৎ যদি দেখি—

নাঃ—ও সব ভাবব না। তা হলে বেড়ানো মাটি হয়ে যাবে।

কিন্তু বাঁশি বনের মধ্যে দিয়ে এগোতে এগোতে আলো কমে আসার সঙ্গে সঙ্গে সাহসটা আবার কমে গিয়েছিল। সেটাকে বাড়িয়ে দিল মূকাভিনেতা বেণীমাধব।

আরে, আমি যে আপনাদের বাড়িই যাচ্ছিলাম। বললুম না শুকুরবার বিকেলে এসে অভিনয় দেখিয়ে যাব।

কী করি বলে ভাই, বললেন লালমোহনবাবু।এমন একটা বিপর্যয় ঘটে যাবে সে কি জানতাম? এর পরে আর অ্যাকটিং দেখার মুড থাকে? তুমিই বলো।

তা যা বলেছেন স্যার। তা আপনারা ক’দিন আছেন তো?

হ্যাঁ, তা দিন তিনেক তো আছিই।

এ দিকে চল্লেন কোথায়?

কোনদিকে যাওয়া যায় তুমিই বলো না।

বাদুড়ে-কালী দেখেছেন স্যার? সপ্তদশ শতাব্দীর টেম্পল। এখনও কিছু হাতের কাজ রয়ে গেছে দেয়ালে। চলুন দেখিয়ে দিচ্ছি।

আমি যে সকলে দেখেছি মন্দিরটা সেটা আর বললাম না। সত্যি বলতে কী, তখন যা মনের অবস্থা ছিল তাতে হাতের কাজটাজ চোখে পড়েনি।

Page 12 of 16
Prev1...111213...16Next
Previous Post

গোলাপী মুক্তা রহস্য – সত্যজিৎ রায়

Next Post

গ্যাংটকে গণ্ডগোল – সত্যজিৎ রায়

Next Post

গ্যাংটকে গণ্ডগোল - সত্যজিৎ রায়

ঘুরঘুটিয়ার ঘটনা - সত্যজিৎ রায়

মন্তব্য করুন জবাব বাতিল

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

সাম্প্রতিক প্রকাশনাসমূহ

  • তিন গোয়েন্দা ভলিউম ১১৫: ভূমিকম্প – শামসুদ্দীন নওয়াব
  • তিন গোয়েন্দা ভলিউম ১১৮: বিভীষিকার প্রহর – রকিব হাসান
  • তিন গোয়েন্দা ভলিউম ১১৭: বড়দিনের ছুটি – রকিব হাসান
  • তিন গোয়েন্দা ভলিউম ১১৭: আলাস্কা অভিযান – রকিব হাসান
  • তিন গোয়েন্দা ভলিউম ১১৭: আমিই কিশোর – রকিব হাসান

বিভাগসমূহ

© 2023 BnBoi - All Right Reserved

No Result
View All Result

© 2023 BnBoi - All Right Reserved

Welcome Back!

Login to your account below

Forgotten Password?

Retrieve your password

Please enter your username or email address to reset your password.

Log In