Sacred to the Memory of
THOMAS –WIN
Obt. 24th April—8, AET. 180—
গডউইন, বলল ফেলুদা, টমাস গডউইনের পুণ্যস্মৃতির উদ্দেশে। ওবিটি হল ওবিটুস অর্থাৎ মৃত্যু, আর এই টি হল এই টাটিস অর্থাৎ বয়স। এখন কথা হচ্ছে—
ও মশাই!
জটায়ু হঠাৎ চেঁচিয়ে উঠে আমাকে বেশ চমকে দিলেন। ঘুরে দেখতেই ভদ্রলোক একটা চৌকো চ্যাপটা কালো জিনিস আমাদের দিকে তুলে ধরে বললেন, সাঁইত্রিশ টাকায় বু-ফক্সে তিনজনের ডিনার হবে কি?
কী পেলেন ওটা?
আমরা দুজনেই বেশ আগ্রহের সঙ্গে এগিয়ে গেলাম।
লালমোহনবাবুর বাঁ হাতে একটা কালো মানিব্যাগ, আর ডান হাতে তিনটে দশ, একটা পাঁচ, আর একটা দুটাকার নোট। টাকা আর ব্যাগ দুটোরই অবস্থা বেশ শোচনীয়। ভদ্রলোকের ভয় কেটে গিয়ে এখন একটা বেশ মারদিস ভাব; বেশ বুঝতে পারছেন যে, ফেলুদার জন্য একটা ভাল ক্লু জোগাড় করে দিয়েছেন।
ফেলুদা ব্যাগটা খুলে খাপগুলোর ভিতর যা ছিল সব বার করল। চার রকম জিনিস বেরোল খাপ থেকে। এক নম্বর—এক গোছা ভিজিটিং কার্ড, যাতে ইংরিজিতে লেখা এন এম বিশ্বাস। ঠিকানা টেলিফোন নেই। ফেলুদা বলল, দেখেছেন খবরের কাগজের কাণ্ড-নরেন্দ্রমাহনকে। নরেন্দ্ৰনাথ করে দিয়েছে।
দুই নম্বর হচ্ছে দুটো খবরের কাগজের কাটিং। একটাতে এই সাউথ পার্ক স্ট্রিটে গোরস্থান। প্রথম যখন খুলল তার খবর, আর আরেকটাতে আজকাল যাকে শহিদ মিনার বলি, সেই অকটারলোনি মনুমেন্ট তৈরি হবার খবর। তার মানে দুটো কাগজের টুকরোই দেড়শো-দুশো ॥ বছরের পুরনো। বিশ্বেস মশাই এত প্রাচীন কাগজের কাটিং কোথেকে জোগাড় করলেন জানতে ভারী কৌতুহল হচ্ছে— মন্তব্য করল ফেলুদা।
তিন নম্বর হচ্ছে পার্ক স্ট্রিটের অক্সফোর্ড বুক কোম্পানির একটা বারো টাকা পঞ্চাশ পয়সার ক্যাশমেমো; আর চার হল একটুকরো সাদা কাগজ, যাতে ডট পেনে ইংরিজিতে কয়েকটা লাইন লেখা। লেখার মাথামুণ্ডু বুঝলাম না, যদিও ভিক্টোরিয়া নামটা পড়তে পেরেছিলাম।
অকটারলোনি মনুমেন্ট নিয়ে যে একটা লেখা সেদিন কাগজে, হঠাৎ বলে উঠলেন লালমোহনবাবু, আর যদ্দূর মনে পড়ছে লেখকের পদবি ছিল বিশ্বাস। হ্যাঁ—বিশ্বাস। কারেক্ট।
কোন কাগজ? ফেলুদা জিজ্ঞেস করল।
হয় লেখনী না হয় বিচিত্ৰপত্ৰ। ঠিক মনে পড়ছে না। আমি বাড়ি গিয়ে চেক করব।
জটায়ুর স্মরণশক্তি তেমন নির্ভরযোগ্য নয় বলেই বাধ হয় ফেলুদা এ ব্যাপারে। আর কিছু না বলে সাদা কাগজের লেখাটা তার নিজের নেটবুকে কপি করে নিয়ে আসল কাগজ আর অন্য জিনিসগুলো মানিব্যাগে ভরে সেটা পকেটে নিয়ে নিল। তারপর মিনিট পাঁচেক ধরে কবরের আশপাশটা ভাল করে দেখে আরও দুটো জিনিস পেয়ে সেগুলোও পকেটে পুরল। সে-দুটো হচ্ছে একটা ব্ৰাউন রঙের কোটের বোতাম আর একটা নেতিয়ে যাওয়া রেসের বই।–চল, দারোয়নের সঙ্গে একবার কথা বলে বেরিয়ে পড়ি। আবার মেঘ করল!
ব্যাগটা কি ফেরত দেবেন? জিজ্ঞেস করলেন লালমোহনবাবু।
অবিশ্যি। কোন হাসপাতালে আছে খোঁজ করে কাল একবার যাব।
আর সে-লোক যদি মরে গিয়ে থাকে?
সেই অনুমান করে তো আর তার প্রপার্টি আত্মসাৎ করা যায় না। সেটা নীতিবিরুদ্ধ। —আর সাঁইত্রিশ টাকায় ব্লু-ফক্সে তিনজনের চা-স্যান্ডউইচের বেশি কিছু হবে না, সুতরাং আপনি ডিনারের আশা ত্যাগ করতে পারেন।
আমরা আবার উলটা মুখে ঘুরে কবরের সারির মাঝখানের পথ দিয়ে গেটের দিকে এগোতে লাগলাম। ফেলুদা গভীর। এরই ফাঁকে একটা চারমিনার ধরিয়ে নিয়েছে। এমনিতে ও সিগারেট অনেক কমিয়ে দিয়েছে। কিন্তু রহস্যের গন্ধ পেলে নিজের অজান্তেই মাঝে সাঝে সাদা কাঠি মুখে চলে যায়।
অর্ধেক পথ যাবার পর সে হঠাৎ থামল কেন সেটা তৎক্ষণাৎ বুঝতে পারিনি। তারপর তার চাহনি অনুসরণ করে একটা জিনিস দেখে আমার হাঁটার হার্টবিটটাও সঙ্গে সঙ্গে এক পলকের জন্য থেমে গোল।
একটা গম্বুজওয়ালা সমাধি—যার ফলকে মৃতব্যক্তির নাম রয়েছে মিস মারগারেট টেম্পলটন-তার ঠিক সামনে ঘাসে পড়ে থাকা একটা পুরনো ইটের উপর একটা সিকিখাওয়া জ্বলন্ত সিগারেট থেকে সরু ফিতের মতো ধোঁয়া কুণ্ডলী পাকিয়ে উপরে উঠছে। বৃষ্টি হবে বলেই বোধহয় বাতাসটা বন্ধ হয়েছে, না হলে ধোঁয়া দেখা যেত না।
ফেলুদা এগিয়ে গিয়ে দুইঞ্চি লম্বা সিগারেটটা তুলে নিয়ে মন্তব্য করল, গোল্ড ফ্লোক। জটায়ু বলল, বাড়ি চলুন। আমি বললাম, একবার খুঁজে দেখব লোকটা এখনও আছে কি না?
সে যদি থাকত, বলল ফেলুদা, তা হলে সিগারেট হাতে নিয়েই থাকত; কিংবা হাত থেকে ফেলে পা দিয়ে মাড়িয়ে নিবিয়ে দিত। আধখাওয়া অবস্থায় এভাবে ফেলে যেত না। সে লোক পালিয়েছে, এবং বেশ ব্যস্তভাবেই পালিয়েছে।
দারোয়ান ঘরে ছিল না। মিনিট তিনেক অপেক্ষা করার পর সে পশ্চিম দিকের একটা ঝোপের পিছন থেকে বেরিয়ে হেলতে দুলতে এগিয়ে এসে বলল, আভি এক চুহাকো খতম। করা দিয়া।
বুঝলাম, ওই ঝোপের পিছনে চুহার সৎকার সেরে তিনি ফিরছেন, ফেলুদা কাজের কথায় চলে গেল।
যার উপর গাছ পড়েছিল তাকে জখম অবস্থায় প্রথম দেখল কে?
দারোয়ান বলল যে সেই দেখেছিল। গাছ পড়ার সময়টা সে গোরস্থানে ছিল না, তার নিজের একটা শার্ট উড়ে গিয়েছিল পার্ক স্ট্রিটে, সেটা উদ্ধার করতে গিয়েছিল। ফিরে এসে ব্যাপারটা দেখে। দারোয়ান ভদ্রলোকের মুখ চিনত, কারণ উনি নাকি সম্প্রতি আরও কয়েকবার এসেছেন। গোরস্থানে।