যেমন প্রেমে। প্রেম হল আঁধি। ব্লাইন্ডিং এফেক্ট অফ লাভ। প্রেমিকের চোখে ঘেঁটু ফ্লাওয়ারও লোটাস।
আহা, এনার তো প্রেম নয়, ফিফটিতে প্রেম তো এমন বুবনিক প্লেগের মতো ঘরে-ঘরে, মনে-মনে, জনে-জনে ছড়িয়ে পড়েনি। প্লেগও গলায়, প্রেমও গলায়। প্রেমের ফঁস পরেছি গলে, এখন আড়াই হাত জিভ সামনে পড়েছে ঝুলে।
আই থিংক।
কী থিংক!
আমার মনে হয় হোমিওপ্যাথি ক্যান সলভ দি প্রবলেম।
আমার বউকে আমি বিশাল হোমিওপ্যাথি দেখিয়েছি। এক-এক চোটে সিক্সটি ফোর।
না-না আমি তা বলছি না। হোয়াট আই মিন টু সে, বিয়ের আগেই বিফোর ম্যারেজ, একটা ডোজ…।
সে আবার কি? অসুখ না জেনেই ওষুধ! রাম না জন্মাতেই রামায়ণ!
আহা পুরোটা না শুনেই উত্তেজিত হন কেন! শুনুন প্রকৃত অভিজ্ঞ ডাক্তার মানুষের মুখ দেখেই মাল চিনে ফেলেন। ডক্টর রায়ের কথা মনে নেই। দশ হাত দূর থেকেই রোগ ধরে ফেলতেন। চেম্বারে রুগি ঢুকছে না তো রোগ ঢুকছে। আড়চোখে অ্যানাটমিটা একবার দেখে নিলেন। ইয়েস, লিভার ঝুলে কুঁচকির তলায় লতর-পতর করছে। গলব্লাডার থেবড়ে গেছে কি হার্ট ফানুসের মতো ফুলে উঠেছে, হাড়ে হাড়ে আর্থারাইটিস ঘুণ পোকার মতো কট্টর মটর করছে, ব্রেন একবগগা হয়ে গেছে।
ডক্টর রায়ের মতো ডাক্তার এ-যুগে পাচ্ছেন কোথায়? পেলেও বাবা তারকনাথের মতো অবস্থা। চেম্বারে হত্যে দিয়ে পড়ে থাকতে হবে, ভোলেবাবা পার লাগাও।
সেই জন্যেই তো হোমিওপ্যাথি। হোমোইয়স মিনস লাইফ। প্যাথস মিনস ফিলিং। তার মানে একাকার অনুভূতি। একজন হোমিওপ্যাথের চোখে মানুষ হল সোরা, যেমন ঋষির চোখে মানুষ হল কামিনী কাঞ্চনের দাস, ব্যবসায়ীর চোখে গলায় চাকু চালাবার মুরগি। পলিটিশিয়ানের চোখে ব্যালট পেপার। সেইরকম সব মানুষই সোরা, না হয়…।
হোয়াট ইজ সোরা? সোরা, গন্ধক আর কাঠ-কয়লা, বাজির মশলা। সোরা মিনস একত্সপ্লোসিভ। তার মানে মানব হল সোরা, মানবী হল গন্ধক, দুয়ে মিলে গানপাউডার।
আজ্ঞে না, সে সোরা নয়। মানুষের নেচার, মানুষের অসুখ কনট্রোল করছে তার হেরিডিটি। বংশানুক্রমে বিষাক্ত রক্ত লক্ষ-লক্ষ রুগি তৈরি করে চলেছে। ফর একজামপল ইওর টাক, রেসপনসিবল সোরা। আমার রাতকানা চোখ, সোরা, সম্পাদকের ব্লাড প্রেশার সোরা, সভাপতির হাঁপানি সেই সোরা।
কি তখন থেকে সোরা-সোরা করছেন, কবরেজ মশাই আমাকে বলেছেন, দেয়ার আর ওনলি থ্রি থিংস, জানবা। তিনটি মাত্র জিনিস, বায়ু পিত্ত আর কফ। মধ্যমা, অনামিকা আর তর্জনি পাশাপাশি নাড়ির ওপর স্থাপন করিয়া কায়মনে অনুভব করো। কোন নাড়ি বেগবান, বায়ুর কি পিত্তের, কি কফের।
ও হল ভৌতিক চিকিৎসা, বার্ধক্যে সান্ত্বনা। হোমিওপ্যাথির রুট চলে গেছে ইতিহাসে, শিল্পে, অলঙ্কার শাস্ত্রে। আমরা পেট থেকে স্ট্রেট নেমে আসছি এক-একটি সিমটমের আকারে। ঘুমিয়ে আছে শিশুর পিতা নয়, ঘুমিয়ে আছে অসুখের অঙ্কুর সব মানুষের রক্তে।।
রূপভেদা প্রমাণানি ভাব-লাবণ্য-যোজনম।
সাদৃশ্যম বর্ণিকাভঙ্গম ইতি চিত্রং ষড়ঙ্গকম।
যা বাব্বা! ঘুরে ফিরে সেই সংস্কৃত চলে এল? মানুষ হয়ে জন্মাবার মহা জ্বালা তো। এর চেয়ে আমার বেদান্ত ফার বেটার। এক খুঁয়ে সব উড়িয়ে দিয়েছে। তুমি নেই আমি নেই, কেউ নেই, কেউ নেই। হে মায়া প্রপঞ্চময়, ব্রহ্ম সত্য, জগৎ মিথ্যা।
সভাপতির বোধহয় একটু ঘুম-ঘুম এসে গিয়েছিল, তিনি একটিপ নস্যি নিয়ে বললেন, আপনাদের আলোচনা আমি হাফ শুনেছি, হাফ শুনিনি। এটা মনুষ্যক্লেশ নিবারণী সভা না আত্মোন্নতি বিধায়িনী সভা? সম্পাদক, সম্পাদক গেলেন কোথায়?
এই তো পাশেই আছি।
তোমাকে আমি বারবার বলছি সকলের চোখের সামনে একটা নোটিশ বোর্ড ঝুলিয়ে দাও, মনুষ্য ক্লেশ চোখে পড়ুক, তা না হলে এই আবোল-তাবোলই চলবে। নাও এখন তোলো, টেনে তোলো।
কাকে তুলব?
আমূর্খ! ডিরেইলড আলোচনাকে টেনে লাইনে তোলো! আমি তুলে দিচ্ছি।
না, আপনি আবার হোমিওপ্যাথিতে চলে যাবেন।
গেলেও সিমিলিরাস সিমিলিরাস কিওরেনটুর, বিষে বিষে বিষক্ষয়। উফ্ কি যে একটা আইডিয়া মাথায় এসেছে না! ধরুন আমি বিয়ে করব।
এখনও করেননি?
হ্যাঁ-হ্যাঁ সে ভুল আমি অনেক আগেই করে বসে আছি। সাপোজ, সাপোজ আমি বিয়ে করব, এখন কনজারভেটিভ পদ্ধতিতে আমার মেয়ে দেখার কোনও অধিকার নেই। প্রথমে আমার এলডার্সরা দফায়-দফায় যাবেন আসবেন। অনেকটা বাজার করার কায়দা। টিপেটাপে, উলটে-পালটে, দরদস্তুর করে পছন্দ। একবার অবশ্য আমাকে শুনিয়ে-শুনিয়ে বলা হবে, এইবার তাহলে ছেলে একবার মেয়েকে দেখে আসুক অর্থাৎ আমাদের পছন্দটাকে ডিটো মেরে আসুক। এই যে মেয়ে বাছাই হচ্ছে সম্পূর্ণ অনভিজ্ঞদের দিয়ে, মোস্ট আনসায়েন্টিফিক ওয়েতে। ইয়েস, চুল ঠিক আছে, ট্যারা নয়, হাসলে গালে টোল পড়ে না, খুব লম্বাও না, খুব বেঁটেও না, হাতে-পায়ে লোম নেই, পায়ের আঙুল ফঁক। নয়, কপাল উঁচু নয়, চিরুনদাতী নয়, সব ঠিক আছে লেকিন…
এর পরও লেকিন?
ইয়েস লেকিন। নো অ্যাস্ট্রোলজার। ফাঁইনাল দেখা দেখবেন ছেলের পক্ষে একজন হোমিওপ্যাথ। চৌষট্টি হোক, একশো আঠাশ হোক লাগে টাকা দেবে গৌরী সেন। মেয়ের বাবা নগদের সঙ্গে এই টাকাটা ধরে দেবেন। ওটাই হবে স্টেক মানি। ছেলে হল ঘোড়া, বাজী, বাজী, বাবাজি। হড়কে গেল তো সামান্য টাকাতেই গেল, ধরা পড়ল তো মেয়ের আস্তাবলে সারাজীবন বাঁধা রইল বাহন হয়ে। পক্ষিরাজের পক্ষসাতন। মুখে লাগাম, পিঠে জিন, তার ওপর কন্যা আরোহী, সারাজীবন, টগবগ, বগাবগ।