কি সিনেমা? বাংলা না হিন্দি, ধর্মীয় না সামাজিক।
সম্পাদক হাসি-হাসি মুখে প্রশ্নকারীর দিকে তাকালেন, হিন্দি সিনেমা অবশ্যই কারণ ওই বস্তুটিই একমাত্র ফরমূলা যাতে প্রেম আছে, সংগীত আছে, আকাশ আছে, বাতাস আছে, জরা আছে, যৌবন আছে, প্রাচুর্য আছে, দরিদ্র আছে, সবার ওপরে আছে অধর্মের পরাজয়, ধর্মের জয়।
কি বই, কোন হল?
বইয়ের নাম ডোন্ট নো, জানি না। হল নয় প্রতিবেশীর বাড়ি, টি.ভি.-র ছবি।
আপনার ভূমিকা?
আমার ভূমিকা বাড়ি পাহারা দেওয়া এবং বেবি সিটিং।
এখনও আপনার বেবি? বিলম্বে বিবাহ অথবা…।
কোনটাই নয়। আমার নাতি, গ্র্যান্ড সান।
কেন, পুত্রবধূ কি উদাসীন?
না, তিনি শশ্রুমাতার অনুগামী। এই একটি ব্যাপারে দুজনের অদ্ভুত মিল। রতনে রতন। চেনে ভাল্লুকে চেনে শাঁকালু।
স্ত্রী এবং পুত্রবধু দুজনকেই কি আপনি ভাল্লুক বলতে চাইছেন?
আজ্ঞে না, দুজনেই রত্ন। স্ত্রী রত্ন। কিন্তু এ সবই হল সভাবহির্ভূত প্রসঙ্গ। সভার কাজে ফিরে আসা যাক।
সম্পাদক, সম্পাদক কোথায়?
এই তো এসে গেছেন। সুদীর্ঘ পরমায়ু।
কি হে বিলম্বের হেতু! তোমার আঙুলে ব্যান্ডেজ কেন? আঙুলহাড়া?
সম্পাদক বসতে-বসতে বললেন, আঙুলহাড়া নয়, আঙুলের খোসা ছাড়িয়ে ফেলেছি।
সে আবার কি! আলুরই তো খোসা ছাড়ায়, তোমার আঙুলটা আলু না কি হে।
ধরেছেন ঠিক, আলুর খোসাই ছাড়াতে গেসলুম, গিয়ে আঙুলের খোসা ছাড়িয়ে ফেলেছি।
গৃহিনী কি ধর্মঘট করেছেন?
আজ্ঞে না, তিনি হেড মিসট্রেস হয়েছেন।
হাইলি ইন্টারেস্টিং। কারুর স্ত্রী হেড মিসট্রেস হলে তাকে কি আলু ছাড়াতে হয়!
তাহলে খুলে বলি। ব্যাপারটা হল এইরকম। আমার একার রোজগারে সংসার চলে না, আমার স্ত্রী ফরচুনেটলি একটি স্কুলে চাকরি পেয়েছেন। সকালে স্কুল। ভোর সাড়ে পাঁচটায় তিনি বেরিয়ে যান। আমি চা করে দি, ব্রেকফাস্ট বানিয়ে দি। কোলের ছেলেটাকে খাঁচায় ভরে, তার ওপরেরটাকে পাহারায় রেখে বাজারে যাই। ফিরে এসে দ্রুত কুটনো কেটে বাটনা বেটে, দুধ জ্বাল দিয়ে, ডিমের ডালনা ভাত ইত্যাদি রাঁধি। দাড়ি কামাই, দুধ খাওয়াই। মাছের লোভ, কাটতে জানি না। তাই নেমন্তন্ন বাড়িতে চেয়ে-চেয়ে ছ-সাত পিস মাছ খাই। খেয়ে পরের দিন কাত হই। তার পরের দিন অফিসে যাই। দিস ইজ মাই লাইফ।
অ্যান্ড লাইফ ইজ লাইক দ্যাট।
দুঃখ করো না যদু, রাম শ্যাম যদু মধু, টম ডিক হ্যারি সকলের জীবনেই এমনি কিছু কাটা খোঁচা মেরে আছে। লাইফ ইজ নট এ বেড অফ রোজেস। গোলাপের সঙ্গেই কাটা থাকে। গালিব সাহাবকে স্মরণ করুন।
কয়দে হায়াৎ ও বন্দে গম, আসল মে দোনো এক হ্যায়।
মওৎ সে পহলে আদমি, গম মে নেজাৎ পায়ে কিউ।
কিস্যু বোঝা গেল না।
বাংলা করলেই বুঝবেন–জীবনের বন্ধন আর দুঃখবন্ধন, দুটোই এক। মরার আগে দুঃখ থেকে পার পাওয়ার উপায় নেই দাদা, চিতাতেই চরম শান্তি। এই দেখুন আমার দুটো হাত, বাম। হস্ত আর দক্ষিণ হস্ত।
বক্তা জামার আস্তিন গুটিয়ে দুটো হাত সভার সামনে তুলে ধরলেন। এগজিবিট নাম্বার ওয়ান, নাম্বার টু। সকলেই সমস্বরে প্রশ্ন করলেন, হাতে আবার কি হল মশাই, মাশুল না হস্তশুল?
ভালো করে দেখুন, দেখে বলুন, এনি ডিফারেন্স? ইয়েস দেয়ার ইজ এ ডিফারেন্স। বাঁ হাতের চেয়ে ডান হাতটা মোটা।
হ্যাঁ, তাই তো, ঠিকই তো। কেন এমন হল? আপনার বাঁ-হাতের কারবার কি তেমন চলে না, উৎকোচ ইত্যাদি?
দিস ইজ অ্যানাদার স্টোরি। তাহলে শুনুন। নাইনটিন ফিফটিতে আই গট ম্যারেড।
লাভ অর নেগোসিয়েটেড?
বর্ণে না অসবর্ণে?
নর্মাল, নর্মাল। নর্মাল ডেলিভারির মতো নর্মাল ম্যারেজ। কিন্তু আনফরচুনেটলি ছানা কেটে গেল।
সে কি মশাই, বিবাহ কি দুগ্ধ, বাসী হলেই ছানা কেটে যাবে! না হরিণঘাটা, ছানা কেটেই আসবে!
প্রেশার, প্রেশার। প্রেশার কুকারের মতো ভালভ খুললেই তিন-তিনবার সিটি। বউয়ের ঠোঁট ফাঁক হলেই ফ্যাসস, বাড়ি মাত। সবেতেই তেনার অসন্তোষ।
তা অমন প্রেশার কুকারের মতো বউ বিয়ে করলেন কেন?
এ ব্যাপারে এক-এক এক্সপার্টের এক-এক মত। আহা বিয়ের পরেই তো প্রেশার কুকারের মতো হয়ে গেল। শাশুড়ী বলেন, মেয়ে তো আমার অমন ছিল না বাবা, একটু রাগী ছিল, সামান্য বায়না-টায়না করত, কোনও জিনিস মনে না ধরলে ঠুকে-ঠুকে খানিক কেঁদে সারাদিন ঘাড় কাত করে গো হয়ে বসে থাকত, সেইসময় অবশ্য তালে তাল রেখে না চলতে পারলে খামচে-টামচে দিত, কাপডিশ ছুড়ত। তা সে রেগে গেলে কে না অমন করে! খোঁচাখুঁচি করলে মরা বাঘও হালুম করে ওঠে। আর হবে নাই বা কেন, আমার হাই, বাপের হাই, বংশটাই হাই, হাই ফ্যামেলির হাই হই ব্যাপার।
তাহলে দেখছেন, বিবাহের পূর্বে কত কি দেখা উচিত, ফ্যামিলি হিসট্রি, হেরিডিটি, প্রেশার, সুগার, দাঁত চোখ নাক কান ব্লাড ইউরিন সুটাম স্টুল মান্টু এক্সরে ইসিজি।
তার মানে মেডিক্যাল বোর্ড বসানো উচিত।
অফ কোর্স। ব্যাপারটা যখন সারা জীবনের তখন মাল টেস্ট করে নেওয়াই উচিত। এই তো আমার ফার্মে যেসব মাল কেনা হয় সব স্যাম্পেল আগে ল্যাবরেটারিতে টেস্ট করে রিপোর্ট দেখে তারপর কেনা হয়।
থামুন। ওসব টেস্ট-মেস্ট আমাকে দেখবেন না। আমার এক জানা কেমিস্টের কলকাতায় দুটো বাড়ি হয়ে গেল। টু বিগ হাউসেস। সেরেফ সাপ্লায়ারের পয়সায়। একটা করে বড় পাত্তি ছেড়ে দিলেই অচল মাল সচল।