আমি তো যাচ্ছিলুমই।
অ্যান্ড আই ওয়াজ ফলোইং।
আঃ! আবার বাধা।
আচ্ছা চলুন, চলুন।
বাস থেকে নেমে আমি হনহন করে হাঁটছি, ভিড় বাঁচিয়ে-বাঁচিয়ে।
হনহন করে কেন? নর্মাল স্পিডে নয় কেন?
প্রকৃতির ডাকে!
আই সি, শুনলেন সবাই? নিজেই বললেন, প্রকৃতির ডাকে।
ধ্যার মশাই, আচ্ছা বুন্ধু তো! এ প্রকৃতি সে প্রকৃতি নয়। নেচার-নেচার, নেচারস কল। দেশি শব্দটা সভায় বলা যায়!
আই সি।
হ্যাঁ, আই সি, সারাজীবন দেখেই যান, কিছু বুঝে আর দরকার নেই।
আচ্ছা-আচ্ছা তারপর কি হল বলে যান।
হনহন করে হাঁটছি। বড়-বড় পা ফেলে। হঠাৎ কি হল আমার ডানপায়ের ডগাটা সেই মহিলার চটির পেছন দিকটা কুটুস করে চেপে ধরল।
কুট্টুস করে তো কামড়ায় শুনেছি, চেপেও ধরে নাকি! অক্লেশে যততত্র যা তা বিশেষণের প্রয়োগ।
এই লোকটি বড় ইনটারাপশান করেন।
ঠিক বলেছেন! বিরোধী দলের এম এল এ হবার যাবতীয় গুণ এর মধ্যে বর্তমান।
অথবা স্ত্রীজাতির। বুঝলেন, হয় এম এল এ না হয় স্ত্রীলোক দুটোর যে-কোনও একটা হওয়ার চেষ্টা করুন।
চটিতে পা পড়তেই তিনি সামনে হুমড়ি খেয়ে পড়ে যাওয়ার মতো হলেন, কিন্তু পড়লেন না। যদি পড়ে যেতেন তাহলে আমাকে হাত ধরে তুলতে হতো এবং যদি তুলতে হতো তাহলে আমাকে দুহাত ধরেই তুলতে হতো। একহাতে আমি তুলতে পারতুম না কারণ তিনি ছিলেন বেশ ওজনদার টাটকা মহিলা। তাহলে আমি দুহাতেই তুলতুম এবং জনসাধারণ দেখতেন। বলা যায় না হয়তো কোনও চেনা লোক দেখতেন এবং বাড়ি গিয়ে আমার স্ত্রীর কাছে রিপোর্টিং করতেন। তারপর কি হতো, ভাবলে এখনও গায়ে কাঁটা দেয়।
সভাপতি মহাশয়!
বলুন।
এই মনুষ্যটির কথায় একটি জিনিস অতি প্রকট। সেটি হল উদ্বেগ, সেই উদ্বেগের উৎস স্ত্রীজাতি। একটি স্ত্রীলোক পথে যাঁর চটির পেছন দিকটা উনি ডানপায়ে চেপে দাঁড়িয়ে আছেন, দ্বিতীয় স্ত্রীলোক গৃহে যিনি এই মনুষ্যটির গতিবিধির ওপর সজাগ দৃষ্টি রেখেছেন। এখন প্রশ্ন হল, বেসিক প্রশ্ন স্বামীরা কি স্ত্রীর কেনা গোলাম? আমরা কি জরুকা গরু?”
একটু ব্যাকরণগত ভুল হল বোধহয়। বলুন আমরা কি জরুকা বুল।
নো-নো, বুল বললে অসহায় অবস্থাটা তদ্রুপ প্রস্ফুটিত হয় না। বুল অনেক বেপরোয়া, অনেক স্বাধীন ও নিঃশঙ্ক। ইংরেজিতেই বলি, বাংলায় বললে অশ্লীলতার দায়ে পড়ে যাব। এ বুল ক্যান চেজ এনি কাউ। বরং বলুন জরুকা বলদ। খাটাসীনা স্ত্রীর সামনে দাঁড়িয়ে ভক্ত স্বামী গাইছেন– মা আমায় ঘুরাবি কত চোখ বাঁধা শ্বশুরের বলদের মতো।
শ্বশুরের বলদ আবার এল কোথা হতে? গানে আছে কলুর বলদের মতো।
ওই তো ইংলিশ মিডিয়ামে লেখাপড়া না করার ফল। বাংলা পাঠশালা কি টোলে পড়লে ওই রামপ্রসাদ পর্যন্তই যাওয়া যায়। ইংলিশ ফোক ব্যালাডে ব্যাঞ্জো বাজিয়ে মেয়ে গান গাইছে, মাই ফাদার উইল পারচেজ এ বুল ফর মি লালা টালালা।
আই সি, আই সি।
আবার দেখার মতো কি হল আপনার, বেশ তো চুপচাপ ছিলেন এতক্ষণ।
এতক্ষণে অরিন্দম কহিল বিষাদে, এ ফিউ ডেজ ব্যাক, টেরিফিক দাম্পত্য কলহের সময় আমার স্ত্রী বললেন, বাবা পয়সা খরচ করে একটা ষাঁড় কিনে এনেছেন।
সেকি?
ইয়েস, শি সেড দ্যাট।
বব না লম্বা?
তার মানে?
স্ত্রীর ডেসক্রিপসান, কি জাতীয় স্ত্রী, ববকরা চুল না বড়লোকের বিটি গো লম্বা লম্বা চুল?
বব, না লম্বা, বেঁড়ে, রেগে-রেগে সব চুল উঠিয়ে ফেলেছে, এক সময় অবশ্য এই চুলের ঢল ছিল।
হাই না ফ্ল্যাট?
তার মানে?
হাই হিল না ফ্ল্যাট হিল জুতো?
ও আই সি। এক সময় হাই ছিল, তাতে আমার চেয়ে দু ইঞ্চি হাইট বেড়ে গেল। দুজনে একসঙ্গে বেড়াতে বেরোলে রকের ছেলেরা টন্ট করত, এ ল্যাম্ব, এ ল্যাম্ব। স্ত্রীর ভেড়া হয়ে বাঁচতে চাই না। আমিও হাইট বাড়িয়ে নিলুম, এক ইঞ্চি ওপরে উঠে গেলুম। সঙ্গে-সঙ্গে স্ত্রী আরও হাফ বেড়ে গেলেন। কে হারে, কে জেতে। ভগবান আছেন মশাই। গীতায় বলেছেন, স্ত্রীজাতির অহঙ্কার
মনুষ্যক্লেশ নিবারণী সমিতি
খর্ব করার জন্যে পুরুষ জাতির সম্ভ্রম রক্ষার্থে সম্ভবামি যুগে যুগে।
এটা আবার গীতায় পেলেন কোথায়?
কতরকম গীতা আছে জানেন কিছু? এই আশার বাণী আছে স্বামী গীতায়। মনে রাখবেন অর্জুন শুধু যোদ্ধা ছিলেন না, সংসারীও ছিলেন, নট ওয়ান ওয়াইফ সেভারেল ওয়াইভস। ন্যাগিং ওয়াইভাস। এক দ্রৌপদীকে সামলাতেই পাঁচ-পাঁচটা স্বামীর হাতে হ্যারিকেন।
সে তো যুধিষ্ঠিরের জন্য। বেচারা আফিং খেয়ে দাবায় বসলেন অ্যান্ড লস্ট হিজ লিমিটেড ওয়াইফ।
যুধিষ্ঠির আফিং খেতেন, হু টোলড ইউ? স্ল্যান্ডার অ্যাগেনস্ট শাস্ত্রস।।
ধীরে যামিনী ধীরে। দুই আর দুইয়ে চার। অত প্রবলেম তবু যুধিষ্ঠির দাবায় বসলেন, কেন বসলেন? ফ্রাসট্রেশান, কেন ফ্রানট্রেশান পেটের গোলমাল, অ্যামিবায়োসিস।
এ তথ্য আবার কোথায় পেলেন?
অ্যাজামপসান। তখন ফিলটারড ওয়াটার, ক্লোরিন এসব ছিল না। পুকুর পানি, সেই পানিতে শত-শত অদৃশ্য প্রাণী অ্যান্ড ক্রনিক আমাশা, ন্যাচারালি দুর্বল, দুর্বল বলেই ধার্মিক, সত্যবাদী। পেটের ব্যামোর সবচেয়ে প্রাচীন ওষুধ আফিং, আফিং মানেই ইমপোটেনসি, অ্যান্ড দ্যাটস হোয়াই দ্রৌপদীর বস্ত্রহরণ। কৃষ্ণের আবির্ভাব, ভীমের গদাযুদ্ধ, অর্জুনের বিষাদযোগ।
সভাপতি সহসা উঠে দাঁড়িয়ে বললেন, সভা আজকের মতো এখানেই পণ্ড হল।
০৪. চতুর্থ অধিবেশন
গত সভা অসম্পূর্ণ থেকে গেছে। আমার একটু তাড়া ছিল। কেন ছিল তাও আমি অকপটে ব্যক্ত করছি। আমার গৃহিনী নাইট শোয় সিনেমা যাওয়ার ইচ্ছে প্রকাশ করেছিলেন।