তার মানে আপনি বলতে চাইছেন স্ত্রী মনুষ্য বিশেষ একটি সময়ের পরে পুং মনুষ্যকে কড়মড়িয়ে শেষ করে দোতলার বারান্দায় দাঁড়িয়ে হেঁকে বলবে, আ যারে ম্যায়তো কবসে খাড়ী হুঁ। হরি, সিম্পলি হরি। ভাবা যায় না দাদা।
ভাবা যায় না দাদা! সত্যি কথা বললেই হরিবল। মাকড়সা তৎক্ষণাৎ যা করে মহিলা মনুষ্য সেই একই কাজ ধীরে-ধীরে ওভার দি ইয়ার্স সিসটেমেটিক্যালি করে। কেন তুলসীদাস মনে নেই :
দিনকা মোহিনী, রাতকা বাঘিনী,
পলক পলক লহু চোষে।
দুনিয়া সব বাউড়া হোকে
ঘর ঘর বাঘিনি পোষে।
বিশুদ্ধ বাংলায়, যে দিবাভাগে মোহিনীসদৃশী ও নিশাভাগে বাঘিনিতুল্য হইয়া মুহূর্তে মুহূর্তে দেহের শোণিত চুষিয়া খায়, জগতের লোকে উন্মত্ত হইয়া প্রতি গৃহে সেই বাঘিনিকে প্রতিপালন করিতেছে।
সম্পাদক জুতো মেরামতের ব্যর্থ চেষ্টা ছেড়ে মনমরা হয়ে বসেছিলেন, তিনি এইবার সোৎসাহে বললেন, ঠিক বলেছেন। রাতের কথা ছেড়ে দিন, সে অনেক কথা, কেঁচো খুঁড়তে সাপ বেরোবে, বলতে হবে, দোষ কারোও নয়গো মা, আমি স্বখাত সলিলে ডুবে মরি শ্যামা, এই দিবাভাগেই দেখুন না, পেছন থেকে চেপে ধরে চটির স্ট্র্যাপটা ছিঁড়ে দিলে। কি করতে পারলুম! নাথিং, শুধু ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রইলুম। লাল করমচার মতো দুটি ওষ্ঠ। নাভিদেশ ঘিরে গোল করে বিন্দু বিন্দু চন্দনের ফোঁটা। ফিনফিনে ছাপা শাড়ি। বাতাসে সুগন্ধ। এ্যারম করতে করতে, এ্যারম করতে করতে, নাচতে নাচতে, দুলদুলের ঘোড়ার মতো চলে গেল। গ্রাহ্যই নেই। যেন চটি ছেঁড়ার জন্যেই জন্মেছেন। অথচ…।
সভাপতি হাত তুললেন, থামানোর ইঙ্গিত, স্টপ, স্টপ। এ সম্পাদক শুড রিমেন নন কমিট্যাল। কাগজে চিঠিপত্রের কলমে লেখা থাকে দেখনি, মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নহে।
না, আমি থামব না, আমার ভীষণ ফিলিংস এসে গেছে। সম্পাদক হলেও আমি একটা মানুষ তো। ডাউন দি মেমারি লেন আমাকে বছর তিনেক পেছিয়ে যেতে দিন। সেই দিনটা আমি কিছুতেই স্মৃতি থেকে মুছে ফেলতে পারছি না। ডান গালে হাত বোলালে এখনও পেরেকের দাগ।
পেরেকের দাগ!
ইয়েস, পেরেকের দাগ, জুতোর কাটা পেরেক।
নিজের কেরামতি বুঝি? নিজের গালটাকেই স্যান্ডেল ভেবে ঠোকাঠুকি করেছিলেন?
অফকোর্স নট। আই অ্যাম নট দ্যাট ফুল। জনৈকা মাজা সুন্দরী গালে পাদুকাঘাত করেছিলেন।
মানে জুতো মেরেছিলেন?
ইয়েস জুতো।
কে সেই জুতো মারা সুন্দরী, ইওর ওয়াইফ?
প্রোভোকড অর আনপ্রোভোকড? টিজ করেছিলেন? তখন কি আপনি কলেজে পড়তেন?
আমার এখনকার বয়েস দেখলে তাই মনে হয় কি! এই ধরনের বোকা-বোকা কথাও ভয়ঙ্কর ক্লেশের কারণ। এ বোকা শুড রিমেন সাইলেন্ট।
আমি বোকা?
আপনি ইডিয়ট।
আপনি ক্রিস্টালাইজড ইডিয়েট। চরিত্রহীন লম্পট।
লম্পট?
ইয়েস লিচেরাস, ট্রেচারাস, তা না হলে একজন অপরিচিতা মহিলা পৃথিবীতে এত লোক থাকতে আপনাকে হঠাৎ জুতো মারতে যাবে কেন। নিজের স্ত্রী হলে কিছু বলার ছিল না, যে হাত সোহাগ করে, যে হাত পেঁপে, কাঁচকলা দিয়ে মাছের ঝোল রাঁধে, সে হাত জুতোও মারতে পারে, মারার অধিকার আছে, বাট…।
বাট! ইও আর এ ঘৃণ্য স্ত্রৈণ। চটিলেহী নিন-কম-পুপ স্বামী।
হ্যাঁ তাই, তাতেও গৌরব আছে। আপনার মতো পরনারীর পশ্চাদ্ধাবন করে গালে জুতো ইনভাইট করতে চাই না। আই হেট দ্যাট। জুতো মারনেওয়ালা যখন বাড়িতেই আছেন, তখন হোয়াই শুড আই হ্যাংলার মতো গো টু আদারস?
সভাপতি ট্যাপ ট্যাপ করে টেবিলের ওপর বারকয়েক নস্যির ডিবে ঠুকে শব্দ করলেন, অর্ডার অর্ডার। এটা কি হচ্ছে? এভাবে চললে মনুষ্যক্লেশ নিবারণের ক্ষমতা কারুর বাবার সাধ্যে হবে না। ঠাকুরই বলে গেছেন, জগৎ হল একটা আস্ত পেঁয়াজ। খোসা ছাড়িয়েই যাও, শেষে কিস্যু পাবে na। এ দুনিয়া ধোঁকার টাটি!
হু ইজ দ্যাট ঠাকুর? দারুণ বলেছেন।
হে-হে বাবা। ঠাকুর রামকৃষ্ণ পরমহংস। যাক আসল ইসুটাই গুলিয়ে গেল। নো মোর উত্তেজনা। তবে জানা দরকার সম্পাদক কেন জুতো খেয়েছিলেন তিন বছর আগে। মধ্যবয়েসে জুতো, আনইউজুয়াল ব্যাপার। ছাত্রজীবনে হলে কেটা অন্যরকম হতো। জাস্টিফায়েবল ভাইস। হি মাস্ট বি অ্যালাউড টু ডিফেন্ড হিজ ক্যারেকটার। তিনি যে ক্লেশ পেয়েছিলেন, তা কারণে না অকারণে? অকারণে হলে আমাদের প্রসিডিংস-এ নোট করা হবে। গো অন, কনটিনিউ ইন সেলফ ডিফেনস।
হাতিবাগান।
ইয়েস হাতিবাগান।
সময় সন্ধ্যা।
কাল? মিনস ঋতু?
বসন্ত।
আই সি, আই সি।
আই সি, আই সি করে লাফাবার কিছু নেই। কলকাতায় তেমন উতলা বসন্ত আসে না, মানুষ তেমন কাককু নয় যে বসন্ত এলেই খাঁচায় বন্দী থেকেও কুহুকুহু করে উঠবে, তেমন ফ্যারিয়া নয় যে বায়োলজিক্যাল ইমপালসে ভাদ্র হলেই কেউকেউ করবে।
কি বলে রে! মানুষের সারা বছরই তো ভাদ্র।
ইয়েস সারা বছরই ভাদ্র, দ্যাটস টু তবে বসন্ত শুনে আই সি, আই সি করার কি আছে? আমি কি মোগল সম্রাট, না বৃন্দাবনের কেষ্টঠাকুর! আই স্টে নিয়ার হাতিবাগান।
বেশ তো, হাতিবাগানে স্টে করেন বলে সাত খুন মাপ না কি! জানেন দ্যাট ইজ এ বাজার এলাকা। কত নিরীহ মহিলা সেখানে বাজার করতে যান, অ্যান্ড এ ডেনজারাস ক্যারেকটার লাইক ইউ…।
সভাপতি বাধা দিলেন, ব্যাপারটা আবার ঝগড়ার দিকে চলে যাচ্ছে কিন্তু। সম্পাদক ইউ গো অন।