কোন কনস্টিটিউশন? ভারতীয় সংবিধানের কথা বলছেন, যে সংবিধানের দুশো বার অ্যামেন্ডমেন্ট হয়েছে, যে সংবিধানে বলেছে, ইকোয়াল অপরচুনিটিস ফর অল, ফ্রিডম অফ স্পিচ, ফ্রিডাম ফ্রম পভার্টি, স্লেভারি, এট অল?
ও নো নো। সে সংবিধান অতি পবিত্র বস্তু, পার্লামেন্ট ছাড়া তাতে হাত দেওয়ার অধিকার কারুর নেই। আমি মিন করেছি আমাদের কনস্টিটিউসান, হিউম্যান সামথিং দেবভোগ্য বস্তু, আমাদের এক্তিয়ারের বাইরে। আমি একটা বিকল্প ব্যবস্থার কথা ভাবছি।
হোয়াট ইজ দ্যাট।
আমরা কালা হয়ে যাওয়ার সাধনা করি। কথায় আছে, ধরো আর মারো আমি পিঠে বেঁধেছি। কুলো, বকো অরে ঝকো আমি কানে দিয়েছি তুলল।
তার মানে আপনি ফাংশানাল ডিজঅর্ডার চাইছেন?
অফকোর্স। ইতিহাসে দেখুন এক-একটা যুগ এসেছে, ডার্ক এজ, গোল্ডেন এজ, রেনেসাঁস, রিভাইভ্যাল অফ রেনেসাঁস, এইভাবে আমরা এসে পড়েছি–এজ অফ ব্রেকডাউনে! রাস্তায় গাড়ি ব্রেকডাউন, পাওয়ার প্ল্যান্ট ব্রেকডাউন, পেট্রল আর ডিজেল সাপ্লাই ব্রেকডাউন, রেলে ব্রেকডাউন, মর্যাল ব্রেকডাউন, পারিবারিক শান্তি ব্রেকডাউন, সব সার্ভিস ব্রেকডাউন, হেলথ ব্রেকডাউন, সামাজিক কাঠামো, মানুষ মানুষের সম্পর্ক সব ব্রেকডাউন। ডাউন ডাউন, নিলডাউন। হাম হাম গুঁড়িগুড়ি।
সুর করে বলি, ম্যায় চলি, ম্যায় চলি, হাম হাম হামাগুড়ি।
কিন্তু সভাপতি স্যার, কালা হব বললেই কি হওয়া যায়! শুনেছি বিল্বমঙ্গলবাবু কাম জয় করার জন্যে প্রেমিকার খোঁপা থেকে কাটা খুলে নিয়ে চোখে খোঁচা মেরে অন্ধ হয়ে বলেছিলেন, প্রাণপ্রিয়ে দিলুম বারোটা বাজিয়ে, তুমি কে, কে তোমার, অন্ধের কিবা রাত্রি কিবা দিন, পেঁচিও যা পরিও তাই। তাহলে আমরাও কি স্ব-স্ব পত্নীর বড়ি-খোঁপা থেকে ইস্টিলের কাঁটা খুলে কর্ণকুহরে প্রবিষ্ট করে এককালে সব বধির হয়ে যাব?
না তার প্রয়োজন নেই, বিল্বমঙ্গলের পরিবর্তে কর্ণমঙ্গল কাব্য আর তেমন মার্কেটে চলবে না। শ্রবণশক্তি ইতিমধ্যেই নয়েজ পলিউশানে কমে আসছে। নেতারা চোঙা ফুঁকে প্রায় আধকালা করেই দিয়েছেন। আর একটু ধৈর্য ধরতে পারলেই ফুল-কালা হয়ে যাব। এর মাঝে আর একপথ আছে–অভ্যাসযোগ। শুনেও শুনব না, দেখেও দেখব না।
রাইট। রকে বসে ছেলে আমার স্যাঙাতদের নিয়ে খুব গুরু-গুরু করে যাচ্ছে। ভীষণ ইরিটেশান হচ্ছে ভেতরে, ক্লেশ, ভীষণ ক্লেশ…।
গুরুর নাম শুনে ক্লেশ?
আজ্ঞে এ গুরু সে গুরু নয়। এই জেনারেশানের কথার ধরন। একদিন কি একটা কথা বললুম, উত্তর দিলে, কি যে বলো, গুরু। অবশ্য তক্ষুনি সামলে নিয়ে সরি বলেছিল, গর্ভধারিণী মাকে একদিন বলে বসল, হায় সখি।
ও, এই ব্যাপার। হ্যাঁ, এখানে অভ্যাসযোগ চলবে। শুনেও শুনবেন না।
যেমন ধরুন মাসের শেষে। সকাল থেকেই স্ত্রী বলছেন, শুনছ, বড় জামাই আসছে কানপুর থেকে, শুনছ বড় জামাই। সকালের চায়ের সময় বড় জামাই, বাথরুমে ঢোকার মুখে বড় জামাই, অফিসে বেরোবার সময় বড় জামাই, লাস্ট বিছানায় শুয়ে মাঝরাতেও বড় জামাই! শেষে তেরিয়া হয়ে বলতেই হল, মানে মুখ ফসে, সরি ফকসে নয় ফসকে বেরিয়ে পড়ল–বিগজামাই আসছে তো আমার বাপের কি! সঙ্গে-সঙ্গে আবিষ্কার করলুম, আমি আর খাটে নেই। মশারি ঝুলে লাল মেঝেতে।
ভুল করেছেন। সকাল থেকে যেমন বধির ছিলেন, তেমনি বধির থাকাই উচিত ছিল। একটা টোটকা শিখে রাখুন, যখনই কোনও ক্লেশদায়ক কথা শুনতে থাকবেন, তখনই মনে গুনগুন করতে থাকবেন, আমি বনফুল গো, আমি বনফুল গো, ছন্দে-ছন্দে দুলি আনন্দে, আমি বন…
০৩. তৃতীয় অধিবেশন
সভার কাজ তাহলে শুরু করা যাক, বলে সভাপতি হুঁককু-ককু করে কেশে উঠলেন। সিজন চেঞ্জ। কাশি হয়েছে। সম্পাদকের চটির স্ট্র্যাপ ছিঁড়ে গেছে। পেছন থেকে কে চেপে ধরেছিল। ছেঁড়া স্ট্র্যাপে নীচু হয়ে একটা পেপার ওয়েট ঠুকে-কে ড্রয়িং পিন লাগিয়ে টেমপরারি মেরামত করতে করতে বললেন, হ্যাঁ, হ্যাঁ শুরু করে দিন। টেবিলের তলা থেকে পুরোনো খানকতক চেয়ারের গা বেয়ে। সম্পাদকের সমর্থন সভ্যদের কানে এল।
জুতোয় আবার কি হল?
আর বলেন কেন? ম্যাগনাম সাইজের এক মহিলার পদাঘাতে স্ট্র্যাপ ফটাস। এতটা রাস্তা স্রেফ টানতে-টানতে এসেছি। এখন দেখছি যদি কিছু করা যায়।
ছেড়ে দিন ছেড়ে দিন, ও আপনার কম্ম নয়। যার কাজ তার সাজে। উঠে চেয়ারে বসুন।
দাঁড়ান এক মিনিট, একটা হাতুড়ি পেলে এতক্ষনে হয়ে যেত। গোলাকার পেপারওয়েটে তেমন জোরালো ঠোক্কর লাগাতে পারছি না।
সভাপতি আর-এক পশলা কাশি ছাড়লেন। ছেড়ে বললেন, আজ একটু সকাল-সকাল সভা শেষ করতে হবে। তোমার ওই পাদুকাপর্ব এখন রাখো। রমণী আর চটি দুটি বস্তুই সহজে বশ্যতা স্বীকার করতে চায় না। যত ঠুকবে ততই বিগড়োবে।
কথাটা বড় জব্বর বলেছেন কিন্তু মনুষ্য জীবনের দুটি ক্লেশ, রমণীয় রমণী এবং এই চটি। অপরিহার্য অথচ অবাধ্য। সৃষ্টিরক্ষার জন্যে সব স্পিসিজেরই মেল ফিমেল প্রয়োজন কিন্তু প্রয়োজন ফুরোবার পরও এই যে টেনে-টেনে চলা এর কি কোনও প্রতিকার নেই?
অবশ্যই আছে।
যেমন?
যেমন মাকড়সা। স্ত্রী মাকড়সা প্রয়োজন মিটে গেলেই পুং মাকড়সাকে খেয়ে মুখ মুছে জালের ভেতর গ্যাট হয়ে বসে থাকে। চলে আও কোন আয়েগা আ যাও।