রাজনীতিবিদ আপনি কিছু বলুন।
আমার একটাই কথা, আমাকে ভোট দিন। আপনারা স্বাধীন দেশের স্বাধীন নাগরিক। ভোটের অধিকার পেয়েছেন, সে অধিকার হারাবেন না। আমি যখন যে দলেই থাকি না কেন আমাকে ভোট দিন। টাকাকড়ি, ধনদৌলত চাইছি না, চাইছি একটা ভোট। আপনারা আমাকে ভোট দিলে আমি সুখী হব। বিবেকানন্দ বলে গেছেন, জীবে দয়া করে যেই জন সেই জন সেবিছে ঈশ্বর। আমি একটা জীব, পলিটিক্যাল জীব, সেই জীবে দয়া মানে ঈশ্বরের সেবা, পরকালের কাজ। রাজনীতিতে বিশ্বাস হারালেও ঈশ্বরে বিশ্বাস হারাবেন না। ঈশ্বর কখনও কারুর কিছু করছেন কি? আমরা মনে করি তিনিই সব করছেন, তিনি সব করতে পারেন, তিনি নির্ধনকে ধনী করতে পারেন, অপুত্রককে পুত্রক, অসফলকে সফল। একজন রাজনীতিকও তাই। ইলেকশনের পর তাঁকে দেখা যায় না, ছোঁয়া যায়। না। ধরা যায় না। তিনি কি করেন, তিনি কি করবেন, তিনি কি করতে পারেন কেউ জানে না। অতএব ভোট দিয়ে সেই ঈশ্বরতুল্য রাজনীতিবিদের সেবা করুন। সেবা পরমধর্ম। ফ্লোরেন নাইটিঙ্গে ল, হেলেন কেলার, মাদার টেরেসা সেবা ধর্মের জন্যে জগতে বিখ্যাত! আপনারাও সেবা করুন। পরশ্রীকাতর বলে বাঙালির বড় দুর্নাম। সেই দুর্নাম কাটাতে হবে। আমি যদি মন্ত্রী হই, বাড়ি করি, গাড়ি করি, টাকা করি, আমার আত্মীয় স্বজন চামচাঁদের অবস্থার উন্নতি করি তাতে আপনারা দুঃখ করবেন কেন, ঈর্ষা করবেন কেন, খুশি হবেন, সুখী হবেন, আমাদের গর্ব বলে লাফাতে থাকবেন, বলবেন, আহা আরও বড় হোক, আরও বোলবোলা হোক। বাঙালির উন্নতি হোক। আগেকার দিনের জমিদারদের কথা ভাবুন। নিরন্ন প্রজারা পড়ি কি মরি করে নজরানা দিয়ে যেত? জমিদারদের বাড়ির ঝাড়লণ্ঠন দেখে, বিশাল বাড়ি দেখে, চেহারা দেখে, বোলবোলা দেখে, ব্যাভিচার দেখে, অত্যাচার দেখে কি খুশিই না হতো! সেই খুশির ভাবটা আবার ফিরিয়ে আনুন।
ত্যাগই জীবনের শ্রেষ্ঠ সম্পদ। তুলসীদাস বলেছেন সব ছাড়ো সব পাওএ। সব ছাড়লেই সব পাওয়া যায়। রাজনীতি অতি নোংরা জিনিস। সেই নরকে আপনাদের ভোট নিক্ষেপ করে আমাদের নরকবাসকে দীর্ঘ করুন। আপনাদের স্বার্থে আমরা নরকে যেতে প্রস্তুত আছি। নরক ভরতি থাকলে আপনাদের আর সেখানে স্থান দেওয়ার জায়গা থাকবে না, তখন স্বর্গের পথ অটোমেটিক্যালি খোলা থাকবে। আমরা মস্তান নিয়ে, রক্তাক্ত রাজনীতি নিয়ে, দলাদলি, দল ভাঙাভাঙি নিয়ে, কালোয়ার, কালোবাজারি, ব্যাবসাদার, মুনাফাখোর নিয়ে নরক গুলজার করে বসে থাকি। সমাজে বেশ্যালয় রাখা হয় যাতে লম্পটরা যার-তার হাত ধরে টানাটানি না করতে পারে। বারনারী সামাজিক স্বাস্থ্য রক্ষা করে চলেছে। রাজনীতিও তাই। রাজনীতির ম্যানহোলে আমরা পাঁক জমা করে আপনাদের পবিত্র রেখেছি। আপনারা ত্যাগে, তিতীক্ষায়, ধৈর্যে, উদারতায়, দারিদ্র্যে, সততায়, উদাসীনতায় সংসার ধর্ম পালন করে মহাপ্রস্থানের পথে চলে যান। বাজে ব্যাপারে মাথা ঘামাবেন না। শুধু ভোটের সময় ভোট দিয়ে পবিত্র নাগরিক দায়িত্ব পালন করুন। আপনারা সকলেই দায়িত্বশীল নাগরিক হয়ে উঠুন। একটা কথা জেনে রাখুন, আমরা যত অসৎ হব আপনারা রিলেটিভলি ততই সৎ হয়ে উঠবেন। আর একটা কথা, আপনারা বিভিন্ন রাজনৈতিক মতবাদে বিশ্বাসী হতে পারেন। খুবই স্বাভাবিক, ফ্রিডাম অফ স্পিচ, ওপিনিয়ান, আইডিয়া, সংবিধানের মূল কথা। সেই কারণে আমি আপনাদের সুবিধের জন্যে অনবরতই দল পালটে-পালটে সর্বদলীয় চেহারা পেয়েছি। আমাকে ভোট দেওয়া মানেই সব দলকেই ভোট দেওয়া। আচ্ছা আপনারা সুখে থাকুন। আমরা দুঃখেই থাকি। গলায় বিষ ধারণ করে নীলকণ্ঠ। আনইজি লাইজ দি হেড দ্যাট ওয়্যারস দি ক্রাউন।
সভা শেষ। সভাপতি উঠলেন। চা এসেছে। সমিতির পয়সা কম, সঙ্গে ডগ বিস্কুট। সভাপতি বললেন, মনুষ্যক্লেশ নিবারণী সমিতির আপাতত আর কোনও অধিবেশন হবে না। আমার ধারণা ক্লেশ নিবারণ করা সম্ভব নয়। ক্লেশ না থাকলে অক্লেশ মধুর হয় না। অন্ধকার আছে বলেই আলো, অসৎ আছে বলেই সৎ-এর কদর, রোগ আছে বলেই আরোগ্য সুখের। ক্লেশ আছে বলেই ধর্ম আছে, বিশ্বাস আছে, বন্ধুত্ব আছে, আদৰ্শ আছে, সাধনা আছে, সমাজ আছে, সংসার আছে। ক্লেশ মোচনের চেষ্টাটাই ক্লেশদায়ক। অস্কার ওয়াইলড বলেছিলেন? Philanthropy seems to have become simply
the refuge of people who wish to annoy their
fellow creatures.