.
এই জীবনেরও কত মোহ। মৃত্যু তাড়া করলে ন্যাজ তুলে ছুটে পালায়। এই হল ফাউন্ডেশন অফ স্টেট। নেতারা জানেন এই প্রতিযোগিতার, এই উত্তেজনায় জনমানসিকতাকে ম্যানিপুলেট করেই বারেবারে ক্ষমতায় ফিরে আসতে হবে, উত্তেজনায় আগুনে শুকনো কাঠ গুঁজে খুঁজে আখের গুছোতে হবে। অসুস্থ উত্তেজনায় মানুষকে মাতিয়ে রেখে, মানুষকে শিবিরে-শিবিরে বিভক্ত যুদ্ধমান করে রাখতে হবে। দেয়ার ইজ নাথিং লাইক ওয়ার। ওরা লড়ে মরুক আমরা ইতিমধ্যে কোমরের কাপড়টা খুলে নি। অত্যাচারী রোমান সম্রাট কালিগুলা থেকে শুরু করে এই আশির ডেমোক্র্যাট, সকলেরই এক স্ট্রাটেজি। আমি হিরো তোমরা আমাকে ওয়ারশিপ করো। আমি আসনে বসি। তারপর এই নাও তোমাদের ব্রেড, ওয়াইন, ওয়াইফ, মেয়েছেলে, থিয়েটার সিনেমা সেক্স, এরিনায় রক্তাক্ত গ্ল্যাডিয়েটার, রথের দৌড়, ঘোড়দৌড়, মাঠে ফুটবল, রাস্তায় মিছিল, শিল্পে ট্রেড ইউনিয়ন, কে জি বি, সি আই এ, পুলিশ, সিক্রেট পুলিশ, লকআপ, থার্ড ডিগ্রি, রেপ, মার্ডার, ছিনতাই, ক্যাবারে। পঙ্ককুণ্ড তৈরি করে ফুটে থাকি পদ্মফুলের মতো।
এই যখন অবস্থা, অবস্থা যখন কিছুতেই পালাটাবে না, ক্ষমতায় যখন ভ্যাকুয়াম থাকবে না, তখন শৈশব থেকেই সকলকে কুকুরের মতো ট্রেনিং দিয়ে ওবিডিয়েন্ট করো, ওয়াচফুল করো, অ্যালার্ট করো। ভালো প্রভু হয় না, ভালো দাস হয়। ইতিহাস বলছে। নেচারের বিরুদ্ধে না যাওয়াই ভালো। ভালো কুকুর প্রভুর বড় পেয়ারের, বড় আদরের।
এবার আপনাদের সামনে আসছেন গণিতের শিক্ষক।
হ্যাঁ, আমি একজন শিক্ষক। ম্যাথেমেটিক্স আমার বিষয়, আমার ভালোবাসা। জীবনে এক গণিতে বিশেষ তফাত নেই। হিসেব করে খরচ, হিসেব করে প্রয়োগ, হিসেব করে পা ফেলা, হিসেব করে কথা বলা, হিসেবেই সুখ, বেহিসেবেই দুঃখ। গাণিতিক বুদ্ধির অভাবেই মানুষের যত ক্লেশ। শুধু কাব্য, শুধু সাহিত্যে, শুধু ভাবালুতায় মানুষের যত দুর্ভোগ। ইমোশান, সেন্টিমেন্ট হল গর্দভের লক্ষণ। মানুষকে হতে হবে কুল, ক্যালকুলেটিং। পৃথিবীটা কি? গিভ অ্যান্ড টেক। এক হাতে নেবে, এক হাতে দেবে। ডেবিট আর ক্রেডিট। বুক কিপিং। অঙ্কে মোটা মাথা হলেই ঠকে মরতে হবে। পৃথিবীর মানুষকে দু-ভাগে ভাগ করতে হবে, একদল ঠকায় আর একদল ঠকে। একদল মারে আর একদল মরে।
অঙ্কে কঁচা হলে মানুষ প্রেমে পড়ে। প্রেম হল ন্যাবার মতো। দৃষ্টি হলুদ, জগৎ হলুদ নিজে হলুদ, যা দেখেছি সব হলুদ। দুই আর দুয়ে যেমন পাঁচ হয় না, মানুষে মানুষে, মানুষে মানুষীতে তেমনি প্রেম হয় না। প্রেম একটা ফ্যালাসি, একটা কল্পনা, এ ফিউমিং ইম্যাজিনেসান, হ্যাঁলুসিনেসান। যা নেই তাকে সত্য বলে মেনে নেওয়ার নির্বুদ্ধিতা। গণিতে এসবের স্থান নেই। ইট ইজ সো প্র্যাকটিক্যাল। প্রেমে কানা ছেলে পদ্মলোচন হয়, পেঁচি, হয়ে ওঠে ক্লিওপেট্রা। ফাটা কাঁসরের মতো গলাকে মনে হয় বীণানিন্দিত কণ্ঠ। সেই ঘোরে মানুষ বেমক্কা ফাঁদে পড়ে ফেঁসে যায়। প্রেম-প্রেম ভাব হলেই অঙ্ক করো।
রাসেল বলেছিলেন, ছেলেবেলায় তার প্রচণ্ডই দুঃখকষ্ট ছিল। মাঝে-মাঝে মনে হতো আত্মহত্যা করি। সেই আত্মহত্যার প্রবণতা থেকে বাঁচার জন্যে তিনি গণিতের আশ্রয় নিয়েছিলেন। গণিত তাঁকে মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচিয়েছিল। কিন্তু দিস গবেট ইউনিভার্স সে কথায় সহজে কান দিতে চায় না। ইউনিভার্সিটিতে, ইউনিভার্সিটিতে বছরের-পর-বছর ধরে কপচে চলেছে শেলির রোমান্টিসিজম, কিটসের আর্ট ফর আর্টস শেক, সুইনবার্নের লাভ, বায়রনের ডিবচারি। পো-ওঁপো ছেলে, ধুমসো ধুমসো মেয়েরা বাপের অন্ন ধ্বংস করে সেই নেশার জগতে বছরের পর বছর জীবন নষ্ট করছে। ও মাই লাভ ও মাই রোমানস্ বলে একজনের হাত ধরে ছজনে টানাটানি। গলায় দড়ি, বিষ, ঘুমের ওষুধ। তারপর বাবু-বিবিরা কলেজের বাইরে এসে শেলিকে সের দরে বেচে দিয়ে মার্চেন্ট অফিসে ঢুকে দুই আর দুয়ে চার করছেন। কলেজে অধ্যাপক হয়ে ঢুকে বছরের-পর-বছর সেই একই বুলি কপচে চলেছেন। সেই এক হ্যাঁমলেট, সেই এক ওথেলো। টুমরো অ্যান্ড টুমরো, ব্রিফ ক্যান্ডল, টু বি নট টু বি। প্রেমপত্র আর লিখতে হল না। নোট লিখে লিখে আঙুল ক্র্যাম্প। লেকচার কপচে কপচে গলা ভাঙা, মাথায় টাক, চোখে চশমা, রক্তে সুগার। এদিকে প্রেমিকা প্রেমপর্বের কোটেশান লাঞ্ছিত প্রেমপত্র পুড়িয়ে শাঁসালো মক্কেলের গলায় ঝুলে পড়ে ইয়া বিশাল এক গিন্নি। মেয়েরা ছেলেদের চেয়ে অঙ্কে অনেক পাকা। ডেবিট ক্রেডিট ভালো বোঝে। গিভ অ্যান্ড টেকে ওস্তাদ। তারা বলে, ফেলো কড়ি মাখো তেল, আমি কি তোমার পর।
অঙ্কে সেন্টিমেন্টাল প্র্যাকটিকাল হয়। এই বেনিয়ার জগৎকে ভালো করে বুঝতে শেখে। অ্যাভারেজ, রুল অফ থ্রি, ইন্টারেস্ট, টাইম অ্যান্ড মোশান, রিলেটিভ স্পিড, মিকশ্চার, কমপাউন্ড ইন্টারেস্ট না বুঝলে ঝানু হওয়া যায় না। পারমুটেশান কম্বিনেশান জীবনের সর্বক্ষেত্রের এক চরম সত্য। অঙ্কে মাথা ভালো হলে মানুষ বুঝতে শেখে, অলওয়েজ, ওয়ারশিপ দি রাইজিং সান। অঙ্কের ভালো ছাত্র কখনও চুলে কলপ লাগিয়ে বার্ধক্যে যুবক সেজে লম্ফঝম্ফ করতে গিয়ে কোমর ভাঙে না। অঙ্ক হি কেবলম। নমস্কার।
এইবার মস্তান শ্ৰীযুক্ত…