Most of what we are conscious of is not real and the most of what is real is not in our consciousness.
এখনও জানা গেল না, হোয়াট ইজ রিয়েলি রিয়েল।
আপনাদের কথা আমি জানি না। আপনাদের সামনে আমি নিজেকেই নিজে অ্যানালিসিস করছি। মনে হয় আমার আয়নাতেই আপনাদের চেহারা দেখতে পাবেন। আমার দুটো ভাব, একটা বায়োফিলিয়া। তার মানে লাভ অফ লাইফ। জীবনকে ভালোবাসা। তার অর্থ কিন্তু জীবে প্রেম নয়। জিভে প্রেম। নিজের জীবনকে ভালোবাসা। আমি বাঁচতে চাই, প্রভুত্ব করতে চাই, ভোগ চাই, সুখ চাই, সম্পত্তি চাই, ভালো খেতে চাই, পরতে চাই, অধিকার করতে চাই। অনায়াসে সব কিছু পেতে চাই। আমি একটা homme machine. এসব ব্যাপারে আমি প্রতিযোগিতা পছন্দ করি না, ভাগাভাগির মধ্যে যেতে চাই না। এই দিক থেকে আমি ডুয়েলিস্ট। আমি আর আমার প্রাচুর্যে ভরা পৃথিবী, এর বাইরে সবাই আমার অপরিচিত। কিন্তু ইয়েস, দেয়ার ইজ এ বিগ বাট। আমি তো আর জায়েন্ট নই যে সব কিছু নিজের ক্ষমতায় দখল করে নেব। তাই আমার দুটো দিক, একটা হল হোমো সেকসুয়ালিস, আর একটা হল হোমো ইকনমিকাস।
ফ্রয়েড সায়েবের মডেল অনুসারে আমার মধ্যে দুটো শক্তি কাজ করছে, একটা হল নিজেকে রক্ষা, সেলফ প্রিজারভেটিভ আর একটা প্রজননেচ্ছু, সেকসুয়্যাল ড্রাইভ। আমার এই দুটো ইচ্ছে প্রতিমুহূর্তে খর্বিত, খণ্ডিত, বঞ্চিত, লাঞ্ছিত। সমাজ এর ওপর চেপে বসে আছে, সংসার এর মধ্যে গোঁজামিল ঢুকিয়ে দিয়েছে। কালচার মনের মধ্যে ঢুকে দুটো শুম্ভ নিশুম্ভ তৈরি করেছে–আচার, অনাচার। আমি অসুস্থ, আমি ক্লান্ত, অন্তর্দ্বন্দ্বে খণ্ড-খণ্ড। কোনটা আচার, কোনটা অনাচার বুঝতে গিয়ে জীবনটাই জেবড়ে গেল। আবার সেই ফ্রয়েড :
Society imposes unnecessary hardships on man which are conducive to worse results rather than the expected better ones.
বায়োফিলিয়া থেকে আমার মধ্যে এখন প্রবল হয়ে উঠেছে নেক্রোফিলিয়া। মৃত্যুকেই আমি এখন ভালোবাসতে শুরু করেছি–মরণ রে উঁহু মম শ্যাম সমান। যে অবস্থায় পড়ে মানুষ মৃত্যুকে ভালোবাসতে শেখে সেই অবস্থায় পরিবর্তন প্রয়োজন। এই অবস্থা যাঁরা তৈরি করেছেন তারা কারা? তাঁরা হলেন এক ধরনের পোচার।
কাজিরাঙা ফরেস্টে যে-সব পোচার গণ্ডার মারে তাদের জন্যে কড়া আইন তৈরি হয়েছে। আমাদের যারা মারছে তাদের জন্যে কে কি অবস্থা নিয়েছেন জানতে চাই। সাপ্রেশান, অপ্রেশান। এসব কি অপরাধ নয়? অবশ্যই অপরাধ। কে সেই অপরাধী? সভ্যতা। সভ্যতাই হল রিয়েল অপরাধী। রিয়েল রিয়্যালটি হল, আমি একটা পশু, আমি দেবদূত নই, দেবতা নই। একটা জীবন, একটা জীব।
জন্ম থেকে আজ পর্যন্ত আমাকে সভ্য করে তোলার জন্যে কম অত্যাচার হয়েছে! কম মগজ ধোলাই দেওয়া হয়েছে আমাকে একটা ক্রীতদাস করে তোলার জন্যে! আমি যদি বাঘ হতুম, গরিলা কি গণ্ডার হতুম, তাহলে কি আমাকে অত সহজে পোষ মানানো যেত? যেত না। ভয়ের ব্যাটারি চার্জ দিয়ে সার্কাসের রিং মাস্টাররা আমাদের বশে রেখেছেন, একটি মাত্র সত্তাই আমাদের জেগে আছে–হোমো ইকনমিকাস। নো ওয়ার্ক, নো পে। নো সাবমিসান, নো প্রেমোসান।
ছেলেবেলায় মা বলতেন, কথা না শুনলে কিছু পাবি না। বাবা বলতেন, উনিশের নামতা মুখস্ত না দিতে পারলে খাওয়া বন্ধ। মুখে-মুখে তর্ক কোরো না, কান ধরে নিলডাউন করিয়ে রেখে দেব, সেইসব দুঃস্বপ্নের দিনের কথা। বাঁদরটাকে মানুষ করার জন্যে জাঁদরেল একজন শিক্ষক চাই। উঠতে বসতে পিটুনিই হল একমাত্র ওষুধ। এই পিঠের ওপর কত কিছুর স্মৃতি চিহ্ন–জুতো, ঝাটা, লাঠি, বেল্ট দাদুর খড়ম। দুটো কানের দুরকম লেংথ। ডান কানটা পণ্ডিতমশাই টেনে-টেনে বাঁ টার চেয়ে এক ইঞ্চি বেশি লম্বা করে দিয়েছেন। এর থেকে আমি একটা সহজ অঙ্ক পেয়েছি, ব্যাকরণ কৌমুদীর একের চার ভাগ আয়ত্ত করতে কান এক ইঞ্চি লম্বা হয়, পুরোটা আয়ত্ত করতে হলে কানের চেহারা আর মানুষের মতো রাখা যায় না, হাতি কিংবা খরগোশের মতো হয়ে যায়।
ভেবে দেখুন ভাই সব সেই অতীতের কথা। শৈশবে আমাদের কেউ মানুষ বলে মনে করতেন কি? এই দেখুন আমার শৈশব পরিচয়ের একটা লিস্ট তৈরি করেছি, বিভিন্ন পশুর সমন্বয়ে আমার শৈশব–গাধা, গরু, বাঁদর, হনুমান, শূকর, উল্লুক, পাঁঠা, সব মিলিয়ে জানোয়ার। একমাত্র অবতারদেরই একই আধারে এত রূপ কল্পনা করা চলে। প্রেমিকের পক্ষেই প্রেমিকার শরীরে এতরূপ দেখে গান গেয়ে ওঠা চলে–একই অঙ্গে এত রূপ দেখিনি তো আগে। শৈশবের নামরূপেই আমার রূপ প্রকাশিত। ক্ষণে-ক্ষণে বিভিন্ন পশুর পশ্বাচারে জগৎ প্রমাণিত করেছি ম্যান ইজ এ বাইপেড অ্যানিম্যাল উইদাউট এনি উইংস।
এইবার আসা যাক ব্যবহারিক দিকে। কীভাবে সেই মধুর মানব শৈশবে আমি ব্যবহৃত হয়েছি। কখনও ফুটবলের মতো, কখনও চটি-জুতোর মতো, পাপোশের মতো, তবলার মতো, পাখোয়াজের মতো, আবর্জনার মতো। শরীরের ওপর কোনও স্বাধীনতা ছিল না। যিনি যেভাবে পেরেছেন তিনি সেইভাবে ব্যবহার করে প্রমাণ করতে চেয়েছেন মানুষ জন্মায় না, আদিতে সবাই অকৃত্রিম পশু। শুধুমাত্র নির্বিচার পেটাই আর ধোলাইয়ের সাহায্যেই মানুষ তৈরি হয়।