তোমাকে সকালে আমি চা তৈরি করে খাওয়াই। একমাত্র লালবাহাদুর শাস্ত্রী ছাড়া আর কোন স্বামী বউকে বেড-টি সাপ্লাই করে এসেছেন শুনি?
কোন বউ তোমার মতো অকর্মণ্যর ফেলে যাওয়া চশমা অফিসে পৌঁছে দিয়ে আসে শুনি?
কোন স্বামী তোমার মতো আয়েশি বেড়ালকে বিছানার শুইয়ে মাঝরাতে জল সাপ্লাই করে শুনি?
কোন বউ অন্য মেয়ের সঙ্গে রপটারপটি করার জন্যে স্বামীর চুলে কলপ লাগিয়ে কলেজি কার্তিক বানিয়ে দেয় শুনি?
কোন স্বামী বউয়ের পাকা চুল তুলে দেয় শুনি?
কোন বউ বকের ভূমিকায় স্বামী-বাঘের গলা থেকে হাঁ করিয়ে মাছের কাটা বের করে দেয় শুনি?
ক্ষান্ত হন, ক্ষান্ত হন। আপনারা দুজন, সত্যিই মেড ফর ইচ আদার। আপনার লিকার, স্ত্রীর ফ্লেভার যেন আসাম-দার্জিলিং ব্লেন্ড।
স্তোত্রপাঠে তরজার সমাপ্তিঃ
যত্র নার্য পূজান্তে নন্দন্তে তত্র দেবতাঃ।
যত্রৈতাস্তু ন পূজ্যন্তে সর্বাস্তাফলাঃ ক্রিয়া।।
যে গৃহে নারীর পূজা সেই গৃহে দেবতার আগমন, যে গৃহে নারীর অসম্মান সেই গৃহে সমস্ত কর্মফল কুফল।
তুমি তাহলে ডাব বলো।
ডাব।
আমি বলি ভাব। ডাব ভাব। চলো হাত ধরাধরি করে বাড়ি যাই।
০৯. নবম অধিবেশন
ক্লেশ পাওয়ার জন্যেই মানুষের জন্ম। জগৎ এক কারাগার।
কে আপনি? হে দার্শনিক?
আপনাকে তো এর আগের কোনও অধিবেশনে দেখিনি। হঠাৎ কোথা থেকে এলেন?
আমি সেই কৃষ্ণ। যে কৃষ্ণ কুরুক্ষেত্রে অর্জুনের রথের সারথি হয়েছিল। যে কৃষ্ণ গীতা আওড়ে ছিল। যে বই পৃথিবীর মাস্টার পিস। সর্বকালের বেস্ট সেলার। আজ পর্যন্ত কারুর বাপের ক্ষমতা হল না ওই রকম দ্বিতীয় আর-একটি রচনা করার। গীতা বিক্রি করে যে রয়্যালটি বিভিন্নকালের মুদ্রায় পাওয়া গেছে সেই টাকায় অ্যামেরিকা আধখানা কিনে ফেলা যায়।
আপনি কবে ছাড়া পেলেন প্রভু!
কোথা থেকে মাই ডিয়ার স্যার?
উন্মাদ আশ্রম থেকে?
ছাড়া তো পাইনি ভাই। উন্মাদ আশ্রমেই তো রয়েছি। এই সংসারটাই তো সেই বিশাল পাগলাগারদ। আমারই এক খেলার খুঁটি সেই কতকাল আগে লিখে গেছে–হতেছে পাগলের মেলা খেপাতে-খেপিতে মিলে। এই সংগীত আগে কখনও কখনও সকালে তোমাদের বেতার তরঙ্গে প্রচারিত হতো। এখন আর হয় না। এখন তার বদলে এসেছে হামতুম এক কামরেমে বন্ধ হ্যায়, আর চাবি খো যায়। ওই একই ব্যাপার, একই মানে। বিশ্ব কারাগারে কোটি-কোটি পাগল মত্ত মার্তণ্ডের মতো হুটোপাটি করে বেড়াচ্ছে। দূর থেকে আমি যখন দেখি, তখন দেখি…
কতদূর থেকে প্রভু!
পার্সপেকটিভে যখন পৃথিবীকে দেখি, তখন দেখি, মহাশূন্যে একটি গোলক ঘুরছে, তার আষ্টেপৃষ্ঠে পোকার মতো কিলবিল করছে মানুষ। আঁচড়াচ্ছে, কামড়াচ্ছে, খাবলাচ্ছে, খোবলাচ্ছে, উঠছে, পড়ছে, মরছে, জন্মাচ্ছে। আহা কি সুন্দর খেলা।
এ কি বলছেন প্রভু! আপনি তো বলেছিলেন, আমাদের জন্ম নেই মৃত্যু নেই, শুরু নেই, শেষ নেই, আমি নেই, তুমি নেই, শুধু তিনি আছেন, যাঁকে কাটা যায় না, পোড়ানো যায় না, মারা যায় না, শেষ করা যায় না। এখন যে অন্য কথা বলছেন?
ঠিকই বলেছি। তোমরা বুঝতে ভুল করেছ। সেটা হল ভৌতিক অবস্থা। মানুষ মরে ভূত হতো। ভূত সর্বশক্তিমান। ভূতের বিনাশ নেই। কারণ ভূতের দেহ নেই। এই দেহ, এই দেহটাই শালা যত ক্লেশের কারণ।
শালা বলছেন স্যার?
কেন? শালা শব্দ শুনে আঁতকে উঠছ কেন? বহু ভালো জিনিসের সঙ্গে শালা যুক্ত আছে যেমন যজ্ঞশালা, কর্মশালা, ধর্মশালা, পাঠশালা, গোশালা, পাকশালা। শালা বললেই বউয়ের ভাই মনে করছ কেন? দেহ একটা শালা। এবং সেই ভগবান, সেই আল্লা, সেই গড, যিনি এই মনুষ্য দেহের ভাস্কর তিনি একটা বোগাস, ওয়ার্থলেস থার্ডক্লাস কারিগর। যে লোকটা কাঁচ তৈরি করেছিল, তার চেয়েও অপদার্থ। মানুষের উচিত আর দেরি না করে ভগবানের বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষণা করা। এই ডিফেকটিভ মেকানিজম চলবে না চলবে না।
সভায় একটা গুঞ্জন উঠল। সভাপতি বললেন, আমরা যে কত বড় পাগল তা প্রমাণ করার জন্যেই এই ছত্রধারীর আবির্ভাব। তবে যা বলছে শোনা যেতে পারে। সেই এক কথাই তো বলবে ইট ইজ এ টেল টোলড বাই এন ইডিয়ট সিগনিফাইং নাথিং। সেই ইডিয়েট হলেন ভগবান।
সভাপতির কথা বক্তা বোধহয় শুনে ফেলেছেন। মৃত্যু হেসে বললেন,
ভগবান নয় শয়তান। আমি তার রাইভ্যাল। গীতায় আমি অর্জুনকে সেইজন্যে ক্যাটেগোরিক্যালি বলেছিলুম–মামেকং শরণং ব্রজ। অ্যান্ড হি ডিড দ্যাট। সে তাই করেছিল এবং যুদ্ধ জিতেছিল। ইউ অল নো দ্যাট। এখন অবশ্য অ্যাটম বোমার যুগ। কুরুক্ষেত্র আর হবে না। এক্সপার্টরা বলছেন– হলে বড়জোর বর্ডার ওয়ার হবে। কোলড ওয়ার হবে। যাক ওটা আলাদা ব্যাপার। আসল ব্যাপার হল, এই সৃষ্টি রহস্য অনেকটা গোয়েন্দা কাহিনির মতো। সামওয়ান অফ ইউ বলেছিলেন শেষ নাহি যার শেষ কথা কে বলবে! শেষটা অবশেষে জানা গেছে। রহস্য এখন পরিষ্কার। শয়তানকেই আমরা ভগবান ভেবে বসে আছি। শয়তান তৈরি না করলে মানুষের মতী একটা জীব হতো না। ভগবানকে সাজা দেওয়ার জন্যেই ভগবান মেরে মানুষ তৈরি হয়েছে।
এ কথাটার মানে কি?
মানে খুব সহজ। ভগবান টুকরো-টুকরো হয়ে গেছেন। রোজই হচ্ছেন। প্রতিদিন কোটি কোটি টুকরো হয়ে যাচ্ছেন।
সে আবার কি?
বিশ্বজুড়ে রোজই কয়েক কোটি মানুষ জন্মাচ্ছে। এত মানুষ আসছে কোথা থেকে! সবই ভগবানের টুকরো। ভগবান যত টুকরো হচ্ছেন ততই তার শক্তি কমে যাচ্ছে। এ্যাজ ফর একজাম্পল, গ্রহ ভেঙে উপগ্রহ হয়। উপগ্রহ ভেঙে উল্কা হয়। উল্কা পুড়ে ছাই হয়। মানুষও সেইরকম বিশালের কুঁচো, জ্বলে পুড়ে ছাই হয়ে যায়।