কি তখন থেকে মি লর্ড, মি লর্ড করছেন? এখানে কে আপনার লর্ড?
ও আই সি। আমি ভেবেছিলুম কোর্টে দাঁড়িয়ে সওয়াল করছি। এক্সকিউজ মি।
আপনি কি ব্যাচেলার?
আজ্ঞে না।
তবে আপনার এত সাহস এল কোথা থেকে! তখন থেকে নারীবিদ্বেষ ছড়াচ্ছেন!
মাই প্রফেশান। যখন যার পক্ষে দাঁড়াই তখন তার জন্যেই লড়ে যাই। ডাক্তার, পলিটিশিয়ান, বিজনেসম্যান, ফ্লিমস্টার, পুলিসম্যান এঁদের সাত খুন মাপ। আমার স্ত্রীর অ্যাপ্রুভ্যাল আছে।
শুনুন, শুনুন। বিবাহ বন্ধ করা যাবে না। পতঙ্গ আগুনে ঝাঁপ মারবেই। তা ছাড়া, এটা হল এজ অফ সেক্স। যেদিকেই তাকাও মোহময়ী নারী। সিনেমার পোস্টারে, বিজ্ঞাপনে, রাস্তায় ঘাটে, বাসে-ট্রামে, ঘরে-বাইরে, নাটকে নভেলে মায় মন্দিরে শ্মশানে। এ যৌবন জলতরঙ্গ রোধিবে কে! তবে হ্যাঁ, একটা উপায় আছে। কথায় বলে, সাবধানের মার নেই, মারের সাবধান নেই। একটু ডিটেডটিভগিরি করে তারপর মেয়ে ঘরে আনলে মনুষ্যক্লেশ মনে হয় সেভেনটি পার্সেন্ট কমে যাবে। বাবলা গাছে বাঘ বসেছে।
সে আবার কি?
হঠাৎ মনে হল। একটা দৃশ্য, হবু বেয়াই ছদ্মবেশে বাড়ির সামনের রকে বসে-বসে বিড়ি ফুঁকছেন। ফুঁকছেন আর দেখছেন। লোকে ভাবছে। কোথা থেকে পাড়ায় এক নতুন পাগল এসেছে। আসলে পাগল না, বেয়াই। মেয়ে এলোচুলে বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে। স্বভাবটি কেমন? কার দিকে নজর? কটা ছেলে সকাল থেকে সাইকেল নিয়ে চক্কর মেরে গেল? মেয়ে কখন বেরোয় অ্যাবসেন্সে দুপুরে সিনেমা। বাড়িতে কে ঢুকছে কে বেরোচ্ছে, কতটা হইহই হচ্ছে? এক্সট্রোভার্ট না ইনট্রোভার্ট। ঝগড়ার পরিমাণ। কার গলা কত উঁচু। মেয়ে হারে না মা হারে। ঝগড়ার সময় কি ধরনের ল্যাঙ্গোয়েজ বেরোয়! কতক্ষণ রেডিও চলে? ছুটতে ছুটতে বারান্দায় বেরিয়ে আসে না ধীর পায়ে? রাস্তা দিয়ে পরিচিত কেউ গেলে চিৎকার করে ডাকে কিনা? ফেরিওয়ালার সঙ্গে ঝগড়া করে কি না? ছাদে উঠে লাফায় কিনা? রাস্তার দিকে বেশি থাকে না বাড়ির ভেতর? প্রেমঘটিত কোনও ঝামেলা আছে কিনা? বাড়ি সম্পর্কে পাড়ার লোকের ওপিনিয়ান কি! বাবলাগাছে বাঘ, আই মিন উড বি ফাদার ইন ল বসে উড বি পুত্রবাঘিনীর চালচলন লক্ষ্য করছেন। একটু খাটতে হবে কিন্তু সুফল অনেক। ইনটারেস্টিং ব্যাপার। ম্যারেজ আর ওয়েলডিং সেম ব্যাপার। ধাতুতে-ধাতুতে জোড়াজুড়ি। সমানে-সমান জোড় লাগাতে হবে। দুটো দুরকমের হলেই খুলে পড়ে যাবে। চিড়িক ধরে যাবে। সাপের ছুঁচো গেলা। না পারছে গিলতে, না পারছে ওগরাতে। এই ভাবে, এইভাবেই আমরা মনুষ্যক্লেশ কিছু কমাতে পারি। জনহিতকর কাজের পাঁচনটা তাহলে বলেই ফেলি।
Take a dozen Quakers-be Sure
Theyre Sweet and pink.
Add one discussion program
to make the people think
… Garnish with Compassion just
a touch will do.
And served in deep humility
your philanthropic stew.
০৭. সপ্তম অধিবেশন
ঘরে-ঘরে বউ জাতির অত্যাচার। সেই অত্যাচার সম্পর্কে আমারও কিছু বলার আছে।
হ্যাঁ-হ্যাঁ বলুন-বলুন। আমরা শোনার অপেক্ষায় অধীর হয়ে আছি। হাটে হাঁড়ি ভাঙুন।
আমার দাম্পত্য জীবনের বয়েস নিয়ারলি টোয়েন্টি ইয়ারস। সেই টোয়েন্টি ইয়ারস আমার হাড়ে দুব্বো গজিয়ে গেছে।
বউটি কেমন?
কত রকমের বউ আছে জানেন?
আজ্ঞে না। রকম-রকম বউ নিয়ে ঘর করার সুযোগ হল কই?
বেশ তা যখন হয়নি তখন শুনে নিন। এক বোকা-বোকা ভালোমানুষ ধরনের। এঁদের ঠোঁট তেমন পাতলা নয়। নীচের ঠোঁট সামান্য ঝুলে থাকে। দাঁত উঁদুরের মতো নয়। নাক তেমন তীক্ষ্ম নয় একটু থ্যাবড়া মতো। গোল-গোল চোখ। গোল-গোল মুখ। চুল মোটা বালামচির মতো। এসরাজের ছড়ে ব্যবহার করা চলে। কপালে বড় টিপ পরেন। সেটা কখনই সেন্টারে প্লেস করতে পারেন না। হয় একটু বাঁয়ে না হয় একটু ভাঁয়ে সরে যায়। যত বয়েস বাড়তে থাকে ততই চর্বিযুক্ত হতে থাকেন। চুলের বহর কমতে কমতে শেষে মাথার টঙে একটি বড়ি খোঁপা। গলার স্বর বীণার মতো নয় ফ্লুটের মতো। শব্দে র-ফলা থাকলে জিভে জড়িয়ে যায়। ঋ-ফলারও সেই অবস্থা। দ্রাবিড় উৎকল বঙ্গ ঠিক মতো উচ্চারণ না হয়ে এইরকম শোনাবে–দাবিড় উতকল বঙ। তুমি হাড় কৃপণ বলতে গিয়ে বললেন–তুমি হাড় কিপটে। এঁদের হাঁটা চলায় ভূমিকম্পের এফেক্ট। সিসমোগ্রাফে ধরা পড়বে। রেগে কথা বললে তানসেন। ঘটি বাটি গেলাস আলমারি কাঁচ ঝিনঝিন করে উঠবে। দু একটা বা ফিউজ হয়ে যেতে পারে। ফ্লোরেসেন্টের স্টার্টার কেঁপে উঠবে। এঁরা চুরি করে স্বামীর ব্যাগ থেকে পয়সা বের করতে গেলে মেঝেতে ঝনঝন করে ছড়িয়ে ফেলবেনই। হিসেবে কঁচা। দরজায় ফেরিওয়ালা ডাকার অভ্যাস। দরদস্তুর করে ছটাকার জিনিস আট টাকায় কিনবেন এবং অম্লানবদনে ছেঁড়া নোট ফেরত নেবেন। বয়েসে বাত হবে। ঘনঘন সর্দির ধাত। এই হল টাইপ ওয়ান।
টাইপ টু। বুদ্ধিমান। পাতলা-পাতলা ছিমছাম চেহারা। পাতলা ঠোঁট, পাতলা নাক। নাকের ডগা ঘামে। চোখ টানা-টানা, রাগী-রাগী। হালকা হরধনু ভুরু। পাতলা চুল। সামান্য কেঁচকানো। বেশ লম্বা সামান্য কটা। একটু খোঁচাখোঁচা চেহারা। কপালের টিপ বিন্দুর আকারে সেন্টারে। এঁদের অভিমানের চেয়ে রাগ বেশি। রাগলে নাকের পাটা ফোলে, ঠোঁট কাঁপতে থাকে থিরথির করে। মন ভালো থাকলে গুনগুন গান। হিন্দি ছবির, বাংলা ছবির, সবই অবশ্য দু-লাইন করে। সময় সময় রবীন্দ্রসঙ্গীত। এঁদের হাঁটা চলা হালকা পায়ে। প্রসাধন প্রিয়। সপ্তাহে একটা বড় সাবান খরচ করে থাকেন। মাসে দু-শিশি শ্যাম্পু। মাথায় খুসকির উপদ্রব। লিভার কমজুরি। মধ্যবয়েসে হাঁপানি হতে পারে। রাগের অভিব্যক্তি গুম হয়ে থাকা। মিনিমাম সাতদিন স্পিকটি নট। তোষামোদ প্রিয়। পিঠে হাত না বুলোলে রাগ পড়ে না! স্বামীদেরই এগিয়ে যেতে হয়–ওগো রাগ কোরো না লক্ষ্মীটি। যা হয়ে গেছে এবারের মতো ভাব।