আপনি সিনিক।
তবে শুনুন। দু-বউয়ের টেপ করা কনভারসেশান। আমার এক ক্লায়েন্ট তার বসার ঘরে টেপের ফাঁদ পেতে তার স্ত্রীর কথা ধরেছেন এবং প্রমাণ হিসাবে কোর্টে পেশ করার তালে আছেন। ভদ্রলোকের স্ত্রীর নাম রমা। রমার বাড়িতে এসেছেন বান্ধবী শ্যামা। এইবার শুনুন।
রমা : বল তোর খবর কি! হঠাৎ এত মুটোতে শুরু করলি কেন? বিয়ের আগে তো শেপ ছিল। দিন-দিন যেন ঢাকের মতো হয়ে যাচ্ছিস।
শ্যামা : ধ্যাস, জীবনে অরুচি ধরে গেল শালা।
রমা : কেন মিঞা, প্রেম করে বিয়ে করলে, ঢাক ঢোল পেটালে, এখন নিজেই ঢোল মেরে গেলে?
শ্যামা : ঠিক হল না। যা ভেবেছিলুম তা পেলুম না। লোকটা বেয়াড়া।
রমা : আগে বুঝিসনি?
শ্যামা : ধ্যার, ফলস পার্সোনালিটি। তখন শ্যামা-শ্যামা করত। ফুল, বেলপাতা, চিনেবাদাম, পার্ক, গঙ্গার ধার, সিনেমা, সব ফলস। ভেবেছিলুম শ্যামা, শ্যামা মা হয়ে বুকে উঠে নাচব, ওরে বাপস, এখন আমাকেই বগলদাবা করে রেখেছে। তাঁ ফোঁ করার উপায় নেই। কি মেজাজ। ভয়ে মরি, যদি ঝেড়েফেড়ে দেয়। বলে প্রেম ইজ প্রেম, সংসার ইজ সংসার, দুটোকে মিকসআপ করে ফেলো না।
রমা : ভেরি স্যাড। আবার একবার লড়ে যাবি তারও উপায় নেই। চেহারাটা একেবারে বেঢপ করে ফেলেছিস।
শ্যামা : শাড়িটা নতুন কিনলি?
রমা : হ্যাঁ।
শ্যামা : রোজ একটা করে কিনিস?
রমা : রোজ না হলেও সাতদিনে একটা দুটো হয়ে যায়।
শ্যামা : এত টাকা পাস কোথা?
রমা : ক্লিন ঝাড়ফুঁক।
শ্যামা : সেটা আবার কি?
রমা : গরু দেখেছিস। সেরেফ দুয়ে যাও।
শ্যামা : তোর গরুর এত দুধ?
রমা : ফুকো দিয়ে বের করি। কায়দা জানতে হয়, ম্যান। বগল দাবা করার টেকনিক আছে। ম্যারেজ ইজ এ কনট্রাকট। মধ্যযুগে ইংল্যান্ডে কি ছিল জানিস? ছেলেকে মেয়ের বাপের কাছে কথা দিতে হতো, আমি আপনার মেয়েকে রোজ হ্যাম, পর্ক, এগ, বাটার, পরিজ খাওয়াব, বছরে এক ডজন গাউন দেব প্লাস বাহাত্তর পাউন্ড মধু খাওয়াব। নো মামার বাড়ি। চুক্তি করে বউ।
শ্যামা : বের না করলে জোর করে বের করাবি?
রমা : টেকনিক আছে ভাই, টেকনলজির যুগ।
শ্যামা : (দীর্ঘ নিশ্বাসের শব্দ) আমার ভাই, একেবারেই অর্থনৈতিক স্বাধীনতা নেই। স্লেভ হয়ে পড়ে আছি।
রমা : আমার ফুল ফ্রিডাম প্লাস ম্যানিপুলেশন।
শ্যামা : কীরকম?
রমা : প্রথমে প্রেম দিয়ে মাথাটা চিবিয়ে সব সিক্রেট জেনে নিয়েছি। তোর বর মাসে কত রোজগার করে জানিস?
শ্যামা : না রে।
রমা : অনেক মেয়েই জানে না। ওইটাই হল হাজব্যান্ডদের ট্যাকটিকশ। রোজগারটা চেপে রাখবে, বউরা যেন গাঁটকাটা। আমি সেই সিক্রেটটাই আউট করে নিয়েছি। তাহলে প্রথমে গুপ্ত তথ্য আবিষ্কার পরে গামছা নিংড়োনো। ছাড়ো মাল। আঁমাঁর এঁখন পঁকেঁট খাঁলি, কাঁদুনি গাইবার পথ বন্ধ। পয়সা না ছাড়লে সংসার হয় না চাঁদু। বউ বশে থাকে না। ফিনকি হাসি, দুলকি চলন, ঝুমকি মিলন, সব পয়সার খেল। তুমি আমার স্ত্রী গো, শুকনো কথায় চিড়ে ভেজে না মানিক। চরকায় তেল দিতে হয়।
শ্যামা : তুই তো সাংঘাতিক কথা বলছিস রে। সংসার তো রসাতলে যাবে।
রমা : এ সব হল ইমপোরটেড কথা। বিদেশী বুলবুল। তুমি বব চুল চাইবে, ঠোঁটে লিপস্টিক চাইবে, কামানো ভুরু চাইবে, ম্যাঙ্গিকাট ব্লাউজ চাইবে, আর মেজাজটি চাইবে সতী বেহুলার স্বামী অন্তপ্রাণ, তা কি করে হয়, গুরু? আমি ভালোবাসতেও পারি, নাও পারি, আমি সংসার ভাঙতেও পারি, গড়তেও পারি, আমি মা হতেও পারি, ডাইনিও হতে পারি, আমার খুশি। শেকসপিয়র পড়িসনি, ইউ দাউ ম্যারি, ম্যারি এ ফুল। আমি ভাই এক ফুলকে বিয়ে করে বেশ সুখেই আছি।
শ্যামা : আমার যদি সামান্য অর্থনৈতিক স্বাধীনতাও থাকত! স্বামীর হাততোলা হয়ে দিন কাটাচ্ছি রে, রমা!
রমা : মাঝেমধ্যে পকেট মার না।
শ্যামা : ধরে ফেলে মাইরি।
রমা : ধরে ফেলে মাইরি। কিছুই শিখলি না বিয়ে করে বসলি। আমার কত রকমের সোর্স অফ ইনকাম। বাজারে মারি, রেশনে মারি, মুদিখানায় মারি, স্টেশনারিতে মারি।
শ্যামা : কীভাবে? তুই নিজে বাজার করিস?
রমা : নিজে কেন করব? চুক্তি, এগ্রিমেন্ট, আরেঞ্জমেন্ট। মুদিকে, স্টেশনারকে বলে রেখেছি ডবল বিল করবে। বোকা লোকটা মুখ বুজে মাসের প্রথমে পেমেন্ট করে আসে, আমি পরে গিয়ে আমার হাফ পাওনা বুঝে নিয়ে আসি। হেহে বাবা টেকনিক। বিশ্বাসের জমির ওপর দাঁড়িয়ে বিশ্বাসঘাতকতা। ট্রেচারি দাই নেম ইজ উওম্যান।
কাট। এরপর আর টেপে কিছু নেই। দুই সখীর নিভৃত আলাপন। বন্ধুগণ, এর পরও কি আপনারা চাইবেন জীবনে কোনও আধুনিকা আসুক বধূরূপে? ও নো, নেভার। মেরি ওয়াইভস অফ উইন্ডসর পড়েছেন? স্যার জন ফলসটাফকে ফোর্ড বলছেন : আমার প্রেমের সৌধ আমি কোথায় খাড়া করেছি।
Like a fair house built upon
another mans ground
So that I have lost my edifice by
mistaking the place
where I erected it.
মি লর্ড. টলস্টয় লিখেছিলেন,
Don’t trust a horse in the pasture or a wife in the home!
বিশ্বাস করেছ কি মরেছ, ভাওয়াল সন্ন্যাসীর কেস। ঘরে-ঘরে নাগিনিরা ফেলিতেছে বিষাক্ত নিশ্বাস। ছাঁদনাতলাই আমাদের বধ্যভূমি। মি লর্ড, দেশের বড়-বড় ওষুধ কোম্পানির উচিত, গর্ভনিরোধক বটিকা নয়, বিবাহ নিরোধ বটিকা, প্রেম নিরোধ বটিকা প্রভৃতি প্রচুর পরিমাণে তৈয়ারি করিয়া পথিপার্শ্বস্থ জলসত্র হইতে একঘটি গঙ্গোদক সহ জনে-জনে পরিবেশন করা। আমার মক্কেলের বিবাহ করিয়া খুব আক্কেল হইয়াছে। বিবাহের পূর্বে তিনি ঘুঘু দেখিয়াছিলেন এবে ফঁদ দেখিতেছেন। ইহা এমন এক আক্কেলদন্ত যাহা আজীবন উঠি-উঠি অবস্থায় থাকিয়া মনুষ্যকুলকে চক্ষে সরিষাফুল দেখাইতে থাকে। মি লর্ড…