না এমনি।
ভদ্রলোক ঢেউ করে একটা সেঁকুর তুললেন। ডক্টর পঞ্চানন সঙ্গে-সঙ্গে জিগ্যেস করলে, আপনার মায়ের কি অম্বল ছিল? ভদ্রলোক অপ্রস্তুত হয়ে বললেন, ছিল কি! আছে। মা এখনও জীবিত। আর ওই একটাই অসুখ। পঞ্চানন হঠাৎ অন্য প্রসঙ্গে চলে গিয়ে প্রশ্ন করল, আপনার ঠাকুরদা কি শীতকালে কনকনে ঠান্ডা জলে চান করতে ভালোবাসতেন? ভদ্রলোক অপ্রস্তুত হয়ে বললেন, ঠিক বলতে পারব না। পঞ্চানন সঙ্গে-সঙ্গে প্রশ্ন করল, আপনার বাবার ছিল ঠিক উলটো, শীতকালে জল দেখলেই ভয়ে সাত হাত দূরে সরে যেতেন। ভদ্রলোক এইবার বেশ রাগতভাবেই বললেন, এ সব প্রশ্ন কেন? পঞ্চুর উরুতে অদৃশ্য চিমটি কেটে বললুম, ইনি অল্প বিস্তর ডাক্তারি করেন তো, হোমিওপ্যাথি, ভীষণ নামডাক।
ভদ্রলোকের রাগ কমেছে বলে মনে হল না। তিনি বললেন, আপনারা তো মেয়ে দেখতে এসেছেন, রুগি দেখতে আসেননি। সবিনয়ে বললুম, তা ঠিক, তবে কিনা ভালো ডাক্তারের চোখে সবাই রুগি, যেমন, ভালো জ্যোতিষীর চোখে সবই গ্রহ, ভালো ধর্মগুরুর চোখে সবাই পাপী।
পঞ্চানন উৎসাহের চোটে উঠে পড়েছে। দূরে দেওয়ালে একটা অয়েল পেন্টিং ঝুলছিল। রুদ্রাক্ষের মালা পরা তেঁটিয়া এক বৃদ্ধ আসনে বসে আছেন। পঞ্চানন ছবিটা খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে দেখতে জিগ্যেস করল, পায়ের আঙুলে কড়া ছিল এনার? প্রস্রাবের দোষ ছিল কি? শীতে হাঁপানি হতো? মুদ্রাদোষ ছিল?
ভদ্রলোক আসন ছেড়ে উঠে আমি কিছু করার আগেই ভীমবেগে তেড়ে গিয়ে ডক্টর পঞ্চাননের গালে এক থাপ্পড় ইডিয়েট, আমার গুরুদেবকে নিয়ে রসিকতা! গেট আউট, গেট আউট।
ন্যাজ তুলে দুজনেই রাস্তায়। পঞ্চাননের গাল লাল।
আমি বললুম, পঞ্চানন, তুমি সব ছেড়ে গুরুদেবকে নিয়ে পড়লে কেন? মেয়ে, মেয়ের বাপ, মা, বাপের বাপকে দেখতে পারো, গুরুদেবকে ধরে টানাটানি করে কি পেলে?
পঞ্চা বললে, বেঁচে গেলে। গুরুকে ধরে টানতেই হাই-প্রেশার বেরিয়ে পড়ল। জেনেটিক্যালি ওদের বংশে পাগলের বীজ ঘুরছে।
০৬. ষষ্ঠ অধিবেশন
নিপ ইন দি বাড। হ্যাঁ ভ্রূণেই হত্যা। বিবাহই হল মনুষ্য জাতির নাইনটি পার্সেন্ট ক্লেশের কারণ। ওই হোমিওপ্যাথি দিয়ে কি হবে না, মশাই। একবার জোড় লেগে গেলে সারাটা জীবন ত্রিভঙ্গ -মুরারী হয়ে বয়ে বেড়াতে হবে। বদহজমের দাওয়াই আছে, বদ-বিবাহের কোনও দাওয়াই নেই। বিয়ের আগে পাত্রীপক্ষের চালচলনই আলাদা। মেয়ের আমার তুলনা হয় না মশাই; রূপে তো আর মানুষের হাত নেই কিন্তু গুণ! একেবারে ট্রেইনড জিনিস। যেমন চলন, তেমনি বলন, একেবারে ডোম্যাসটিকেটেড টাইগ্রেস। লেজ ধরে হিড়হিড় করে টানাটানি করলেও ফিকফিক করে হেসে যাবে। একবার যাচাই করে দেখুন। পতিপ্রাণা, সংসারসেবিকা, মৃদুভাষী, কর্মনিপুণা, স্বল্পভোজী, সমুদ্রের মতো হৃদয়, ফোয়ারার মতো দয়ালু, আকাশের মতো উদার। ঠিক যেমনটি আপনি চান তেমনটি।
ও-মশাই! যেই না বিয়ে শেষ হল, ফুলশয্যার খাট থেকে সংসারের চাতালে নেমে এল আর-এক মূর্তি। দুর্গ দখল। আঁচলে বাধা স্বামী, হামভি মেলেটারি তেমভি মেলেটারি। শানবাঁধানো গলা। নাচের পুতুলের মতো হাত-পা নাড়া। তেরছা চাউনি। দুমদুম চলন। নাও শালা এখন ম্যাও সামলাও।
শালা বলছেন কেন?
ও কিছু না, রামকৃষ্ণ বলতেন।
তিনি তো অনেক কিছুই বলতেন। সব ছেড়ে তাঁর শালাটাকেই ধরলেন?
আজ্ঞে হ্যাঁ। বোনটিকে তো সারা জীবনেও ম্যানেজ করতে পারলুম না, শ্যালককে ধরেই টানাটানি করি। লাস্ট টোয়েন্টি ইয়ার্স ব্যাঙ্কশালে প্র্যাকটিশ করছি। লাস্ট ফাঁইভ ইয়ার্সে ফাঁইভ হান্ড্রেড ডিভোর্স কেস ট্যাকল করেছি। ফেড-আপ। আমার কুকুর হতে ইচ্ছে করছে! আমায় দে মা কুত্তা করে, আমার কাজ নেই আর মনুষ্য জীবনে।
আপনার মতে এই ঝামেলা থেকে মুক্তির কী উপায়?
উপায় একটাই। খাও-দাও আর বগল বাজাও। আপনি আর কপনি। খাল কেটে কুমির ঢুকিও না।
মেয়েরা মেয়েদের জগতে থাক, ছেলেরা ছেলেদের জগতে। ইস্ট ইজ ইস্ট, ওয়েস্ট ইজ ওয়েস্ট, দি টোয়েন শ্যাল নেভার মিট।
বাঃ-বাঃ। তাহলে সৃষ্টি কি করে রক্ষা হবে? ভগবানের কিংডাম ধরে টানাটানি।
আর্টিফিসিয়ালি হবে। ভেটরিনারি ডাক্তার ডাকা হবে। নো বিবাহ। যার শিল যার নোড়া তারই ভাঙি দাঁতের গোড়া। ওসব চলবে না। মনুষ্যক্লেশ যদি নিবারণ করতে চান ফটাফট বিয়ে বন্ধ করুন। পেট যদি ভালো রাখতে চান তেলেভাজা খাবেন না। স্বাস্থ্য যদি ভালো রাখতে চান যোগব্যায়াম। মন যদি ভালো রাখতে চান উচ্চ চিন্তা। চোখ যদি ভালো রাখতে চান সবুজ। সুখী যদি হতে চান ব্যাচেলার।
বুড়ো বয়সে কে দেখবে?
ও। আপনাদের ধারণা বউ দেখবে। মুখের স্বর্গে বাস করছেন। আগেও দেখেনি এখনও দেখবে না। শঙ্করাচার্য কি লিখেছিলেনকা তব কান্তা কস্তে পুত্র। সেই গানটা আর তেমন কানে আসে না, আগে শোনা যেত, বোম্বে আউট করে দিয়েছে, সেই প্রেয়সী দেবে-এ এ ছড়া অমঙ্গল হবে বলে। দেখেননি স্বামী পটল তুললে মেয়েদের গতর বাড়ে।
ই হি হি। অশ্লীল শব্দ। গতর অত্যন্ত গ্রাইম্য ভাষা গ্রামারে নাই।
কোন পণ্ডিতে কইসে? সংস্কৃত গাত্র শব্দ হইতে গতর আসিয়াছে।
আপনারা বড় ঝগড়া করেন।
আজ্ঞে জীবধর্ম। পাশাপাশি থাকলেই লাঠালাঠি বেঁধে যাবে। দুজন ইংরেজ ক্লাব করে, দুজন স্কচ ব্যাঙ্ক করে, দুজন বাঙালি ঝগড়া করে, দল করে। একেই বলে বাঙালিদের প্রপার্টি। স্বভাব না যায় মলে।