আপনিও বসুন স্যার, সে বলে, আপনার ভালো লাগবে।
আমি মেঝেতে বসি, তার থেকে অনেকটা দূরে।
তুমি আবার আমাকে বিয়ে করতে পাগল হয়ে উঠবে না তো? আমি বলি।
না, সে বলে।
আমাকে সে আর স্যার বলছে না, আমি স্বস্তি পাচ্ছি।
তোমার কি মনে হবে না যে আমি তোমাকে শোষণ করেছি? আমি বলি।
না, আমি তো অনেক দিন ধরে মনে মনে চাচ্ছি, সে বলে।
শরীর অনেক দিন পর আমাকে মুগ্ধ করে, আমি একটি নতুন শরীর লাভ করতে থাকি; আমার খোলশ খসে পড়তে থাকে, নতুন হয়ে উঠতে থাকি আমি। এ-নতুনকেই আমি চেয়েছিলাম। তার শরীরের স্বভাব আমাকে বিস্মিত করে; তার ডান হাতের একটি আঙুল আমি খেলাচ্ছলে ছুঁই, তারপর দুটি-তিনটি আঙুল ছুঁই, দুবার আস্তে ঠোঁটে ঘষি, আর অমনি সে মাথাটি কাঁধের ওপর বাঁকা করে রেখে ঘুমিয়ে পড়ে; আমি তার মুখে আঙুলের টোকা দিয়ে চিবুক নেড়ে ঠোঁট টেনেও তার ঘুম ভাঙাতে পারি না। তাকে। ঘুরিয়ে আমি যেভাবেই রাখি ঘুমের মধ্যে সে সেভাবেই থাকে। সে এমন সম্মোহিত হলো কীভাবে? আমি তার একটি হাত ওপরের দিকে তুলে ধরি, হাতটি সেভাবেই থাকে; মুখটি আমি একটু ঘুরিয়ে দিই, সেভাবেই থাকে। এমন সম্মোহিত শরীর আমি কখনো দেখি নি। মেয়েরা নিষ্ক্রিয় আমি জানি, নারীবাদী দুটি নারীও আমি দেখেছি, তারাও স্বল্প সক্রিয়তার পর সম্পূর্ণ নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ে; কিন্তু এ সম্পূর্ণ সমর্মাহিত। আমি এক এক করে তাকে বস্ত্র থেকে মুক্ত করে আনি, বিস্ময়কর সব দেহখণ্ড বেরিয়ে পড়তে থাকে। তার স্তন দুটি পর্যন্ত সম্মোহিত হয়ে আছে। আমি দুটিকে একে অন্যের সাথে মিলিয়ে দিই, তারা দুটি যমজ বোনের মতো মিলে থাকে; আমি দুটিকে দূরতম দূরত্বে সরিয়ে দিই, তারা দূরবর্তী দ্বীপের মতো ভাসতে থাকে। আমি যদি শিশু হতাম। বিস্ময়কর এ-বস্তু দুটি নিয়ে বছরের পর বছর খেলতাম। আমি তাকে জাগানোর চেষ্টা করতে করতে ক্লান্ত ও উদ্দীপ্ত হয়ে পড়ি, সে কিছুতেই জাগে না; আমার মনে হতে থাকে পরম পুলকের আগে সে জাগবে না। তার একটি দীর্ঘ অঙ্কুর রয়েছে, আমার কড়ে আঙুলের সমান, গোলাপি আভা আছে তাতে, আর সেটিও সম্মোহিত। তার শরীরের যে-অংশ আমি গলাতে চাই, সেটুকুই গলতে থাকে; দীর্ঘ দীর্ঘ দীর্ঘ সময় কেটে যেতে থাকে, তিন ঘণ্টার মতো হবে, সে তখন সম্পূর্ণ গলে যায়, এবং এক সময় সে চিৎকার করে ওঠে।
আমি কোথায়? সে চিৎকার করে ওঠে।
আমার সামনে, আমি বলি।
নিজেকে সে সম্পূর্ণ নগ্ন দেখে একটু লজ্জা পায়, কিন্তু নিজেকে ঢাকার কোনো চেষ্টা করে না; আমার দিকে তাকিয়ে হাসে।
আমি মরে গিয়েছিলাম, সে বলে।
তিন ঘণ্টার ছোটো মৃত্যু, আমি বলি।
তিন ঘণ্টা?, সে ঝলমল করে ওঠে, আর বলে, এমন মৃত্যুই আমি চেয়েছি, কিন্তু ওই লোকটি তা বোঝে নি, তাই ভেঙে গেলো।
অনন্যা দু দিন ধরে ফোন করছে না, আমি উদ্বিগ্ন বোধ করছি; প্রতিটি কোষে আমি সময় বোধ করছি। আমার শরীরের ভেতর সময়ের কাটা ঘুরছে না স্থির হয়ে আছে? সময় আশ্চর্য ভারী জিনিশ। সবচেয়ে ভারী কী, কৃষ্ণ গহ্বর? একটি কৃষ্ণ গহ্বর আমার ওপর এসে পড়েছে। অনন্যা কি তাহলে খুব দূরে চলে গেছে? কেননা সে খুব দূরে যেতে চায়? আমি কিছুই তার কাছে জানতে চাই নি, সে বলতো না হয়তো। তার জন্যে আমি রক্তে এমন টান বোধ করি কেনো? আমার সহকারিণীটি একবার বলেছে, স্যার, আপনাকে উদ্বিগ্ন দেখাচ্ছে। আমি কিছু বলি নি। আমি একবার বেরিয়ে পড়ি, একটা রিকশ নিই, রিকশ নিলে এখন আর কেউ কিছু মনে করে না, আমার ভালো লাগে, অনন্যাদের বাড়ির সামনে এসে দাঁড়াই। অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে ক্লান্ত হই, আমার বয়স হয়েছে, একটি চায়ের দোকানে ঢুকে চা খাই, আবার পথে দাঁড়াই। আমার ভালো। লাগে। তারপর অফিসে ফিরি।
বিকেলে ফিরোজা ফোন করে, তুমি কেমন আছো?
আমি বলি, ভালো।
ফিরোজা বলে, আমি ফিরে আসতে চাই।
আমি বলি, এভাবেই তো ভালো আছি।
ফিরোজার কান্নার শব্দ শুনতে পাই, আমি টেলিফোন রেখে দিই।
ফিরোজ কেনো ফিরে আসতে চায়? নৃতাত্ত্বিকটির সাথে কি তার মিল হচ্ছে না, না কি নৃতাত্ত্বিকটি এখন তরুণীতর নৃতত্ত্ব চর্চায় মন দিয়েছে? ফিরোজার জন্যে একটু সহানুভূতি হয়, কিন্তু আমি কোনো অভাব যন্ত্রণা বোধ করি না। অনন্যার জন্যে আমার কষ্ট হচ্ছে, অর্চির জন্যে কষ্ট হচ্ছে,-অর্চির প্লেন কি নেমেছে, ফিরোজার জন্যে হচ্ছে না, যদিও আমি চাচ্ছি তার জন্যেও আমার রক্তে কিছুটা কষ্ট দেখা দিক। আমি কি তাকে ফিরিয়ে নিতে পারি না? কেনো পারি না? নৃতাত্ত্বিকটির সাথে সে ঘুমিয়েছে বলে? তাতে কী হয়েছে? অন্যের সাথে ঘুমোলে মানুষ নষ্ট হয়ে যায়? যারা অন্যের সাথে ঘুমোয় না, তারা কি খাঁটি থাকে? আমি কি নষ্ট হয়ে গেছি, অন্যের সাথে আমি অনেক ঘুমিয়েছি। বলে? সন্ধ্যার দিকে দেখি ফিরোজা ফিরে এসেছে; একা আসে নি, সাথে তার আম্মা আর বোনও এসেছে। তাহলে সে ধরেই নিয়েছে সে অধিকার হারিয়ে ফেলেছে, একা। এলে অধিকার ফিরে পাবে না; কেউ তাকে অধিকার ফিরিয়ে দিয়ে যাবে। আমি বাইরে যাবো বলে ভেবেছিলাম, তারা আসায় আমি যেতে পারি না। ফিরোজা কাঁদছে দেখে। আমার খারাপ লাগে, কিন্তু তাকে কষ্ট বলা যায় না। তার বোন হাল্কা ভঙ্গিতে কথা বলছে যেনো কিছুই হয় নি।