কিন্তু আমি তো আপনাকে দেখতে পাচ্ছি না, অনন্যা বলে।
দুপুরে একসাথে খেলে কেমন হয়? আমি বলি।
বেশ হয়, অনন্যা বলে।
কোথায়? আমি বলি।
অনন্যা তার প্রিয় রেস্তোরাঁটির নাম বলে। চিংড়ি। অনন্যার একটি প্রিয় রেস্তোরাঁ আছে! অনন্যা টেলিফোন রাখতেই মাহমুদা রহমানের ফোন বেজে ওঠে, আমাকে এখনি তাঁর ওখানে যেতে হবে। আমার কোনো কাজ নেই, তবু বলি আমার অনেক কাজ; মাহমুদা রহমান তা শুনতে রাজি নন, আমাকে যেতেই হবে, এখন না গেলে হবে না। আমি গিয়ে দেখি মাহমুদা রহমান আর হাফিজুর রহমান দুজন দু-সোফায় বসে। আছেন। তারা কথা বলছেন না। আমাকে দেখে হাফিজুর রহমান মাথা আরো নামিয়ে নিলেন। কাউকে অপরাধীর মতো বসে থাকতে দেখলে আমার খারাপ লাগে, আমার খারাপ লাগলো। আমাদের সবারই তো অপরাধীর মতো বসে থাকার কথা, কিন্তু আমরা সবাই পুণ্যবানের মতো বসি, শুধু কেউ কেউ বসে অপরাধীর মতো।
আপনি আমাকে উদ্ধার করলেন না, মাহমুদা রহমান বলেন, কিন্তু আমি উদ্ধার করেছি নিজেকে, জানেন?
আমি বলি, না।
মাহমুদা রহমান বলেন, মেয়েটিকে খুন করি নি, বিয়ে দিয়েছি।
আমি বলি, কোথায়?
মাহমুদা রহমান বলেন, আমাদের ড্রাইভারের ভাগনের সাথে, দু-লাখ টাকা দিতে হয়েছে, বাচ্চাটা তারই হবে।
হাফিজুর রহমান বলেন, বাচ্চাটিকে আমি নিয়ে আসবো।
মাহমুদা রহমান বলেন, তা আনবে, পোলা হলে তো আনবেই, পোলার বাপ হবে আলহজ মোঃ হাফিজুর রহমান।
হাফিজুর রহমান বলেন, আজ আমি চলে যাচ্ছি, আগামী মাসে ডেলিভারির সময় আবার আসবো।
মাহমুদা রহমান বলেন, আজ চলে যাচ্ছে, কিন্তু বুকে একটা দাগ নিয়ে যেতে হবে তোমাকে। আমি একটু প্রতিশোধ নিতে চাই।
হাফিজুর রহমান বলেন, কী প্রতিশোধ?
মাহমুদা রহমান বলেন, আমি মাহবুব সাহেবের সাথে আজ রাতে ঘুমোবো এটুকু শুধু তোমাকে জানিয়ে রাখতে চাই। তুমি কিছু মনে কোরো না, মাহবুব সাহেবকে আমি পছন্দ করি, তাঁকে দেহটি দিতে চাই।
আমি কোনো কথা বলি না; ভালো মানুষের মতো বলতে পারি না, এ কী বলছেন, এ কী বলছেন, আমি চুপ করে থাকি, একটা সৎ মানুষের ভূমিকায় অভিনয় করতে আমার ভালো লাগছে না। হাফিজুর রহমানের মুখ কঠিন হয়ে ওঠার কথা, কিন্তু তিনি আরো ভেঙে পড়ছেন; তিনি বানিয়েই বলতে পারতেন, তাতো তোমরা ঘুমাই, কিন্তু তার মুখে কোনো কথা আসে না। তাতে মাহমুদা রহমান সুখ পাচ্ছেন না, তিনি সুখ পেতেন যদি হাফিজুর রহমান সাড়া দিতেন। সাড়া জাগানোর জন্যে মাহমুদা রহমান। তীব্র হয়ে উঠতে থাকেন।
আমি শুধু ঘুমোবা না, মাহমুদা রহমান বলেন, আমি মাহবুব ভাইয়ের দ্বারা প্রেগন্যান্ট হবো।
হাফিজুর রহমান একবার নড়েচড়ে বসেন, আমি পাথর হয়ে যাই।
মাহবুব ভাই রাজি না হলে, মাহমুদা রহমান বলেন, আমি আমার ড্রাইভারের সাথে ঘুমোবো, ড্রাইভারের দ্বার প্রেগন্যান্ট হবো।
হাফিজুর রহমান এবার নড়েচড়ে বসতেও পারেন না, একটু কাৎ হয়ে পড়েন সোফার ওপর।
মাহমুদা রহমান বলেন, ড্রাইভার রাজি না হলে ড্রাইভারের ভাগনের সাথে ঘুমোবো, আমি পেটে তার একটা পোলা নেবো।
আমি উঠে পড়ি, কোনো কথা বলি না। অনন্যার প্রিয় রেস্তোরাঁয় যেতে হবে আমাকে, সে বলছে সেটি খুব সুন্দর, ঢুকলেই মন ভরে যায়। মেয়েরা একটু পরেই আসে বলে জানি আমি, তাই একটু দেরি করেই ঢুকি, গিয়ে দেখি অনন্যা। আলোঅন্ধকারাচ্ছন্ন এক কোণে বসে আছে। সে বসে আছে দেখে আমি বিব্রত হই, আমারই আগে আসা উচিত ছিলো।
একা একা অপেক্ষা করতে আমার ভালো লাগে, অনন্যা বলে, তাই আমি একটু আগেই এসে বসে আছি।
দেরি করে আসতে আমার খারাপ লাগে, আমি বলি, আরেকটুকু আগে এলে তোমাকে আরেকটুকু বেশি দেখতে পেতাম।
তাহলে একটু দেরি করে বেরোবো আমরা, অনন্যা বলে।
কিন্তু আগের সময়টুকু কোথায় পাবো? আমি বলি।
আমি কোনো খাবারের নাম মনে রাখতে পারি না, কিন্তু অনন্যার দেখছি সব মুখস্থ, হয়তো নম্বরগুলোও মুখস্থ। সে একেকটির নাম, রেসিপি, আর স্বাদ বলতে থাকে, তার ঠোঁট থেকে নামগুলো খুব সুস্বাদু হয়ে বেরোচ্ছে। অনেক বছর পর খাবার আমার কাছে সুস্বাদু মনে হয়। আমি সুপ নেড়ে নেড়ে চিংড়ি খুঁজতে থাকি, অনন্যা চমৎকার মশলা। মিশিয়েছে সুপে, তার আঙুল থেকে সুস্বাদ গলে গলে নেমেছে সুপের পেয়ালায়। আমার মনে পড়ে প্রথম যেদিন চোচিংচোতে সুপ খেয়েছিলাম, সেদিন আমার খুব হাসি পেয়েছিলো।
আমি যদি সেদিন মরে যেতাম তাহলে আপনার সাথে দেখা হতো না, অনন্যা বলে।
আমি একটি সুন্দর লাশ দেখতে পেতাম, আমি বলি, খুব কষ্ট লাগতো; জানতে ইচ্ছে করতো জীবিত সে কেমন ছিলো।
আমাকে আপনার কেমন লাগে? অনন্যা বলে।
ভালো ও সুন্দর, আমি বলি।
সুন্দর দেখলে আপনার কেমন লাগে? অনন্যা বলে।
আমি কোনো উত্তর দিই না, দিতে পারি না, আমি যেনো বুঝে উঠতে পারছি না সুন্দর দেখলে আমার কেমন লাগে।
বলুন, আমার শুনতে ইচ্ছে করছে, অনন্যা বলে।
আমার সম্পূর্ণরূপে ভোগ করতে ইচ্ছে করে, আমি বলি, ছেলেবেলায় আমি চাঁদটাকে জড়িয়ে ধরে কামড়াতে চাইতাম।
আপনি তো ভয়ঙ্কর, অনন্যা বলে, সব কিছুকেই কামড়াতে চান?
চুলোর লাল টুকটুকে আগুনকেও আমার জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছে করতো, আমি বলি, সম্পূর্ণরূপে ভোগ করতে ইচ্ছে করতো।
আমাকে ভোগ করতে আপনার ইচ্ছে করছে না? অনন্যা বলে।