আমার আবার ভালো লাগে, অনেক দিন ধরে আমার সাথে কেউ বিনয়ের সাথে কথা বলে নি, তোষামোদের ভঙ্গিতে অনেকেই বলে, আমি মেয়েটির কণ্ঠস্বরে একটা ভীত দোয়েলের গলা শুনতে পাই, ডালিমগাছের ডাল থেকে এইমাত্র একটা দোয়েল। উড়ে গেলো। কিন্তু মেয়েটিকে এতোটা অপ্রস্তুত করে দেয়া ঠিক হয় নি, রাতে হয়তো ঘুমোতে পারবে না; বিবাহিত হলে বা বয়ফ্রেন্ড থাকলে আজ কিছু করতে পারবে না। আমার সম্পর্কে একটা খারাপ ধারণা হয়ে যাবে, কোনো দিন যদি আমাকে চুমোও খায় তাহলেও এটা তার ওপর ছায়া ফেলবে। ঠিক আছে ছায়া ফেলুক, আমি না হয় কারো। কারো ঠোঁটের ওপর রাহুর ছায়াই হয়ে থাকবো।
আমি তাকে বলি, ঠিক আছে, আর তো উদ্বেগের কারণ নেই আপনার, আমি এসে গেছি, অফিসও ছুটি হয়ে গেছে, আপনি বাড়ি যান।
মেয়েটি বেরিয়ে যায়, তার বেরিয়ে যাওয়া দেখতে আমার ভালো লাগে।
অর্চির সাথে কথা বলতে ইচ্ছে করছে, ফোন করতে ইচ্ছে করছে, কিন্তু ভয় লাগছে; অর্চি কি খুশি হবে আমার ফোন পেয়ে?
অর্চি হয়তো আমার গলা চেনে না, ফোনে ওর সাথে কথাই হয় না, আমার গলা ও নাও চিনতে পারে।
অর্চি, আমি বলি, অর্চি, আমি আব্বু।
অর্চি বলে, আব্ব? তুমি? এ-সময়? গম্ভীর হতাশা আর বিরক্তির স্বর ভেসে আসতে থাকে মহাজগতের দশ দিক থেকে।
তোমার সাথে কথা বলতে ইচ্ছে করলো, আমি বলি, অনেক দিন কথা বলি নি।
অর্চি বলে, আহ, আব্ব, তোমার সাথে কথা বলার মতো সময় আমার আছে, বলো! আমি ভাবলাম কোনো বন্ধু ফোন করেছে।
আমি বলি, তুমি কী নিয়ে এতো ব্যস্ত, অর্চি?
অর্চি বলে, তুমি বুঝবে না আব্ব, আর আমার অকাজে কথাই বলতে ইচ্ছে করে না, আমার ঘেন্না লাগে।
আমি বলি, বন্ধুদের সাথে তুমি কি শুধু কাজের কথাই বলো?
অর্চি বলে, কাজের কথাই বলি, আমি প্রেমট্রেমের কথা বলি না আব্ব, আমরা। কয়েক বন্ধু স্টেটসে চলে যাবো, নানা জায়গায় চিঠি লিখছি সে-কথাই বলি।
আমি বলি, আমাকে তো কখনো বলে নি।
অর্চি বলে, বলার কিছুই নেই, যখন যাবো তখন বলবো ভেবেছিলাম, তবে আজ তোমাকে বলে ফেললাম।
আমি বলি, ফেইভরেবল চিঠিপত্র কি পাচ্ছো?
অর্চি বলে, বেশ তো পাচ্ছি, শুধু মাধ্যমিকটার জন্যেই কিছু করতে পারছি না; পরীক্ষাটা হয়ে গেলে বাঁচি।
আমি বলি, তুমি তাহলে চলে যাবে?
অর্চি বলে, আলু, তুমি এখনি কাঁদতে শুরু কোরো না। আমি আজই যাচ্ছি না।
আমি কথা বলতে চাই, অর্চি বলে, রাখি, আলু, রাখি। অর্চি টেলিফোন রেখে দেয়।
আমি একটা শূন্যতা বোধ করি। এমন নয় অর্চিকে আমি প্রতিদিন বুকে জড়িয়ে ধরি, আদর করে কপালে চুমো খাই, ঘুম পাড়াই; এমন নয় ও আমার কন্যা বলে। আমি একটা গুরুগম্ভীর পিতৃত্বের বোধের মধ্যে থাকি, আমি যে ওর পিতা আমার মনেই থাকে না, কিন্তু ও হয়তো আমার ভেতরে কোথাও রয়েছে, আর থাকবে না। আমি ওর ভেতরে নেই, ফিরোজাও ওর ভেতরে নেই, কেউ ওর ভেতরে নেই। অর্চি কেন্দ্রে আছে। আরো কেন্দ্রে চলে যেতে চায়, চলে যাবে; আমি বাধা দিতে পারবো না। কিন্তু আমার শূন্যতা আমাকে বইতে হবে, কেউ জানবে না আমি পাথরের থেকেও ভারী একটি শূন্যতা বয়ে চলছি।
ফিরোজা বেশ চাঞ্চল্যের মধ্যে আছে, এত চাঞ্চল্যে আছে যে আমার সাথেও সারাক্ষণ কথা বলতে চায়, এমন সব কথা যা আগে কখনো বলে নি, কিন্তু এখন বলার জন্যে ব্যর্থ। কোথা থেকে উৎসারিত হচ্ছে ফিরোজার ঝরনাধারা? আমি তার উৎস নই, আমি তাকে ঝিরঝির কলকল করে বহাচ্ছি না, আমি তাকে বাতাসে পালকের মতো। ওড়াচ্ছি না, কিন্তু ফিরোজা বইছে উড়ছে।
আমি টিভির দিকে তাকিয়ে আছি, প্রাণভরে একগাদা ন্যাংটো মেয়ে দেখছি, কতোটা ন্যাংটো হতে পারে দেখছি, শিল্পকলা কতোটা ন্যাংটো হতে পারে দেখছি, ন্যাংটো কতোটা শিল্পকলা হতে পারে দেখছি; ন্যাংটো, শিল্পকলা, মেয়ে দেখছি; শিল্পকলা, মেয়ে, ন্যাংটো দেখছি; মেয়ে, ন্যাংটো, শিল্পকলা দেখছি, আমি দেখছি ন্যাংটো ন্যাংটো ন্যাংটো, আমি দেখছি শিল্পকলা শিল্পকলা শিল্পকলা, আমি দেখছি মেয়ে মেয়ে মেয়ে; ফিরোজা তখন এসে পাশে বসে।
এসব দেখতেই তোমার ভালো লাগে, ফিরোজা বলে। আমাকে একটা বড়ো অপবাদ দেয়ার জন্যে কথাটি বলে নি, আমি বুঝি, একটি প্রাসঙ্গিক বিষয় বেছে নিয়েই সে কথা শুরু করতে চেয়েছে।
আমার সময় চায় আমি এসব দেখি, আমি বলি, আমার সময় চায় আমি এসবের মর্ম উপলব্ধি করি, আমি আমার সময়ের দাবি পূরণ করছি।
ফিরোজা বিব্রত হয়, এসব নিয়ে আর তর্ক করতে চায় না; এক্সএক্সএক্স সেও উপভোগ করে মাঝেমাঝে, এখন সে অন্য কিছু নিয়ে কথা বলতে চায়।
সেদিন তুমি অদ্ভুত আচরণ করেছে, ফিরোজা অর্থপূর্ণভাবে তাকিয়ে বলে, আমার মনে হচ্ছিলো তুমি…। ফিরোজা আর এগোয় না।
আমি বলি, তোমার কী মনে হচ্ছিলো?
ফিরোজা বলে, তুমি আমাকে রেইপ করছে।
আমি বলি, তাহলে তোমার উচিত ছিলো চিৎকার করে ওঠা, যাতে পাশের বাড়ির সবাই জেগে উঠে তোমাকে রক্ষা করতে আসতে পারতো, তোমার কর্তব্য ছিলো আমার মুখে নখ বসিয়ে দেয়া; প্রমাণ থাকতো।
ফিরোজা বলে, কিন্তু তুমি আমাকে পীড়ন করতে চেয়েছিলো তাতে সন্দেহ নেই।
আমি বলি, কিন্তু তুমি পীড়ন উপভোগ করলে কেনো?
ফিরোজা বলে, মনে হলো প্রতিরোধ করতে যেহেতু পারবো না তখন উপভোগ করাই ভালো।