আমি বলি, আমার স্ত্রীকে আমি ছেড়ে দিতে পারি, সে আমাকে ছেড়ে দিতে পারে, তবে আর কোনো স্ত্রীর কথা আমি ভাবি না, দ্বিতীয় স্ত্রীর কথাই ওঠে না।
তিনি বলেন, আপনি শুধু আমার দেহটিকেই ভোগ করতে চান। যদি আমি দেহ ভোগ করতে দিই, তবে শুধু আপনাকে কেননা, অন্য অনেককেও আমি দিতে পারি, তাতে আমার সুখ বাড়বে।
আমি বলি, নারীদের নিয়ে এটি এক বড়ো সমস্যা, তারা মনে করে পুরুষরাই। তাদের দেহ ভোগ করে, তারা পুরুষদের দেহ ভোগ করে না। আমি কি শুধু আপনার দেহ ভোগ করেছি, আপনি কি আমার দেহ ভোগ করেন নি? আমিই কি শুধু সুখ পেয়েছি, আপনি কি সুখ পান নি? আসলে আপনিই পেয়েছেন বেশি সুখ; আপনি। পুলকের পর পুলকে ভেঙে পড়েছেন, আপনি যতো পুলক বোধ করেছেন আমি ততো। বোধ করি নি। তবে আপনার স্বাধীনতা রয়েছে কার সাথে আপনি জড়িত হবেন তা ঠিক করার।
তিনি কেঁদে ফেলেন, আপনাকে যে আমি সম্পূর্ণ পেতে চাই।
আমি জানি না সম্পূর্ণ পাওয়া কাকে বলে, তিনি বিয়েকেই হয়তো ভাবছেন সম্পূর্ণ পাওয়া। আমি তো তাকে সম্পূর্ণ পেতে চাই না। কয়েক মাস আগে হাফিজুর রহমান দেশে বেরিয়ে গেলেন, তখন আমার মনে হয় নি যে মাহমুদা রহমানকে আমার সম্পূর্ণ পেতে হবে, হাফিজুর রহমান যাতে তার সাথে মিলিত হতে না পারে তার ব্যবস্থা। করতে হবে। বরং আমি একটু দূরে থাকতে পেরে স্বস্তিই পেয়েছি। তখনও মাহমুদা। রহমান আমাকে ফোন করেছেন, আমি বেশ কয়েক বার বেড়াতেও গেছি তার বাসায়, বুঝতে পেরেছি হাফিজুর রহমান মরুভূমির পিপাসা নিয়ে দেশে ফিরেছেন, দিনরাত পান করছেন, খাচ্ছেন।
মাহমুদা রহমান ফোন করেছেন, ভদ্রলোকের ক্ষুধা মিটছে না। স্বামী বলে বাধাও দিতে পারছি না।
আমি বলেছি, অনেক দিন ধরে ক্ষুধার্ত আর পিপসার্ত, তাই একটু বেশিই খাবেন, বেশিই পান করবেন। খেতে দিন, পান করতে দিন, সওয়াব হবে।
তিনি বলেছেন, কিন্তু উটের মতো খায় আর পান করে, যাকে খাচ্ছে তার কথা ভাবে না। আর সওয়াব? দিনে আশি লক্ষ বছরের সওয়াব আদায় করছে।
আমি বলেছি, যে খায় সে নিজের কথাই ভাবে, নিজের পেট ভরছে কি না, খেতে ভালো লাগছে কি না, সেটাই তার বিবেচনার বিষয়; তার খাওয়ার ফলে খাদ্যের কেমন লাগছে সেটা তার ভাবার বিষয় নয়।
তিনি বলেছেন, কেউ কেউ তো তেমন নয়।
আমি বলেছি, ওই কেউ কেউ শুধু খায় না, নিজেকেও খেতে দেয়।
তিনি বলেছেন, দ্রলোক আমাকে প্রেগন্যান্ট করে রেখে যেতে চায়।
আমি বলেছি, অর্থাৎ তিনি নিজেকে আপনার ভেতরে রেখে যেতে চান, যাতে তাকে আপনি সব সময় বোধ করেন।
তিনি বলেছেন, না, না, তা হয় না; আমি আর ওই সব চাই না।
তিনি এখন আমাকে সম্পূর্ণ পেতে চান, আমাকে সম্পূর্ণ পাওয়ার মধ্যে আমি কোনো মহিমা দেখতে পাই না, যেমন আমি মাহমুদা রহমানকে সম্পূর্ণ পাওয়ার মধ্যেও কোনো মহিমা দেখি না, বিপর্যয় দেখতে পাই। ফিরোজা বিপর্যয়ের একটা আভাসও দিয়েছে, সে আমার কাছে জানতে চেয়েছে মাহমুদা রহমান সম্পর্কে, তিনি কেমন আছেন সে-সম্পর্কে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। ফিরোজার কি এটা সম্পূর্ণ নিষ্পাপ আগ্রহ, না কি এর ভেতর কোনো পাপ রয়েছে? ফিরোজা কি জানতে পেরেছে যে আমার সাথে মাহমুদা রহমানের একটা সম্পর্ক গড়ে উঠেছে, মাঝেমাঝে আমি তার বাসায় অসময়ে যাই? কী করে সে জানবে? জানার হাজার পথ খোলা রয়েছে। ড্রাইভার জানিয়েছে, আমাদেরই কেউ জানিয়েছে? ফিরোজার মুখের দিকে তাকিয়ে অবশ্য আমি কিছু বুঝতে পারি নি; পারি নি বলেই আমার সন্দেহ হচ্ছে তার মনে পাপ আছে, তার আগ্রহ নিষ্পাপ নয়। গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার নিয়ে আলোচনার সময় মেয়েদের মুখের দিকে তাকিয়ে যখন কিছু। বোঝা যায় না, তখন, আমার বিশ্বাস, বুঝতে হবে অত্যন্ত মারাত্মক কিছু রয়েছে অত্যন্ত গভীরে। ফিরোজার গভীরেও কিছু থাকতে পারে, হয়তো আছেই, তা বাইরে দেখা দিতে বেশি সময় নেবে না। আমাকে তৈরি থাকতে হবে একটা সংকটের মুখোমুখি দাঁড়ানোর জন্যে, কিন্তু আমি তো ফিরোজার মতো নিরীহ মুখে মারাত্মক ব্যাপারগুলো ভেতরে চেপে রাখতে পারি না। সংকটটি এসেই যায়, ফিরোজা বেশি আগ্রহ প্রকাশ করতে থাকে।
মাহমুদা ভাবীকে না কি তুমি আজকাল খুব সাহায্য করছো? ফিরোজা বলে।
তুমি কোথায় শুনলে? আমি বলি।
কোথায় শুনলাম সেটা ভিন্ন কথা, তাঁকে নানা সাহায্য করছে কি না আমি তাই জানতে চাই, ফিরোজা বলে।
তার দরকার হলে মাঝেমাঝে সাহায্য তো করিই, তাঁর স্বামী আমাদের বন্ধু ছিলেন, আমি বলি।
যেমন তুমি বিদেশে গেলে তোমার কোনো কোনো বন্ধু আমাকেও সাহায্য করবে, ফিরোজা বলে।
আমি অবশ্য কখনো বিদেশে যাবো না, আমি বলি।
সাহায্য করার জন্যে কখন তাঁর বাসায় যাও? ফিরোজা প্রচণ্ড প্রশ্ন করে।
যখন দরকার হয়, আমি বলি।
ফিরোজা কি আরো এগোবে, সব সত্য আজ সন্ধ্যায়ই উদঘাটন করবে? ফিরোজা আর এগোয় না, আমি স্বস্তি পাই; তবে আজ রাতে ফিরোজার সাথে সম্পর্কের একটা বাসনা আমার ছিলো,-দু-সপ্তায় কোনো সম্পর্ক হয় নি, সেটা নষ্ট হয়ে যায়; আমার পক্ষে আর তাকে ডাকা সম্ভব হবে না, সে তো ডাকবেই না। ফিরোজা কি আমার আর মাহমুদা রহমানের সম্পর্কের কথা জেনে গেছে, সে কি মনে করে আমাদের মধ্যে শারীরিক সম্পর্ক রয়েছে? আমার তা-ই মনে হয়। ফিরোজা মাঝেমাঝেই বলে বিবাহিত পুরুষগুলোই বেশি ইতর হয়, কুকুরের মতো, চল্লিশ বছর হয়ে গেলে তারা ইতরামো ছাড়া আর কিছুই জানে না, তাদের জিভ লকলক করতে থাকে সব সময়; কিছু না পেলে তারা কাজের মেয়েগুলোর দিকেই হাত বাড়ায়, বউয়ের থেকে কাজের মেয়েগুলোর স্বাদই তাদের বেশি ভালো লাগে। আমাকে নিয়ে ফিরোজা অবশ্য এ-সন্দেহটা পোষণ করে না, যদিও আমাদের বাসার কাজের মেয়েটি সুন্দরী; কারণ আমি বাসায়ই থাকি না, যতোক্ষণ থাকি ফিরোজাও থাকে। তবে আমার মনে হয় ফিরোজা মনে করে মাহমুদা রহমানের সাথে আমার একটা সম্পর্ক আছে, সেটা শারীরিক, কেননা এ-বয়সে অন্য কোনো সম্পর্ক হতে পারে না। ফিরোজার সম্পর্কটি কেমন? টেলিফোন–দেবরটি তার থেকে পাঁচ-ছ বছরের ছোটো হবে; তবে ফিরোজাকে তার পাশে বালিকাই মনে হয়; একদিন দেবরটিকে আমি বাসায়ও দেখেছি, বিকেলবেলা আমি বাসায় থাকবো সে। হয়তো ভাবতে পারে নি, আমাকে দেখে সে খুব বিব্রত বোধ করছিলো। খুব বিনয়ের সাথেই সে কথা বলছিলো ফিরোজার সাথে, আমার সাথেও, ফিরোজা তাকে তুমি বলছিলো, সে ফিরোজাকে আপনি বলছিলো, বিনয়ে সোফায় দু-পা আর দু-হাত জড়ো করে বসে কথা বলছিলো অবতারটি। অবতারটি বিশ্ববিদ্যালয়ে নৃতত্ত্ব না কী পড়ায়, অস্ট্রেলিয়া থেকে একটা প্রশান্ত মহাসাগরীয় পিএইচডিও এনেছে। ভাবীর সাথে তার নিষ্পাপ নৃতাত্ত্বিক সম্পর্ক? নিষ্পাপ সম্পর্কই যদি তাহলে অন্যের স্ত্রীকে ভাবী ডেকে সম্পর্ক করার কী দরকার ছিলো, ছোঁকরা একটা কবুতর বা দোয়েল বা শাপলা বা আকাশের মেঘের সাথে সম্পর্ক করলেই পারতো। মানুষের সাথে কেনো? মানুষের সাথে সম্পর্ক কখনো নিষ্পাপ হয়? নিষ্পাপ সম্পর্ক কখনো টেকে? ফিরোজার সাথে তার সম্পর্ক কী? নিশ্চয়ই নৃতাত্ত্বিক। ছোঁকরা প্রশান্ত মহাসাগরের দ্বীপগুলো চষে এখন দেশে চষতে চাচ্ছে। ফিরোজার মুখে একটা বয়সের ব্যক্তিত্বের ছাপ পড়েছে, ছোঁকরাটির মুখে বালক বালক ভাব এখনো রয়েছে, ফিরোজা কি এ-বালকটির নিচে নিজেকে সমর্পণ করতে পারে? হয়তো পারে, বালকের স্বাদ অপূর্ব মনে হতে পারে তার; আর বালকটির অসামান্য অনুভূতি হওয়ারই কথা, সব বালকই তার চেয়ে বয়সে বড়ো কোনো নারীকে পরাভূত করার দিবাস্বপ্ন দেখে, আমিও দেখতাম। বালকটির বয়স যত বাড়বে কচি লাউডগার জন্যে ততোই পাগল হবে; কিন্তু ফিরোজার সাথে বালকের কী সম্পর্ক?