রুস্তম আলি পন্টু কেঁপে উঠে বলেন, অইটা টোপ, ম্যাডাম, অইটা পলিটিক্স।
মহাদেশনেত্রী স্মিত হাসেন, যদিও তিনি প্রধানমন্ত্রীর পদটি দিয়ে পলিটিক্স পছন্দ করেন না; রক্তচাপ স্বাভাবিক হয়ে আসে রুস্তম আলি পন্টুর।
আমরা জনগণরা শুনতে পাই এমন আরো অনেক নীতি আর আদর্শের আলোচনা হয় ওই সভায়; স্থির হয় ক্ষমতায় যেতেই হবে। ওই হারামজাদাদের হাতে ক্ষমতা। ছাড়ার থেকে সেই তাদের হাতে ছাড়া ভালো।
খোজাগণতান্ত্রিক রাজবংশের বৈঠক বসতেও কয়েক ঘণ্টা দেরি হয়।
কারণ এ-রাজবংশের বাবর, দলের প্রতিষ্ঠাতা, মহাজননেতা কারাগারে আছেন, এখন বের হওয়ার সম্ভাবনা নেই, আর তাদের কয়েকজন রাজপুরুষও পলাতক, এবং কয়েকজন জনগণমন গণতান্ত্রিক ও শক্তির উৎসবাদী গণতান্ত্রিক রাজবংশে যাওয়ার জন্যে নানা পথ খুঁজছেন; তাই দলের রাজপুরুষেরা ঠিক করে উঠতে পারেন না কে তাঁদের দলের সভায় সভাপতিত্ব করবেন–মহাজননেতার পত্নী না উপপত্নী? তাঁর পত্নীকে যদি তাঁরা মহাগণনেত্রী করে তোলেন, তাহলে তাদের অনেক অসুবিধা রয়েছে; ওই মহিলার ক্ষমতা ও টাকার লোভের কোনো শেষ নেই, তাঁদের মহাজননেতাকে তিনি কতোদিন নিজের পায়ের নিচে ফেলে রেখেছেন এটা তাঁরা সবাই দেখেও দেখেন নি; আর যদি মহাজননেতার উপপত্নীদের কাউকে তারা মহাগণনেত্রী করতে চান, তাহলে প্রথম প্রশ্ন হচ্ছে কোন জনকে করতে হবে, মহাজননেতার প্রতিদ্বন্দ্বী উপপত্নীর সংখ্যা কম নয়। (একত্রে রাখলে একটি তুর্কি হারেম হয়ে যেতো), আর দ্বিতীয় প্রশ্ন হচ্ছে দেশের বর্তমান খাঁটি ইসলামি আবহাওয়ায় তা গ্রহণযোগ্য হবে কিনা? উমাইয়া ও আব্বাসিয়া রাজাবাদশাদের বড়ো বড়ো হারেম ছিলো; কিন্তু খোজাবংশে হারেম থাকতে পারে কিনা?
এছাড়াও গভীরতর কারণ রয়েছে। রাজবংশটি এখন যিনি দেখছেন, যার ওপর মহাজননেতা ভার দিয়েছেন রাজবংশটির, সেই রাজপুরুষ মনোয়ার হোসেন মোল্লা তার বাসায় দশটি ডিজিটাল ও সেলুলার নিয়ে অপরিসীম ব্যস্ত রয়েছেন। একটির পর একটি টেলিফোন পাচ্ছেন তিনি; তাঁর স্ত্রী ধরছেন, তাঁকে দিচ্ছেন, তিনি ধরছেন, রাখছেন, কথা বলছেন, রাখছেন, আবার ধরছেন। তিনি এখন খুবই ব্যস্ত, তার বেয়ে এবং বাতাসে ভেসে তাঁর কাছে প্লাবনের মতো পলিটিক্স আসছে; তিনি নিপুণভাবে পলিটিক্স করে চলছেন।
মনোয়ার হোসেন এখন সেলুলার পলিটিক্স করছেন জনগণমন গণতান্ত্রিক রাজবংশের অন্যতম প্রধান চাচা নিজামউদ্দিন আহমদের সাথে।
নিজামউদ্দিন আহমদ বলেন, বাবা মোয়ার, আমি তোমার আব্বারে মিয়াভাই বলতাম, তোমার আব্বা আমারে স্নেহ করতেন, তুমি আমার ছেলের মতন। কত দিন তুমি আমার কান্ধে উঠছে।
মনোয়ার হোসেন বলেন, সেইজন্যই তো আপনারে চাচা কই, চাচা; সেই জন্যেই তো আপনার লগে আমার একটা রিলেশন আছে।
নিজামউদ্দিন আহমদ বলেন, তুমি আমারে চাচা কও এটা আমার গৌরব, আরো গৌরব যে তুমিই এখন তোমাগো দলের নেতা, এইজন্যে আমার সুখের শ্যাষ নাই।
মনোয়ার হোসেন বলেন, কিন্তু চাচা কয়টা বুড়া শয়তান গোলমাল করতেছে, দলটা ভাঙতে চায়; ন্যাতার স্ত্রীও গোলমাল করতেছে।
নিজামউদ্দিন আহমদ বলেন, তা আমরা জানি, তয় তুমিই নেতা থাকবা; তোমার জননেতা তোমারে বিশ্বাস করেন।
মনোয়ার হোসেন বলেন, সেইটাই আমার পাওয়ার চাচা।
নিজামউদ্দিন আহমদ বলেন, এইবার তোমরা আমাদের লগে থাকবা, তুমি আমাদের লগে থাকলেই তোমার দলও আমাগো লগে থাকবো।
মনোয়ার হোসেন বলেন, চাচা, আপনাগো লগেই তো আছি; অই ম্যাডামের দলও ফোন করছিলো, আমি থাকতে রাজি হই নাই।
নিজামউদ্দিন আহমদ বলেন, ঠিক করছো, বাবা, ঠিক করছো; গ্রেট পলিটিশিয়ানের কাজ করছে।
মনোয়ার হোসেন বলেন, আমাদের মহাজননেতা আমারে এককথা বলে দিয়েছেন কিছুতেই আমরা ম্যাডামের সঙ্গে পার্টনারশিপে যাবো না। মহান জননেতাকে সে অনেক ট্রাবল দিয়েছে।
নিজামউদ্দিন আহমদ বলেন, তিনি খাঁটি পলিটিশিয়ানের মতই কথা বলছেন। তারে যারা জ্যালে রাখলো তাগো লগে তিনি যাইতে পারেন না। তিনি ড্যামোক্র্যাসিতে বিশ্বাস করেন।
মনোয়ার হোসেন বলেন, কিন্তু চাচা, এই বিষয়ে একটা ফাইনাল কথা হইতে হইবো, আমারে বড়ো কিছু দিতে হবে।
নিজামউদ্দিন আহমদ বলেন, ফাইনাল কথা তো হইবোই, তুমিও বড়ো কিছু পাইবা, মহাজননেত্রী তোমার লগে একটা গোপন বৈঠকে বসতে চাইছেন, তোমারে একটা বড়ো কিছু দিতে পারলে তিনি সুখী হইবেন।
মনোয়ার হোসেন মোল্লা বলেন, আমিও তাই চাই, আমার যা স্ট্যাটাস তাতে ছোটো কিছুতে আমারে মানায় না। আপনাদের জননেত্রীর সঙ্গে কয়েকটা কথা আমার ক্লিয়ার হওয়া দরকার।
নিজামউদ্দিন আহমদ বলেন, সব কথা ক্লিয়ার কইরাই হবে, বাবা, কথায় কোনো জট থাকবো না। আমরা পরিষ্কার দিলের মানুষ। আমরা ক্ষমতায় আসলে তোমারটা। তুমি সঙ্গে সঙ্গে পাইবা, বঙ্গভবনেই পাইবা, একদিনও দেরি হইব না, তুমি আমাগো হইয়া যাইবা।
মনোয়ার হোসেন টেলিফোন রেখে কফির পেয়ালায় চুমুক দেন।
মনোয়ার মোল্লার স্ত্রী বলেন, পলিটিক্স খুবই ইন্টারেস্টিং, ভেরি অ্যামিউজিং অ্যান্ড হাইলি অ্যাবজর্বিং, মাচ বেটার দ্যান মেকিং লাভ, আমিও পলিটিক্সে জয়েন করতে চাই, মনোয়ার।
মনোয়ার হোসেন মোল্লা বলেন, তোমাকে এবার পার্লামেন্টের মেম্বার কইর্যা ছাড়বো, স্বামীস্ত্রীর দুইজনেরই পার্লামেন্টে থাকন দরকার।
চমৎকার খুব ভাল লাগলো