আমাগো রাজবংশগুলি প্রচণ্ড তাণ্ডবে মহাগর্জনে ভৈরব হুংকারে আশমান জমিন কাঁপাইয়া ইসলাম প্রচার করতে লাগছেন, আমরা সাচ্চা মুসলমান হইয়া উঠছি, চোখে দিনরাইত ভেস্তদোজগ দেখতে পাচ্ছি, তবে আমরা বুঝতে পারছি না এইটা ড্যামোক্রেসির ইলেকশন না একটা নতুন ধর্ম প্রবর্তন। দুই নম্বরটা হইলেই উত্তম, ড্যামোক্রেসি দিয়া আমরা কি করুম? ড্যামোক্রেসি ধুইয়া খাইয়া কি আমরা ভেস্তে যাইতে পারুম? দুনিয়াটি কয় দিনের? পলিটিক্স, প্রধান মন্ত্রী, ড্যামোক্রেসি, ইলেকশন, এমপি, পার্লামেন্ট, পাজেরো, বনানী, গুলশান কয় দিনের?
আমাগো মনে হইছে দুনিয়ায় একটা নতুন রিলিজিয়ন আসছে, আর সেইটা নিয়া আসছেন আমাগো ড্যামোক্রেসির রাজপুরুষেরা।
যিনি কোনোদিন সালাত পড়ে নাই, দেখতে পাচ্ছি তিনি মসজিদে মসজিদে হাজার হাজার ভোটার লইয়া সালাত পড়ছেন। মসজিদ কাইপ্যা ওঠছে।
স্কচ, পান না করলে যিনি সুস্থ থাকেন না (স্বাস্থ্যগত কারণে অনেকেরই এইরূপ হইয়া থাকে), একটু আগে যিনি স্কচ টানছিলেন (না টানলে দেশপ্রেম সংহত হইয়া জমে না), দেখতে পাই মঞ্চে উইঠাই তিনি ধর্ম প্রচার শুরু করছেন।
আমরা খালি খুশি হইতে থাকছি, ভেস্তের কথা ভাইব্যা জার জার হইছি।
মহাজননেত্রী মাথাটিকে অদ্ভুতভাবে ঢেকে (শয়তান হইতে চুল সাবধান, মাইয়ালোকের চুলের ভিতর দিয়া শয়তান ভিতরে ঢোকে) মঞ্চে উঠইে বলছেন, প্রিয় ভাইসব, ভাইরা আমার, বোনরা আমার, দ্যাশে আল্লারে দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত করিতে। হইবে, আমার বংশরে ভোট দ্যান, আমরা ছাড়া আর কোনো বংশ আল্লারে চায় না। আমরাই খালি তারে চাই।
মহাদেশনেত্রী স্টাইলে (তার স্টাইলে ডেভিল আকৃষ্ট হইতে পারে) মাথা ঢেকে মঞ্চে উঠেই বলেন, অরা পাওয়ারে আসলে দ্যাশ থিকা ইসলাম উঠে যাবে, বিসমিল্লা লাইলাহা থাকবো না, খালি উলুর শব্দ আর মন্দিরের ঘণ্টার শব্দ শোনা যাবে, পঞ্চাশ লক্ষ হিন্দু ইন্ডিয়া থিকা রওনা করছে।
অধ্যক্ষ রুস্তম আলি পন্টু স্টেজে দাঁড়িয়েই বলেন, ভাইসব, আপনেরা কি চান, আমি জানি আপনেরা আল্লারে চান, নামাজ পরতে চান, রোজা রাকতে চান, ভেস্তে যাইতে চান। আমরা পাওয়ারে আসলে আপনেরা আল্লারে পাইবেন, নামাজ পরতে পারবেন, রোজা রাকতে পারবেন। অরা পাওয়ারে আসলে আপনাগো ধর্ম থাকবো না, আল্লা থাকবো না, লাইলাহা থাকবো না, হিন্দুরা আইস্যা ভগবান ভগবান কালি কালি দুর্গা দুর্গা বইল্যা পুজা করবো।
নিজামউদ্দিন আহমদ মঞ্চে উঠেই বলতে থাকেন, হে আল্লা, আপনের বাসনা পূর্ণ করার জইন্যই আমরা পলিটিক্স করি, ইলেকশন করি, এই জনগণ আপনের বান্দা, এই জনগণ আমাগো পাওয়ারে দ্যাকতে চায়। আল্লা, আপনেরে ছারা আমরা আর কিছু জানি না। আমরা পাওয়ার চাই না, আল্লারে চাই।
মনোয়ার হোসেন মোল্লা মঞ্চে উইঠাই বলেন, ভাইরা, আপনেরা নয় বচ্ছর ধইরা দেকছেন আমাগো মহাজননেতা ইসলাম ছারা আর কিছু বোজতেন না। ইসলামের জইন্যে তিনি আজ বন্দী হয়ে আছেন। তিনি স্বপ্ন দেখে মসজিদে গিয়া নামাজ পরতেন, তার মতন মুসলমান আর নাই। তিনি বাহির হইয়া আসলে দ্যাশে প্রকৃত ইসলাম প্রতিষ্ঠিত হইবে।
মওলানা রহমত আলি ভিস্তি মঞ্চে উঠেই বলেন, মমিন মুসলমান ভাইরা, দ্যাশে ইসলাম আইজও প্রতিষ্ঠিত হয় নাই, আমরা চাই দ্যাশে আল্লার রাজ্য স্থাপন করতে। কাফেরগো হাত থিকা দ্যাশ উদ্ধার করতে হইব, আল্লার দ্যাশ আল্লার হাতে তুলে দিতে হইব। আমরা পলিটিক্স করি না, ড্যামোক্রেসি চাই না, আল্লার শাসন প্রতিষ্ঠা করতে চাই।
বিসমিল্লা আল্লা রসুল লাইলাহা বিসমিল্লা আল্লা রসুল লাইলাহা বিসমিল্লা আল্লা রসুল লাইলাহা বিসমিল্লা আল্লা রসুল লাইলাহা বিসমিল্লা আল্লা রসুল লাইলাহা বিসমিল্লা আল্লা রসুল লাইলাহা বিসমিল্লা আল্লা রসুল লাইলাহা বিসমিল্লা আল্লা রসুল লাইলাহা বিসমিল্লা আল্লা রসুল লাইলাহা বিসমিল্লা আল্লা রসুল লাইলাহা।
আর কিছু চাই না আর কিছু দরকার নাই।
আরেকটা জিনিশ লইয়া তাঁরা খোঁচাখুঁচি করতেছেন, সেইটা আমাগো কানা কড়ি, এক পয়সার মমবাতি, আমাগো ওই স্বাধীনতা, আমাগো ওই মুক্তিযুদ্ধ।
জিনিশটার কথা আমরা ভুইল্যা যাইতেছি, ভুইল্যা থাকলেই আমরা ভালো থাকি, তবে মাঝেমইধ্যে দুইটা লইয়া একটু আধটু শরিল আর মনটারে চুলকাইয়া তাজা করে তুলি, চাইরপাঁচ মিনিটের জইন্যে ভাল্লাগে।
মহাজননেত্রী মাঝেমইধ্যে বক্তৃতার শ্যাষে ভয়ে ভয়ে বলেন, আমরা স্বাধীনতা আনছি, আমরা ফ্রিডম ফাইটিং করছি, আমাগো বংশ ছারা দ্যাশ স্বাধীন হইত না।
তিনি তাকাইয়া দেখেন লোকজন কেমন নিতাছে, স্বাধীনতার কথায় আবার তারা ক্ষেইপ্যা ওঠতাছে কি না। তাইলে তিনি এই নিয়া কথা বলবেন না। একটু অন্য রকম দেকলে তিনি আল্লাতালার কথা বলতে শুরু করেন।
মহাদেশনেত্রী বক্তৃতার শ্যাষে উঁচা গলায় বলেন, আমরা স্বাধীনতা ডিক্লেয়ার করছিলাম, আমরা ফ্রিডম ফাইটিং করছিলাম, অরা কইলকাতা গিয়া নাটক সিনেমা দেখতেছিল, হিন্ধু মাইয়া লইয়া ঢলাঢলি করতেছিল।
মওলানা রহমত আলি ভিস্তি বক্তৃতার শুরুতেই বলেন, নাইন্টিন সেভেন্টি ওয়ানে আমরা ভুল করি নাই, ওই যুদ্ধ হইছিল ইসলাম নষ্ট করনের জইন্যে, আমরা ইসলাম বাঁচানের জইন্যে রাজাকার হইছিলাম। আমরা না থাকলে দ্যাশে ইসলাম থাকতো না, দ্যাশ হিন্দুগো হইয়া যাইত।
চমৎকার খুব ভাল লাগলো