মহাজননেত্রী বলেন, আপনে আমাগো এইখানে আগেই দরখাস্ত করলে আপনাকে এই কষ্টটা করতে হইত না। আমরা আপনের কথা অনেক দিন ধইরাই বলাবলি করতেছিলাম, এই জইন্যে প্রত্যেক দিন লোকও পাঠাই দিছি খবর নিতে আপনের কি হইল। আপনেরে আমাগো দল থিকা নমিনেশন দিলাম, আপনে শিউর পাশ করবেন, এইবার আমরা পাওয়ারে যাব, আমরা পাওয়ারে গেলে আপনে মিনিস্টার হবেন।
জেনারেল কামরুদ্দিন স্যালুট দিয়ে বলেন, আই অ্যাম রিয়েলি গ্রেইটফুল টু ইউ, আওয়ার মহাজননেত্রী, আই শ্যাল রিমেইন অবিডিয়েন্ট টু ইউ টিল মাই ডেথ। ইউ আর এ গ্রেট লিডার, এইবার আমরা পাওয়ারে যাবই। আই অ্যাম সরি ফর মাইসেল্ফ দ্যাট। আই অ্যাপ্লাইড ফর দেয়ার নমিনেশন, দে আর দি এনিমিজ অব দি কান্ট্রি, আমি এখন বুঝতে পারছি ইউ আর দি হার্ট অব দি কান্ট্রি, ইউ আর দি প্রিন্সেস হু উইল বি দি কুইন, আই শ্যাল সার্ভ ইউ অ্যাজ ইউর সার্ভেন্ট। আমি আপনার দোয়া চাই।
জেনারেল কামরুদ্দিন বাড়ি থিকা বাইর হইছিলেন মহাদেশনেত্রীর ওপর গভীর বিশ্বাস পোষণ করে, তাঁরে টিল ডেথ সার্ভ করার জইন্য, আর বাড়ির দিকে রওনা হলেন মহাজননেত্রীর ওপর গভীর আস্থা পোষণ করে, তারে টিল ডেথ সার্ভ করার পরতিগ্যা কইর্যা।
পলিটিক্সে ফাইনাল কথা বলে কিছু নাই, সকাল বিকাল পলিটিক্সে এক জিনিশ না। পলিটিক্স ডাইনামিক ব্যাপার, একখানে দাঁড়াই থাকে না।
এখন ইন্টারভিউ দিচ্ছেন আহমদ আলি পটন; তিনি দ্যাশের এক জেলার মহানেতা, টাকা আর ক্যাডারের অভাব নাই।
আবদুর রহমান বলেন, পটন ভাই, আমরা খবর নিছি যে ওইখানে আপনেই পাশ করবেন, তয় ট্যাকাপয়সা ক্যাডার কেমুন আছে আপনের? [ আহমদ আলি পটন বলেন, ট্যাকাপয়সা ক্যাডার ছাড়া পলিটিক্স হয় না, এই দুইটা আমার আছে, পপুলারিটিও আছে। ভোটার ভাইরা আমার নাম ছাড়া অন্যের নাম লয় না, লওনের সাহস নাই।
কলিমউদ্দিন মৃধা জিজ্ঞেস করেন, ভাই, তাইলে এইবার আপনে ক্যাডার ইউজ করবেন নি?
আহমদ আলি পটন বলেন, ক্যাডারের ইউজ নানা সময় নানা রকমের হয় আমরা পলিটিশিয়ানরা জানি। ক্যাডার থাকতে হয়, সময় বুইঝ্যা ইউজ করতে হয়, যখন যেই রকম দরকার হয়। এইবার হইল নিরপেক্ষ অবাধ ড্যামোক্রেটিক ইলেকশন, এইবার ক্যাডাররা কাটা রাইফেল নিয়া দৌড়াদৌড়ি করব না, ঠাস ঠাস কইর্যা লোক ফ্যালবো না, এইবার তারা ড্যামোক্রেটিক প্রসেসে কাজ করবো। সবার স্যাবা করবো, পিস কোরের মতো স্যাবা করবো, কিন্তু ক্যাডার থাকতে হইব, কখন কি হয় বলন ত যায় না।
রজ্জব আলি জিজ্ঞেস করেন, ইলেকশনে খরচ কেমুন করতে পারবেন, পার্টিরে কেমন চান্দা দিতে পারবেন ভাই, পাটি টাকার অভাবে কষ্টে আছে।
আহমদ আলি পটন বলেন, ইলেকশনের খরচের জইন্যে পাঁচ সাত কোটি ধইরা রাখছি, লাগলে আরও খরচ করুম, আর পার্টিরে পাঁচ সাত কোটি চান্দা দিমু বইল্যাঠিক কইর্যা রাখছি।
আবদুর রহমান বলেন, ভাই আপনের কথা শুইন্যা খুশি হইলাম, নমিনেশন আপনে পাইবেন। পার্টির ফান্ডের অবস্থা অইত্যান্ত খারাপ, আরও কিছু বাড়াই দিয়েন ভাই।
আহমদ আলি পটন বলেন, চাচা, আপনে যখন বলতেছেন তখন ত দিতেই হইব, তয় হাত পাও ধইর্যা রিকুয়েস্ট করতেছি আমারে নমিনেশন দিয়েন। পাশ ত আমি করবই, আমারে কেউ হারাইতে পারবো না।
মহাজননেত্রী বলেন, তা আমরা জানি ভাই, আপনে গিয়া ক্যাম্পেনের কাজ শুরু করেন, এইবার আমাদের পাওয়ারে যাইতে হবে।
এই রকমভাবে অত্যান্ত গোপনীয়তার সঙ্গে জনগণমন বংশের ইন্টারভিউ চলতে থাকে, আমরা গরিব জনগণরা শহরের অক্লান্ত কাকের মতো ছিটাফোঁটা খবর পাইয়া মেতে ওটতে থাকি।
ওই দিকে বসছে শক্তির উৎসবাদী রাজবংশের ইন্টারভিউর বোর্ড; সেইখানেও একই রকম ড্যামোক্রেটিক প্রসেসে নমিনেশন দেওয়া হইতেছে। সেইখানেও গমগমের শ্যাষ নাই, সেইখানেও সব কিছু কাঁপতেছে, পাওয়ার, পাওয়ার, পাওয়ার শব্দ হইতেছে, আগামী কাইলই পাওয়ারে যাইতে পারলে ভালো হইত, কিন্তু যাওন যাচ্ছে না, ইলেকশন কইর্যা যাইতে হবে।
আমরা গরিব জনগণরা কি কইরা জানবো সেইখানে কি হইতেছে? তবে আমরা কান খাড়া করে থাকি বলে দূরের শব্দও অল্পস্বল্প শোনতে পাই। সেই শোনা কথাই বলতেছি, দেখা কথা বলতেছি না। দেখনের ভাইগ্য কি আমাগো আছে? আমাগো কথায় একটু নিমক লাগাই লইতে হবে।
ইন্টারভিউ নিচ্ছেন মহাদেশনেত্রী, অধ্যক্ষ রুস্তম আলি পন্টু, অবজেনারেল কেরামতউদ্দিন, সোলায়মান হাওলাদার, মোহাম্মদ কুদ্দুস চৌধুরী, ব্যারিস্টার কুদরতে খুদা, ডঃ কদম রসুল প্রমুখ রাজপুরুষেরা।
মহাদেশনেত্রী স্থির স্মিত বিষণ্ণ নিঃসঙ্গ সুদূর মহারানীর মতো বসে আছেন। তিনি চোখে কী যেনো দেখতে পাচ্ছেন, আবার পাচ্ছেন না, আবার দেখতে পাচ্ছেন, আবার পাচ্ছেন না; একবার কিছুই দেখতে পাচ্ছেন না। এই রকম সময় মানুষের এই রকমই হয়। চারপাশকে এক সময় তাঁর ধ্বসস্তূপ মলপের মতো মনে হয়, ঘুমিয়ে পড়তে তাঁর সাধ হয়; জেগে থাকতে তিনি ক্লান্তি বোধ করেন।
অধ্যক্ষ রুস্তম আলি পন্টু বলেন, আমাগো নমিনেশন দিতে হইব ২৭০জন ক্যান্ডিডেটরে, তার মইধ্যে ২০০জনের নাম আমরা বইস্যা আগেই ঠিক কইর্যা রাখছি, মহাদেশনেত্রীর হাতে ১৫টা সিট রাইখ্যা দিছি, আমাগো আসলে পাঁচপান্নটা সিটের জইন্যে ক্যান্ডিডেট নমিনেশন দিতে হইব। আমাগো কম্পিটেন্ট ক্যান্ডিডেটের অভাব নাই, সংসদে ১০০০ সদস্য থাকলে ভাল হইত।
চমৎকার খুব ভাল লাগলো