ক্যান্ডিডেট আবদুল কাদের মিয়া নমিনেশন পাওয়ার জইন্যে ইন্টারভিউ দিতেছেন।
মহাজননেত্রী জিজ্ঞেস করেন, আপনের কল্টিটিউয়েন্সি থিকা আরও চাইরজন দারানের জইন্যে দরখাস্ত করছে, আপনে কি তাগো থিকা বেশি ভোট পাইবেন?
আবদুল কাদের মিয়া বলেন, আল্লার রহমতে নিশ্চয়ই আমি তাগো থিকা বেশি ভোট পামু, অই সিটে আমিই জিতুম, আমি পর পর তিনবার এমপি হইছি অই সিটে, আমার থিকা পপুলার পাওয়ারফুল আর কেহ নাই অইখানে। আমি মহাজননেত্রীকে আমার একমাত্র নেত্রী বলে অনেক দিন থিকাই মাইন্যা নিছি। মহাজননেত্রীই খালি দ্যাশরে ঠিক মতন চালাইতে পারেন।
আবদুর রহমান জিজ্ঞেস করেন, আইচ্ছা ভাই, আপনে খোজাবংশ থিকা এমপি হইছেন, উৎসআলাগো এমপি হইছেন, এইবার এইবংশে আসতে চাইতেছেন কেন? আপনে কি মনে করেন এইবার আমরা পাওয়ারে যামু?
আবদুল কাদের মিয়া বলেন, আমি জনগণমনবংশে আসতে চাই, কারণ এইটাই আসল বংশ, এই বংশ ফ্রিডম ফাইটিং করছে দ্যাশে স্বাধীন আনছে, এই বংশ না থাকলে বাংলাদ্যাশ আইজও পাকিস্থান থাকত, আমরা পাকিস্থানি থাকতাম, এই বংশ আমাগো বাঙ্গালি বানাইছে, আমরা বাঙ্গালি আমরা পাকিস্থানি না, পাঞ্জানিগো পায়ের তলে বাঙ্গালি থাকতে পারে না, আর মহাজননেত্রী দুনিয়ার এক নম্বর নেত্রী, তার পায়ে মাথা রাইখ্যা আমি বাকি জীবন পলিটিক্স করতে চাই, পিপলের স্যাবা করতে চাই। মাইনষেরই ভুল হয় আমারও ভূল হইছিল, সেই জইন্যে আগে আসতে পারি নাই, তয় এখন মহাজননেত্রীর পায়ে মাথা রাখতে চাই। এইবার আমরা পাওয়ারে যামুই, উৎস আলাগো কোনো চান্স নাই, আমি অই বংশরে ছাইরা দিছি, অই বংশ ড্যামোক্রেসিতে বিশ্বাস করে না, তারা ডিক্টেটরশিপে বিশ্বাস করে।
নিজামউদ্দিন আহমদ বলেন, কাদের মিয়ারে প্রশ্ন করনের দরকার পড়ে না; তার লগে আমাগো আগে থিকাই কথা হইয়া আছে। তিনি দশ পোনরো বছর ধইর্যা অইখানের সবচাইতে পাওয়ারফুল সবচাইতে পপুলার পলিটিশিয়ান, এইটা সারাদ্যাশের মানুষ জানে। তারে হারাইয়া উৎসআলারা হায় হায় করতেছে। এইবার তিনি আমাগো বংশে আসছেন এইটা আমাগো ভাইগ্য। তারে অরা মন্ত্রী করে নাই, করছে যার কোনো পপুলারিটি নাই, সেই মাতাল মমতাজ আলিরে; তিনি এইটা সইয্য করতে পারেন নাই, কোনো জেনুয়িন পলিটিশিয়ানই এইটা সইয্য করতে পারে না।
রজ্জব আলি বলেন, কাদের ভাইয়ের সব কথাই ত আমরা জানি, তার লগে সব কথাই আমাগো হইয়া আছে, আগে থিকাই ঠিক হইয়া আছে কাদের ভাই আমাগো ক্যান্ডিডেট হইবেন। তিনি উৎসআলাগো বংশে ভাঙ্গন ধরাই দিছেন, তার দিকে আর উৎসআলাগো ফিউচার নাই।
মহাজননেত্রী বলেন, কাদের ভাই, আপনের এলাকার সিচুয়েশন কেমন, একটুখানি বলেন ত।
কাদের মিয়া বলেন, আমার আর আমার পাশের তিনটা সিটে উৎসআলাগো এইবার রিটার্ন করার কোনো পসিবিলিটি নাই, কারণ আমরা যারা পাশ করতাম তারা মহাজননেত্রীর জনগণমনবংশে যোগ দিছি! আমাগো অইখানে পাশ করার লিগা তিনটা জিনিশ খুবই দরকার।
মহাজননেত্রী জিজ্ঞেস করেন, জিনিশগুলি কি?
কাদের মিয়া বলেন, প্রথম যেই জিনিশটা দরকার, সেইটা হইল ট্যাকা, ট্যাকা ছারা পলিটিক্স করন যায় না, ট্যাকা থাকলে ভোটার আছে ভোট আছে, তারপর দরকার হইল ক্যাডার, ট্যাকা থাকলে ক্যাডার পাওন যায় আর ক্যাডার থাকলে ভোট পাওন যায়, ক্যাডার ছারা ড্যামোক্রেসি চলে না পলিটিক্স চলে না, সব শ্যাষে দরকার হইল, পপুলারিটি, এইটাও থাকন দরকার। খোদার রহমতে এই তিনটা জিনিশই আমার আছে।
আবদুল হাই বলেন, কাদের ভাই সেইটা আমরা জানি। আপনেরে নমিনেশন আগে থিকাই আমরা দিয়া রাখছি। পার্টিরে আপনে যেই চান্দা দিছেন, তাতেই বুঝা যায় আপনে শিউর পাশ করবেন। তয় আরো কিছু চান্দা দরকার।
আবদুল কাদের মিয়া বলেন, না, বেশি আর কি দিছি, মাত্র পাঁচ কোটি, আরও পাঁচ কোটি টাকা আমি নিয়া আইছি পার্টির লিগা, আইজ বিকালেই জায়গা মতন নিয়া আসবো। পলিটিক্সে আসনের আগেই আমি বুঝছি ট্যাকা ছারা পলিটিক্স করন যায় না, অইটা দরকার আগে, তাইলেই পিপলের ন্যাতা হওন যায়।
এইরকম ইন্টারভিউ কয়েক দিন ধইর্যা চলতেছে। ওই দিকে শক্তির উৎসবাদী রাজবংশের নমিনেশন দেওনও শুরু হয়ে গেছে। আমরা বদ্ধ পাগল হয়ে উঠতেছি, নমিনেশনের চ্যাহারা দেইখ্যা বুঝতেছি এইবার রিয়েল পলিটিক্স হইতেছে, কে যে কোন জায়গায় নমিনেশন পাইব আল্লাও জানেন না। গুনা কইর্যা ফেললাম মনে হয়, তিনি নিশ্চয়ই জানেন, কিন্তু আমরা তা বুঝতে পারতেছি না।
ইন্টারভিউর তিন না চাইর দিনের দিন সেলুলারে একটা চাঞ্চল্যকর খবর আসে মহাজননেত্রীর কাছে, তিনি আনন্দে কাঁপতে থাকেন।
মহাজননেত্রী সেলুলার আবায়ার নিচে কানের কাছে নিয়ে হাতে তসবি টিপতে টিপতে বলেন, হেলো।
ওই দিকের কণ্ঠ বলে, মহাজননেত্রী, বড় খবর আছে, উৎসআলাগো অফিসের গেইেটর কাছে থিকা বলতেছি, উৎসআলারা জ্যানারেল কামরুদ্দিন সাবরে নমিনেশন দেয় নাই, আমরা তারে রাস্তায় ধরছি, তারে আমরা লইয়া আসতেছি।
মহাজননেত্রী বলেন, তারাতারা লইয়া আসো, এইটাই আশা কইর্যা আছিলাম, সে শিউর পাশ করবো, তারাতারি লইয়া আসো।
তারা সময় নষ্ট না করে জেনারেল কামরুদ্দিনকে নিয়ে ইন্টারভিউ বোর্ডে উপস্থিত হয়, রাস্তায় ফুলের তোড়া আর মালা কিনতে যা দেরি হয়। মহাজননেত্রী ও রাজপুরুষেরা তাঁকে অভ্যর্থনা জানান।
চমৎকার খুব ভাল লাগলো