সুফিয়া ঠিক করে এইখানে আর থাকন যায় না। অর দেহটা কুকুর শিয়ালগো চোখে পড়ছে, তারা না খাইয়া ছাড়বো না।
সুফিয়া একদিন একটা বিজ্ঞাপনে দেখতে পায় যে রিয়াদে কিছু গৃহপরিচারিকা লাগবে, যারা গৃহপরিচারিকার কাজ করতে চায় তারা আবেদন করতে পারে। তরুণী হইলে ভাল হয়, সুন্দরী হইলে আরো ভাল হয়। অত্যন্ত ধনী পরিবার, বেতন মাসে দশ হাজার টাকা, যাওনের, আর তিন বছর পর পর দেশে আসার ফিরে যাওয়ার খরচ ওই পরিবার বহন করবে। অপূর্ব সুযোগ!
সুফিয়া সাথে সাথে আবেদনপত্র লিখে ওই ম্যানপাওয়ার এজেন্সিতে হাজির হয়। তার ইচ্ছে করছিলো এখনই রিয়াদে চলে যেতে, যাতে ওই গার্মেন্টসে আর যেতে না হয়। এজেন্সির এমডি সাহেব সুফিয়াকে দেখার সাথে সাথে তাকে নির্বাচন করেন, সুফিয়া তাঁর চোখের দিকে তাকিয়েই বুঝতে পারে। সুফিয়ার ভালোও লাগে, কিন্তু একটা ভয় সে নিজের ভেতরে টের পায়। এমডি সাহেব ঠিক করে ফেলেন, আরবরা এমন মালই চায়, বুক উচা, পাছা বড়, শরীর ঢলঢলে, তার উপর মুখটাও সোন্দর। এমডি সাহেব তিন দিন পর তার সাথে সুফিয়াকে দেখা করতে বলেন। সুফিয়া যখন বেরিয়ে আসছিলো এমডি সাহেব তার বুকে ও পাছায় হাত দিয়ে আদর করেন। সুফিয়া ভয় পায়, কেঁপে ওঠে।
তিন দিন পর সে কি যাবে এমডি সাহেবের কাছে? সুফিয়া ঠিক করতে পারে না; একবার মনে হয় যাবে না, আরেকবার মনে হয় যাবে, মাসে দশ হাজার টাকা তাকে রুজি করতে হবে, নিজে বাঁচতে হবে, মা ভাইবোনদের বাঁচাতে হবে। বুকে পাছায় এক আধটু হাত তো পড়বেই যেখানেই থাকি, এটা মেনে নিতে হবে। বুক আর পাছার এমন কি দাম।
তিন দিন পর সুফিয়া উপস্থিত হয় এমডি সাহেবের কাছে। এমডি সাহেব তাকে জানান তার মেইড সার্ভেন্টের চাকুরি হয়ে গেছে, সে খুব উপযুক্ত; পনেরো দিনের মধ্যে তাকে রিয়াদের উদ্দেশে বিমানে উঠতে হবে। এমডি সাহেব তাকে কাগজপত্র দেন, বাড়িতে সকলের সাথে দেখা করে আসতে বলেন। এমডি সাহেব তার বুক আর পাছায় একটু বেশি করে আদর করেন, কিন্তু চাকুরির আনন্দে সুফিয়ার তা খারাপ লাগে না, একটু ভালোই লাগে।
বিশ দিনের মধ্যে সুফিয়া রিয়াদে বান্দি খাটার জন্যে ঢাকা ছেড়ে যায়। নিজেকে তার আকাশের পাখি মনে হয়।
সে মনে মনে দেখতে পায় তার রিয়াদের মনিবের স্ত্রী কন্যারা তার জন্যে বিমানবন্দরে এসেছে; তারা দেখতে কি সুন্দর, সে তাদের পায়ে হাত দিয়ে সালাম করবে, তাকে দেখে তাদের পছন্দ হবে। প্রাণ দিয়ে সে সেবা করবে সকলের, দশ হাজার টাকা, মাসে দশ হাজার টাকা, দেশে সে কোনো দিন পাবে না। দেশে সে টাকা পাঠাবে, মা ভাইবোন ভালো থাকবে, এবং সে টাকা জমাবে।
বিমানবন্দরে সুফিয়া দেখতে পায় দুটি বিকট ইয়ামেনি চাকর তাকে নিতে এসেছে। বিকট, অত্যন্ত বিকট। তাদের হাতে ইংরেজিতে তার নাম লেখা একটি কার্ড। চাকর দুটিকে দেখেই সে ভয় পায়, সে কেঁপে ওঠে, চারদিকে সে মরুভূমি দেখতে পায়। তখন মধ্যরাত, রাত তাকে ঢেকে ফেলে। সে তাদের সাথে গাড়িতে উঠে বসে। অনেক রাতে সে মনিবের বাড়িতে গিয়ে পৌঁছে। বাড়ির সামনে কোনো আলো নেই, সামনে সে ভীষণ একটা দালানের ভুত দাঁড়ানো দেখতে পায়।
বাড়িতে তখন মনিবেরা নেই, তারা হজে গেছে।
অন্ধকার, অল্প আলো, অন্ধকার, বিকট কক্ষের পর কক্ষ পেরিয়ে একটি আরব বুড়ী সুফিয়াকে তার ভেজা স্যাৎসেতে রঙচটা কক্ষে নিয়ে আসে। সুফিয়া বারবার শিউরে উঠতে থাকে। সুফিয়া কিছুটা ইংরেজি জানে, বুড়ী জানে না; তাই তাদের কোনো কথা হয় না। বুড়ী তাকে কয়েকটি খেজুর আর বিস্কুট খেতে দেয়, চাও দেয়। সুফিয়া কিছুই খেতে পারে না; তার বমি পেতে থাকে। তার মনে হয় সারাটা বাড়ি, বিকট অন্ধকার, আর বিশাল মরুভূমি তার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েছে। সুফিয়া একবার তীব্র চিৎকার করে ওঠে, তার চিৎকার বিকট প্রতিধ্বনি হয়ে তার কানে ফিরে ফিরে আসতে থাকে। সুফিয়া বিছানায় বসে পড়ে, সে দুর্গন্ধ পায়, শোয়ার তার ইচ্ছে হয় না, ভোরে তার ঘুমঘুম চোখে আলো এসে ঢোকে।
তার ঘর, বিছানা, আর বালিশ দেখে সুফিয়া লাফিয়ে বিছানা থেকে নামে। বিছানার চাদরটা ঘিনঘিনে নোংরা, বালিশটা চিটচিটে; দূরে খেজুর আর বিস্কুটের থালায় কয়েকটি তেলাপোকা জটলা করছে। তেলাপোকা সে এভাবেই ভয় পায়, সে চিৎকার করে ওঠে। ভোরের আলো অন্ধকার হয়ে ঢুকছে ঘরটিতে, ওই ভোরের আলোর অন্ধকারে সুফিয়া ঘরের এক কোণে একটি বাথরুমের দরোজা দেখতে পেয়ে দরোজা খোলে। বাথরুমটার অর্ধেক ভরে নোংরা, ট্যাপ খুলে দেখে তিরতির করে পানি পড়ছে, আর জংধরা শাওয়ারটি দিয়ে কোনো পানি বেরোচ্ছে না। একটা ময়লা সাবান পড়ে আছে সিংকে, ওই সাবান আর তিরতির পানিতে সে মুখ ধুতে শরীর ধুতে চেষ্টা করে। সে আল্লা আল্লা করতে থাকে, কিন্তু সে শুনতে পায় তার বুক ধকর ধকর করছে।
তখন বুড়ী এসে তার বাথরুমের দরোজায় ঢু দিতে থাকে।
বুড়ী সুফিয়াকে তার পিছে পিছে যেতে ইঙ্গিত করে, সুফিয়া ভয়ে ভয়ে তার পেছনে হাঁটে। বুড়ী তাকে রান্নাঘরে নিয়ে যায়, ঘরটি দেখায়, এবং তার হাতে ভুল ইংরেজিতে লেখা কাজের একটি তালিকা তুলে দেয়। সুফিয়ার বেশ কাজ। সে রাধুনীকে সাহায্য করবে, বাড়িঘর পরিষ্কার করবে, শিশুদের দেখাশোনা করবে। বুড়ী তাকে ব্রেকফাস্ট বানানোর ইঙ্গিত করে, সুফিয়া ব্রেকফাস্ট তৈরি করে। সকালের খাওয়ার পর সুফিয়া হাঁড়িকড়াই পরিষ্কার করে, রান্নাঘর ঝাঁট দেয়, আরো কয়েকটি ঘর পরিষ্কার করে।
চমৎকার খুব ভাল লাগলো