জনগণমনাদের এইবার বোধ হয় ভালো সময় যাচ্ছে। ডিফল্টার শুকুর মজিদের সঙ্গে সোনারগাঁয়ে সন্ধ্যার একটি ঘণ্টা মাত্ৰ উপভোগ করতে এসেছেন জনগণমন নেতা কলিমউদ্দিন মৃধা।
তিনি একটু গোপনেই এসেছেন, যাতে জনগণ তাকে দেখে না ফেলে।
শুকুর মজিদ বলেন, এইমাত্র আপনে দিনাজপুর থেকে ফিরলেন, আমার জইন্যে যে একটা ঘণ্টা দিতে পারলেন আই অ্যাম ভেরি গ্রেটফুল।
কলিমউদ্দিন মৃধা বলেন, আমরা পিপলের পলিটিশিয়ান, আমাগো ডাক দিলে আমরা ফিরাইতে পারি না, আপনের সঙ্গে আমার আগেই বসা দরকার ছিল।
শুকুর মজিদ বলেন, সেইটা আমরা ভাইগ্যে হয় নাই, এই ইভনিংটা আমার জইন্যে আনফরগেটবল হয়ে থাকবে, আপনে ত বড় মিনিস্ট্রি পাবেন।
কলিমউদ্দিন মৃধা বলেন, জনগণ যদি দয়া করে, যদি পাওয়ারে যাইতে পারি, মিনিস্ট্রি ত একটা পাবই, এখন আপনেরা দোয়া করবেন।
শুকুর মজিদ বলেন, আমাদের লাইনের মিনিস্ট্রি পাইলে ভাল হয়, আমরা দুই চাইরবার দেখা করতে যেতে পারবো। গত বচ্ছরগুলি খুবই খারাপ গেছে, তবে ছাড়ি নাই, আশায় আশায় আছিলাম আপনেরা পাওয়ারে আসবেন। আমি ত মনেপ্রাণে খাঁটি বাঙ্গালি, মনে মনে সব সোম সোনার বাংলা গাই।
কলিমউদ্দিন মৃধা বলেন, বাঙ্গালি হইতেই হইব, দ্যাশরে ভালবাসতেই হইব, অরা, ত আইজও পাকিস্থান চায়, অদের মুক্তিযুদ্ধের চ্যাতনা নাই।
শুক্কুর মজিদ বলেন, একটা কথা বলতে চাই, আমি সামান্য কিছু কন্ট্রিবিউট করতে চাই, দয়া কইর্যা নিবেন।
কলিমউদ্দিন মৃধা বলেন, জনগণের কন্ট্রিবিউশনের উপরই ত আমাদের চলতে হয়, আমরা ত বিশ বচ্ছর ধরে খাই নাই। অরা খাইছে, অগো অভাব নাই, আরো খাইতে চায়। একটু বেশি কইরাই দিয়েন, পাওয়ারে আসলে আদায় কইর্যা দিব।
শুকুর মজিদ বলেন, পার্টি আর আপনের জইন্যে এককোটি ধইর্যা রাখছি, আমি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের মানুষ, সমাজতন্ত্রেও আগে বিশ্বাস করতাম, আল্লার রহমতে ট্যাকার আমার অভাব নাই, আপনেরা আসলে আরো হইব। আমরা এদেরও পলিটিকেল ইন্টিমেট আলাপ আর শুনতে চাই না; কারো প্রাইভেসিতে উঁকি দেওন ঠিক না।
নমিনেশন পেপার জমা
নমিনেশন পেপার জমা দেওনের সময় আইসে গেছে, আর আমরা দেখতে পাচ্ছি তাগো মধ্যে, মায়ের পেটে থিকা যারা পলিটিশিয়ান হইয়া খালাস হইছিলেন, আর তাদের মধ্যে, যারা মায়ের পেট থিকা পলিটিশিয়ান হইয়া খালাস হন নাই, বলন যায় যারা বাপের প্যাট থিকা পলিটিশিয়ান হইছেন–ফাইলে সই করতে লেফরাইট করতে করতে পলিটিশিয়ান হইছেন যাঁরা, তাঁদের মধ্যে সাড়া পড়ে গেছে, শহরের ফুলের দোকানে ফুলের টান পইড়া যাচ্ছে। তোড়া বানাতে বানাতে ফুলের দোকানের পোলাপানগুলির হাত বেদনায় টনটন করছে আঙুল পচে যাচ্ছে। একেক জ্যানারেল একেক কর্নেল ম্যাজর ব্রিগেডিয়ার একেক সেক্রেটারি বড়ো বড়ো ফুলের তোড়া নিয়া মহাজননেত্রী আর মহাদেশনেত্রীর কাছে হাজির হয়ে তাঁদের নীতিতে অবিচল আস্থা আনতেছেন। আরো মজার কাণ্ড হচ্ছে অনেক পুরানা মিনিস্টারমন্ত্রী, যারা রাজবংশ বদলাইয়া বদলাইয়া বড়ো হইছেন, তাঁরা আগের বংশ ছাইড়া মুখে বিরাট হাসি ঝুলাইয়া নতুন বংশে যোগ দিতেছেন। আমরা এইতে মনে কিছু করি না, বরং খুশি হই যে এইরা হইছে আসল পলিটিশিয়ান, বয়সের সঙ্গে সঙ্গে তাদের জ্ঞানবুদ্ধি খালি বাড়তেছেই, তারা আগের বংশে গিয়া ভুল করছিলেন, প্রাণ ভরে জনগণের স্যাবা করতে পারেন নি, এইবার সেই ভুল বুঝতে পারছেন, তাই নতুন বংশে যোগ দিতেছেন। এইটা হইল খাঁটি পলিটিক্স। তাদের বড়ো বড়ো ছবি ছাপা হচ্ছে দেখে আমরা মূর্খ জনগণরা খুশিতে ভরে যাচ্ছি। মনে হচ্ছে দ্যাশে মাস ভইর্যা ঈদ চলতাছে, আমাদের সুখের সীমা নাই।
অপসর নেয়া সেই আইনপতি বদিউজ্জামাল পাইকারকে আমরা রাজাকার বইল্যাই জানি, ওই যে মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি পাকিস্থানিগো গোলাম আছিলেন; তারপর তিনি। শক্তির উৎসবাদীতে যোগ দিছিলেন, মিনিস্টার হইছিলেন, তারপর তিনি খোজারাজবংশে গিয়া আরো বড়ো মন্ত্রী হইছিলেন, আমরা তাজ্জব হইয়া দেখতে পাইলাম বদিউজ্জামাল পাইকার বাংলাদেশের ফ্ল্যাগ উড়াইয়া ফুলের তোড়া বাড়াইয়া একেবারে স্বাধীনতার দলে জনগণমন গণতান্ত্রিক রাজবংশে গিয়া যোগ দিলেন। কাগজে সেই ছবি দেইখা আমদের চক্ষু বন্ধ হইয়া যাইতে চায়।
আমরা ভাবছিলাম জনগণের মহাজননেত্রী এইটারে নিবেন না।
কিন্তু মহাদেশনেত্রী হাসিতে বাংলাদেশ ভরাইয়া ফুলের তোড়া লইতে লইতে আমগো প্রাণের কথা বললেন।
তিনি বললেন, বদিউজ্জামাল পাইকার একজন মহান পলিটিশিয়ান, দ্যাশের স্যাবা করাই তার জীবনের ব্রত, আমাদের বংশ তাকে পাইয়া ধন্য হলো। এইবার আমাদের বিজয় নিশ্চিত, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের জয় কেউ ঠ্যাকাইতে পারবে না। দ্যাশে ড্যামোক্রেসি আসতে দেরি নাই।
আমাদের প্রাণের কথা শুনে আমরা সুখী হইলাম।
দুই চাইরটা বরেণ্য বুদ্ধিজীবী মুখ খুলতে গিয়া মহাজননেত্রীর মুখের দিকে তাকাইয়া মুখ বন্ধ করে মুগ্ধ হয়ে রইলেন।
বদিউজ্জামাল পাইকার বললেন, যেই বংশ ফ্রিডম ফাইটিং করছে, দ্যাশে লিবারেশন আনছে, সেই বংশে আসতে পাইরা আমি খোদার কাছে শুকরিয়া জানাইতেছি। আমি মহাদেশনেত্রীর নীতিতে চিরকালই আস্থা পোষণ করি, তিনিই দ্যাশের সব, তার পিছনে দারাইতে পাইরা আমার জীবন ধন্য হইল।
চমৎকার খুব ভাল লাগলো