গুলবদন বেগম বলেন, আর মনোয়ার মোল্লার সঙ্গে কোনো প্যাক্ট করবেন না। রুস্তম আলি বলেন, ওই বদমাইশটার কথা বলবেন না, ম্যাডাম। ওইটা এক নম্বর অপরচুনিস্ট, মিনিস্টার হওন ছারা আর কিছু বোঝে না। ওইটা সবার লগে লাইন দিতেছে। এইবার ভাবছে ওই ইন্ডিয়াআলারা পাওয়ারে আসবো, সেই জইন্য তাগো লগে দিনরাইত পইর্যা আছে, ওই ব্যাটারে দেখাই দিব।
গুলবদন বেগম বলেন, আর আমারে মিনিস্টার করতে হইব।
রুস্তম আলি বলেন, সেই কথা বলতে হবে না ম্যাডাম, আমরা পাওয়ারে গেলে আপনে মিনিস্টার হবেনই, আপনে আমাগো এক নম্বর মিনিস্টার হবেন, আর এমন যদি দেখি আপনারে প্রাইম মিনিস্টার করলে বেশি সুবিধা হয় তাইলে আপনেরে আমরা প্রাইম মিনিস্টার করবো, এইটা আমরা ভাইব্যা রাখছি।
গুলবদন বেগম বলেন, ভাই, আপনের এই সিনসিয়ারিটির জইন্যেই আপনেরে আমি এত লাইক করি, আপনের মতন পলিটিশিয়ান দ্যাশে আর নাই।
তাদের কথা এক সময় শেষ হয়; কিন্তু গুলবদন বেগম সেলুলার টিপতে আর পান করতে থাকেন; এবং এক সময় জড়িয়ে জড়িয়ে বলেন, সালামালাইকুম ভাই, আপনেরে আইজকাইল পাওন যায় না।
ওই দিকে সেলুলার কানে চেপে ধরেছেন জনগণবংশের মোহাম্মদ আবদুল হাই। একবার আবদুল হাইর মনে হয় নিজের নামটা বদলে দিই, রং নাম্বার বলে রেখে দিই; কিন্তু তিনি তা করেন না, বলেন, আপনেরেই পাওন যায় না, ম্যাডাম, পাওনের চ্যাষ্টা ত কম করি না।
গুলবদন বেগম বলেন, মিছা কথা বইল্যন না ভাই, পাওনের চ্যাষ্টা ত করেন। মনোয়ার মোল্লারে, তাইলে আমারে পাইবেন কেমনে? আমি ত আপনের বংশের কাছে ফুরাই গেছি, তবে মনে রাখবেন আমি ফুরাই নাই, আমার সাপোর্ট ছাড়া পাওয়ারে যাইতে পারবেন না।
আবদুল হাই বলেন, কি যে বলেন ম্যাডাম, আপনে হলেন আপনের বংশের লিডার, আপনের কথায় সবাই ওঠে বসে, আপনেরে ছাইর্যা কি মনোয়ার মোল্লার পিছে আমি ঘুরতে পারি?
গুলবদন বেগম গেলাশে কয়েকটি চুমুক দেন, তাঁর অন্য কিছুতেও চুমুক দিতে ইচ্ছে করে;–হায়রে দেহ, হায়রে চুমুক, বাতিল হওয়ার পরও ক্ষুধা যায় না।
গুলবদন বেগম বলেন, এইবারে পাওয়ারে আসবেন ভাইব্যা আমাদের ইগনোর করতেছেন ভাই, কিন্তু তা কি পারবেন? ভাবছেন মনোয়ার মোল্লারে লইয়া পাওয়ারে যাইতে পারবেন, আমারে ছারা হবে না।
আবদুল হাই বলেন, এমন কথা বলবেন না ম্যাডাম, আপনে আমাদের এক নম্বর ওয়েল-উইশার আমরাও আপনের ওয়েল-উইশার, আপনেরে ছাড়া আমরা পাওয়ারে যাইতে পারুম না। এই বছর আমরা সকলের দোয়া চাই, দেশে ড্যামোক্রেসি ফিরাই আনার জইন্যে সকলের দোয়া চাই। আপনে ড্যামোক্রেসিতে বিশ্বাস করেন, আমরাও করি; আমাগো একলগে থাকতে হবে।
গুলবদন বেগম বলেন, কিন্তু ভাই মনে হয় আপনেরা মনোয়ার মোল্লারে নিয়াই পাওয়ারে যাবেন, আমারে ইগনোর করছেন। মনে রাইখেন মনোয়ারের বাপেরও সেই শক্তি নাই, বংশের আমিই আসল লোক।
গুলবদন বেগম গেলাশে আরো কয়েকটি চুমুক দেন; আর কিছুতে তাঁর এখন চুমুক দিতে ইচ্ছে করছে না, একটা খাঁটি খুন করতে ইচ্ছে করছে।
আবদুল হাই বলেন, ম্যাডাম, আপনে একজন খাঁটি পলিটিশিয়ান আর আমরাও পলিটিক্স কইর্যা খাই, আপনে জানেন পলিটিশিয়ানরা কাগোই কোনদিন ইগনোর করে না, আমরা ত করিই না।
আরো কয়েকটি চুমুক দেন গুলবদন বেগম। কথা বলতে গিয়ে গুলবদন বেগমের জিভ জড়িয়ে আসতে চায়, জিভটাকে ভেজা চামড়ার স্যান্ডেলের মতো ভারি মনে হয়, তবু তিনি কথা বলার চেষ্টা করেন।
গুলবদন বেগম বলেন, অই বদমাইশ জানোয়ারটা আমারে ছারছে, আপনেরাও আমারে…
তিনি আর কথা বলতে পারেন না; তাঁর বাঁ হাত থেকে গেলাশটিকে তিনি ছুঁড়ে ফেলে দেন, দেয়ালে গিয়ে গেলাশটি চুরমার হয়ে যায়; আর ডান হাত থেকে সেলুলারটি খসে পড়ে। গুলবদন বেগম প্রথম সোফার ওপর গড়িয়ে পড়েন, সেখান থেকে গড়িয়ে পড়েন মেঝের ওপর। তার মুখ থেকে লালা বেরোতে থাকে; লালার সাথে দুটি শব্দ বেরোতে থাকে–বদমাইশ জানোয়ার বদমাইশ জানোয়ার।
আবদুল হাই ওই দিকে চিৎকার করতে থাকেন ‘হ্যালো, হ্যালো’; কোনো সাড়া না পেয়ে সেলুলার বন্ধ করে বলেন, বুড়ী বিচ, কুত্তার সঙ্গে কুত্তী।
দিকে দিকে আমাগো অপসর পাওয়া বুড়াগুলিও খুব জাইগ্যা উঠছে। আমাগো এই সুন্দর দেশে তরতাজা পোলপানগুলি কোনো কাজ পায় না, ইনভারসিটি থেকে বার হইয়া ফ্যা ফ্যা করতে থাকে, কিন্তু বুড়াগুলির কামের কোনো শ্যাষ নাই। ওইগুলি সাতান্ন হওয়ার পরও চাকুরি জড়াইয়া ধইর্যা পড়ে থাকে, ওরা না থাকলে সূর্য আন্ধার হইয়া যাবে চান উঠবে না মাইয়ালোকের প্যাটে পোলা আসবে না, তিন চার বচ্ছর কাম বাড়াই নেয়; ড্যাকরা ছেলেগুলিন ব্যাকার হইয়া রাস্তায় রাস্তায় পার্কে পার্কে গাঁজা টানে, ল্যাখাপড়া জানা মাইয়াগুলির আর বিয়া হইতে চায় না। অপসর পাওয়া বুড়াগুলি এখন পলিটিক্সে মেতে উঠছে, কাম ছাড়া তারা থাকতে পারে না; আর বুড়াকালের জইন্যে সবচে ভালো কাম হইছে পলিটিক্স। পলিটিক্সে তাদের দরও খুব বেশি, বিশেষ করে দুই ধরনের বুড়ার : একটা হইল ওই অপসর পাওয়া জ্যানারেল, আরেকটা হইল অপসর পাওয়া সেক্রেটারি, মাছের বাজারে পাঙ্গাশের মতন।
এই পাঙ্গাশগুলি খুব জাইগ্যা উঠছে, আমরা তাগো চর্বি দেখতে পাইতেছি।
চমৎকার খুব ভাল লাগলো