ফুলঝুরিয়ার মানুষ বুঝতে পারে না ওই ক-দিন তারা কেননা পেয়েছিলো অমন দুর্গন্ধ। ওই গন্ধের কথা ভেবে তারা মাঝেমাঝে শিউরে ওঠে, আল্লার কাছে প্রার্থনা করে যাতে ওই গন্ধ তারা আর না পায়।
কিন্তু গন্ধ আমরা কমবেশি পাচ্ছি।
মহাজননেতার প্রিয়তমা মর্জিনা আবদুল্লার সঙ্গে চুলোচুলি রক্তারক্তি আর আর পারিবারিক রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড করার পর বাসায় ফিরেই গুলবদন বেগম পানীয়র বোতল গেলাশ চারপাঁচখানা সেলুলার নিয়ে শক্ত হয়ে বসেন। তাঁর মুখে আমরা জনগণরা সব সময়ই ছোটোবেলায় নানীর কাছে শোনা ডাইনিটার মুখের আদল দেখতে পাই, কাগজে তার ছবি উঠলে পোলাপানরা ছবি দেখে ভয় পায় বলে আমরা সেই দিনকার কাগজ লুকিয়ে রাখি, তবে আল্লায় যারে যেই মুখ দিছে তা নিয়া কথা বলা ঠিক না, আমরা সেই বিষয়ে কথা বলতে চাই না, তবে এই মুহূর্তে তিনিও তার মুখটা দেখলে ভয় পাইতেন। তিনি সেলুলার টিপতে শুরু করেন; কিন্তু আমাগো দেশ এমন দেশ এখানে কাফেরগো দেশ থেকে যা আসে তাই আটকে যায়, খালি পিপপিপ করতে থাকে; তিনি রেগে গোটা দুই সেলুলার ছুঁড়ে ফেলে দেন, বার তিনেক পানীয়তে চুমুক দেন। আহ্, কি সুখকর! তিনি বোধ হয় আর পলিটিকেল ফ্যামিলি ভ্যালুজ টিকিয়ে রাখতে পারছেন না; ওই বদমাইশটারে দেখাইয়া দিতে হবে। ওইটারে খোয়াড়ে চিরকাল আটকাইয়া রাখতে হইব, ওইখান থিকাই অরে বনানী গোরস্থানে পাঠাতে হবে।
উৎসবাদী রাজবংশের রুস্তম আলি পন্টু সাহেবকে তার খুবই দরকার, তার সঙ্গে আলাপ করেই তিনি এখন ছেঁড়াফাড়া কলজেটিতে শান্তি পেতে পারেন; তবে মনে হইচ্ছে রুস্তম আলি পন্টু অইত্যান্ত ব্যস্ত আছেন, তাঁর সেলুলার তিনি আটকাইয়া রাখছেন। সেলুলার আটকাইয়া রাখনের মিনিং কী? তিনি নিজে কখন আটকাইয়া রাখেন? নিশ্চয়ই কারো লগে কোনো গোপন প্যাক্ট করতে বসছে রুস্তম আলি। পলিটিশিয়ানগুলি সবই হারামি, খালি হারামি না হারামির বাচ্চা হারামি, কার লগে যে কি কইব তার ঠিক নাই। মনোয়ার মোল্লার সঙ্গে বসলো না তো? এই ভাবনাটা আসতেই একটানে তিনি গেলাশটি শেষ করে দেন; তারপর টিপতেই অধ্যক্ষ রুস্তম আলি পন্টুকে পাওয়া যায়।
গুলবদন বেগম বলেন, ভাই, আপনেরে পাওনের থিকা আইজকাইল আল্লারে পাওনও সোজা। এক ঘণ্টা ধইর্যা ফোন টিপছি, আপনের ফোন বাজে না।
রুস্তম আলি পন্টু বিনয়ের সঙ্গে বলেন, মাফ কইরা দেন ম্যাডাম, আর গালি দিয়েন না, আপনে যে আমারে খোঁজছেন এইটা আমার ভাইগ্য, একটু পর আমিই আপনেরে রিং করতাম, আপনেরে খুবই দরকার। আপনে আমাগো একজন বড় গার্জিয়ান, ওয়েল-উইশার, আপনেরে আমি কখনোই ভুলি না।
গুলবদন বেগম বলেন, ভাই, আইজকাইল আমারে আর কার দরকার, আপনে পলিটিশিয়ান বইল্যা কথাটা ঘুরাই বললেন, আপনেরেই আমার দরকার। এইটা সত্য খালি পলিটিক্স না, আপনের সঙ্গে আলাপ কইর্যা আমি আরাম পাই।
রুস্তম আলি পন্টু বলেন, ম্যাডাম, আমি সত্য কথাই বলতেছি, আপনের লগে আমি পলিটিক্স করি না, সকলের সঙ্গে পলিটিক্স করন যায় না। আপন মাইনষের সঙ্গে আবার পলিটিক্স কি।
গুলবদন বেগম বলেন, আমি ফাইনাল ডিসিশন নিয়া নিছি, সেইটা আপনেরে জানানের জইন্যেই ফোন করলাম।
রুস্তম আলি পন্টু বলেন, বলেন ম্যাডাম, কি ডিসিশন নিলেন? আপনের ডিসিশনের ওপর কারো কোনো কথা থাকতে পারে না।
গুলবদন বেগম বলেন, আইজ থিকা আমাগো রাজবংশ দুই ভাগে ভাগ হইয়া গেছে, বাইরে কারে তা জানান হইবে না, খালি আপনে জানলেন।
রুস্তম আলি পন্টু বলেন, এইটা খুবই দরকার আছিল, আপনেগো বংশে যেই গোলমাল তাতে এক সঙ্গে থাকন ইমপসিবল। অনেক ডিজঅনেস্ট লোকে ওই বংশ ভইরা গেছে, অপরচুনিস্ট বিট্রেয়ারে আপনেগো দল গিজগিজ করতেছে।
গুলবদন বেগম বলেন, আমি আপনেগো সাপোর্ট দিব, আমার সঙ্গের কমপক্ষে পঁচিশজন পাশ কইর্যা আসবো, খালি আমাগো কয়টা দাবি মিটাতে হবে।
রুস্তম আলি বলেন, আপনের সব দাবিই আমরা মিটাব।
গুলবদন বেগম বলেন, ওইটারে যে খোয়ারে ঢুকাইছেন সেই খোয়ারেই মউত পর্যন্ত রাখতে হবে, বাইর হইতে দিবেন না; অইটা খোয়ারে থাকব নাইলে কবরে থাকব, বাইরে থাকতে দিবেন না।
রুস্তম আলি খুশিতে ভরে উঠে বলেন, আপনে ম্যাডাম একেবারে আমাগো মহাদেশনেত্রীর মনের কথাটা বলছেন, মহাদেশনেত্রী বলেন ওইটারে আর বাইরে আসতে দেয়া হবে না, ওইখানেই ওইটা ধুইক্যা ধুইক্যা মরবো, তারপর গ্রামের বাড়িতে পাঠাই দেয়া হবে। আমাগো মহাদেশনেত্রী বলেন, ওইটা জানয়ার, ওইটারে খাঁচায় রাখনই ভাল।
গুলবদন বেগম বলেন, হ্যাঁ, তাই করবেন।
রুস্তম আলি পন্টু বলেন, অই জানয়ারটার নিচে যে কেমন কইর্যা আপনে এত বছর শুইলেন অইটারে আপনার এত সুন্দর দেহখানা দিলেন, তা ভাইব্যা আমি এই বয়সেও মাঝেমাঝে কাইপ্যা উঠি, ম্যাডাম।
গুলবদন বেগম বলেন, মাইয়ামানুষের এই কপাল, জানোয়ারগো নিচেই শুইতে হয়। তবে এই জানোয়ারটাকে শিক্ষা দিতে হইবে।
রুস্তম আলি পন্টু বলেন, ম্যাডাম, দুঃখের ব্যাপার হইল বাংলাদ্যাশটা পাকিস্থান না, পাকিস্থান হইলে আগেই দেখাই দিতাম। জানেন ত ম্যাডাম, পাকিস্থানে জুলফিকার ভুট্টরে জ্যানারেল জিয়াউল হক খালি জেলে আটকাইয়া রাখে নাই; জ্যানারেল জ্যালে তারে প্রত্যেক রাইতে আইচ্ছা ডলন দিত। একে ত খাইতে দিত না, না খাইয়া খাইয়া ভুটু দরিদরি হইয়া যাইতেছিল, আর রাইতে এক ব্রিগেডিয়ার গিয়া ঘণ্টা দুই ধইর্যা আইচ্ছা ছ্যাচন দিত। এক রাইতে ছ্যাচনের সময় ব্যাটা মইরা যায়, আর তারে তারাতারি ফাঁসিতে ঝুলাই দিয়া কাগজে খবর ছাপাইয়া দেয় যে জুলফিকার ভুট্টরে ফাঁসি দেয়া হয়েছে। দ্যাশটা পাকিস্থান হইলে তা করন যাইত, এই কারণেই ত পাকিস্থানরে আমরা পছন্দ করি, ওইখানে ইচ্ছামত কাম করন যায়, ওইটা কামের দ্যাশ।
চমৎকার খুব ভাল লাগলো